টোকিওতে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত স্থান একাধিক রয়েছে। এদের মধ্যে টোকিও কিতা-কু ওয়ার্ডের ওওজি রেল স্টেশন সংলগ্ন আসুকায়ামা উদ্যান অন্যতম প্রধান। এখানে তিনি সর্বমোট তিনবার পা রেখেছিলেন বলে জানা যায়। ১৯১৬ সালে প্রথম, ১৯২৪ সালে দ্বিতীয় এবং ১৯২৯ সালে তৃতীয়বারের মতো। আসুকায়ামা আসলে একটি পাহাড়। এখানে শিবুসাওয়া এইইচির গ্রীষ্মাবাস ছিল মেইজি, তাইশোও এবং শোওয়া যুগে তাঁর জীবদ্দশায়। আধুনিক জাপান যেকজন জাপানি গড়ে তুলেছিলেন তিনি তাঁদের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কারিগর।
সামুরাই বংশোদ্ভূত প্রবল প্রতাপশালী শিল্পপতি, প্রথম ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা, আমলা এবং সমাজ সংস্কারক শিবুসাওয়া ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরম ভক্ত ও শুভাকাঙক্ষী। কথিত আছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হলে পরে জাপানি নাগরিকদের প্রবল আগ্রহে সাড়া দিয়ে তিনিই কবিগুরুকে জাপানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তবে রবীন্দ্রনাথ দুজন সঙ্গী যথাক্রমে তরুণ চিত্রশিল্পী মুকুলচন্দ্র দে এবং সেক্রেটারি অ্যান্ডুজসহ নিজ খরচেই জাপানে এসেছিলেন ১৯১৬ সালে এবং একটানা প্রায় তিন মাস অবস্থান করেছিলেন।
শিবুসাওয়া—তাঁর নিজেরও প্রচুর আগ্রহ ছিল রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য, কারণ কবিগুরুর শিক্ষাদর্শন, বিশ্বজনীন শান্তিবাদ এবং ঋষিসুলভ ব্যক্তিত্ব তাঁকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছিল। তাই তিনবারই তাঁকে আসুকায়ামার গ্রীষ্মাবাসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, সংবর্ধনা দিয়েছেন, মতবিনিময় করেছেন দোভাষীর মাধ্যমে, এমনকি শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয়ের জন্য মোটা অংকের চাঁদাও প্রদান করেছেন। বিভিন্ন লেখায় আমি লিখেছি সেইসব ইতিহাস, গ্রন্থভুক্তও হয়েছে।
যখনই সময় পাই এখানে চলে আসি। ঘুরে ঘুরে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করি, নিজের লেখা গ্রন্থ পাঠ করি। এখানে রবীন্দ্রনাথের একটি স্মৃতিফলক স্থাপনের জন্য চেষ্টা করে চলেছি। টোকিওর কোথাও নেই কবিগুরুর একটি স্মৃতিফলক। অথচ প্রয়োজন রয়েছে। ইচ্ছে করলে ভারত সরকার বা বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করতেই পারে। কিন্তু সেদিকে তাদের আগ্রহ বা সদিচ্ছা নেই বললেই চলে। থাকলে এতদিনে হয়ে যেত।
টোকিও ১২.৩.২০২১
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও গবেষক