মিটুল হক একজন জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা কণ্ঠশিল্পী গীতিকার ও সুরকার। অনলাইন নিউজ পোর্টাল bd24views বিনোদন প্রতিবেদক জাহিদ হাসান নিশান কথা বলেছেন তাঁর সঙ্গে। ধারাবাহিক এই সাক্ষাৎকারের আজ প্রথম পর্ব।
প্রশ্নঃ প্রিয় মিটুল আপনি কেমন আছেন?
মিটুল হকঃ সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় এবং সকলের দোয়ায় আমি ভালো আছি। ধন্যবাদ l
প্রশ্নঃ আপনার সংগীত জীবনের শুরুর দিকটা জানতে চাই?
মিটুল হকঃ গুরু বিপ্লব দা’র কাছে তালিম সেই ক্লাস সিক্স এ l রবীন্দ্র , নজরুল আর আধুনিক পেরিয়ে পরবর্তীতে ব্যান্ড সংগীতে পদার্পন l অনেকদিন ধরেই পরিবারের অধিকাংশ সদস্য আমেরিকা আর ইউরোপে থাকাতে, শুরুটা মূলত পাশ্চাত্যের হেভি মেটাল আর হার্ড রক ব্যান্ডগুলোর ইন্সপারেসনই কাজ করেছে l পরবর্তীতে বাংলাদেশী রক লিজেন্ডদের বুকে ধারণ l আইয়ুব বাচ্চু, আজম খান, রকস্টার্টা, ফিডব্যাক এবং আরো অনেকেই আছেন l ৯০ আন্ডার গ্রাউন্ড স্টেজ শোগুলতে ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম l
সেই স্বর্ণালী ৯০ দশকের কথা, তখন বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীতের স্বর্ণযুগ, সেই সময়ে কোফাউন্ডার হিসেবে প্রিজানার্স নামে একটি হার্ড রক ব্যান্ড গঠন করি এবং মূল গায়ক হিসেবে “রক্তের নেশায়” নামে প্রথম এ্যালবাম রিলিজ করি । এ্যালবামটিতে বেশির ভাগ গানের কথা, সুর ও কণ্ঠ আমারই । এছাড়াও প্রচুর একক গান রিলিজ করেছি তখন l
প্রশ্নঃ নিজের উজ্বল গানের ক্যারিয়ার ফেলে ইউএসে পাড়ি জমানোর কারন কী?
মিটুল হকঃ গানের প্রতি আমার টান থাকলেও পরিবারের প্রায় সকলেই প্রায় ৪০ বছর ধরে আমেরিকাতে আছেন। ছয় ভাই এক বোনের টানে আমাকেও সেখানে চলে যেতে হয় l তারপর আমার গানে দীর্ঘ একটা বিরতি। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ২০১৬ সালে আমি নিউ ইয়র্ক থেকে আবারও গানের জগতে ফিরে আসি l Q4 নামের ব্যান্ড গঠনের মাধ্যমে শ্রোতাদের কাছে নিয়ে আসি ‘অন্য ভূবণ’ এ্যালবামটি । এই এ্যালবামেরও বেশিরভাগ গানের কথা ও সুর আমার l এছাড়াও অনেকগুলো সিঙ্গেল রিলিজ করেছি বাংলাদেশ সহ আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সাথে l
প্রশ্নঃ আপনি প্রতিটা লাইভ অনুষ্টানেই বলে থাকেন,’বিদেশে বসবাস তবু আত্মায় স্বদেশ, হৃদয়ে বাংলাদেশ ‘ দেশের প্রতি এই আকুলতা সম্পর্কে জানতে চাই?
মিটুল হকঃ আমি এই কথাটা শুধু মুখেই বলিনা, হৃদয়ে ধারন করে চলি৷ আমি আমেরিকার সিটিজেন ঠিকই, কিন্তু মনটা পড়ে আছে বাংলাদেশে। যে মাটিতে আমি জন্মেছি, যে দেশের আলোবাতাসে আমি বেড়ে উঠেছি। সমস্ত আত্মা আর অস্তিত্ব মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে, মনটা সেখানেই। যেখানে ছড়িয়ে আছে আমার শৈশব, কৈশোর আর জীবনের মধুময় সব স্মৃতি।
প্রশ্ন: উল্ল্যেখ যোগ্য একটি কাজের অভিজ্ঞতা কি শেয়ার করবেন ?
