বিখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাস হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে এক চিঠি লিখলেন ৪ এপ্রিল ১৯৭৯ সালে। তাঁর আদি জেলা কিশোরগঞ্জের অকৃত্রিম ভাষায় রচিত এই অনুপম চিঠিটি ফেইসবুকে গড়াতে থাকলে আমিও আমার টাইমলাইনে শেয়ার করি। আঞ্চলিক ভাষায় এত রসপ্রধান চিঠি লিখিত হতে পারে, এই চিঠিটি পড়ার আগে পর্যন্ত আমার বিশ্বাস হতো না। চিঠির বিষয়টি মিথ্যা অভিযোগের বিপক্ষে যেমন বন্ধুসুলভ অনুযোগের এক অপরূপ ফিরিস্তি, তেমনি শুধু আঞ্চলিক শব্দ দিয়ে খোঁচা যে কীরকম তীব্র হতে পারে তার এক উজ্জ্বল নমুনা। (আমার টাইমলাইনে স্ক্রল ডাউন করলেই চিঠিটি পড়তে পারবেন।)
আমি চিঠিটি সংগ্রহে রাখি, বৃহত্তর ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষা-পরিবারগুলোর প্রতি আমার আসক্তি থেকে। ১৯৭৪ সালে ভাটি অঞ্চলে প্রবল বন্যা হয়। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেবার ডাকসুতে জেতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, যেটির সদস্য ছিলাম আমি, তবে তেমন কর্মী ছিলাম না। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হোন, আর মাহবুব জামান সাধারণ সম্পাদক। দু’জনেই প্রভূত পরিমাণে উদ্যমী ও উদ্যোগী নেতা ছিলেন। বন্যা ঢুকলে তাঁরা ঢা বি’র গোলাকার লাইব্রেরির সামনে এক সাধারণ কর্মীসভা ডাকলেন। ঠিক হয় যে ঢাবি’র ছাত্র ইউনিয়ন থেকে দু’টি স্বেচ্ছাসেবী ত্রাণ দল পাঠানো হবে। একটি কুরিগ্রাম, তখন বৃহত্তর রংপুরের একটি মহকুমা, আরেকটি পাঠানো হবে কিশোরগঞ্জে, যেটি তখন বৃহত্তর ময়মনসিংহের একটি মহকুমা। আমি কিশোরগঞ্জের দলের জন্য হাত তুললাম। সেদিন রাতেই (৪ আগস্ট, ১৯৭৪) আমরা হল থেকে খাবার খেয়ে রাত্রে দশটায় কমলাপুর থেকে মোট ২৭ জন ময়মনসিংহের ট্রেনে উঠি। আমি আমার বন্ধু ফরিদপুরের কামরুল রাব্বানির নিকট থেকে একটি ব্যাগ ধার নিই। (কামরুল পরে সরকারের সচিব হয়ে অবসর গ্রহণ করে)। ময়মনসিংহে আমরা রাত গভীরে পৌঁছাই। উঠলাম দেশজোড়া নামকরা কম্যুনিস্ট নেতা অজয় রায়ের বাড়িতে। তাঁর ওখানেই খাওয়া-দাওয়া করলাম, আর তাঁর বাড়ির বিশাল ছাদে আমরা শুধু চাদর পেতে ঘুমিয়ে গেলাম। আকাশের খোলা ছাদ। না ঘুমিয়ে বরঞ্চ আমরা গল্পগুজব আর হাসিঠাট্টায় সময়টা কাটিয়ে দিলাম। সকালে নাস্তা করার পর আমরা ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে ট্রেনে করে কিশোরগঞ্জ পৌঁছে যাই। ঠিক হলো দলে যেহেতু ২৭জন, আর কিশোরগঞ্জ মহকুমায় থানা (তখন) যেহেতু ৯টি, আমরা তিনজন তিনজন করে ভাগ হয়ে গেলাম। তাই আমরা তিনজন–বাজিতপুরের জীবন (যাঁর সঙ্গে আমার আর জীবনে যোগাযোগ হয় নি), আর প্রাণকৃষ্ণ মন্ডল–এক দলে হলাম। প্রাণকৃষ্ণের সঙ্গে আমার হালকা যোগাযোগ আছে। তাঁর স্ত্রী পাবনা বা বগুড়ার ডি সি ছিলেন। জীবন ছিল দলপতি। আর আমাদের জন্য নির্ধারিত থানা ঠিক করা হলো নিকলি। কিশোরগঞ্জ থেকে নৌকায় করে আমরা নিকলিতে যখন যাচ্ছি, হাওড় দেখা আমার এই প্রথম। আমি চট্টগ্রামের ছেলে, বিশাল সমুদ্র দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু নৌকায় উঠে ঢেউয়ের