ইতিহাস কথা বলে। জেমী হাফিজ

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের পর মেজর জিয়ার কর্মকান্ডে মেজর জিয়া যে পাকিস্থান এর দালাল, তা পরিস্কার হয়ে ওঠে। ইতিহাস যারা জানে না তারা ওই ঘোষণার জ্ঞানটুকু রাখে আর ঐ ঘোষণাতেই শুধু সীমাবদ্ধ থাকে। একটি জাতির (১৯৪৭-৭১)দীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রাম-আন্দোলন-রক্তক্ষয়ের কোন মূল্যই যেনো নেই।

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন থেকেই ৬ দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু।
সে সময় ৬ দফার পক্ষে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দাঁড়াতে পারেন নি।
বঙ্গবন্ধু তাঁর দূরদৃষ্টি দিয়ে ৬ দফার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন।
৬ দফার পক্ষে জনগনের রায় গ্রহণের লক্ষ্যেই ১৯৭০ এর নির্বাচনে অংশ নেন।
এ নির্বাচন ছিল মূলত বাংলার জনগণের ৬ দফার প্রতি সমর্থন আদায় করা।
তিনি তার এই সমর্থনের ভিত্তি কে স্বাধীনতা সংগ্রাম কে মুক্তির সংগ্রামে রূপ দেন।
তিনি ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে জাতিকে তা সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন।
যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় সারাদেশ।
বঙ্গবন্ধু ২৬মার্চের প্রথম প্রহরে ঘোষণা দেন স্বাধীনতার। সে ঘোষণার কপি তিনি চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেন। চট্টগ্রামের তৎকালিন আওয়ামীলীগ নেতা এম এ হান্নান ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে সেই ঘোষণা একাধিকবার পাঠ করেন।

পাকিস্তানী সেনাবাহিনীতে চাকুরীরত মেজর জিয়া মার্চ ১৯৭১-এর শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রামে এসেছিলেন সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে।
২৬ শে র্মাচ নয় ২৭ মার্চ মেজর জিয়া একটি বিভ্রান্তি কর ঘোষণা দিলে চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ তার ওপর রুষ্ঠ হন।
২৮ মার্চ একই কাজ করলে জিয়া কে ডেকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কৈফিয়ত চান।
তখন জিয়া তার ভুল স্বীকার করে নেতৃবৃন্দের লিখে দেয়া ঘোষণা ২৯ মার্চ পাঠ করেন।

বংঙ্গবন্ধুর ডাকে গড়ে উঠা সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলন এর অংশ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে চট্রগ্রামের কালুলঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্থপতি বেলাল মোহাম্মদ।
জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষনা পাঠ করার ১৮ ঘন্টা আগে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ হান্নান এই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ করেন যা কয়েক দফা প্রচার করা হয়।

তার আগে ২৫শে র্মাচ অপা‌রেশন সার্চ লাইট এক রাতে কাঁ‌পি‌য়ে দিয়েছিল প্রায় ৩০হাজার বাঙালীর জীবনদান।

রাজার বাগ পু‌লিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যালয় ছাত্রাবাস গুলোতে। ২৫শে মার্চ রাত থেকেই ইপিআর এর টেলেক্স ও ওয়্যার লেস মেশিন থেকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষনা করেছেন তা প্রচার করা হচ্ছে।
২৬শে র্মাচ সকালে মেজর রফিক যুদ্ধ করছেন (কুমিরার যুদ্ধ)।
রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পুলিশ, পিলখানার ইপিআরএর জোয়ানরা ও পুরান ঢাকার যোদ্ধারা শুরু করে দেন মুক্তিযুদ্ধ।

এই বাংলার কথা বলতে গিয়ে বিশ্বটাকে কাঁপিয়ে দিলো কার সে কন্ঠস্বর। মুজিবর সে যে মুজিবর, জয় বাংলা বলে রে ভাই। এই বাংলার কথা বলতে গিয়ে বিশ্ব টাকে কাঁপিয়ে দিলো কার সে কন্ঠস্বর? মুজিবর সে যে মুজিবর। জয় বাংলা বলে রে ভাই।

বঙ্গবন্ধুর সারে ৩ বছরের শাষনামলে কত সময় ধরে এই এক দলীয় শাষন কায়েম বহাল ছিল অর্থাৎ কবে চালু হয়ে ও কবে সমাপ্ত হয়েছিল?

বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যখন কেউ অভিযোগ করে,
তখন বিনীত ভাবে তার কাছে জানতে চাই?
জানা থাকলে বা জানা না থাকলে দয়া করে জেনে জানাবেন।
আমার মতামত আপনাকে ধারন করতে হবেনা,
কিন্তু সত্যটা জানতে হবে এবং সব মানুষকে সত্যটা জানাতে হবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মাতৃভুমির জনগনকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বলেই,
এই স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক আমরা।
বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন বলেই,
জন্মেছে কোটি কোটি মানুষের মুখে হাসি।
বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন বলেই,
জন্মেছে এই দেশ।
বঙ্গবন্ধুর আরেক নাম স্বাধীন বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর ৫৪ বছরের জীবনে ১৮ বার, ৪৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন বলেই, আমরা হতে পেরেছি স্বাধীন বাঙ্গালি জাতি।
বঙ্গবন্ধুর মত রাজনৈতিক নেতা ছিলেন বলেই-
আজ আমরা লাল সবুজ পতাকা উড়াতে পারছি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পড় বেঁচেছিলেন সারে ৩ বছর অর্থাৎ ১৩১৪দিন।
বুক ফেটে হৃদয় হিংস্র হতে চায়, কিন্তু কিছু করেও আর ফিরবেন না বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
বঙ্গবন্ধুকে আল্লাহ্ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।

এটা সবাই জানে, অস্বীকার করার কোন উপায় নেই,
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের দলীয় পরিমন্ডল পেরিয়ে সমগ্র জাতীর নেতা হয়েছিলেন ৭১ এর আগেই,
বঙ্গবন্ধু ছিলেন সমগ্র বাঙালীর নেতা।
সেইজন্য আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থানের বাইরে থেকেও সমগ্র জাতী নৌকায় ভোট দিয়েছিল এটাই ইতিহাস।
তারপরও কারা যেন তখন প্রচার- প্রপাকান্ডো করেছিল, বঙ্গবন্ধু সি আই এর এজেন্ট,
৬ দফা নাকি সি আই এর দলিল,
মহান মুক্তিযুদ্ধ নাকি দুই কুকুরের কামড়া কামড়ি?
জানিনা তাদের আপনি কি বলবেন?
খুনিদের সুরে যারা কথা বলে,
তাদেরকেও কিন্তু আমি খুনি বলি।

সকলকে মনে রাখতে হবে, তখনও যেমন বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বিরোধী মানুষ ছিল,
এখনও তেমনি ধরনের মানুষ বিদ্যমান।
কোন পরিস্থতিতে কি করতে হবে তা একমাত্র বুঝতে পেরেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।
তাই বলেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নৌকা জিততে পেরেছিলো এটাই ইতিহাস।

জামাতি আর বামাতিদের ব্যাপক বিরোধীতার কারনে নৌকার বিপরীতেও ৩৬% ভোট পরেছিল।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সাধারন মানুষের তেমন বিরুদ্ধাচারন পরিলক্ষন করা যায়নি।
এদেশে কতিপয় খুনি আমেরিকার ব্লু প্রিন্ট অনুযায়ী ৭৫ এর ১৫আগষ্ট এই রক্তাক্ত অধ্যায় ঘটিয়েছিল।
৫০ বছর পরও আজো লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে।
আমাদের এ লড়াইয়ে শত্রুদের পরাজিত করতেই হবে, আজ মহান স্বাধীনতা দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

