বাংলাদেশের সংবিধানের সপ্তম ভাগে ১১৮ – ১২৬ অনুচ্ছেদ এ নির্বাচন বিষয়ে বিধান রাখা হয়েছে। ১১৮ নং অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। অন্য অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, কর্মচারীগন, প্রতি এলাকার জন্য একটি মাত্র ভোটার তালিকা, ভোটার তালিকায় নামভুক্তির যোগ্যতা, নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়,নির্বাচন সম্পর্কে সংসদের বিধান প্রনয়নের ক্ষমতা, নির্বাচনী আইন ও নির্বাচনের বৈধতা এবং নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী কতৃপক্ষের সহায়তাদান ইত্যাদি বিষয়ে বিধান রাখা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা নিয়ে বর্তমানে যথেষ্ঠ বিতর্ক চলছে। বিগত দিনেও ছিল। এটা নুতন কিছু নয়। যাঁরা বিতর্ক করছেন তাঁরা অনেকেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন কিন্তু সে সময় নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করার জন্য নিরপেক্ষ দৃষ্টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ বা আইন প্রনয়নের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। হয়তো সবই রাজনৈতিক কারণে। কেন জানি না প্রত্যেকবার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করার পু্র্বে নানা বিতর্ক শুরু করেন। সে যাই হোক জাতির বৃহত্তর স্বার্থে একটা সমাধান বের তো করতেই হবে। অনাদীকাল একই বিতর্ক চালিয়ে যাওয়া কারোই কাম্য হতে পারে না।
সবচেয়ে বড় মুশকিল হলো আমরা পরস্পর একে অপরের প্রতি বিস্বাস হারিয়ে ফেলেছি। আমরা সবাইকে শুধু অবিশ্বাস করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো বিস্বাস করতে হবে। বর্তমানে নিরপেক্ষ, ব্যক্তিত্ব ও নির্ভরযোগ্য লোকের যথেষ্ঠ অভাব । কারন ছাত্র জীবন থেকেই আমরা কোন না কোন ভাবে কোন এক পক্ষ গ্রহণ করে থাকি। তাই পক্ষপাতিত্ব নিয়েই আমাদের পথ চলা শুরু । আর ব্যক্তিত্ব সেতো অর্থ আর ক্ষমতার কাছে হার মেনেছে। দুই শত বছর বৃটিশদের পদলেহন করতে করতে আমরা পরাধীনতার মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারিনি।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও সদস্য নির্বাচন করার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি একটা সার্চ কমিটি গঠন করেন এবং ঐ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার দের মনোনীত করা হয় এবং মহামান্য রাস্ট্রপতি তাঁদের নিয়োগ দেন। এটাই সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে বলবত আছে। তাতেও আবার নানা মত পার্থক্য দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বিতর্কটি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। কাজেই বিকল্প ও অধিক গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য চিন্তা করার সময় এসেছে। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের ভুমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
সার্চ কমিটি : যেহেতু নিরপেক্ষ, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও বিস্বাসযোগ্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না তাই আমাদেরকে বিকল্প পথ বের করতে হবে। আমরা রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, সংসদের স্পীকার, সেনাপ্রধান, সচিব এই সকল লোকগুলোকে বিস্বাস করেই দেশ পরিচালনা করছি। তাঁরা কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়। সুতরাং তাঁদের প্রতিনিধি নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করতে পারলে অবিশ্বাসের ক্ষেত্রটা কিছুটা হলেও ছোট হয়ে আসবে।
সেক্ষেত্রে সার্চ কমিটি নিম্নরূপ ভাবে গঠন করা যেতে পারে।
১) সুপ্রিম কোর্টের আাপীল বিভাগের একজন মহামান্য বিচারপতি আহবায়ক।
২) মহামান্য রাষ্ট্রপতির মনোনীত একজন ব্যক্তি৷ সদস্য
৩) মহামান্য প্রধান বিচারপতির মনোনীত একজন ব্যক্তি। সদস্য
৪) মাননীয় স্পীকার এর মনোনীত একজন ব্যক্তি। সদস্য
৫) সেনাপ্রধান কৃতক মনোনীত একজন ব্যক্তি। সদস্য।
এই পাঁচজন নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন হবে এবং তাঁরা যাচাই বাছাই করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নাম সুপারিশ করবেন এবং তাঁদেরকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিবেন।
তাতে দেখা যাবে রাজনৈতিক দলের বা সুশীল সমাজের মনোনীত কোন লোক থাকবে না এবং নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ও খুব বেশি প্রশ্নের সুযোগ থাকবে না।
নির্বাচন কমিশনারের নাম সুপারিশ করার সময় নিম্নোক্ত বিষয় গুলি অবশ্য়ই পূর্ণভাবে বিবেচনায় আনতে হবে।
ক) নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা নির্ধারণ করতে হবে।
খ) বিভিন্ন সেক্টর থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক কমিশনার বাছাই করে নিয়োগ দিতে হবে।
গ) যাচাই বাছাই করে অপেক্ষাকৃত যোগ্য, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ও দল নিরপেক্ষ লোক বের করতে হবে।
ঘ) কমিশনারদের অবশ্যই দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে।
ঙ) তাঁদের পূর্ব ইতিহাস পর্যালোচনা করতে হবে।
কমিশনার নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটিতে যাঁরা নাম প্রেরণ করবেনঃ
ক) প্রধান বিচারপতি কতৃক মনোনীত তিনজন ( অবসরপ্রাপ্ত /চাকরিরত) বিচারপতি / অবসরপ্রাপ্ত জেলাজজ পর্যায়ের জজ)
খ) প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের প্রধান সচীব কতৃক তিনজন ( কমপক্ষে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা)
গ) সেনাপ্রধান কৃতক মনোনীত তিনজন ( কমপক্ষেব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদা সম্পন্ন)
ঘ) পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা জোট এর পক্ষ থেকে দুইজন করে। এইভাবে প্রেরিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে পছন্দমত প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যক্তিকে সার্চ কমিটি বাছাই করে নাম সুপারিশ করবেন এবং তাঁদের মধ্য থেকে মহামন্য রাষ্টপতি নিয়োগ দান করবেন।
উপরোক্ত বিষয়ে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সংলাপ করা যেতে পারে।
তবে যত দ্রুত সম্ভব সল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন ও পুনর্গঠন নিয়ে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট আইন প্রনয়ণ করতে হবে এবং সেক্ষেত্রে উপরোক্ত বিষয় গুলি বিবেচনায় রাখা যেতে পারে।
এটি বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার একটি প্রস্তাব মাত্র।