দাপাদাপিতে মনে হলো সমুদ্র যেন এর কাছে কিছুই না। বাঘ নিয়ে ভয় থাকলেও বাঘকেতো দেখিনা, কিন্তু ঘরের বিড়ালটি খামচি দিতে গেলে ভয় পাই আমরা। চারদিকে বিস্তীর্ণ জলরাশি, কূল-কিনারা নাই, মাঝে মাঝে ডুবন্ত কিছু হিজল গাছের মাথা। এই করে করে আমরা নিকলির ডাঙায় এসে পৌঁছালাম। দেখি সিও ডেভ (থানা প্রশাসক, উন্নয়ন), শুধু তাঁর অফিসটা কোনরকম শুকনো আছে। তিনি ইয়াং অফিসার। চোখে চশমা, ধারালো চেহারা। আমাদেরকে দেখে, বিশ-বাইশ বছরের তরুণদেরকে দেখে যেন তিনি খুশিই হলেন। তৎক্ষণাৎ বললেন, তোমরা সামনে পুকুরে গোসল করে নাও। তোমাদের জন্য ভাত রান্না হচ্ছে।
পুকুরতো নেই, বন্যার পানিতে মিশে গেছে। খুব আরাম করে গোসল করে ভেজা লুঙ্গি ছেড়ে শুকনো লুঙ্গি পরবো, আমার অন্ডকোষে কীসের একটা চুটকি কামড় অনুভব করলাম। হাত দিয়ে লুঙ্গির ওপরেই কামড়ানোর জায়গাটা ডলে দিলাম। সিও সাহেবের অফিস এক রুমে, আর শোবার জায়গা আরেক রুমে। আমরা তাঁর বিছানার ওপর পা গুঁজে বসলাম। তিনিও বসলেন। বাবুর্চি চমৎকার এক মুরগির রান্না পরিবেশন করেছিলো। ভাত খাওয়ার প্রায় শেষের দিকে হঠাৎ সিও সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কী রে তোমার লুঙ্গি এত লাল কেন? আমি তড়কে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নামলাম। পুরো লুঙ্গি রক্তে ভিজে লাল। আর টুপ করে আমার অন্ডকোষ থেকে ঝরে পড়লো তর্জনী সমান মোটা এক কালো রঙের জোঁক। রক্ত ওভারফেড হয়ে জোঁকটা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। আমি সাথে সাথে ওটাকে পা দিয়ে ডলা দিলাম। মনে হলো মুহূর্তেই ওটা দু’টুকরো হয়ে গেল। বাবুর্চি দৌড়ে এসে মোমাবাতি জ্বালিয়ে একটা কাপড়ের ত্যানা কী একটা করে ক্ষত জায়গায় দিলো। কিন্তু রক্তের ড্রিপিং বন্ধ হয় না। তখন ডাক্তারখানায় নিয়ে যাবার ব্যবস্থা হলো। আমি যখন জীবনকে সহ নৌকায় উঠবো, আশেপাশের লোকজনের দৃষ্টি আমার রক্ত ভেজা লুঙ্গির ওপর পড়লেও তেমন কোন শোরগোল দেখলাম না। সিও সাহেব পরে বলেছিলেন নিকলি গোছের থানাগুলোতে জমি-জমা নিয়ে হরদম দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়। সিও অফিসে খুন-খারাবী নিয়ে কেইস অনেক আসে। তাই এই রক্তপাতের দৃশ্য গ্রামবাসীর পরিচিত। নৌকায় করে থানা হাসপাতালে পৌঁছালে দেখি মেঝের ওপর বন্যার ঢল, আর ডাক্তার সাহেব একটা টেবিল, আর টেবিলের ওপর একটা হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে পত্রিকা পড়ছেন। উনি টেবিলে আর আমি নৌকায়–ঐ অবস্থায় আমার চিকিৎসা চললো। ডাক্তার ক্ষত স্থান বরাবর সূঁচ বিঁধে দিলেন। কিন্তু ড্রিপিং বন্ধ হয় না। ডাক্তারকে একটু চিন্তিত দেখে আমি কাঁপতে লাগলাম। চট্টগ্রামে আমার বাবা-মা কেউ জানেন না আমি এরকম রিলিফ টিমে চলে এসেছি। আমি সারাজীবনই একটু ভীতু গোছের লোক। ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কাঁপতাছো ক্যা। আমি বললাম, ভয়ে। তখন ডাক্তার আমার কনুইয়ের বড় ধমনীতে একটা ব্লাড-ক্লটিং ইনজেকশান দিলেন। ড্রিপিং সাথে সাথে বন্ধ হলো। তিনি ক্ষতস্থানে সেলাই করে দিলেন। সাতদিন পরে খুলতে বললেন।
