জাপানে এই পর্যন্ত পরিভ্রমণকৃত বৌদ্ধ মন্দিরের মধ্যে এমন মন্দির আর দেখিনি। নামটি যেমন অদ্ভুত তেমনি এর সুনামও হিমালয়সমান।
কিয়োতো শহরের এক পাহাড়ের উপরে অবস্থিত প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো (প্রতিষ্ঠা ১৭২৩ খ্রি:) এই মন্দিরের নাম মিয়োতোকুযান-কেগোনজি কিন্তু এটা যেনামে প্রসিদ্ধ তা হল ‘সুযুমুশিদেরা’ অর্থাৎ ‘ঝিঁঝিঁপোকামন্দির’।
এই মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রায় ৫০০ ঝিঁঁঝিঁপোকা প্রতিপালিত হচ্ছে কৃত্রিমভাবে। ঝিঁঝিঁপোকা জাপানে গ্রীষ্মকালে জন্মগ্রহণ করে এবং শীত এলেই মরে যায়, বাঁচে মাত্র ১১০ দিন। এই মন্দিরে সেই ঝিঁঝিঁপোকা সারা বছরই দেখতে পাওয়া যায়। সারাদিনই এরা অবিরাম ডেকে চলেছে।
এই মন্দিরের সুনাম হচ্ছে যে, যারা এখানে এসে নিজের অভিলাষ ব্যক্ত করে প্রার্থনা করবেন তাদের অভিলাষ বা ইচ্ছা পূরণ করবেন অধিষ্ঠিত কল্যাণবর্ষক ওজিযোওসামা বা জিযোও বোধিসত্ত্ব। সংস্কৃতি ভাষায় যাকে বলা হয় ক্ষিতিগর্ভ। তিনি খড়ের তৈরি চটি পায়ে পরেন কিন্তু জাপানের সব ওজিযোওসামা নগ্নপদী। এখানেই শুধু ব্যতিক্রম। হেঁটে হেঁটে তিনি ভক্তদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তাদের আশা, অভিলাষ বা মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। এবং বহু মানুষের ইচ্ছে বাস্তবায়িত হয়েছে বলেও জানা যায়। তাই সারাবছরই এই মন্দিরে ভিড় লেগেই থাকে।
ভক্তদের মধ্যে অনেকেই একাধিকবার এখানে এসেছেন। একজনের কথা বললেন প্রধান পুরোহিত যে, ৮০ বার এসেছেন! তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সবচে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই মন্দির সাম্প্রতিককালে।
শুধু হাত জোড় করে নমঃ নমঃ করলেই হবে না। প্রার্থনা করার নিয়মকানুন রয়েছে যা ব্যাখ্যা করে থাকেন প্রধান পুরোহিত সবুজ চা ও মিষ্টি জাতীয় পিঠার আস্বাদগ্রহণ সমাবেশে।
সেই সভাগৃহেই দেখতে পাওয়া যায় বেশ কয়েকটি কাঁচের বাক্সে ঝিঁঝিঁপোকা। প্রায় ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার লাইট জ্বালিয়ে কাঠের স্তুপের মধ্যে প্রতিপালিত হচ্ছে পোকাগুলো। ডেকে চলেছে ক্রমাগত।
ঝিঁঝিঁপোকার মন্দির জাপানের বাস্তব্যবিদ্যার (ইকোলজি) একটি অনন্য উদাহরণ বলা যায়। এই মন্দিরের প্রাঙ্গণে রয়েছে তেইএন বা ঐতিহ্যবাহী বাগান। যেখানে রয়েছে মাটি ও বুনোছনগাছ দিয়ে নির্মিত একটি ঘর। কীসের ঘর জানতে পারিনি। এরকম ঘর আর কোনো বাগানে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। দেখতে যেন ভারতবর্ষের প্রাচীন ঋষিগৃহ বা গুরুগৃহ।
টোকিও ৩০.৩.২০২১
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও গবেষক