১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট আর ২০০৪ এর ২১ আগষ্ট সময়ের ব্যবধান অনেকটা হলেও মানসিকতা,উদ্দেশ্য-লক্ষ একই।স্বাধীনতার সাথে চেতনাকে হত্যা। পচাত্তরের আগষ্টের শ্রাবণের দিনগুলোর মিছিলে তুমি ছিলে হে পিতা মৃত্যু দিয়ে বাঙ্গালির কোল খালিকরা , ভাদ্রের আদ্রতা চোখে তোমার কন্যার কান্নাও চিরতরে মুছে দিতে ওরা ছিল ওৎপেতে তৎপর।বংশ পরম্পরায় হিংসা একই।
পঁচাত্তরের ১৫ আগেষ্টের দিন শেষ রাত্রির ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে স্বপরিবারে বুলেটের বৃষ্টিতে ঘাতকের আঘাতে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধকে হত্যা। ২০০৪ এর ২১ আগষ্টে বেচে য়াওয়া সবশেষ তার কন্যাকে হত্যার প্রচেষ্টা সবই যেন এক সুত্রে গাঁথা।কি হবে আমার বাংলা মায়ের স্বাধীনতার নকশিকাথাঁর ?
একজন বঙ্গবন্ধুকে কী কখনো হত্যা করা যায়? যে থাকে চিরঞ্জিব।জাতির স্থপতি স্বপ্নদ্রষ্টাকে কোনদিন হত্যা করা যায়না, সে থাকে সবার অন্তরে।বিশ্ববাসীও তার ত্যাগ আর নেতৃত্ব থেকে শিক্ষা নেয়।
একটি রাষ্ট্রও যতদিন বেচে থাকবে এইসব মানুষের নাম বিশ্বে আলোচিত হবে। জাতীয়তাবাদের চেতনা ও প্রেরণায় জাতিতে উদ্বুদ্ধ করা সহ স্বাধীতনার সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে সশস্ত্র পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। বাঙালি দেশ ও জাতিকে মনে প্রাণে ভালবেসে তাইতো তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালি।দেশের নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে তিনি ধর্মনিরপেক্ষতায় ছিল অটল এটা তার এক মহানুভবতা।সব নিপিড়িত মানুষকে তিনি বুকে টেনে নিতেন।
জীবনের দীর্ঘ্য ২৪ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করে পাকিস্তানির কাছ থেকে শোষিত বাংলাকে মুক্ত করেছেন তিনি।যার যথোপযুক্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুরো দেশ একদিকে ধাবিত হয়েছে।
যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গাড়ার কাছে নিয়জিত অবস্থায় তাকে হত্যা করেছে কিছু বিপদগামী দেশীয় গাদ্দার।যাকে হত্যা করতে সাহস পায়নি পাকিস্তানিরা তাকে হত্যা করলো দেশের কিছু জালিমরা।
দীর্ঘ ২১টি বছর পর আবার ১৯৯৬ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব শুরু হয় সেই সাথে শুরু হয় কুচক্রীদের বঙ্গবন্ধুর শেষ চিহ্ন মুছে ফেলার তথা শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা।
কিছুটা ঝিম দিয়ে থাকার পর আবার শুরু হয় নিষ্ঠুরতম সে মৃত্যু আর হত্যার খেলার প্রচেষ্টা। ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট তৎকালিন বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজধানীর বুকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশে চালানো হয় ভয়ার্ত হত্যাযজ্ঞ।গ্রেনেড হামলায় স্তম্ভিত হয় দেশ। মূল লক্ষ ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা তৎকালিন বিরোধীদলীয় নেতা। হামলার ধরন ও লক্ষস্থল থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় শেখ হাসিনাই ছিল তাদের প্রধান টার্গেড। কিন্তু নেতাকর্মিদের ভালবাসা আর সহমর্মিতা সেদিনের মানবঢাল হয়ে বাচাতে পেরেছিল অনেক মানুষের সেদিনও প্রাণ গিয়েছিল। রাজপথে সেই তাজা প্রাণ। পঁচাত্তরের মতই সেদিনের রক্ত হত্যা আর মৃত্যু।
তখন বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকা অবস্তায় সেদিন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী শান্তি মিছিল সহ সমাবেশ আয়োজন করেছিলেন তৎকালিন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা ছিলেন সেখানে প্রধান অতিথি।সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিলের আগেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অস্থানী গড়ে তোলা ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে কক্তৃতা দেয়ার পর পরই তাকে লক্ষ্য করে চালোনো হয় গ্রেনেড হামলা। তখন বিকট শব্দে বিষ্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মানুষের রক্ত, মাংসের স্তুপে পরিনত হয় সেখানকার সমাবেশ স্থল। পরিনত হয় এক মৃত্যু পুরিতে।বর্ননাতিত সে ঘটনা লোমহর্ষক সে কাহিনী। লাশ আর লাশ যেন লাশের সুমুদ্র ভেসে এস পাহাড়ের মত স্তুপ হয়ে যায় পত্রিকার পাতায় শুধু জুতা আর স্যন্ডেলের ছবি আর রক্তের ছাবি ঠাঁই পায়।সেদিন রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে শুধু যন্ত্রনায় কাতর রোগী।হাসপাতাল গুলোতে ঠাঁই হচ্ছিলনা রোগীদের। যারা সেদিন বেচে যান তাদের অনেকে আঘাতে মৃত্যু হয় আর কেউ কেউ এখনো শরীরে বহন করছে সেই নৃশসতা।৭৫ এর উত্তরসুরিদের ২০০৪ এর মিশন আনসাকসেস হয়। প্রাণে বেচে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তার কানে মারাত্বক শ্রবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়।তৎকালিন নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে।
সেই হামলায় আওয়ামী লীগের ৫শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে গ্রেনেডের স্প্রিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবনযাপন করে চলেছে। অনেক সাংবাদিকও সেদিন আহত হয়।
বাঙালি জাতিকে এখন প্রতিবছর ১৫ আগষ্টের পর প্রস্তুত থাকতে হয় ২১ আগষ্টের শোক পালন করতে।
লেখক : সাংবাদিক ও কবি ।