সংগীত জগৎময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রকৃতির মতো। কখনো প্রবাহমান নদীর মতো; ঝিরিমিরি বাতাসের মত কখনো ; আবার উশৃঙ্খল দমকা হাওয়ার মতো ; দিগন্ত প্রসারিত কখনো খোলা আকাশের মতো। সঙ্গীত শুধু মানুষেরই একচ্ছত্র সম্পত্তি নয়। বিভিন্ন পাখি ও প্রানিকুলের সাথে আছে সংগীতের নিবিড় সম্পর্ক।
সঙ্গীত মানব সভ্যতার মত পুরাতন নয় তার চেয়েও ঢের বেশি পুরাতন। মানব জন্মের সাথে সংগীতের জন্মলাভ। ইহা সহজাত। ভেবে দেখুন যখন মানব শিশু কাঁদতে শিখেছে এবং হাসতে শিখেছে তখনই সঙ্গীতের পথচলা।সঙ্গীত ধর্ম,বর্ণ, স্থান-কাল-পাত্রের ঊর্ধ্বে। সংগীতের কোন ভৌগলিক সীমারেখা নেই। সৃষ্টিকর্তার সমস্ত সৃষ্টির মধ্যেই সংগীত গড়াগড়ি খাচ্ছে।সঙ্গীত আদিম চঞ্চল গতিময় ও বিকাশমান। সংগীত নদীর স্রোতের মতো বহমান, দীর্ঘসময় স্থির হয়ে থেমে থাকেনা কোথাও। আকাশের মত অসীম, দিগন্তের মতো প্রসারিত। সংগীত মানুষের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি দেশ জাতি সভ্যতার ব্যতিক্রমহীন অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ সংগীত। সংগীতের কোন ধর্ম নেই, সীমানা নেই। ধর্মীয় গোড়ামী দিয়ে সংগীতকে বেঁধে রাখার চেষ্টা ও বিতর্ক বহু পুরাতন ও যুক্তিহীন। সংগীতের কোন ধর্ম নেই, গোত্র নেই,জাত নেই, সীমানা নেই। ধর্মীয় গোড়ামী দিয়ে সংগীতকে বেঁধে রাখার প্রয়াস বৃথা। সংগীত কেবলই সংগীত।
একজন হিন্দু ধর্মের অনুসারী যখন ইসলামী গজল হাসন রাজা,আব্দুল আলীমের কিংবা আব্বাসউদ্দিনের গাওয়া ইলাম ধর্মের বিশ্বাস সম্পর্কিত কোন গান গায় তখন তার মধ্যে ধর্মের বিষয় থাকেনা। থাকে ধ্যান, সাধনা একাগ্রতা দিয়ে সুর সৃষ্টি করে নিজেকে উজাড় করার প্রচেষ্টা।
আবার মুসলিম ধর্মের অনুসারী শিল্পী যখন খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বা খ্রিষ্টধর্মের একেশ্বরবাদী আব্রাহামীয় ধর্ম সম্পর্কীয় বা নাজারেথীয় যিশুর জীবন ও শিক্ষা, বড়দিনের উৎসবের গান কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় সংগীত গায় তাঁর কাছে তখন খ্রীষ্টান -মুসলীম কোন বিভেদ থাকে না। সংগীতের সুরের মূর্ছনায় সে ডুবে যায়।
খ্রীষ্টান ধর্মের পবিত্র উৎসব বড়দিন, সময়ের আবর্তে বড়দিন পেয়েছে সার্বজনীন উৎসবের আবহ। প্রায় দুই হাজার বছর আগে পৃথিবীর মানুষকে যীশু খ্রিষ্ট দেখিয়েছিলেন মুক্তি ও কল্যাণের পথ। বড়দিনে তাই খ্রিষ্টকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে মানবতাবাদী বিশ্বাস থেকেই বাংলা রক -ব্যান্ড সংগীতের অন্যতম অনুস্যূত ‘মিটুল হকের গান ” ঘুমিয়ে পড়োনা ” যে গানটি বাংলা ভাষার সর্ব প্রথম কোন গান যেটা আমেরিকান অডিও লেবেল কোম্পানী ‘WINCHESTER RECORDS’ এ HOPE FOR HOMELESS’HEARTS’ এ প্রকাশিত হয়। মিটুল হকে’র গীতিকথা, সুর ও গায়কীতে গানটি পাওয়া যাবে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষেে শিল্পীর নিজস্ব অফিসিয়াল Youtube চ্যানেল MITSUI – সহ ফেসবুক ফ্যান পেজ Mitul এ, যা গান পিপাসু শ্রোতাগন Mitulnyc লিখে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।
‘ঘুমিয়ে পড়োনা ‘গান প্রসঙ্গে রকষ্টার ‘মিটুল বলেন ; একটি আন্তর্জাতিক এ্যালবামে,যেখানে বাকি সব গান ভিন্ন দেশের ভাষায় শুধু আমার গানটি বাংলা ভাষায়। একটি আন্তর্জাতিক অডিও লেবেলে আমার মাতৃভাষা বাংলায় গান করার অনুভূতিটা আমাকে ভিন্ন একটা স্বাদ দিয়েছে যা বাংলা ভাষাভাষী বাঙালির কাছেও ভিন্ন অনুভূতি সৃষ্টি করবে বলে বিশ্বাস রাখি। গানটি যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে মুক্তি পাবে। গানটিতে খ্রিষ্টীয়দের বড়দিনের বর্ননার পাশাপাশি যীশুর বর্ননাও স্থান পেয়েছে।
গান সম্পর্কে মিটুল আরও বলেন; মানবতাবাদই পারে মানুষে-মানুষে বিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা, হানাহানি, ঘৃণা-বিদ্বেষ দূর করতে। মানবতাবাদই পারে অন্ধত্ব ঘুচিয়ে মানুষকে আলোকিত করতে, আধুনিক করতে; জীবনকে আনন্দময় করতে; সত্য ও সুন্দরকে বুঝতে। সেই বিশ্বাস ও ধারনা থেকেই আমার এবারের গান ”ঘুমিয়ে পড়োনা।” আমাদের ভিত্তি হবে সুন্দর, মানবতা , মানবিক মূল্যবোধ, মানুষের পরিচয় হবে মানুষ হিসেবে। মনুষ্যত্ব অর্জনই হবে মানুষের মূল লক্ষ্য।
একজন রক সংগীতশিল্পী মিটুল হক যাঁর গগনবিদারী কন্ঠস্বর কখনো দূর্নিতীর বিরুদ্ধে,কখনো মানবতার পক্ষে, আবার দূর্শাশনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে মানব সভ্যতাকে যেমন বেগবান করেছে তেমনি আবার মননশীল সংগীত পরিবেশন করেও মানুষের মনে দোলা জাগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রেম,ভালোবাসা,মানবতা, রোগে – শোকে মহামারীতে, প্রলয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দূর্যোগে মানুষকে আশাজাগানিয়া গান শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। জগত জীবনের এমন কোন দিক নেই যেদিকে এই ব্যান্ড সংগীত শিল্পীর মনোযোগ আকৃষ্ট হয়নি। একজন মিটুল হক প্রেম- ভালোবাসায় , মানবতাবাদ ও শান্তিতে, সুযোগে দূর্যোগে, আপদ – বিপদে, মহামারিতে এককথায় জীবনের সর্বক্ষেত্রে মানুষকে প্রানবন্ত করে যাচ্ছে।
— জাহিদ হাসান নিশান।