পবিত্র কুরআন শরীফে নামাজ কায়েম করতে বলা হয়েছে অনেক বার শুধু পড়তে নয়। নামাজ কায়েম করা বলতে কি বুঝায়? আমরা নামাজ পড়ি। তাতেই কি নামাজ কায়েম হয় নাকি নামাজ কায়েম করতে আরও কিছু করার দরকার আছে।আমরা কত কিই না করছি। তাতে নামাজের আদর্শ মেনে চলছি কিনা?, আমরা মুসলমানগন নামাজ পড়ি কিন্তু অশান্তি লেগেই আছে এবং সামাজিক অবক্ষয় উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন? এই প্রশ্ন গুলো সব সময়ই মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের গভীর ভাবে ভাবা উচিৎ বলে মনে করি। কারণ নামাজ যদি কায়েমই করতে না পারি তাহলে পড়ছি কেন? ঘাটতিটা কোথায় খুঁজে বের করা জরুরী।
১। নামাজ পড়তে আমরা কি করি বা করতে হয়।
নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম এবং ফরজ। মুসলমানগন নিয়মিত নামাজ পড়ে যাচ্ছি। আল্লাহর হুকুম পালন করছি। নামাজে যে কাজগুলো সাধারণত আমরা করি তা হলো প্রথমে নামাজ পড়ার ইচ্ছা করি,তারপর প্রস্তুতি গ্রহণ করি, পবিত্র পোশাক পরিধান করি, অজু করি, শরীর পবিত্র করি, নামাজের জন্য জায়গা নির্ধারণ করি, জায়নামাজ বিছাই, নামাজের জন্য নিয়ত করি, নির্দিষ্ঠ সুরা পাঠ করি, রুকু সেজদা করি, নির্দিষ্ট রাকাত নামাজ পড়ি, শেষে মহান আল্লাহ তালার নিকট নিজের জন্য, পরিবারের জন্য ও অন্যদের কল্যান প্রার্থনা করি।
জামাতে নামাজ পড়লে সওয়াব বেশি। তাই আমরা জামাতে নামাজ পড়ি। সেখানে আমরা কি করি পূর্বে বর্নিত মত অজু করে জামাতে নামাজ পড়ার জন্য একত্রে সুশৃঙ্খলভাবে কাতারবন্দি হয়ে দাড়াই, সেখানে ছোট বড়,ধনী গরীর, শিক্ষিত অশিক্ষিত, বস কর্মচারী, রাজা প্রজা কোন ভেদাভেদ থাকে না ,সবাই এক সারিতে দাড়িয়ে একজন ইমামের পিছনে সুশৃঙ্খলভাবে ইমামের নেতৃত্বে নামাজ আদায় করি।
২। নামাজ আমাদের কি শিক্ষা দেয়।
নামাজ আমাদের সৎ উদ্দেশ্য থাকা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, সৎ নিয়ত থাকা, সততা রক্ষা করে চলা, মানুষে মানুষে সকল ভেদাভেদ ভুলে যাওয়া, অহংকার বর্জন করা,ঐক্যবদ্ধ থাকা, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা, মামবিক মূল্যবোধ ধারণ করা, সহনশীলতা, ন্যায়পরায়নত, সদব্যবহার, ধৈর্যধারণ, নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা শীল হওয়া, একক নেতার নির্দেশে কাজ করা, নিয়ম ও সময়মত কর্ম সম্পাদন করা, সৃষ্টি কর্তার নিকট নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করা এবং একমাত্র তাঁরই নিকট সকল কিছুর জন্য প্রার্থনা করা।
৩। নামাজের আদর্শ কি কি।
সংক্ষেপে বলা যায় নামাজের আদর্শ হচ্ছে
ক) সকল কাজের পিছনে সৎ ইচ্ছা থাকতে হবে। মুখে এক অন্তরে অন্য কিছু থাকা চলবে না এবং অসৎ কাজ বর্জন করতে হবে।পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা মেনে হাদিস ও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনাদর্শ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করতে হবে।