আমি গেছি ত্রাণ দিতে, আর প্রথম দিন থেকেই হয়ে গেলাম খোঁড়া। তখন সিওর চেয়ে বয়েসে বেশি একজন বয়ষ্ক অফিসার ছিলেন। তিনি ছিলেন সিও রেভ (থানা প্রশাসক, রাজস্ব)। তাঁর শ্মশ্রুমন্ডিত মুখ, অভিভাবকসুলভ চেহারা। তাঁর দায়িত্ব ছিলো পুরো কিশোরগঞ্জে সী-ট্রাকে করে ত্রাণ বিতরণ করা। তিনি বললেন, ঠিক আছে এই ছেলেটি আমার সঙ্গে থাকুক। এ ব্যবস্থা অনেকটা শাপে বর হলো। কিশোরগঞ্জ অনেকটা উত্তর দক্ষিনে লম্বা আমপাতা টাইপের। সম্ভবত ৭০ মাইল। সর্বদক্ষিণে ভৈরব, সর্বোত্তরে হোসেনপুর। আর আমি পরম নিশ্চিন্তে সী-ট্রাকে করে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে রিলিফ দিতে লাগলাম। পাঁউরুটি, চিড়া, প্রয়োজনীয় অষুধপত্র। আর একেবারে দরীদ্র পাড়ায় ঘোরার সময় সে চিরকালের দরীদ্র গায়ের গন্ধ। মাঝে মাঝে দেখা পাচ্ছি তেলের ঘানির, যেখানে গরুকে বিশ্রাম দিতে ছেলে জোয়াল নিয়েছে কাঁধে, মা ঘোরাচ্ছে কলুটা। কলুর বলদ। মাঝে মাঝে কোন গ্রামে আমরা হয়তো রাত-গভীরে পৌঁছেছি, দেখি যে সশস্ত্র গ্রামবাসী সড়কি আর বল্লম হাতে আমাদের আক্রমণ ঠেকাতে পুরো ডাঙা জুড়ে প্রস্তুত। তখন হাওড় অঞ্চলে ডাকাতি ছিলো একটি প্রধান সমস্যা। যখন জানলো যে আমরা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এসেছি তখন কী সমাদর। হাওর অঞ্চলের গৃহবধূদের তৈরি পিঠাপুলি স্বাদে তুলনাবিহীন।
নিকলির স্থানীয় এক ছেলে জব্বারের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হলো। আমাদের বয়সী। আমরা তিনজন আর সে সহ কেউ একজনের বাড়িতে আমরা প্রতি রাত্রিতে ঘুমাতাম। এই জব্বারের কথা যেন আমার কানে মধু ঢেলে দিতো। ‘আইছুইন’, ‘খাইছুইন’, ‘গেছুইন’, ‘বইছুইন’ এই ক্রিয়াপদগুলোর ‘ছ্ইুন’ শব্দটি আমার কানে যেন সংগীতের মতো মূর্ছনা তুলতো। আমরা আগস্টের শেষের দিকে ঢাকায় ফিরে আসি। (আমার এই অভিজ্ঞতার ওপর একটি গল্প আছে “সমর” শীর্ষক, যেটি মোরশেদ শফিউল হাসান সম্পাদিত “যুবরাজ” (১৯৭৪/৫) নামক সাহিত্য-পত্রিকায় ছাপা হয়, এবং ১৯৯৬ সালে আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ “সোনা আর ঘামের বনিবনা”-য় অর্ন্তভুক্ত হয়।)
মানুষের ভাগ্য বড় বিচিত্র। এই অভিজ্ঞতার প্রায় ৩৯ বছর পর ২০১৩ সালের ঠিক আগস্ট মাসে আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কর্তৃক ত্রিশালস্থ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য নিযুক্তি পাই। মজার ব্যাপার হলো, রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের বাড়িও নিকলিতে, যেখানে আমি সতেরো/আঠারো দিন ছিলাম। ত্রিশালে থাকতে গিয়ে জব্বারের সঙ্গে আমার ক্ষণিকের মৌতাতটা আবার জেগে উঠলো। এবার সুযোগ হলো শুধু কিশোরগঞ্জের উচ্চারণের টানটা নয়, যোগ হলো গফরগাঁওয়ের ‘খাইবাম’, ‘যাইবাম’, ‘করবাম’, আর লোক হলো ‘লুক’, শোক ‘শুক’, আর ভোর ’ভুর’। আমি মৌলিকভাবে হাস্যরসপ্রিয় মানুষ। অফিসে ঢুকেই দপ্তরিকে দুষ্টামি করে বলতাম, ‘ভুরের কাগজ’ আসছে? আমি যে দুষ্টামি করছি, তার কানে সেটা লাগতো না। খুব মজা হতো।
