টোকিও-২০২০ অলিম্পিকের পদকের নেপথ্যের গল্প : ড. প্রীতম কুমার দাস

আধুনিক অলিম্পিক গেমস বা অলিম্পিক বর্তমান বিশ্বের সবেচেয়ে বড় খেলাধুলার আসর বা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হিসাবে বিবেচনা করা হয় যেখানে ২০০ টিরও বেশি দেশ প্রতিনিয়ত অংশগ্রহণ করে। অলিম্পিক গেমস হলো সাধারণত গ্রীষ্ম ও শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমন্বিত আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্ট যেখানে সারা বিশ্বের হাজার হাজার ক্রিড়াবিদ অংশগ্রহণ করে। আধুনিক অলিম্পিক গেমসের যাত্রা শুরু হয় গ্রীসের এথেন্সে ১৮৯৬ সালে। আধুনিক অলিম্পিক গেমস সাধারণত প্রতি চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়।অলিম্পিকের প্রতি আসরে সাধারণত প্রায় ৩০ – ৪০ টি ভিন্ন খেলা থাকে এবং যেখানে প্রায় ৩০০-৪০০ টির মত ইভেন্ট থাকে এবং এই প্রতিটি ইভেন্টের প্রথম তিন স্থানাধিকারীকে (প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়) যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয়। অলিম্পিকে নিজ দেশেকে প্রতিনিধিত্ব করা প্রত্যেক প্রতিযোগীর কাছেই অনেক গর্বের ও সন্মানের এবং এর সাথে স্বাভাবিকভাবেই জুড়ে থাকে দেশের প্রত্যেকটা মানুষের প্রত্যাশা, আবেগ, ভালোলাগা।
অলিম্পিক গেমসের ৩২-তম (টোকিও -২০২০) আসরটি ২০২১ সালের ২৩ শে জুলাই জাপানের টোকিও শহরে শুরু হয়েছে। যদিও এই আসরটি হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে, কিন্তু বিশ্ব করোনা মহামারীর কারনে ২০২১ সালের জন্য পুনঃনির্ধারণ করা সত্ত্বেও, এই আসরটি বিপণন এবং ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্দেশ্যে “টোকিও ২০২০” নামেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাপান এই বিশ্ব করোনা মহামারীর সময়েও অনেক সুন্দরভাবে ও দক্ষতার সাথে এবারের অলিম্পিকটি আয়োজন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। জাপান টেকনোলজির দিক দিয়ে অন্য যেকোনো দেশের থেকে সবসময় এগিয়ে থাকে। এবার টোকিও ২০২০ অলিম্পিকেও এর ব্যত্যয় ঘটছে না।
জাপান টোকিও-২০২০ অলিম্পিকে টেকনোলজির দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে অলিম্পিকের পদক তৈরিতে। অলিম্পিক আয়োজক কমিটি টোকিও-২০২০ অলিম্পিকে সমস্ত জাপানবাসীকে পদকের সাথে সম্পৃক্ত থাকার এক দুষ্প্রাপ্য ও সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। জাপান সব কাজ নিখুঁতভাবে করে, তারজন্য অলিম্পিক আয়োজনের প্রস্তুতিও প্রায় বছর তিনেক আগে থেকে শুরু করেছিল। টোকিও অলিম্পিকের আয়োজক কমিটি জাপানের সমস্ত নাগরিককে অলিম্পিকের পদকের সাথে সম্পৃক্ত রাখার জন্য ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের দিকে সমস্ত নাগরিকের কাছে এক অদ্ভুত আবদার করে বসলেন। তারা প্রত্যেক নাগরকের কাছে যত বাতিল, পুরোনো মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও অন্যান্য ব্যক্তিগত ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র রয়েছে সেগুলো অলিম্পিকের পদক তৈরির জন্য “দান” করতে বলে। এবং এই সংগ্রহ ২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত চলে। এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, কিভাবে এইসব পুরানো মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও অন্যান্য ব্যক্তিগত ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি অলিম্পিকের পদক তৈরিতে কাজে লাগে? এইসব পুরানো ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রের সাথে অলিম্পিকের পদকের যোগাযোগটা খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন হলেও একটু ভেবে দেখলে কাজটা অসাধ্য নয়। আমরা জানি স্বর্ণ, রৌপ্য ও তামার মতন ধাতু খুব ভালো তড়িৎ পরিবাহী এবং যারফলে আধুনিক যেকোনো ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রের সার্কিটে এই পদার্থগুলোর প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।