খ) জীবন চলার পথে সব সময় শরীর ও মন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সকল প্রকারের নোংরা কাজ থেকে নিজেকে দুরে রাখতে হবে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যায় ও দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে।
গ) প্রতিটি কাজের নিয়ত বা উদ্দেশ্য সৎ হতে হবে। অসৎ উদ্দেশ্য প্রনোদিত সকল কাজ পরিহার করতে হবে। নিয়ত সৎ না হলে কোন ভালো কাজ করা যায় না।
ঘ) নিয়ম মেনে সঠিক সময়ে সকল কাজ করতে হবে। নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলতে হবে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কোন কাজ করা যাবে না।
ঙ) মানুষে মানুষে সর্ব প্রকার ভেদাভেদ ভুলে যেতে হবে। ধনী গরীব, শিক্ষিত অশিক্ষিত, রাজা প্রজা, নেতা কর্মী, অফিসের বস পিয়ন,মালিক দিনমজুর, মটর গাড়ি ওয়ালা, রিক্সা ওয়ালা, সাদা কালো, লম্বা বেঁটে, সুদ্র ভদ্রলোক, মানুষ হিসেবে সবাই এক কোন ভেদাভেদ থাকবে না। কোন অহংকার থাকবে না।সাম্যতার ভিত্তিতে সমাজ পরিচালনা ও প্রয়োজন হলে একে অপরের প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়াতে হবে।
চ) জীবনের সকল কাজকর্মে নেতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। যতক্ষন তিনি নেতা থাকবেন তাঁর নেতৃত্ব মেনে চলতে হবে।
ছ) জীবন হবে সুশৃঙ্খল। কোন কাজে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না এবং উশৃংখল জীবন যাপন করা যাবে না। মনে কোন হিংসা বিদ্বেষ ধারণ করা যাবে না।
জ) প্রতিটি ভালো কাজে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং সেখানেই মংগল নিহিত আছে।
ঝ) শুধু মাত্র আল্লাহর প্রতি অনুগত থাকতে হবে এবং তাঁর কাছেই সকল প্রার্থনা করতে হবে। অন্য কারো কাছে চাইবেন না। আল্লাহ সর্বশক্তি বান এবং তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই এই বিস্বাস স্থাপন করে তাঁর ইবাদত করতে হবে।
নামাজের এই সুন্দর আদর্শ গুলো কি আদৌ আমরা পালন করছি ? যদি আমরা পরিপূর্ণ ভাবে ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে এবং সামাজিক ক্ষেত্রে মেনে চলি তাহলেই নামাজ কায়েম করা হবে বলে আমার বিস্বাস। সুতরাং শুধু নামাজ পড়লেই নামাজ কায়েম হলো এটা ভুল।
সত্যিকার অর্থে নামাজ পড়লে ও কায়েম করতে পারলে পরিবারে, সমাজে ও দেশে কোথাও কোন অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি, হিংসা বিদ্বেষ উশৃংখলতা, ব্যবিচার,দুঃশাসন, পাপচার, দাঙ্গা হাঙ্গামা, মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ থাকবে না এবং কোন অন্যায় অবিচার থাকবে না। জীবন হবে সুন্দর, সমাজে আসবে শান্তি এবং দেশ হবে দুর্নীতি মুক্ত, সকল নাগরিক ভোগ করবে আইনের শাসন, মানবাধিকার। সর্বপরি সবাই পাব অহংকার, হিংসা বিদ্বেষ মুক্ত সুন্দর এক বসবাস যোগ্য পৃথিবী।
মহান আল্লাহ তালা আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ ভাবে নামাজের আদর্শ অন্তরে ধারণ ও পালন করার মাধ্যমে নামাজ পড়া ও কায়েম করার তৌফিক দান করুন। ।। আল্লাহু আকবর।।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা , আইনজীবী ও কলাম লেখক