নেত্রকোণার দিকে আঞ্চলিক টানটা আরো আকর্ষণীয়। আমার এক ঢাকাবাসিনী নেত্রকোণার কবি আছেন, আমার খুব প্রিয় তাঁর কবিতা। মাহবুবা ফারুক। আমি তাঁর সঙ্গে ময়মনসিংহের টানে আলাপচারিতা করি। তাঁর একটা কবিতা এখানে আংশিক তুলে দিচ্ছি, যেটি আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগে জর্জদার চিঠির মতো মজাদার।
“কপাল ভালা হইলে তুমার ভাগ্যে
মিলতে পারে,
সুলতান শাহ ঘুমাইয়া রইছে সেলাম দিও তারে।
হাওড়, নদী, পাহাড় দেইখা বুঝবা লুকের মন,
ধান, মাছ, সরল হৃদয় তাদের বড় ধন।
পেকের মতো সরল জীবন আর মেমনদারি,
পরের দেশে লুভ নাই তার ভালা নিজের বাড়ি।
বনের মায়ায় নদীর ধারে ছুট্টু ছনের ঘর,
যা আছে যার তাই নিয়া তার ভরা যে অন্তর।
ডরাই কেউরে? হাছা কথা কইতাম কিন্তুক পারি,
আমরার লগে কইরোনাছে এইরম তেড়িবেড়ি।
স্বার্থ না বুঝি আমরা ভাটির দেশের লুক,
খুশি থাকি তাই লইয়া নিজেরার যেটুক।
হুনছ নাহি চিনছ সবে? আমি নেত্রকুনার ছেড়ি,
সাহস আছে, কাম কইরা খাই–
চিনতে কেরে দেরি?”
কবিতাটি অংশত উদ্ধৃত করলাম।
গতকালই (২৬/৮/২০২১) টিভিতে একটি নাটক দেখছিলাম ফজলুর রহমান বাবু অভিনীত। পুরো নাটকটিই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে এক রিকশাওয়ালার (বাবু) মানসিক যাতনা নিয়ে রচিত। নাটকটি পুরোটাই ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় তৈরি।
তা হলে জর্জদার চিঠির সূত্র ধরে একটি কথা বলার সময় হয়েছে। আমাদের কথ্য সংস্কৃতিতে–নাটক, সিনেমা, গানে লক্ষণীয়ভাবে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার ও প্রভাব বেড়ে গেছে। ছোটবেলায় আমাদের বাসায় একটি সাপ্তাহিক কাগজ আসতো–“পাঞ্চজন্য” শীর্ষক–যেটি আগাগোড়াই চাঁটগাঁইয়া ভাষায় লিখিত ছিলো। এখন দেখি “সি-প্লাস” নামক একটি অনলাইন চ্যানেল, যেটি সম্পূর্ণ চাঁটগাঁইয়া ভাষায় বিবরণকৃত, প্রচুর জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আর “নিবুদা”র “মদন্যের” সিরিজগুলো ১০০ ভাগ বিনোদন। আর এখন টুম্পানির যে চাঁটগাঁইয়া ভিডিওগুলো আসছে, অবাক হতে হয় একই মেয়ে মা, মেয়ে, বোন, বন্ধু হিসেবে অভিনয় করে মাতিয়ে রাখছে।
কবি জীবননান্দ দাশ “ওম” (মাতৃগর্ভের উষ্ণতার অর্থে) শব্দটি তাঁর কবিতায় ব্যবহার করলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হতাশ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দের পক্ষে মতামত দেন। কবি আল মাহমুদের কবিতার শক্তি আমার ধারণায় তাঁর আঞ্চলিক শব্দের সঠিক ব্যবহারের ওপর।
বস্তুত, জর্জদার চিঠিটার যে সম্মোহনী শক্তি সেটির কারণ ঐ আঞ্চলিক ভাষায়ই।
আমার মত হলো, আঞ্চলিক ভাষা কখনোই মাতৃভাষার বিকল্প হতে পারবে না, কিন্তু জায়গামতো আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহারে ভাষার শক্তি বৃদ্ধি পায় বলে আমার ধারণা। কবি নজরুল “বড়র পিরীতি বালির বাঁধ” শীর্ষক প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথকে উপলক্ষ্য করে লিখছেন, “বাঙলা কাব্য-লক্ষ্মীকে দুটো ইরানি ‘জেওর’ পরালে তার জাত যায় না, বরং তাঁকে আরো খুবসুরতই দেখায়।”
ঠিক সেভাবে আমরা বলতে পারি বাংলাভাষায় দুই চারটা আঞ্চলিক শব্দ ‘ঢুকাই দিলে’ তার শক্তি বাড়তে পারে।
=শেষ=
২৭ আগস্ট ২০২১