বাংলাদেশের অবিসংবাদিত ও প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার আন্দোলন সংগ্রাম এবং সর্বশেষে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পাই স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু চলতে থাকে দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র। আইন প্রয়োগের জন্য সংগঠিত কোন বাহিনী ছিল না ফলে সৃষ্টি করা হয় রক্ষীবাহিনী। রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতার করণে কতিপয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গড়ে উঠে নুতন রাজনৈতিক দল জাসদ। রক্ষীবাহিনী কিছু অন্যায় অত্যাচার করেছে এবং মুক্তি যোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হওয়ায় তাদের অনেককে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর কিছু কিছু নেতাকর্মীর উপর বিরক্ত ছিলেন কারণ তারা তখন সরকারি সম্পদ লুটপাটে ব্যস্ত থাকার কারণে আওয়ামী লীগের ভাবমুর্তী নষ্ঠ হয়েছিল।
স্বাধীনতা বিরোধী দেশি বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রের জন্য এক সময় দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয় এবং দেশে শুরু হয় দুর্ভিক্ষ। সব কিছু সামলিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিদধস্ত বাংলাদেশ টাকে একটা ভাল অবস্থায় নিয়ে আসলেন ঠিক তখনই স্বাধীনতা বিরোধীরা কিছু বেইমান বিস্বাস ঘাতক দেরকে সাথে একত্র ও প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে ১৫ ই আগষ্ট ১৯৭৫ সাল ইতিহাসের যঘন্যতম হত্যাকান্ড সংঘটিত করে। বঙ্গবন্ধু, তাঁর সহধর্মীনি, তিন পুত্র, দুই পুত্র বধু, ভাই, বোন, ভগ্নিপতি, ভাগনে সহ তাঁর পরিবারের বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করে এবং সামরিক আইন জারী করে।
দেখা গেল বিশ্বাসঘাতের দল হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িতদেরকে পুরস্কৃত করলো এবং কোনদিন যেন ঐ হত্যাকান্ডের বিচার না হয় তার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে আইন পাস করলো, সামরিক আইনের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি কতৃক পাস করা ও সৃষ্ট বাকসাল পদ্ধতি বাতিল করলো। জেনারেল জিয়াউর রহমান ডেপুটি চীফ মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটর থেকে প্রথমে চীফ মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটর, পরে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষনা করলেন, জারী করলেন অনেক আইন, হাঁ না ভোটের নাটক করে পাকাপোক্ত রাষ্ট্রপতি হলেন এবং তৈরি করলেন রাজনৈতিক দল।তার দলের নাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সংক্ষেপে বিএনপি। একপর্যায়ে স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী দেরকে পুনর্বাসিত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসালেন। যে মানুষ টি জীবনের একটা বৃহৎ অংশ এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য জেল জুলুম সহ্য করলেন, যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা তাঁকে কটাক্ষ করে প্রচারণা এবং অসম্মান করা শুরু হয়ে গেল এমনকি একজন প্রখ্যাত ও দায়িত্ব শীলা নেত্রী ১৫ই আগষ্ট তাঁর ভুয়া জন্ম দিন সাজিয়ে অত্যন্ত ধুমধামের সহিত পালন করা শুরু করলো। হায়রে অকৃতজ্ঞা!! বঙ্গবন্ধু তাদের জন্য কিনা করেছেন!
দালাল রাজাকারদের বিরুদ্ধে করা দালাল আইনের সকল মামলা প্রত্যাহার করা হলো, যাদের সাস্তি হয়েছিল তাদের সে সাস্তি মাফ করে দেওয়া হলো, স্বাধীনতা বিরোধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো হলো, মুক্তিযোদ্ধা দেরকে কোন ঠাসা করা হলো। স্বাধীনতার বিরোধীদের আঁকা ছক নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেল, অনেক ক্যু ঠেকাতে গিয়ে অনেক আর্মি অফিসার ও জোয়ানদের ফাঁসীতে ঝুলানো হলো। এখন প্রকাশ পাচ্ছে মুক্তি যুদ্ধে পরাজিত দেশী বিদেশি শত্রুদের উদ্দেশ্য ছিল যেভাবেই হোক বাংলাদেশ কে আবার তারা পাকিস্তানের অংশ হিসেবে অথবা কনফেডারেশন করে এক করবে এবং সেই পরিকল্পনার অংশ ছিল ১৫ ই আগষ্টের নৃসংশ হত্যাকান্ড। স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জনগনের দৃঢ মনোভাবের কারনে অতি দ্রুত তা করতে চেষ্টা চালিয়েও সফলকাম হতে পারেনি।
কিন্তু বিধি বাম শেষ রক্ষা হলো না। হঠাৎ করেই তাদের মুল চালিকা শক্তি জেনারেল জিয়াউর রহমানের পতন হলো চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে। তাদের বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন ভংগ হলো। কিন্তু রাষ্ট্রের ভয়ংকর রকমের ক্ষতি করে গেলো।গোটা জাতিকে বিভক্ত করে দিয়ে গেল যার পরাভোগ জাতী আজও ভুগছে। জানিনা আরও কত দিন ভুগতে হবে। বেঈমান বিস্বাসঘাতক দের ভবিষ্যত কখনো ভালো হয় না। ১৭৫৭ সালে মীর জাফর আলীর নেতৃত্বে যারা বিস্বাসঘাতকতা করে বাংলার স্বাধীনতা বৃটিশদের হাতে তুলে দিয়েছিল এবং বাঙ্গালীদের পরাধীন করেছিল তাদের পরিনতি সুখকর হয়নি, তাদের মৃত্যুও দূর্বিসহ ছিল । মীরজাফরের অষ্টম বংসধর আজও জনসমক্ষে আসতে লজ্জা পায়। এটাই যুগে যুগে মির্জাফরদের পরনতি যা ইতিহাস সাক্ষী দেয়। এ দেশের বেইমান বিস্বাস ঘাতকদের অবস্থা তথৈবচ। কেউই শান্তিতে থাকতে পারেনি, শান্তিতে মরতেও পারেনি। আজও তারা ঘৃণিত এবং যুগ যুগ ধরে তাদের ও তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে তাদের বিস্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের জন্য মাথা নীচু করেই চলতে হবে।
বাংলাদেশ স্বাধীন এবং চিরদিনই স্বাধীন থাকবে ইনশাআল্লাহ। বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতির হৃদয়ে আছে ও থাকবে। ১৫ ই আগষ্ট ১৯৭৫ সাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ যাদেরকে ষড়যন্ত্র করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে দোয়া করি মহান আল্লাহ তালা তাদের সবাইকে বেহেশত নসীব করুন।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা , আইনজীবী ও কলাম লেখক