মিটুল হকঃ ‘বিদেশে বসবাস তবু আত্মায় স্বদেশ, হৃদয়ে বাংলাদেশ ‘ l আমেরিকাতে প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে আমি একটি আমেরিকান রেকর্ড লেবেল থেকে বাংলায় একটি গান করি l এই কাজটি আমার জন্য একটি ব্যাতিক্রমী কাজ এই জন্য যে , একজন মুসলিম হয়ে এই গানটি আমি লিখেছি ও সুর করেছি ভিন্ন ধর্ম ক্রিষ্ঠানদের জন্য l তাছাড়া আমার গানটি ই ছিলো একমাত্র বাংলা গান যা একটি ইংলিশ এ্যালবামে আমেরিকান রেকর্ড কোম্পানি থেকে বের হয়েছে l বাংলাদেশের জন্য এটি একটি রেকর্ড l একজন বাংলাদেশী হয়ে আমি এইজন্য অনেক গর্ব অনুভব করি l
প্রশ্নঃ ইউএসে যেমন পরিশ্রম তেমন আরাম আয়েশ কিংবা প্রাচুর্য , কোনো কিছুরই কমতি নেই। তবুও আপনি বাংলাদেশ মিস করেন?
মিটুল হকঃ – প্রাচুর্যই কি জীবনের সব? এত কিছুর মধ্যে থেকেও আমি আমার জন্মভূমিকে একমুহূর্তের জন্য ভুলে থাকতে পারি না। আমি ভালোবাসি আমার দেশ,মাটি, মানুষকে। খুঁজে ফিরি মাটির গন্ধ, ধুলাময় অলিগলি পথ, গাছপালা—সবকিছু। কী অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা জন্মভূমি আমার৷ কী নিবিড় সখ্য ছিল সবকিছুর সঙ্গে। যে দেশে যতই প্রাচুর্য থাকুক, দেশের আলোবাতাস কি সেখানে মেলে! যেখানে বসে গাওয়া যায়? সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি…।?
প্রশ্নঃ সংগীত নিয়ে এখন ব্যস্ততা কেমন?
মিটুল হকঃ নিজের জব, পরিবারকে সময় দিয়ে বাঁকি সময় আমি শ্রোতাদের সঙ্গে কানেক্টেড থাকার চেস্টা করি। এখানে অনেক স্টেজ শো, টিভি শো গুলোতে পারফরম্যান্স করছি l পাশাপাশি প্রচুর স্টুডিও লাইভ করছি আমার শ্রোতাদের সাথে সরাসরি কানেক্টেড থাকার জন্য। আমাদের শিল্প সংস্কৃতি এক দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এখন একই সময়ে বিচরণ করছে পুরো বিশ্বে l আমেরিকাতে বসবাসের কারনে অনেক টেকনোলজিক্যাল সুযোগ পাচ্ছি আমার পারফরমেন্স বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেয়া l বলতে পারেন আমি পৌঁছে দিচ্ছি বাংলা গান , ব্যান্ডের গান , আমাদের ঐতিহ্য , আমাদের সংস্কৃতি l সবার কাছে , বিশেষ করে আগামী প্রজন্মের কাছে l বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শ্রোতারা আমার সঙ্গে যুক্ত হোন আমার ষ্টুডিও লাইভে l এছাড়া আমার ফেসবুক পেজ Melody with Mitul থেকেও আমি তাঁদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকি l
প্রশ্নঃ আপনার নতুন মৌলিক গান শ্রোতারা কবে পাচ্ছেন?
মিটুল হকঃ বেশকিছু মিউজিক রেডি করেছি, কিছু গানও হাতে আছে। একটু সময় নিয়েই সেগুলো তৈরি করছি। আমি আশা করছি আমার শ্রোতারা খুব তাড়াতাড়ি ভালো কিছু গান উপহার পেতে যাচ্ছেন।
প্রশ্নঃ বিদেশের মাটিতে বসে বাংলা গান নিয়ে কাজ করাটা কী চ্যালেজিং?
মিটুল হকঃ অনেক চ্যালেজিং। ব্যস্ততা ছাড়াও মৌলিক কিছু করাটা খুবই চ্যালেঞ্জিং l বিদেশের মাটিতে যে বাংলা ব্যান্ড গুলো আছে , স্বাধীনতার পর কতগুলো ব্যান্ড কতগুলো এ্যালবাম করেছেন? আসলে এখানে সবাই জীবন যুদ্ধে এতো ব্যস্ত , গানের পেছনে সময় দেয়াটা আসলেই সৌখিনতা l তারপরেও আমি বাংলা গানের চর্চা করে যাচ্ছি l
প্রশ্নঃ আপনার সংগীত নিয়ে ফিউচার প্লান কী?
মিটুল হকঃ বিশ্বের পরিবর্তনশীল সংগীত জগৎ থেকে যেন বাংলা ব্যান্ড সংগীত হারিয়ে না যায়। এবং আমাদের নতুন প্রজন্ম যারা দেশের বাইরে বসবাস করছে তাদের কাছে বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীত ও তার ইতিহাস তুলে ধরা। এই প্রত্যাশা নিয়েই আমি আমার গানের কাজ করে যাব।…… ( চলবে) ।