কমবে রিজার্ভের চাপ

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রিজার্ভ ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ কমাতে সরকার চলতি অর্থবছরে ১৫০ কোটি  ডলারের বেশি বাজেট সহায়তা চায় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে। সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশকে এই ঋণ সহায়তা দেওয়ার প্রাথমিক আশ্বাস দিয়েছে। 

এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে আরও ৩০ কোটি ডলার, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছে ৪০ কোটি ডলার এবং ফ্রান্সের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা অ্যাজেন্স ফ্রাঁন্সেজ ডা ডেভেলপমেন্টের (এএফডি) কাছে ৩০ কোটি ইউরো (৩২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার) বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, সেকেন্ড রিকভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিটের আওতায় বিশ্বব্যাংকের কাছে আরও ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছে।
অর্থ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তা দেওয়ার প্রাথমিক আশ্বাস দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এখনো সাড়া যাওয়া যায়নি। আশা করা হচ্ছে, অর্থবছরের শেষ দিকে গিয়ে এ বিষয়ে আরও অগ্রগতি হবে।
ইআরডির তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি আট মাসে সুদ ও আসল বাবদ আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের প্রায় ২০৩ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করেছিল ১৪২ কোটি ডলার। অর্থাৎ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। এরমধ্যে সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৮০ কোটি ৬০ লাখ ডলার (৮০৬ মিলিয়ন), যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।

উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য উচ্চ সুদের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে সরকার সতর্ক হচ্ছে এবং সেজন্যই আরও বেশি বাজেট সহায়তা ঋণের দিকে ঝুঁকছে বলে দেখা যাচ্ছে। প্রকল্প ঋণের তুলনায় এ ধরনের ঋণের শর্ত তুলনামূলকভাবে সহজ হয়। আর তা পাওয়া গেলে বৈদেশিক মুদ্রা রিভার্ভের ওপর চাপও কিছুটা কমে। চলতি অর্থবছরে সরকার ইতোমেধ্যে এডিবি ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে ৪৯ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। গত বছরের ১১ ডিসেম্বরে এই দুটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।

সাধারণত বাজেট সহায়তা ঋণ দেওয়ার জন্য উন্নয়ন সহযোগীরা কিছু শর্ত দেয়। এডিবি ও কোরিয়ার এই বাজেটে সহায়তা আওতায় সরকার জলবায়ু-সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে থেকে বাজেট সহায়তা আদায়ের যে লক্ষ্য নিয়েছে, তা শতভাগ অর্জন করা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাজেট সহায়তা নিশ্চিত করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলেন, চলতি অর্থবছরে এডিবি থেকে আরও ৩০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশ কিছু সংস্কার করতে হবে।
সামাজিক স্থিতিস্থাপকতার দ্বিতীয় শক্তিশালীকরণ কর্মসূচি (সাবপ্রোগ্রাম-১) শীর্ষক এই বাজেট সহায়তার জন্য এডিবির সঙ্গে  ঋণচুক্তি করতে চায় সরকার। এটি নিশ্চিত করতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কি কি শর্ত থাকবে- সে বিষয়ে এডিবির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে ঋণচুক্তি প্রণয়নে এডিবির একটি প্রতিনিধি দল গত বছরের ৫-১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফর করে।
এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) সদর দপ্তর চীনের বেজিংয়ে। সংস্থাটির থেকে এ পর্যন্ত ৩৫০ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ, যার বেশিরভাগই দেওয়া হয়েছে অবকাঠামো প্রকল্পে।
এদিকে বাজার-ভিত্তিক ঋণের সুদহার বেশি হওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরে এআইআইবির কাছ থেকে সরকার কোনো ঋণ না নিলেও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য গত বছরের নভেম্বরে ৪০ কোটি ডলারের একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এআইআইবির ভারপ্রাপ্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট রজত মিশ্র মার্চের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা সফর করেন, এ সময় অর্থমন্ত্রী ও অর্থসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এ বিষয়ে আলোচনাও করেন।
এ বছরের জুনের আগেই এআইআইবির বোর্ডের কাছ থেকে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার এজেন্ডা নিয়ে ফ্রান্সের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে। এ জন্য একটি নীতি কাঠামো চূড়ান্ত করতে গত বছরের ২৬ নভেম্বর আলোচনা শুরু হয়, ২৯ নভেম্বর যার পর্যালোচনা শুরু করে এএফডি। কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ু-ভিত্তিক সহায়তা লাভের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হচ্ছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোয় সরকারের বাজেট সহায়তা নেওয়ার পরিমাণ বাড়তে দেখা যায়। মূলত কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে টিকা কেনা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বাজেট সহায়তার পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার বাজেট সহায়তা নেওয়ার কার্যক্রম জোরদার করে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্য আরও জানাচ্ছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ১৭৬ কোটি ডলার,  ২০২২১-২২ অর্থবছরে ২৫৯ কোটি এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০৯ কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা নেয় সরকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট সহায়তার পরিমাণ ছিল বেশ কম বা প্রায় ২৫ কোটি ডলার।

কমবে রিজার্ভের চাপ
Comments (0)
Add Comment