২০০৮ সালে আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা নির্বাচনী বক্তৃতায় একটি নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন করেছিলেন আমেরিকানদের সামনে- ‘ঈযধহমব বি পধহ নবষরবাব রহ.’ ২০২১ সালের দ্বারপ্রান্তে এসে সেই আমেরিকানদের কতটুকু গুণগত পরিবর্তন হয়েছে তা আমেরিকান জনগণই ঠিক করবে। তবে ২০০৮ সালে ক্ষমতার কেন্দ্রে এসে জাতির জনকের তনয়া শেখ হাসিনা শুনিয়েছিলেন এক দিনবদলের গান। যার স্বরলিপিতে আছে ১৯৭১-এ হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা থেকে একটি অকুতোভয় জাতির ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। এটি নিহায়ত রূপকথার গল্প নয়। স্বপ্ন পূরণের আশা জাগানিয়ার গল্প। শিকড় থেকে শিখরে উঠার গল্প।
দিনপঞ্জিকার পাতায় পরপর এসেছে ২০২০ ও ২০২১ সাল। এটি নিছক কোন সংখ্যার অঙ্ক নয়। এ দুটি বছরে জাতি উদ্্যাপন করেছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবার্ষিকী। এই যুগসন্ধিক্ষণে ইতিহাসের খেরোখাতায় বাংলাদেশের অর্জনের ফিরিস্তি দেয়া এখন সময়ের দাবি। তাই এখন যদি নেপোলিয়নকে স্মরণ করি আমরা- ‘তোমরা আমাকে শিক্ষিত এক মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত এক জাতি উপহার দেব।’ নেপোলিয়নের দেশের মতোই একটি দক্ষ জাতিকে গড়ে তুলতে পারে একজন দক্ষ কা-ারি। বাংলাদেশের মুকুটমণি বঙ্গতনয়া শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ইতিহাস বিনির্মিত হয়েছে। তাঁর বাণীতে আমরা শুনি- ‘কী পেলাম, কী পেলাম না, সে হিসাব মিলাতে আমি আসিনি। কে আমাকে রিকোগনাইজ করল, কে করল না, সে হিসাব আমার নেই। একটাই হিসাব, বাংলাদেশের মানুষ ও তাদের পরিবর্তনে কিছু করতে পারলাম কিনা, সেটাই আমার কাছে বড়।’
সম্প্রতি এমিনেন্ট পার্সনস এ্যাওয়ার্ড ২০২১-এ ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নেতৃত্বদান ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রীকে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। সুবর্ণজয়ন্তী আর মুজিববর্ষের সঙ্গে ২০২১ সাল আবার আওয়ামী লীগের ভিশন টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান সমাপ্তির বছরও এটি। শেখ হাসিনার ভাষায় ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্্যাপনের অনুষ্ঠান যুগপৎভাবে চলতে থাকবে। এই উদ্্যাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব নয়, এর লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনের শক্তি সঞ্চার করা, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।
বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের দৃষ্টান্ত। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এ তিন সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ আজ তিন সূচকেই মানদ- উন্নীত করেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদ- অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার; বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় সেখানে ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশের অর্জন ৭২.৯। আর অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে বাংলাদেশের অর্জন ৩২ ভাগের মধ্যে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ। যার মানে দাঁড়ায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উদীয়মান অর্থনীতির ৪১তম স্থান অর্জনকারী দেশ।
এছাড়া বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ তার অবস্থান জানান দিচ্ছে, যা আমাদের উন্নয়নের দিকনির্দেশক। এর মধ্যে রয়েছে- ১. ক্রয়ক্ষমতার সমতা (এশিয়া মহাসাগরীয়)-১৩তম; ২. বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচক- ১২০তম; ৩. বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক- ৮৮তম; ৪. লিঙ্গ সমতা-৪৮তম (দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম); ৫. তৈরি পোশাক রফতানি-২য়; ৬. চা রফতানি-৮ম; ৭. চাল উৎপাদন-৪র্থ; ৮. পাট উৎপাদন-১ম; ৯. খাদ্য উৎপাদন-১১তম; ১০. মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদনে-২য়; ১১. ইলিশ উৎপাদনে- ১ম; ১২. নারীর ক্ষমতায়নে-৭ম; ১৩. জনশক্তি রফতানি-৬ষ্ঠ; ১৪. ই-পাসপোর্ট জগতে-১১৯তম এবং ১৫. ২০৩০ সালে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান-২৪তম।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮.২%। ডঊঋ(ডড়ৎষফ ঊপড়হড়সরপ ঋড়ৎঁস) বলেছিল ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এশিয়ার দেশগুলো থেকে এগিয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গতিশীল নেতৃত্ব, দূরদর্শিতা এবং প্রজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ। সম্প্রতি ঐঝইঈ-এর বিশ্ব পর্যালোচনায় ৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ১৬ ধাপ এগিয়ে ২৬তম অর্থনৈতিক দেশ হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড বিজনেস রিচার্জের (ঈঊইজ) গবেষণায় ২০৩০ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশে উন্নীত হবে। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্সের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে ২৩তম স্থান দখল করবে।
