গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা পরিবর্তন করা হলো যেভাবে : বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান বাংলা ১৮ই কার্তিক ১৩৭৯ সাল মোতাবেক ৪ঠা নভেম্বর, ১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে।
প্রস্তাবনা: ( ইংরেজিতে) ছিল নিম্নরূপ :

In the name of the creator, the merciful. We the people of Bangladesh having proclaimed our independence on the 26th day of 1971 and through a historic struggle for national liberation, established the independent sovereign people’s Republic of Bangladesh.

Pledging that the high ideals of Nationalism, socialism,democracy and secularism which inspired our historic people to dedicate themselves to and our brave martyrs to sacrifice their lives in the national liberation struggle shall be the fundamental principles of the constitution.
Further pledging that it shall be the fundamental aim of the state to realise through the democratic process a socialist society free from exploitation, a soceity in which the rule of law, fundamental human rights and freedom, equality and Justice, political, economic and social, will be secured for all citizens.

Affirming that it is our sacred duty to safeguard, protect and defend this constitution and maintain It’s supremacy as the embodiment of the will of the people of Bangladesh, so that we may prosper in freedom and may make our contribution towards international peace and co-operations in keeping with the progressive aspiration of mankind. In our Constituent Assembly, this eighteenth day of Kartric 1379 corresponding to the 4th day of November, 1972 A.D do hereby adopt, enact and give to ourselves this constitution.

প্রস্তাবনার কিছু সংশোধন করা হয়েছেঃ১৯৭৮ সালে সামরিক আইনের আওতায়।
THE SECOND PROCLAMATION (FIFTEENTH AMENDMENT) ORDER,1978. দ্বারা। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জনাব জেনারেল জিয়াউর রহমান হাঁ না ভোটে পাস করার পর অন্যান্য বিষয়ের সহিত প্রস্তাবনার নিম্নরূপ সংশোধন করেন।
।। সংশোধনী।।
[ সংবিধানের প্রারাম্ভে, প্রস্তাবনার উপরে নিম্নরূপ সন্নিবেশিত হইবেঃ In the name of the creator, the merciful বাদ দিয়ে তথায় লেখা হলো
” বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
(দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহের নামে)”
প্রস্তাবনায় নিম্নরূপ অধিক সংশোধন করা হয়।
(১) প্রথম অনুচ্ছেদে,” জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের” শব্দগুলির পরিবর্তে ” জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের” শব্দ গুলি প্রতিস্থাপিত হইবে, এবং
(২) দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের এর পরিবর্তে নিম্নরূপ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হইবে :
” আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগনকে জাতীয় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদ দিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গনতন্ত্র, এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচারের সেই আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে, “]
মুক্তি যুদ্ধের জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের সহিত প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান এর কোন সম্পর্ক ছিল না বলেই হয়তো বা সংবিধানের প্রস্তাবনায় ঐতিহাসিক সংগ্রামের বিষয়টি মুছে দিয়েছেন আমার ধারণা।
প্রকৃত পক্ষে ঐ সংশোধনীর মাধ্যমে
“জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের” পরিবর্তে “জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধেের ” পরিবর্তন করলেন আর
” Pledging that the high ideals of Nationalism, socialism,democracy and secularism which inspired our historic people to dedicate themselves to and our brave martyrs to sacrifice their lives in the national liberation struggle shall be the fundamental principles of the constitution.”

এই অংশটুকু বাদ দিয়ে তথায়
“আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগনকে জাতীয় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদ দিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গনতন্ত্র, এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচারের সেই আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে, ”

কোন নির্বাচিত সংসদে নয় সামরিক আইনের মাধ্যমে আনীত সংশোধনীটিতে স্বাধীনতার জন্য এদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রাম ত্যাগ তিতিক্ষার ইতিহাস এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার বিষয়টি সংবিধান থেকে সম্পূর্ণ ভাবে বাদ দিয়ে দেওয়া হলো। অথচ এদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হলো স্বাধীনতা যুদ্ধ আর স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। কোনটাকেও অস্বীকার করা যাবে না। করলে তা হবে স্বাধীনতার জন্য এদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলন, সংগ্রাম, জেল জুলুম, ত্যাগ তিতিক্ষা ও মুক্তি যুদ্ধের মুল চেতনাকে মুছে ফেলার সামিল। কারণ কোন দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ হঠাৎ করে হয় না তার জন্য লাগে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ও সঠিক নেতৃত্ব এবং সর্ব স্তরের মানুষের অংশ গ্রহণ। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল সর্বস্তরের জনগণের অংশ গ্রহণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি জনযুদ্ধ।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা , কলাম লেখক ও আইনজীবী ।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানবীর মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদ
Comments (0)
Add Comment