পাবনা প্রতিনিধি : চীফ অব জেনারেল স্টাফ আর্মি হেডকোয়ার্টারস ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর সাবেক উপাচার্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে, তথ্য মানুষকে সমৃদ্ধ করে। আমাদের সবার মাঝে রতœভান্ডার আছে, আলো আছে। সেটাকে আলোকিত করতে হবে। বিহঙ্গের মতো নিজেকে মেলে ধরতে হবে। সবার মধ্যে অগ্নির শক্তি আছে। সেই শক্তিটাকে জানতে হবে। কীভাবে এই আলো জ্বালাবো সেটা বুঝতে হবে- জানতে হবে। মনকে বিকশিত করতে হবে। দায়িত্ববান, সময়ানুবর্তি হতে হবে। ছাত্র শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
আজ ২০ মার্চ (সোমবার )পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর সাবেক উপাচার্য হিসেবে তাঁর সফলতার প্রশাসনিক, একাডেমিক এবং শৃঙ্খলাবোধের অভিজ্ঞতা ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মাঝে তুলে ধরতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
২০২০ সালের ০৫ মার্চ তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপর করোনার কারণে দেশে লকডাউন দেওয়া হলে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম চালু করেন এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বাপর শিক্ষা পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি জানান, কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা সত্বেও লকডাউনের শুরুর পাঁচদিনের মধ্যেই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্লাস, পরবর্তীতে পরীক্ষা শুরু করা হয় এবং তা চলমান থাকায় কোন সেশনজটের সৃষ্টি হয়নি। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের পাশে নানা সহায়তা নিয়ে দাঁড়ায়। আমি তখন দেখেছি ছাত্রছাত্রীরা সৎ, হ্নদয়বান। যাদের কেবল প্রয়োজন তারাই সহায়তা নিয়েছে। আমাদের পাশে আরও অনেকে দাঁড়িয়েছেন নানারকম সহায়তা নিয়ে। বিইউপির ছাত্রছাত্রীরা দায়িত্বশীল, শৃঙ্খলাবোধ সম্পন্ন। শিক্ষকরা যোগ্যতাসম্পন্ন। তারা সময় মেনে চলে। ফলে পরবর্তীতে ছাত্রছাত্রীরা দায়িত্ববোধের সঙ্গে জীবন গড়ে তোলে। আমাদের পড়াশোনার মান, প্রকাশনা আন্তর্জাতিক মানের।
তিনি আরও বলেন, একজন শিশু যাতে শৃঙ্খলার মধ্যে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠে, সেই পরিবেশ আমাদের সৃষ্টি করতে হবে। মূল্যবোধ সম্পন্ন পরিপূর্ণ মানুষ হতে হবে। মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ পরিবার দেশ জাতিকে এগিয়ে নিতে পারে। সার্টিফিকেট সম্পন্ন না হয়ে ভালোভাবে জেনে শিক্ষর্াীরা যেন বের হতে পারে। বাংলাদেশে অনেক মেধাবী আছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তরুণরা নিজেরাই নিজেদের নেতৃত্ব দিতে পারে। তরুণদের চাকরী না করে উদ্যোক্তা হতে হবে। নিজেরা নতুন কিছু তৈরি করবে, এই স্বপ্নও দেখবে।
রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুকেন্দ্র সম্পর্কে বলেন,বঙ্গবন্ধু রুপুপর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমরা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের ৩৩তম গর্বিত সদস্য দেশ। এর আগে আমরা স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখেছি। রুপপুর বাংলাদেশের গর্ব হতে চলেছে। ভবিষ্যতে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংযোগ স্থাপিত হবে।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর স্মৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি যখন শিশু, বঙ্গবন্ধু আমার কপালে চুমু দিয়েছিলেন। আমি সেই স্মৃতি ধারণ করি, লালন করি। সেটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ স্মৃতি। পাবনায় অনেক বিখ্যাত মানুষ, পন্ডিত জম্ম নিয়েছেন। পাবনা গর্বের জায়গা। নতুন মহামান্য রাষ্ট্রপতি পাবনার মানুষ। এই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে উদাহরণ হতে যাচ্ছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার শিক্ষার পরিবেশ খুব ভালো। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, কবিতার পংক্তি দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, সমাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সম্পদ খুঁজে বের করতে হবে। ভীতরের আলোর প্রজ্জ্বলন ঘটাতে হবে। নতুন নতুন ভাবনা তৈরি করতে হবে। আমাদের মাঝে আন্তরিকতা, ভালোবাসা আছে। সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের ভালো কাজের সুবাতাসের ঘ্রাণ সবাই পাবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবাসি। সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছি। সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।
আরও বক্তব্য দেন উপ -উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান, কেষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কে এম সালাহ উদ্দীন । অনুষ্ঠানের শুরুতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এর অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট দিয়ে সম্মান জানানো হয়।
এর আগে সকাল ১০টায় ক্যাস্পাসে পৌছে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পাতাকা এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন। এসময় গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। ড. মোঃ হাবিবুল্লাহ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।