বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে কারাগারে ছিলেন। সরকারের নিকট আবেদন করার কারণে সরকার তাঁর অসুস্থতা ও মানবিক কারণ বিবেচনা করে তাঁর দন্ডের কার্যকারিতা সাময়িকভাবে স্থগিত করে তাঁকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়ে নিজ বাসায় বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন। এখন তিঁনি তাঁর পরিবারের সাথে বাসায় বসবাস করছেন। তিনি হঠাৎ করোনা আক্রান্ত হলে বাসার বাইরে “এভারকেয়ার” হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর বর্তমানে সুস্থ আছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এখন তাঁর পরিবারের ও দলের পক্ষ থেকে বিদেশে চিকিৎসা করার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে দরখাস্ত দেওয়ার পর তা অনুমোদন করা হয়নি বলে খবর পাওয়া যায়। কারণে বলা হয়েছে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অনুমতি সরকার দিতে পারবে না কারণ আইন তা অনুমোদন করে না। অন্যদিকে বিএনপি পন্থী কিছু কিছু আইনজীবী দাবী করেন যে আইনে সে সুযোগ আছে। কিন্তু তারা পরিস্কার করে আইনের বিধান উল্লেখ করেননি।
আসলে বিষয়টি কি তা ভালো করে বুঝতে হবে। কারণ বিষয়টি শুধু মাত্র আবেগ বা সরকারের ইচ্ছার উপর নয় বরন্চ তা সম্পূর্ন আইনের উপর নির্ভরশীল এবং সরকার আইনের বাইরে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী এবং বৃহত একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ার পার্ছন। তিনি নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিঁনি এতিমের জন্য বরাদ্দ কৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন এমত অভিযোগে আনীত মামলায় বিচার অন্তে দন্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপীল করলেও তা মন্জুর হয়নি। বিষয়টি বর্তমানে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। তাঁর পরিবারের দরখাস্তের প্রেক্ষিতে তাঁর অসুস্থতা বিবেচনা করে সরকার তাঁর দন্ড সাময়িক ভাবে স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে নিজ বাসায় বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন যা এখনও বহাল আছে।
বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়া ও তথায় চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে তাহলো দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার তথা দেশের সীমানার বাইরে যাওয়ার অনুমতি প্রদানের আইনগত ক্ষমতা সরকারের আছে কিনা? ইতিমধ্যে সরকারের আইন মন্ত্রনালয় ও স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে যে এরূপ আইনগত ক্ষমতা সরকারের নেই তাই বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে করা বিদেশে চিকিৎসার যাওয়ার অনুমতি চেয়ে করা দরখাস্ত অনুমোদন করা হয়নি।
আমাদের দেশের প্রচলিত আইনানুসারে একজন দন্ডপ্রাপ্ত আসামির দন্ড কমিয়ে দেওয়া, সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ করা যাবে দুই ভাবে।
১। দন্ডপ্রাপ্ত আসামি তাকে প্রদত্ত সাস্তি স্বীকার করে নিয়ে উক্ত সাস্তি মওকুফ করার জন্য দরখাস্ত দিলে সরকার ফৌজদারী কার্যবিধি এর ৪০১ ধারার বিধান মোতাবেক শর্তসাপেক্ষে অথবা বিনাশর্তে তার আংশিক বা পূর্নাঙ্গ সাস্তি মওকুফ করতে পারবেন।
২। দন্ডপ্রাপ্ত আসামী তাকে প্রদত্ত শাস্তি স্বীকার করে নিয়ে উক্ত সাস্তি মওকুফ বা মার্জনা করার জন্য দরখাস্ত দিলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁর উক্ত দরখাস্তের প্রেক্ষিতে সংবিধানের ৪৯ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে উক্ত আসামীর সাজা মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করতে পারবেন।
দেখা যায় উভয় ক্ষেত্রেই পূর্বশর্ত হলো আসামীকে তাকে প্রদত্ত সাস্তি স্বীকার করে নিতে হবে এবং দরখাস্ত দিতে হবে। শাস্তি স্বীকার না করে দরখাস্ত দিলে সরকারের অথবা মহামান্য রাষ্ট্রপতি কারোরই কিছু করার নেই।
এদিকে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে বিদেশে যেতে হলে সম্পূর্ণ সাজা ভোগ করতে হবে অথবা তার সাজা মওকুফ হতে হবে। বিকল্প কোন পথ নেই। সুতরাং বেগম খালেদা জিয়া কে বিদেশে যেতে হলে উপরোক্ত পথগুলোর যে কোন একটি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এখন প্রশ্ন আসে বেগম খালেদা জিয়া নিজেকে আপোষহীন নেত্রী হিসেবে দাবী করেন। তিনি তাঁকে প্রদত্ত দন্ড স্বীকার করে নিবেন কিনা এবং সাজা মওকুফ এর জন্য দরখাস্ত করবেন কিনা। এটাই এখন দেখার বিষয়।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ,আইনজীবী ও কলাম লেখক ।