মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ একবার অসুস্থ হলে তাঁর শরীরে অপারেশন করার প্রয়োজন হয়। সেখানকার ডাক্তার তাঁর চিকিৎসার জন্য মালয়েশিয়ার বাইরের কোন দেশে চিকিৎসা করার জন্য পরামর্শ দেয়। মাহাথির মোহাম্মদ তাতে রাজী না হয়ে তাঁর দেশেই উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল নির্মাণের নির্দেশ প্রদান করেন। এর পর নুতন হাসপাতাল নির্মাণ করে সেখানে তাঁর চিকিৎসা করা হয়। নিঃসন্দেহে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নেতা হিসেবে মাহাথির মোহাম্মদের এর এ এক উজ্জল দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৫০ বছর পার। পত্রিকান্তরে প্রকাশ বাংলাদেশ এর জন্মের পর হতেই দুর্নীতি শুরু এবং ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এক পর্যায়ে একবার নয় দুই বার নয় পরপর পাঁচ বার দুর্নীতিতে বিশ্ব চাম্পিয়ান হয়েছে। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে ও হচ্ছে। বিভিন্ন অজুহাতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মাধ্যমেও হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে ও সেই টাকা বিদেশে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
দুর্নীতির টাকা দিয়ে বিদেশে অনেকে বাড়ি ঘর বানিয়েছেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। কানাডায় বেগম পাড়া নামে একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছেন বলেও জানা যায়। অনেকের কোন বৈধ আয়ের উৎস্য না থাকা সত্বেও বিশাল বিত্ত বৈভব এর মালিক হয়েছেন এবং নির্লজ্জভাবে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। বিত্তশালী লোক, উচ্চ পদস্ত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ সকলের ছেলে মেয়েরা বিদেশে লেখা পড়া করে অথচ এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করার কোন বাস্তব সম্মত উদ্যোগ নেই।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দেখা যায় ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা সহ বিভিন্ন পর্যায়ে ক্লিনিক হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। কম্যুনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা প্রদান করেন পল্লী চিকিৎসক, ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন এম বি বি এস ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া থাকলেও তারা আসেন না, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে হাসপাতালে ডাক্তার আছে বটে কিন্তু তাঁরা ক্লিনিকে সার্ভিস দিতে সময় দেন বেশি।
সরকারি হাসপাতালে নানা অব্যবস্থাপনা তো রয়েই গেছে। কোথাও মান সম্মত চিকিৎসা নেই। তাই যখনই কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তখনই আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা চলে যায় ভারতে,থাইল্যান্ডে, সিংগাপুরে, আমেরিকায় অথবা ইউরোপের কোন দেশে। এদেশের বিত্তবান অসাধারণ মানুষগুলো বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারে কিন্তু সাধারণ মানুষের তো করুণ দশা। তাদের তো বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার মত অর্থ নেই। তাদের একমাত্র পথ সুচিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে মরে যাওয়া।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনটি রাজনৈতিক দল এবং সামরিক শাসক দেশ পরিচালনা করেছে। অনেকে তিনবার চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন। অথচ তারা কেউই এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে পারেন না। সামরিক ও বেসামরিক সরকারের কর্মকর্তা কর্মচারী, জ্ঞাত আয় বহির্ভত অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী, ব্যবসায়ী,আইনজীবী, ডাক্তার, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাংসদ, মন্ত্রী, আমলা সবার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা বিদেশে হয়। আর তাতে প্রতি বছর কষ্টার্জিত কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে।
হোসাইন মোহাম্মদ এরসাদ বিদেশে চিকিৎসা নিতেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর কানের ও চোখের সহ বিভিন্ন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর উন্নত চিকিৎসার পাওয়ার আশায় বিদেশে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়েছেন।
অথচ তাঁরা প্রত্যেকেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালীন ইচ্ছা করলে দু চারটা বিশ্ব মানের হাসপাতাল তৈরির ব্যবস্থা করতে পারতেন যেখানে তাঁরা,এদেশের অর্থ বিত্তশালী লোকজন ও সাধারণ মানুষ সুচিকিৎসা নিতে পারতেন ।চিকিৎসার জন্য বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যায় করতে হতো ন। দুঃখজনক হলেও সত্য তাঁরা ক্ষমতায় থাকাকালীন সাধারণ মানুষের সুচিকিৎসার জন্য সেভাবে কোন চিন্তাই করেন নাই।
বাংলাদেশে হাজার কোটি টাকার মালিক অনেক ধনাড্য লোক আছে বলে জানা যায়। শুনেছি এস আলম গ্রুপ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক অথচ তাদের পরিবারের একজনকে ভেন্টিলেশন মেশিন এর অভাবে চিকিৎসা নিতে না পারায় শেষে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে। যদি একটু চিন্তা করতো নিজেদের ও সাধারণ মানুষের সুচিকিৎসার জন্য তা হলে একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরি করা তাদের জন্য কোন ব্যপারই না।
ফেসবুকে দেখলাম তুরস্ক বাংলাদেশে হসপিটাল নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। আমার মনে হয় সাধারণ মানুষ সহ সকলের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য তুরস্কের প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিৎ। বুকভরা আশা নিয়ে জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করে অনেক রক্ত, ত্যাগ তিতিক্ষা, মা বোনদের ইজ্জত ও লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এদেশের মানুষ দেশটাকে স্বাধীন করেছে। আশা ছিল দেশ স্বাধীন হবে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান এর ব্যবস্থা হবে, মানুষ অধিকার নিয়ে মাথা উচু করে শান্তি পূর্ণ পরিবেশে সম্মানের সাথে জীবন যাপন করবে।
দেখা যাচ্ছে সে আশায় গুড়ে বালি। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে, দেশ দুর্নীতিতে চাম্পিয়ান হচ্ছে, সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হচ্ছে, অবিচার অনাচার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কেউ কেউ বিদেশে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে আর সাধারণ মানুষ পদেপদে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আমরা স্বাবলম্বী হতে চাই, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ চাই। নিজের দেশেই মান সম্মত শিক্ষা অর্জন করতে চাই, সাধারণ মানুষের জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা চাই। অন্য কোন দেশের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হতে চাই না। (তথ্য সংগ্রহ ফেসবুক থেকে) ।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী ও কলাম লেখক ।