এই পদার্থগুলোর মধ্যে আবার স্বর্ণের ক্ষয় খুব কম হয়, যারফলে প্রায় প্রতিটি স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেটগুলোতে সোনা ব্যবহার হয়ে থাকে। স্মার্ট ফোনের বিভিন্ন সূক্ষ কানেকশনের সুবিধার্থে সাধারণত একটি স্মার্ট ফোনের মধ্যেই প্রায় ২০০ মিলিগ্রামের মতন স্বর্ণ ব্যবহার করা হয় । আমি আমার পিএইসডি (Ph.D.) ডিগ্রী ও গবেষণার কাজের জন্য ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত জাপানে অবস্থান করেছিলাম। জাপানে অবস্থান করার সৌজন্যে, আমার এই মহৎ কাজের সাথে অল্প পরিসরে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমার ব্যক্তিগত ব্যবহার্য পুরানো ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রের পাশাপাশি আমরা আমাদের ল্যাবেরও কিছু পুরানো অব্যবহার্য ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতিও গোমি করেছিলাম এবং যা পরবর্তীতে এই মহৎ কাজে ব্যবহার হয়ছে। এমন মহৎ কাজের সাথে থাকার জন্য নিজেকে সত্যি অনেক সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। এমন অনুভূতি আমার মত ঐ সময়ে জাপানে থাকে সকল মানুষের। টোকিও ২০২০ অলিম্পিকের খেলা চলার সময় জাপানিজরা যখন বিভিন্ন প্রতিযোগীর গলায় স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ-এর পদক দেখছে, তখন তারা ভাবছে এই পদকের সাথে তার নামটাও জরিয়ে আছে।
এবারের টোকিও-২০২০ অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছে বিশ্বের ২০৫ টি দেশের প্রায় ১১৩২৬ জন প্রতিযোগী। টোকিও-২০২০ অলিম্পিকে ৩৩ টি বিভিন্ন খেলার জন্য প্রায় ৩৩৯ টি ইভেন্ট রাখা হয়েছে। এই এতোগুলো ইভেন্টের জন্য দরকার বিপুল পরিমাণ পদকের প্রয়োজন এবং যেগুলো তৈরি করতে আরও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ, রৌপ্য, তামা ও জিঙ্ক বা দস্তার মত ধাতব পদার্থ দরকার হয়েছে। তাই টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটি পুরানো বা বাতিল ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধাতুর এই বিপুল সম্ভারকে তাদের মূল উৎস হিসেবে ঠিক করে। তারা এই প্রজেক্টের নাম দেন ২০২০ মেডেল প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টের দেশব্যাপী কর্মকান্ডের প্রথম অংশ অর্থাৎ মানুষের কাছ থেকে ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রায় ১৬০০টি মিউনিসিপ্যালিটির হাতে, যেখানে শুধু শহর নয়, গ্রামের মানুষও যোগ দিতে পেরেছে এই মহৎ পরিকল্পনায়। যারজন্য এই প্রজেক্টের ফলাফলও খুব ভালো হলো।
তারা জাপানের প্রায় সকল নাগরিককে এই মহৎ প্রজেক্টের সাথে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিল। যেখানে গোটা জাপানের প্রায় ৯০% অঞ্চলের মানুষ এই মহৎ কর্মযজ্ঞের জন্য জমা দিলেন তাঁদের ফেলে দেওয়া বা অব্যবহার্য মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র। জাপানজুড়ে দান করা ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস (স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ট্যাবলেট ইত্যাদি) থেকে আনুমানিক ৫০ হাজার পদক তৈরিতে ব্যবহৃত ধাতুগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রগুলো থেকে নিষ্কাশিত উপকরণ হল গোল্ড (Au), সিলভার (Ag), কপার (Cu) এবং জিংক (Zn)। হিসেব করে দেখা গেছে, দানকৃত প্রায় ৭৮,৯৮৫ টন ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র বা ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য থেকে প্রায় ৩২ কেজি স্বর্ণ, ৩৫০০ কেজি রৌপ্য এবং ২২০০ কেজি ব্রোঞ্জ পাওয়া যায়। মাত্র দু’বছর পরেই গোটা পৃথিবী অবাক হয়ে দেখলো ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য বা e-waste নিয়ন্ত্রণের এক আশ্চর্য সফল বাস্তবায়ন।
