পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের মেধা ও প্রজ্ঞা একান্ত বিধাতা প্রদত্ত। গীতিকাব্য রচনা করে দেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই নিয়েছেন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে, তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা গীতিকার মাহ্তাব শাহ ফাকির । যার সৃষ্টি প্রতিটা গান হাজারো ভক্তকে প্রতিনিয়ত মুগ্ধতার জোয়াড়ে ভাঁসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভাঁটির সুরের দেশে । কী অসম্ভব মেধা নিয়ে তিনি গীতিকাব্য রচনা করে চলেছেন , মাহ্তাব শাহ্ ফকিরের গানের গভীরে পৌঁছালেই কেবল তা অনুধাবন করা যায়।
গান প্রেমী শ্রোতাদের জন্য তিনি সৃষ্টি করে যাচ্ছেন অসাধারণ সব গানের ভান্ডার, যা গান পিপাসু শ্রোতাদের মধ্যে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে চিরকাল। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের অনেক খ্যাতনামা কন্ঠশিল্পী মাহতাব শাহ্ ফকিরের গান কন্ঠে ধারন করে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছেন,পাচ্ছেন ব্যাপক পরিচিত।
তারই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতি গীতিকথার দক্ষ এই কারিগরের ”দিতেতো আর কম দিছিনা ‘ শিরোনামের এই গানটি এরই মাঝে Tiktok সহ youtube এবং নানা যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ।
দিতে তো আর কম দিছিনা ‘ গানটিতে কন্ঠ দিয়েছেন আকরাম আর সংগীতে ছিলেন দেশের মেধাবী সংগীত পরিচাল হাসনাত কবির।
তার পরে গানটি, দেশের শীর্ষস্থানীয় ইউটিউব চ্যানেল ‘রঙ্গিলা সিলেট’র স্বত্বাধিকারী ‘শাহদাত হোসেন লোলন ‘ এর কন্ঠেও গানটি দর্শক ভালো ভাবে গ্রহন করে ।
মাহতাব শাহ্ ফকিরের প্রতিটি গানের কথায় যেমন ফুটে উঠেছে ভাটি বাংলার মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার কথা, তেমনি তিনি কলম ধরছেন বর্তমান কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থা এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে।
মাহ্তাব শাহ্ ফকির প্রতিনিয়ত তার সৃষ্টি রেখে যাচ্ছেন, তা এদেশের মানুষকে আন্দোলিত করে। বলতে দ্বিধা নেই, তাঁর সৃষ্ট সিলেটের আঞ্চলিক গানগুলো এ আঞ্চলের সংগীতকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
জনপ্রিয়তা পেয়েছে দেশের গন্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে। তাঁর গানে যেমন রয়েছে নতুনত্ব, তেমনি রয়েছে শরিয়তি, মারফতি ও দেহতত্ত্বের মতো দার্শনিক দিক। প্রতিটি গানে আছে প্রেম, বিরহ ও পাওয়া-না পাওয়ার বেদনা। বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি ও সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকে তিনি সহজ-সরল ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন গানে গানে।
গ্রামের মানুষের সহজ-সরল জীবনযাত্রা, আর চাওয়া-পাওয়ার কথা এভাবে তুলে এনেছেন তাঁর গানে।
দিতে তো আর কম দিছলাম না
তফিক আনমান হক্কলতা
তবুও পাইলাম না তোমার মন খানতা।।
পয়লা যেদিন তোমার লগে হইলো আমার দেখা
কইলায় তুমি এ জীবনে আছো বড় একা
ভাবে বুঝলাম দিরায় টুকা ইশারায় খইলায় বউত্তা।
তোমারে করিয়া বিশ্বাস দিছলাম মনটা দানে
জানতাম কি এতো নারিং বিরিং ছিলো তোমার মনে
মুক্তা ছড়াইয়া উলুবনে হেষে পাইলাম না কুন্তা।।
দোয়া করি ভালা থাকো সুখি হও ভূবনে
মাহতাব ফকীর জনম দুঃখী আল্লায় ভালা জানে
মরন এখন সামনে মাফ করি দিলাম সবতা ।।
মাহতাব শাহ্ ফকির ‘ যার গীতিকাব্যের বিনির্মাণকলা কিংবা সুরের করণকৌশল উচ্চতর শিল্পব্যঞ্জনায় ঋদ্ধ। সরস পথে তিনি গীতিকাব্যের গভীরতা সৃষ্টি করেছেন।
মাহতাব শাহ্ রচিত গানের শব্দসমূহ একত্র করে যদি সেগুলোকে উপকরণ হিসেবে রূপ দেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে তেমন কিছুতেই তিনি আবদ্ধ থাকেননি ।
তার পরিপার্শ্ব রচনার ক্ষেত্রে তিনি সময় ও স্থান বিবেচনায় কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করেছেন। মাহতাব শাহ্ ফকির তাঁর সামগ্রিক গীতিকাব্য রচনার ক্ষেত্রে দীর্ঘ বৈচিত্র্য থাকলেও স্বতন্ত্র গীতিকাব্যের মধ্যে সেটি তিনি সব সময় রাখেননি।