অন্যদিকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ এক নবদিগন্তের সূচনা করেছে। বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাক্রমে রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করেছেন। সরকার ২০২০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৪% এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৪.৫০%-এ নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের জন্য পাঁচ বছর অন্তর তিনটি পর্বে সপ্তম, অষ্টম ও নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০টি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এগুলো হলো : একটি বাড়ি একটি খামার, আবাসন প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচী, নারীর ক্ষমতায়ন, সকলের জন্য বিদ্যুত, কমিউনিটি ক্লিনিক, মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বিনিয়োগ উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষা।
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় হুমকি অতিমারী করোনাভাইরাস সংক্রমণ। ৯ মার্চ ২০২০-এ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর ঠিক সতেরো দিন পর সরকার সকলের জন্য স্বাস্থ্যবিধি ও করণীয় উল্লেখ করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। লকডাউন জারি করতে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ বিলম্ব করায় সেসব দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার অনেক বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যার প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১২০০ মানুষ বাস করে। এ কারণে বাংলাদেশে করোনা সর্বগ্রাসী রূপ নিতে পারত। কিন্তু আজ বাংলাদেশে একজন ‘ভ্যাকসিন হিরো শেখ হাসিনা’ আছেন বলেই করোনার প্রকোপকে দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবিলা করা যাচ্ছে।
ব্যাপারটি কাকতালীয়ভাবে সত্য করোনাভাইরাসের সর্বগ্রাসী রূপ দৃশ্যমান হওয়ার পূর্বেই ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ টিকাদান কর্মসূচীর সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সদর দফতরে সম্মাননা গ্রহণ করার মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুতনয়া বলেন, ‘টিকাদান কর্মসূচী বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের সাফল্যের গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজ করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করে। কিন্তু সেই ঝুঁকিকে মোকাবেলা করে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত ঠংযধঢ়বফ আকৃতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে রয়েছে। রফতানি বাণিজ্য ধনাত্মক ধারায় ফিরে এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হারে অত্যন্ত স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতিও সরকার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে।
সংক্রমণের তৃতীয় ওয়েভ মোকাবেলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার সকল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। করোনার মহামারীর ফলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব হতে উত্তরণের জন্য এখন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার একুশটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপির ৪.৩%। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের ঋণ সুবিধা চলতি ২০২০ সালের পাশাপাশি ২০২১ ও ২০২২ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ৫৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে দেশের সব মানুষকে দ্রুত টিকার আওতায় আনতে কাজ করেছে সরকার। গত ৭ ফেব্রুয়ারি অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে সারাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচী শুরু করে সরকার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ১০ কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরে অন্য আরও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির সঙ্গে ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশকে ২০.৬ লাখ এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উপহার দিচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট প্রাপ্তি।
সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের যতগুলো ধাপ রয়েছে বাংলাদেশ একের পর এক তা অতিক্রম করে চলছে। বর্তমান দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ; কিন্তু জিডিপির প্রবৃদ্ধির গতিতে ২০২৩ সালের মধ্যেই দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে মেগা প্রকল্প। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ পদ্মার বুক চিরে দৃশ্যমান। নগরজুড়ে অনুরণিত হচ্ছে মেট্রোরেলের প্রতিধ্বনি। অন্তরীক্ষে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে লড়াই করে এসেছে সমুদ্র বিজয়। ভারতের সঙ্গে অধরা ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে পূর্ণাঙ্গ সার্বভৌমত্বের মানচিত্র। জল-স্থল আর অন্তরীক্ষের পর পাতালে হচ্ছে বিশাল উন্নয়ন যজ্ঞ। পাতাল রেল তাই আশা জাগাচ্ছে বাংলাদেশকে।
কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চার লেনের সড়ক, পায়রা সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, ২ ডজনের অধিক হাইটেক পার্কসহ দেশজুড়ে আজ চলছে এক বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। আর এই যজ্ঞের প্রধান পুরোহিত বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা, যিনি তাঁর পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যাচ্ছেন সোনার বাংলা তৈরির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে। একটি দেশের ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস শুধু তার অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো বিনির্মাণেই তৈরি হয় না, এর কিছু নৈতিক ভিত্তিরও প্রয়োজন। সম্প্রতি জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (ঝউঝঘ) দারিদ্র্য দূরীকরণে এ পৃথিবী সুরক্ষা ও সবার জন্য শান্তি সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণের সর্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার দেয়া হয়েছে। এ যেন প্রাপ্তির মুকুটে আরেকটি পালক সংযোজন। যেন সোনার মুকুট হীরকের দূতি। প্রধানমন্ত্রী এ পুরস্কার গ্রহণ করে বলেছেন, তিনি এ পুরস্কার বাংলাদেশের জনগণকে উৎসর্গ করেছেন।
সম্প্রতি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ২৬ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু হুমকি মোকাবেলায় যে নেতৃত্ব তার ভূয়সী প্রশংসা জানিয়েছে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। ব্রিটেনের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ ডক্টর জেন এ্যালান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু সম্মেলনের মানবিক প্রতিচ্ছবি, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি দেখতে কেমন হয় সেটি তিনি বিশ্ব নেতাদের বোঝাতে পারবেন।’ এবারের কপ২৬ সম্মেলনে ৫ বিশিষ্ট ব্যক্তি শিয়ে জেনহুয়া (চীন), অলোক শর্মা (ভারত), আয়মান সাসলি (সৌদি আরব), টেরিজা রিবেরা (ইউরোপ) আর পঞ্চম ব্যক্তিটি হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি সম্মানিত হচ্ছেন দুর্গতদের কণ্ঠস্বর হিসেবে।
১৯৭১-এ বাঙালী জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান যে জাতির পরিচয় দিয়েছিলেন, ভিত্তি রচনা করেছিলেন, আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এক সুবর্ণ লগ্নে সেই জাতিকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শক্তি দিয়েছেন তাঁরই উত্তরসূরি শেখ হাসিনা। পিতার অসমাপ্ত কাব্যকে তিনি পরম মমতায় নিজ হাতে সমাপ্ত করে যাচ্ছেন। তার ভাষায় শুনি আমরা ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ আরও আগেই একটি উন্নত দেশে পরিণত হতো।’ হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি আজ বিশ্বের দরবারে নিজের অস্তিত্বকে জানান দিচ্ছে সদর্পে।
এই তলাবিহীন ঝুড়ি যেন আলাদিনের আশ্চর্যের প্রদীপ যেথায় যোগ্য হাতের স্পর্শে চারদিক আজ উন্নয়ন উৎকর্ষের আলোয় উদ্ভাসিত। শেষটায় কবি সুকান্তকে স্মরণ করতে চাই, যার কবিতায় রয়েছে বাংলাদেশের উৎকর্ষের প্রতিচ্ছবি-
‘সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সদস্য : উপদেষ্টা পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ।