বিডি২৪ভিউজ বিনোদন ডেস্ক : গ্রামীণ জনপদের কাদামাখা কবি। পারিবারিক মন্ডলটা বেশ উচুঁ সম্প্রদায়ের হলেও নিজেকে সে কখনো সেই ধারা বহন করেনি। পড়াশুনাতেও বেশ ভালো নয় বলেই মেট্টিক পরীক্ষায় দু’বার অকৃতকার্য হয়েছে। সাহিত্য কর্মে নিয়োজিত হতে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা বলে সে সাহিত্যরস দিয়ে কিছু করার জন্যেই প্রতিনিয়ত ছুঁটে চলে এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। জোতদার শাসিত শাসকের জমি দখলের নিপীড়ন, আত্মমানবতার সেবায় এগিয়ে যাওয়া, মানুষের পাশে দাঁড়ানোসহ সামাজিক প্রেক্ষাপটে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনাই তার সাহিত্যের মূল বিষয়বস্তু।
জীবনের মুর্হুতগুলো তুলে ধরার জন্যেই কাল্পনিক চরিত্র দিয়ে তৈরি করেছে প্রায় ৩২ মিনিটের আর্টফ্লিম ‘সমাপন কাব্য’। কাব্যিক ভঙ্গিমায় কাল্পনিক শিশু ‘খোকা’ চরিত্রের মাধ্যমে নিজেকে জানান দিয়েছে এই কিশোর নির্মাতা ফারহান সাদিক ফাহিম। স্থানীয় গ্রামীণ পেশাজীবীদের সাথে নিয়ে এই আর্ট ফ্লিমটি নির্মাণ করেছে কিশোর এই নির্মাতা। অথচ যারা অভিনয় করেছে, তাদের তাৎক্ষণিক ভাবে অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত করে নিয়েছে সে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন সুনামের সাথে সম্পন্ন করেছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে। বর্তমানে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
৮ নভেম্বর ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীতে আগমন এই কিশোর তরুণ শিক্ষার্থী নির্মাতা ফারহান সাদিক ফাহিমের। সে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মোঃ শাহাদত আলী ও গৃহিনী সাঈদা সাহাদতের একমাত্র পুত্র সন্তান। তার গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের খিদিরপুর খাঁন পরিবারে। বর্তমানে সে ক্যান্টনমেন্টের পাশে মানিকদিতে বসবাস করে পরিবারের সাথে।
সমাপন কাব্য নির্মাতা তরুণ উদ্যোক্তা ফারহান সাদিক ফাহিম এক প্রতিক্রিয়ায় জানায়, শিশু সময় থেকেই সে সাংস্কৃতিক কর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। সেই সময় থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক ও ইউটিউব এর প্রতি ঝুঁকে পড়ে। শুরুতেই সে নানা প্র্যাকটিসের এক পর্যায়ে আধুনিক সংগীত তৈরি করে। বিভিন্ন শিল্পীর গান শুনে ও দেখে তাদের মতো করেই গান তৈরী করতে থাকে। ২০১৯ সালে সে নিজেই একটি এ্যালবাম তৈরী করে। ‘কালিহীন কলম’ নামের এই এ্যালবামটি বিভিন্ন মিউজিক স্টিমিং প্লাটফর্মে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর বেশ কিছু সিঙ্গেলও তৈরী করে ফাহিম।
সমাপন কাব্য সম্পর্কে তার অভিমত ছিল, বেশকিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য ফ্লিম তৈরী করার এক পর্যায়ে তার মাথায় আসে সমাপন কাব্য নিয়ে। প্রতিটা কর্মের শুরু ও শেষ আছে। শুরুটা যেমন শেষ হয়, শেষটাতে হয়তো বিরহ, ব্যথা, আনন্দ, বিনোদন, সামাজিকতাসহ নানামুখি চিন্তা ও ভাবনার উন্মেষ ঘটে। তেমনি সমাপন কাব্যটা ছিল শুরুতে এক আর শেষ প্রান্তে এসে যোগ হয় ট্র্যাজিক। সমাপন কাব্যের ইউটিউব লিংক https://youtu.be/PrQWitWlePQ
ফাহিম তার প্রতিক্রিয়ায় জানায়, দেশবিদেশে খ্যাতনামা শিল্পী, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানীসহ নানা মতের মানুষের সৃৃষ্টি একদিনে হয়নি। তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াস, এগিয়ে চলা, আত্মপ্রত্যয়ই নিজ নিজ আবস্থানকে নিশ্চিত করেছে। তেমনই চিন্তা ধারা নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে এগিয়ে যেতে চাই। এ জন্য সবার কাছে আমি দোয়া ও ভালোবাসা চাইছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজনসহ শুভাকাঙ্খিদের সাথে সুস্থ বিনোদন পেতে রুচিশীল কিছু নির্মাণ করতে চাই। চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সে নিজেকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফ্লিম মেকার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চায়।
ফাহিমের বাবা শাহাদত আলী বলেন, ছোট বেলা থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি ক্যামেরা চালানো, সুন্দর সুন্দর স্থির ছবি ও ভিডিও ধারণ, গানবাজনা এবং সাংস্কৃতিক চর্চা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। প্রথম অবস্থায় এই ব্যস্ততা থেকে সড়ানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ততই সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের মেধার পরিচয় দিচ্ছে। প্রত্যেকটি মানুষের যেমন সুস্থ ধারা স্বাধীনতা রয়েছে। সেই আলোকেই তাকেও বেড়ে ওঠার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
আর ফাহিমের মা সাঈদা সাহাদত বলেন, স্কুল ও কলেজে বিজ্ঞান ভিত্তিক বিভিন্ন ইভেন্টে সে অংশগ্রহণ করে পুরস্কার জিতেছে। ফাহিমের যে মেধা। এই মেধাটা যদি পরিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে পারে। তাহলে মা হিসেবে আমার বিশ্বাস আমার ছেলে একদিন দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।
ফাহিমের নানা প্রবীন সাংবাদিক ও নাট্যকার এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক এইচকেএম আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমার নাতি ফাহিম মাঝে মধ্যে এসে সে তার মনের ভেতরে থাকা অনেক সুপ্ত স্বপ্ন আমার সাথে শেয়ার করতো। তার মধ্যে আমি যে সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে থাকতে দেখেছি। এই প্রতিভা কাজে লাগাতে পারলে একদিন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একজন প্রতিনিধি হতে পারবে বলে আমি বিশ্বাসা করি।