প্রখ্যাত এই গীতিকার মাহতাব শাহ ফকির গীতিকাব্যে রূপক, সংকেত, প্রতীকের ব্যঞ্জনা আছে। তবে তাঁর গীতিকাব্য বিনির্মাণে এসবের ব্যাপ্তি পরিমিত পরিসরে হয়েছে। রূপক, সংকেত, ইঙ্গিত, প্রতীকের ভারে গীতিকাব্যের তলদেশ সন্ধান কঠিনতর হয়ে পড়েনি; বরং এসবের পরিমিত ব্যবহারে গীতিকাব্য হয়ে উঠেছে শ্রোতাস্পর্শী।
মাহতাব শাহ্ ফকির এর গীতিকথা জটিল শব্দের ভারে ভারাক্রান্ত নয়, ভাবকাঠামোর পরোক্ষতর ভঙ্গিতে দূরবাসিনী নয়; বরং সরল ভাষ্যে সাধারণ কল্পচিত্রে তিনি যে সুর ও গীতিকাঠামো নির্মাণ করেছেন তাতে গান পিপাসু শ্রোতাগন অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে গানটির অন্তরাঙ্গনে।
গীতিকাব্যের বিষয় ও বোধ বিনির্মাণে মাহতাব শাহ্ ফকির অনন্য মাত্রায় উন্নীত একজন কবিয়াল। তিনি গীতিকথায় ও সুরে দান করেছেন শ্রোতাদের হৃদয়স্পর্শী পরম ব্যঞ্জনা। তাঁর এই ব্যঞ্জনা সৃষ্টি শুরু হয়েছে কবিজীবনের প্রথম ভাগেই। অনবরত তিনি সেই ধারার মধ্যেই থেকে যাচ্ছেন । আমৃত্যু তিনি গীতিকথার শিল্পরূপ সৃষ্টির দক্ষ কারিগরই থেকে যাবেন বলে জানান মাহতাব শাহ্ ফকির।
তাঁর গীতিকাব্য বিষয়ে আলাপচারিতার এক সময়ে তিনি বিডি ভিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান,
সংগীতের প্রধান চারটি উপাদান, কথা/বাণী, সুর, যন্ত্রাণুষঙ্গ ও গায়কি। অধুনা সংগীতের সঙ্গে দৃশ্যতাও যোগ হয়েছে, গান শোনার পাশাপাশি গানের মিউজিক ভিডিও দেখেও এখন দর্শক আনন্দ পান। তবে একটি গানের মূল উপাদানগুলোর উৎকর্ষ না ঘটলে মিউজিক ভিডিও দিয়ে কোনো গানকে উতরে নেওয়া যাবে না। সংগীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার মেধা, জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার সমন্বয় ঘটলেই কেবল একটি গান সমৃদ্ধ হয়, হৃদয়গ্রাহী হয়, এবং সর্বোপরি তা কালোত্তীর্ণ হয়। একটি গান হয়তো হঠাৎ মন কাড়তে পারে, একজন শিল্পী চট করে জনপ্রিয়তার বনে যেতে পারেন, কিন্তু মূল উপাদানে ঘাটতি থাকলে তার গান ও সে শিল্পী হারিয়ে যায় অচিরেই। অনেক গীতিকার, গায়ক স্বল্প পরিশ্রমে দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার প্রয়াস পান, এর জন্য অনেকেই সংগীত চর্চা না করে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন এই সংগীতের প্রতি আমার চর্চা, সাধনা, প্রেম, ভালোবাসা, একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা প্রবল।
সংগীতের এই ক্রান্তিলগ্নে আমি আমার গীতিকাব্য রচনার ভিতর বাংলা সংগীত তথা সিলেটের লোক সাহিত্য কে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেবার কাজ করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত, তারই ধারাবাহিকতায় এবার ঈদুল আযহাতে ‘এখন কেনে কও খালি জ্বলের জ্বলের ‘ শিরোনাম আমার গীতিকথায় ও সুরে জেসমিন ঝুমা’র কন্ঠে এবং এসময়ের মেধাবী সংগীত পরিচালক হাসনাত কবিরের সংগীত আয়োজনে গানটি সম্মানিত শ্রোতামন্ডলির
তিনি কথার প্রেক্ষিতে আরো বলেন, বর্তমান এই মহাবিশ্বে করোনা নামের অসুর বিচরণ করছে। কেউ সুরের মধ্যে নেই। মানুষ প্রায় স্তব্ধ । তবে করোনা-অসুরের বিনাশ শেষে পৃথিবী আবার সংগীতময় ও সুরেলা হয়ে উঠবে হবে। আলাপচারিতার শেষে তিনি সম্মানিত শ্রোতা এবং দেশে প্রবাসে যারা আছেন সবাইকে ঈদের বার্তায় বলেন, এ বছর ঈদুল আযাহা এমন একটি সময়ে উদযাপিত হচ্ছে, যখন বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত। করোনা মহামারির কারণে জীবন ও জীবিকা দুটোই আজ হুমকির মুখে। তিনি এই কঠিন সময়ে সমাজে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তিবর্গের প্রতি আহ্বান জানান ও সাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান। মাহতাব শাহ্ ফকিরের কথা ও সুরে বাংলা গান তথা সিলেটের সাংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক দেশ থেকে দেশের বাইরে বিডি ভিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে সিলেটের এই বিখ্যাত গীতিকবি সুরকার ও কন্ঠশিল্পীর জন্য রইলো নিরন্তর শুভ কামনা।
— জাহিদ হাসান নিশান।