৩০ বছর আগে ১৯৯১ইং সালে বাংলা ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ। দিনাজপুরে প্রথম সম্মিলিত ভাবে বৈশাখী উৎসব ও মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয় দিনাজপুর একাডেমী স্কুল প্রাঙ্গনে।
স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ এর দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম শেষে,১৯৯০ এ মনে হলো আপততঃদৃষ্টে অবশেষে গনতন্ত্রের বিজয় হলো, মানুষের মনে নতুন ভাবে স্বপ্ন দেখার আশা জাগলো। মনে হলো আমার মধ্যে সেই স্বপ্নের প্রভাব পড়লো আরো কিছু একটা করার। আমার নেতৃত্বের প্রতি টান ছিলো শৈশব থেকেই, আর আমার প্রাণের নেশা ছিলো স্কাউটিং, যুব রেড ক্রিসেন্ট, শিশু একাডেমী, কচি-কাঁচার মেলা সহ প্রভৃতি সাংস্কৃতিক সংগঠনে যাওয়া- আসা। সেই নেশার কারনেই স্কুল বয়সেই জড়িয়ে পড়ি ছাত্র রাজনীতিতে, সেই স্কুল ও কলেজেই ছাত্র নেতা বনে যাই।
আমার পদচারনা ছিলো কবিতার মন্চ থেকে শুরু করে ছাত্র রাজনীতির মন্চে। ছাত্র রাজনীতির কারনেই পরিচয় হয় সেই সময় দিনাজপুর সরকারী কলেজের প্রশাসন থেকে শুরু করে দিনাজপুর জেলা প্রশাসন এর সাথে। পরিচয় হতে থাকে সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠকসহ আরো অনেক মানুষের সাথে।
দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের তৎকালীন সাধারন সম্পাদক চিত্তঘোষ ছিলেন দৈনিকপ্রতিদিন এর বার্তা সম্পাদক। তিনি ছিলেন আমার বড় ভাই/ দাদার মতো, তাঁর ছোট ভাই সুধীর ছিলো আমার একাডেমী স্কুলের সহপাঠী। তাই চিত্ত ঘোষকে দাদা বলেই সম্বোধন করতাম।
একদিন সন্ধায়, আমি যাই,দৈনিক প্রতিদিন অফিসে। চিত্তদার সাথে অনেক আলাপ আলোচনা শেষে বললাম, কয়েক বছর ধরে দিনাজপুরে বৈশাখের কোন অনুষ্ঠান হতে দেখছিনা। কয়েক বছর আগে ১৯৮৭ সালে তাও ৪বছর আগে,বিসিক দিনাজপুর লোক ভবন হলের ভিতরে ছোট ছোট কয়েকটি ষ্টল নিয়ে বৈশাখ মেলা অনুষ্ঠান করতো। বিগত ৪ বৎসর ধরে বিসিক দিনাজপুরে কোন বৈশাখী মেলা বা অনুষ্ঠান করে নাই বা হয় নাই।
দিনাজপুরের ঐতিহ্য তথা বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে দিনাজপুরে বৈশাখী মেলা করতে পারিনা, দাদা?
দিনাজপুরে আমরা সম্মিলিত ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের আদলে আনন্দ মঙ্গল শোভা যাত্রা কী, করতে পারি না ?
দেশের কোথায় কী হচ্ছে, হোক।
মানুষ কে কী ভাবছে, ভাবুক।
যে যাই ভাবুক, মেলা আমাদের করতেই হবে, দাদা।
আমরা যদি সকলে মিলে এগিয়ে না আসি তবে আমাদের বিপক্ষের শক্তি ক্রমেই শক্তি শালী হবে। আমি নাছোর বান্দা, দাদা কে রাজী করিয়ে ছাড়লাম। আমার আলোচনা শুনে, দাদা আমাকে পুর্ন সমর্থন জানালো। আমরা দুজনে একমত হলাম, বর্ষবরণ উৎসব ও বৈশাখী মেলা আয়োজন করতে হবে। আমি ও দাদা দুজনে মিলে বৈশাখী মেলা বাস্তবায়নের জন্য দিনাজপুরের বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে একটা সভা করার পরিকল্পনা করে ফেললাম। বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট নাগরিকদের একটা তালিকা করলাম ১০০ জনের।
দাদা পরের দিন আমাকে আসতে বললো। পরের দিন দাদা আমাকে একটা আমন্ত্রণ পত্র লিখে দিলো। আমন্ত্রণ পত্র হাতে পেয়ে আমি দারুন খুশি। আমন্ত্রণ পত্রটা সুন্দর হাতের লেখা দিয়ে লিখে নিয়ে ফটোকপি করে তালিকা অনুযায়ী বিতরনের ব্যবস্থা করলাম। সাংবাদিক মরহুম আহসানুল আলম সাথী আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। দুজন মিলেই তালিকা অনুযায়ী ১০০ জন বিশিষ্ট নাগরিককে মিটিংয়ের আমন্ত্রন পত্র বিলি করলাম।
১৯৯১ সালের ৩০ মার্চ সকাল ১০টায় দিনাজপুর প্রেসক্লাব নিমতলাস্থ কার্যালয়ে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হলো। সভায় সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব মোঃ শাহজাহান শাহ্ কে (প্রয়াত)আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক গোলাম নবী দুলাল কে সদস্য সচিব করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট নববর্ষ উদযাপন পরিষদ গঠন করা হলো।
উৎসব কমিটিতে বিশিষ্ট জনদের মধ্যে আরো ছিলেন,সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মরহুম আমিনুল হক মাষ্টার, সাংবাদিক মরহুম আহসানুল আলম সাথী, গ্রন্থাগারিক মরহুম আবুল কালাম আজাদ, মরহুম মির্জা আনোয়ারুল ইসলাম তানু, মরহুম আব্দুস সাত্তার, বিশিষ্ট ব্যাংকার এম, এ বারী, সাংবাদিক চিত্ত ঘোষ, সাংবাদিক কামরুল হুদা হেলাল, সাংবাদিক আসাদ উল্লা সরকার আসাদ, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান শফিকুল হক ছুটু, হাফিজুল ইসলাম জেমী, হারুনুর রশিদ রাজা, নুরুল মতিন সৈকত,রাজিউদ্দিন চৌধুরী ডাব্লিউ, মোল্লাহ শরীফ লজেন্স, আমিরুল ইসলাম জুলিয়াস প্রমুখ।
আজ ১ বৈশাখ,১৪২৮ বঙ্গাব্দ নববর্ষ,
ও ১৪ এপ্রিল,২০২১ খ্রিষ্টাব্দ,
এটা আমরা সবাই জানি।
পরের দিন থেকে আর জানি না।
শুধু পহেলা বৈশাখে,
পোশাকি বাঙালি না সেজে,
আসুন, আমরা সবাই প্রতিদিন,
মনে প্রানে বাঙালী থাকি।
খ্রিষ্টাব্দের পাশাপাশি বঙ্গাব্দকেও মনে রাখি।
আগামীর পদযাত্রা আমাদের মঙ্গলময় ও সুন্দর হোক।
সবার জীবন সুখ শান্তিতে ভরে উঠুক। সকলের জন্য অনেক শুভ কামনা আর ফুলেল শুভেচ্ছা।
১৯৮৯ সালে প্রথম বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মঙ্গল-শোভা যাত্রার আয়োজন করে চারু কলা অনুষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা কে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয় ইউনেসকো। ঢাকার প্রথম মঙ্গল শোভা যাত্রার পোস্টারটি করেন শিল্পী তরুন ঘোষ।