অলিম্পিকের পদক নিয়ে আমাদের অনেকরই ভূল ধারনা আছে। আর তা হলো আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি অলিম্পিকের স্বর্ণ পদক সম্পূর্ণ সোনা দিয়ে তৈরি, রৌপ্য পদক সম্পূর্ণ রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ পদক সম্পূর্ণ ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি। অলিম্পিক কমিটির তথ্যমতে আমরা জানতে পারি যে, অলিম্পিকের স্বর্ণপদকে কমপক্ষে ৯২.৫% রৌপ্য দিয়ে তৈরি করা আবশ্যক, এবং এতে ন্যূনতম ৬ গ্রাম স্বর্ণ থাকতে হবে। সমস্ত অলিম্পিক পদকের আকার ও আকৃতি সমান হয় এবং এদের প্রত্যেকের ব্যাস কমপক্ষে ৬০ মিমি এবং পুরুত্ব ৩ মিমি হতে হবে। এবাবের টোকিও-২০২০ অলিম্পিকের পদকের নকশা উন্মোচন করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই। অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক গেমসের পদকের নকশা ঠিক করা হয় জাপানের পুরো দেশজুড়ে আয়োজিত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। টোকিও-২০২০ অলিম্পিকের পদকের নকশা করেছেন জুনিচি কাওয়ানিশি। জুনিচি কাওয়ানিশি এবারের পদকে নতুন একটি বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেন এবং সেটা হলো প্যারালিম্পিক পদকের সাথে ভাগ করে নেওয়া এই পদকগুলোর ফিতেগুলোতে যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ পদকের পার্থক্য তৈরি করার জন্য একটি, দুইটি অথবা তিনটি উত্তল সিলিকন রেখা দিয়েছে, যাতে প্যারালিম্পিক প্রতিযোগীরাও খুব সহজে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ পদকের পার্থক্য তৈরি করতে পারে। কোভিড-১৯ এর এই বৈশ্বিক মহামারী্র নিয়মের কারণে, সরাসরি কোনও প্রতিযোগীর গলায় পদক পড়ানো যাবে না, এর পরিবর্তে এবার ক্রীড়াবিদদের ট্রেতে তাদের পদক দেওয়া হবে এবং একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির পরিবর্তে তাদের নিজেদেরকেই তাদের গলায় পদকটি পরিধান করতে হবে। এবাবের টোকিও-২০২০ অলিম্পিকের পদকের ওজন এবং কি কি পদার্থ দিয়ে তৈরি তা নিম্নে দেয়া হলোঃ
১) স্বর্ণ পদকঃ এর মোট ওজন ৫৫৬ গ্রাম, এবং স্বর্ণ পদকে পদার্থের মোট পরিমাণের ৯৮.৮% রৌপ্যর এবং বাকি ১.২% স্বর্ণ।
২) রৌপ্য পদকঃ এর মোট ওজন ৫৫0 গ্রাম, এবং রৌপ্য পদক সম্পূর্ণ (১০০%) রৌপ্য দিয়ে তৈরি। এবং
৩) ব্রোঞ্জ পদকঃ এর মোট ওজন ৪৫০ গ্রাম, এবং ব্রোঞ্জ পদকে পদার্থের মোট পরিমাণের ৯৫% তামা বা কপার এবং বাকি ৫% জিঙ্ক বা দস্তা।
অলিম্পিক স্বর্ণপদক জেতার চেয়ে অ্যাথলেটিক অর্জনি বড় খুব কমই আছে বা অনেকের কাছে এটি সবচেয়ে বড় অর্জন। অলিম্পিকে পুরস্কারের পারিমাপ কিন্তু এই চ্যাম্পিয়নদের দেওয়া পুরস্কারগুলি মধ্যে থাকা সোনা, রুপার বা ব্রোঞ্জের ওজনের মূল্যের উপর কখনই নির্ভর কর না। অলিম্পিক পদক পাওয়া যেকোনও ক্রীড়াবিদের জন্যই অনেক গৌরবের, সেই সাথে দেশের জন্য কিছু করার এবং দেশ বিশ্ব দরবারে সন্মানিত করার একটা প্লাটফর্ম। আমরা এখন যে যুগে বাস করছি যেখানে একদিনও মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও অন্যান্য ব্যক্তিগত ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি ছাড়া চলা সম্ভব না। আমাদের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য বা e-waste ও বাড়তে থাকে। আধুনিক প্রযুক্তি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র যেমন সহজলভ্য হয়েছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাতিল যন্ত্রের সংখ্যা বা ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য সংখ্যা। যা নিয়ে বিশ্বের বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকরা ভাবতে শুরু করেছে। ২০১৯-২০ সালের এই পরিসংখান টা আপনাকে ভাবিয়ে তুলতে পারে, আর সেটা হলো গড়ে প্রত্যেকটি মানুষ সারা বছর প্রায় ৮ কেজির মতন ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য তৈরি করে এবং যা এখন পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।আর এমন সময়ে জাপান টোকিও অলিম্পিকে ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য দিয়ে পদক তৈরি করে মানুষকে একটা আসার আলো দেখাচ্ছে।
আর এভাবেই টোকিও অলিম্পিক হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম অলিম্পিক যেখানে সমস্ত পদক তৈরি হয়েছে ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য বা রিসাইকেল করা ধাতু থেকে। ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্যের প্লাস্টিকের অংশগুলোও কাজে লাগিয়েছে আরো বিভিন্ন প্লাস্টিকজাতীয় বর্জ্য বিশেষ করে সমুদ্র থেকে পাওয়া প্লাস্টিকের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে অলিম্পিকে ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যার মধ্যে আছে পদক নেবার সময় প্রতিযোগীদের দাঁড়ানোর স্ট্যান্ড এবং যা পরে জলের বোতল তৈরিতে ব্যবহার করা হবে। তারমানে এটা বোঝা গেল বাতিল, পুরোনো মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও অন্যান্য ব্যক্তিগত ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতির কোন অংশই ফেলে দেয়া হয়নি। একটা বিষয় অলিম্পিক আয়োজক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটিকে সবসময় লজ্জায় ফেলেছে আর তা হলো অলিম্পিক আয়োজনের এই বিশাল ব্যায়। জাপানীজ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে, এবারের টোকিও-২০২০ অলিম্পিকের ব্যয় (আয়োজন এক বছর বিলম্বিত করার ফলে অব্যবহৃত সুবিধাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে) হবে প্রায় ৬৪০.৮ বিলিয়ন ইয়েন বা ৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অলিম্পিক কমিটি বেশ কিছু বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে কিভাবে এই ব্যয় কমানো যায়।
এর ধারবাহিকতায় গত রিও অলিম্পিক (২০১৬) থেকেই পদক তৈরিতে রিসাইকলেড ধাতু ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও রিওতে দেওয়া সমস্ত রুপোর পদক ও প্রায় ৩০% সোনার পদকের জন্যে প্রয়োজনীয় রুপো জোগাড় করা হয়েছিল রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে। তবে এবারই প্রথম কোন অলিম্পিকের ১০০% পদক তৈরি করা হয়েছে ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য বা রিসাইকেল করা ধাতু থেকে। ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে যখন পুরো বিশ্ব চিন্তায় দিন পার করছে, তখন ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে জাপানের এই অনন্য সাফল্যের ফলে অলিম্পিকের পরিবেশ বান্ধব ভাবমূর্তি যেমন উজ্জ্বল হলো তেমনই গোটা পৃথিবী পাবে ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য বা e-waste সামলানোর এক নতুন দিগন্ত। তাই ভাবতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি যে আজ টোকিও-২০২০ অলিম্পিকের বিজয়ী প্রতিযোগীদের গলায় যে অলিম্পিক মেডেল শোভা পাচ্ছে কিছু বছর আগে পর্যন্ত তাই ছিল কয়েকজন জাপানির রোজকার ব্যবহারের স্মার্টফোন, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও অন্যান্য ব্যক্তিগত ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি।
লেখক : ড. প্রীতম কুমার দাস, সহযোগী অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা, বাংলাদেশ।
টোকিও অলিম্পিকে-২০২০টোকিও-২০২০ অলিম্পিকটোকিও-২০২০অলিম্পিকের পদকের নেপথ্যের গল্পড. প্রীতম কুমার দাস
Comments (0)
Add Comment