গত ২০২০ সালের ৮ মার্চ তারিখে করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে প্রথম সনাক্ত হয়। করোনার ভয়াবহতা সারা বিশ্বেই ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপের দেশগুলো সবচেয়ে অধিক আক্রান্ত হয় এবং অর্থনৈতিকভাবে ভালো অবস্থায় থাকা সত্বেও করোনা মোকাবেলায় তারাও পূর্ণ সফল হতে পারে নাই। করোনার ভয়াবহ রূপ বর্তমানে ভারতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আশংকা করা হচ্ছে এটা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায়ও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয়। কখন কি হবে বলা যাবে না। বিষয়টির প্রতি সতর্ক থাকা, সরকার ও সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা এবং সাবধান হওয়ার কোন বিকল্প নাই। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যথা সময়ে স্বাস্থ্য বিধি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা কেউ তা সঠিকভাবে পালন করছি না।
করোনা ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে নানাজন নানা বিতর্ক সৃষ্টি করে চলছে। কেউ বলছে করোনা বড়লোক, ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের রোগ, কেউ বলছে গরীব মানুষের করোনা হবে না, কেউ বলছে গ্রামের লোকের করোনা হয় না আবার কতিপয় ধর্মীয় নেতা ও কিছু গোঁড়া লোকজন বলছে যারা মুসলমান তাদের করোনা হবে না ইত্যাদি নানা ভাবে ব্যাখ্যা করে যাচ্ছেন। অথচ ঐ সকল কথার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই জানা স্বত্বেও তারা স্বাস্থ্য বিধি মানতে নারাজ। সরকার লকডাউন দিয়ে, প্রশাসন দিয়ে, ডাক্তার, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ও পুলিশ দিয়ে জনগনকে সচেতন করা ও করোনা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে এবং তাঁরা সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছে অথচ মনে হচ্ছে অনেকেই স্বাস্থ্য বিধি না মানতে বদ্ধপরিকর।
তারা কল কারখানা, দোকান পাঠ, সপিংমল গাড়ী চলাচল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবকিছু খোলা রাখতে রীতিমত সংগ্রাম চালাচ্ছে। এসব কিছু দেখে মনে হয় এ যেন করোনা নিয়ন্ত্রণ নয় ” সরকার বনাম জনগনের যুদ্ধ ” চলছে।সরকার যতটুকু করেছে হয়তো অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সফল হয় নাই কিন্তু সীমিত স্বামর্থ্য ও ধৈর্য নিয়ে যে টুকু করেছে তার প্রশংসা করতেই হবে। আশ্চর্যের ব্যাপার এর মধ্য দিয়ে প্রায় সব-কটি রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটায় ব্যস্ত, ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায় মুনাফা নিয়ে ব্যস্ত,প্রাইভেট হাসপাতালগুলো লাভের অংক কসছে, কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী এর সুযোগ নিয়ে অর্থ উপার্জন ও আত্মসৎ করায় ব্যস্ত। এগুলো সবই দায়িত্বহীনতা এবং লোভ লালসার নজির। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি করোনা ডাক্তার, আইন জীবী, ব্যবসায়ী, পুলিশ, প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিকের মালিক, সরকারি কর্ম কর্তা কর্ম চারী, সাধারণ মানুষ কাউকেই ছাড়ছে না।সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন এবং ইতিমধ্যে অনেকেই মৃত্যু বরণও করেছেন।কিন্তু কেন যেন কোথাও নৈতিকতার প্রমাণ মিলচ্ছে না।
করোনা নিয়ন্ত্রণ করা কোন সরকারেরই একার কাজ নয় সম্ভবও নয়। সরকার সহ সর্বস্তরের জনগণের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত জরুরী। সেক্ষেত্রে সামাজিক সংগঠন গুলো এবং দেশের বেশিরভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব কারী রাজনৈতিক দল গুলো সত্যিকার অর্থে অনেক বেশি ভুমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য করছি রাজনৈতিক দল গুলো বিভিন্ন ভাবে সহকারের শুধু সমালোচনাই করছে কিন্তু তাদের জনগণকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য সচেতন করার লক্ষ্যে যেভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন ও সরকারকে সহযোগিতা করা এবং সরকারকে পরামর্শ দেওয়া দরকার তা তারা করছেন না।
আমাদের মনে রাখতে হবে এখন কোন রাগ অভিমানের, অবৈধভাবে মুনাফা অর্জনের বা রাজনৈতিক সুবিধা লওয়ার সময় নয়। করোনা সকলের জন্যই বিপদজনক। সেজন্য সরকার, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন,সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি সহ সর্বস্তরের লোকজনকে একত্রে সুশৃঙ্খল ভাবে আন্তরিকতার সহিত করোনা মোকাবেলায় কাজ করতে হবে। তাহলেই আল্লাহর রহমতে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে বলে আমার বিস্বাস। আর তা নাহলে বর্তমানে ভারতের অবস্থায় আমাদেরকেও পড়তে হতে পারে। সুতরাং এখনি আমাদেরকে সাবধান হতে হবে। তাই আসুন সকল ভেদাভেদ ভুলে দলমত, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দায়িত্বশীল ভুমিকা পালনের মাধ্যমে সরকারের পাশাপাশি জনগনকে সচেতন করি, নিজেরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলি ও জনগণকে মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করে কঠিন মহামারী করোনা মোকাবেলা ও নিয়ন্ত্রণ করি।
।।। মহান আল্লাহ তালা আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।।।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী ও কলাম লেখক ।