জাহিদ হাসান : পরাণের গহীনে কোনো গান আর বর্তমান সময়ে গহীনে থাকছে না।কালের গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে সময়কে প্রতিনিধিত্ব করে গানগুলো।ইউটিউব ভিউ কত হলো তা দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। একজন শিল্পীকে তার গান কিংবা গায়কী। শ্রোতারা গান দেখাকে প্রাধান্য দিচ্ছে বেশি শোনার চেয়ে। বলা হচ্ছে শিল্পমানসম্মত ও কালের স্রোতে টিকে থাকার মতো গান হচ্ছে না। এ বিষয়ে বলেছেন উপমহাদেশের বিখ্যাত গীতিকার,সুরকার ও শিল্পী ‘বিজয় সরকার’ যার সঙ্গে কাজ করে অনেক মিউজিশিয়ান, মডেল, ভিডিও মেকার, ভিডিও এডিটর, মডেল হয়েছেন সুপরিচিত ও দর্শক নন্দিত ।
বাংলা সংগীতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হলো গুণী এই সংগীতজ্ঞ বিজয় সরকারের সাথে।
তিনি বলেন; গান এখন আর ক্যাসেট কিংবা সিডির যুগে পড়ে নেই। বরঞ্চ প্রযুক্তির প্রভাবে প্রথম ক্যাসেট ও পরবর্তীতে সিডি মাধ্যম বিলুপ্ত হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই ডিজিটালি প্রকাশ পাচ্ছে গান। গান প্রকাশের ও শোনার সবচেয়ে সহজ ও বড় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউটিউব। অনেক মোবাইল ফোন কোম্পানি আবার অ্যাপসেও প্রকাশ করছে গান। তবে ইউটিউব যেহেতু সবার জন্য উন্মুক্ত তাই এখন আর অডিও কোম্পানির ওপর নির্ভর হয়ে থাকতে হচ্ছে না গান প্রকাশের জন্য। আগে একটি নিয়মের মধ্যে দিয়ে কোম্পানিগুলো থেকে গান প্রকাশ হতো ক্যাসেট কিংবা সিডিতে। সেই বিষয়টি না থাকার ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে অনেক মেধাবী শিল্পী নিজেই ইউটিউবে গান প্রকাশ করতে পারছে।
কিন্তু তার বিপরীতে নেতিবাচক প্রভাব আরও বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশেষ করে ইউটিউব আসার পর থেকে যে কেউ বনে যেতে পারছেন গায়ক কিংবা গায়িকা। গানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকুক আর না থাকুক, কণ্ঠ থাকুক আর না থাকুক, যে কেউ প্রযুক্তির সহায়তায় খুব সহজেই ইউটিউবে গান প্রকাশ করতে পারছেন। যার ফলে দেশীয় বাংলা গানের মানে নেমেছে ধস। গত কয়েক বছরে ক্রমাগতভাবে মানহীন গানের সংখ্যা কেবল বেড়েছে। তার মধ্যে বেশকিছু তথাকথিত ভাইরাল গায়ক কিংবা গায়িকার মানহীন গানের কারণে ভালো মানের গানগুলো থেকে যাচ্ছে আড়ালে। প্রচারের দিক দিয়েও পিছিয়ে থাকছে ভালো মানের গানগুলো। বিষয়টি নিয়ে এর আগেও অনেক আলোচনা-বৈঠক হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মানহীন ও অশ্লীল গানের আধিক্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর ইউটিউবের মাধ্যমে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৌতুক অভিনেতাও বনে যাচ্ছেন গায়ক-গায়িকা!
সংগীতাঙ্গনে ইউটিউবে গানের ভিউ গণনার একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। এটা পুরো সংগীত ইন্ডাস্ট্রির জন্য কোনো ভালো ঘটনা নয়। কারণ এর মাধ্যমে অনেকেই কনফিউজ হচ্ছে। এমন অনেক গান আছে যার ইউটিউব ভিউ অনেক কম কিন্তু বেশ শ্রোতাপ্রিয়। আবার এমন গানও রয়েছে যার ভিডিওর ইউটিউব ভিউ কোটি ছাড়িয়েছে, কিন্তু শ্রোতাপ্রিয় নয়। সুতরাং, ভিউর পেছনে দৌড়ে লাভ নেই। আমার অনেক গান অনেক ভিউ হয়েছে। কিন্তু তা আমাকে তৃপ্ত করেনি। বরং, শ্রোতারা গান পছন্দ করলেই আমি তৃপ্ত। আমি মনে করি ইউটিউব ভিউ নয়, ভালো গানের প্রতি মনোযোগী হওয়া দরকার।