ইবি প্রতিনিধি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় সারাদেশে গত ১৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এর দুই সপ্তাহ পেরোলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) কোনো ধরনের সুফল মেলেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষসহ শীর্ষ পাঁচ পদের ব্যক্তিদের পদত্যাগে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। বিভাগগুলোতে ক্লাস-পরীক্ষা আরম্ভ না হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অতিদ্রুত একজন সংস্কারমনা উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ক্যাম্পাস খোলার পর বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেশনজট নিরসন সহ তাদের বিভাগের নানা সংকট ও সমস্যা সংস্কারের জন্য শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। শিক্ষকরা তাদের সকল দাবি মেনেও নিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা আওয়ামীপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তারা ঠিকমতো অফিসে না আসায় কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। এজন্য অতিদ্রুত আমাদের একজন সংস্কারমনা উপাচার্য দরকার। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা বিভাগের সমস্যাগুলো সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করবেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গেঁড়ে বসা সমস্ত অনিয়ম দুর্নীতির মুলোৎপাটন ঘটাবেন। সর্বোপরি তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢেলে সাজিয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মডেল হিসেবে তৈরি করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল তুর্কি বলেন, ‘উপাচার্য এই ক্যাম্পাসকে নিজের মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। যাতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব সৃষ্টি না হয়। তিনি এই ক্যাম্পাসের অতিরিক্ত ছুটি কমিয়ে এর যৌক্তিক সংস্কার করবেন।’
মোহাম্মদ জুবায়ের নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা একজন অরাজনৈতিক, শিক্ষার্থীবান্ধব এবং সংস্কারমনা ভিসি চাই। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং একাডেমিক সকল প্রকার সমস্যার যৌক্তিক সমাধান করবেন। যিনি বিভাগগুলোর সেশনজটের নিরসন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদান ও গবেষণালব্ধ পাঠদানের সুব্যবস্থা করবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হলগুলোতে আবাসিকতা প্রদানে লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনৈতিক থেকে বের করে নিয়ে যৌক্তিক সমাধান খুঁজবেন।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুক্তারুল হক বলেন, ‘একজন উপাচার্য মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং ন্যায়সঙ্গত আচরণের মূল্যবোধের প্রতি অবিচল থেকে দক্ষতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিচালনা করবেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের হবেন না, হবেন পুরোপুরি শিক্ষার্থীবান্ধব। বিভিন্ন মহলের অস্থিরতা, ছাত্র সংগঠনের মাস্তানি এবং রাজনৈতিক নেতাদের চাপ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান নির্বাহীদের জন্য আসল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এতে তিনি ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ চালু করবেন।’
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক ইয়ামিন মাসুম বলেন, ‘আমরা একজন শিক্ষানুরাগী, মহৎপ্রাণ, গবেষক এবং সর্বোপরি শিক্ষক-শিক্ষার্থীবান্ধব অভিভাবক চাই। যিনি সুনিপুণতার সঙ্গে প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পাদন করবেন। তিনি আলোর মশাল নিয়ে বর্তমান প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে নিজেকে আত্মনিয়োগ করবেন।’
অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিথিলা তানজিল বলেন, ‘উপাচার্য শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতি কমানোর জন্য অবদান রাখবেন। দলীয়করণ প্রমোট না করে তিনি একজন একাডেমিশিয়ান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। তাছাড়া একজন প্রধান যে-ধরনের স্টেপ নিবেন বাকিরাও সে-ধরনের স্টেপ নিতে বাধ্য হবেন। সর্বোপরি আমরা একজন ভালো একাডেমিশিয়ান উপাচার্য চাই।’