১৯৩৬ সালে পিতা মনসুর রহমান ও মাতা জাহানারা খাতুনের পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন জিয়াউর রহমান। কলকাতায় চাকুরি করতেন মনসুর রহমান,১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পূর্ব বাংলায় না ফিরে জিয়াউর রহমান এর পিতা মনসুর রহমান করাচিতে চলে যান। জিয়াউর রহমান এর পিতৃ পুরুষের বসত ভিটা বগুড়ার গাবতলী হলেও এই বসত ভিটার সাথে পিতা মনসুর রহমানের তেমন কোন সম্পর্ক ছিলনা।
জিয়াউর রহমান এর শৈশব, কৈশর, ও স্কুল জীবন বেড়ে ওঠে পাকিস্থানের করাচিতে।

জিয়া১৯৫২ সালে করাচি একাডেমী স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় পাশ করেন। জিয়ার আবশ্যিক বিষয় হিসেবে মাতৃভাষা র্উদ্দু পড়েন। সেই থেকে শুরু পরবর্তী সময়ে আর কখনো বাংলা পড়তে হয়নি, বাংলায় কথা বলার প্রয়োজনও পড়েনি। পাকিস্থানের মানসিকতায় বেড়ে উঠা জিয়ার সে কারনেই সাবলীলতা ছিলনা বাংলা উচ্চারনে।

জিয়াউর রহমান ১৯৫৩ সালে পাকিস্থান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫৫-৬৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্থান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে এপ্রিল মাসে পূর্ববাংলায় ঢাকার জয়দেবপুরে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ২য় ব্যাটালিয়নে সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে বদলী হয়ে আসেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের পর জিয়াউর রহমান যে পাকিস্থানের দালাল তা তার কর্মকান্ডে পরিস্কার হয়ে ওঠে। জাতির জনককে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সংবিধানকে তছনছ করে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, সেটা চালু করে। জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে পতাকা দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনার মূল্যবোধকে ভূলুণ্ঠিত করে। খালেদা জিয়া সেখানেই থেমে থাকেনি। ৩০ লাখ শহীদ যা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। বাংলার মাটিতে বসে খালেদা জিয়া বললেন যে ৩০ লাখ শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ আছে। ধিক্কার দেওয়া ছাড়া,ঘৃণা প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু বলার নেই। পৃথিবীতে অনেক গণহত্যা হয়েছে, এত অল্প সময়ের মধ্যে এত লোক কোথাও মারা যায়নি। সেই সংখ্যা নিয়েও বেগম খালেদা জিয়া উপহাস করে, সন্দেহ প্রকাশ করে স্বাধীনতার চেতনা ও মূ্ল্যবোধের উপরে আঘাত করেন।

৭১এর ঘৃণ্য গনহত্যার কথা মেনে নিতে যে সংকোচ বোধ করে, ৭১এর জল্লাদদের মন্ত্রী করার পর এখনো ক্ষমা চাইতে যে লজ্জাবোধ করে এবং প্রকারান্তরে জঙ্গি সন্ত্রাসীদের কৌশলগত সমর্থন দান করে,তাঁর মুখোশ উম্মোচন করতে হবে। যারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে সেই দানবদের ইতিহাস কখনই ক্ষমা করবে না।যারা বুঝবার তারা ঠিকই বুঝেছে যে,কারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে? তারপরও তা নিয়ে ভিন্নমত থাকে অনেক বিশিষ্টজন টকশো বাজদের।

ইতিহাস ১৯৭৫সালের ১৫আগাষ্টের সেই কালো রাতের কাপুরুষ দানবদের ক্ষমা করে নাই। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতা কারী যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদরদের বাংলার মাটিতে বিচার হয়েছে কোন জারী-জুরি কাজে আসে নাই। বাংলাদেশের বুক থেকে ওইসব ব্যক্তি ও দল যারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে তারা নিশ্চিহ্ন হবে একদিন, সে দিনই হবে সবচেয়ে আনন্দের দিন আমাদের। সেই দিন আর বেশী দুরে নয়।
জেমী হাফিজ———-

২৬/৩/২০২১

ইতিহাস কথা বলেজেমী হাফিজ
Comments (0)
Add Comment