দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ । হীরেন পণ্ডিত

দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে এমন কঠোর অবস্থানে আগে থেকেই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে চলতি মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনি ইশতেহারের ‘দুর্নীতিমুক্ত সুশাসনের বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সচেষ্ট আছেন তিনি। সরকার ও দলের মধ্যেও এমন নীতির প্রতিফলন ঘটান তিনি। আগে থেকে চলে আসা সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী অভিযানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান জোরদার হয়ে ওঠে।

দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতেই এগিয়ে চলছে সরকারের কার্যক্রম। এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশনায় দেশজুড়ে চলছে দুর্নীতিবিরোধী সর্বাÍক অভিযান। যত প্রভাবশালী এবং সরকার কিংবা ক্ষমতাসীন দলের যত ঘনিষ্ঠই হোন না কেন, ছাড় পাচ্ছেন না কোনো অপরাধীই। কারও ব্যক্তিগত অপরাধের দায় নিতেও নারাজ সরকার ও দল। সরকারের এই কঠোর অবস্থান সুধী সমাজসহ সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সময়ের বক্তৃতা-বিবৃতিগুলোতেও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রতিফলন রয়েছে। দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। করোনা সংকট শুরুর পর থেকে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলার পাশাপাশি কঠোর হস্তে অনিয়ম-দুর্নীতি দমনে জোর দেন তিনি। দেশের কয়েকটি স্থানে ত্রাণ বিতরণ নিয়ে দলের কয়েকজন নেতা ও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নেয়া হয়।

করোনাকালে দুর্নীতির জন্য স্বাস্থ্য খাতের কয়েকজন হর্তাকর্তার বিরুদ্ধেও নানা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। করোনাকালে ত্রাণ তৎপরতায় যেসব জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদেরও তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করে কঠোর বার্তা দিয়েছে সরকার। অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এসব জনপ্রতিনিধির বেশির ভাগ ছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত।

দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে এমন কঠোর অবস্থান আগে থেকেই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে চলতি মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনি ইশতেহারের ‘দুর্নীতিমুক্ত সুশাসনের বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সচেষ্ট আছেন তিনি। সরকার ও দলের মধ্যেও এমন নীতির প্রতিফলন ঘটান তিনি। আগে থেকে চলে আসা সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী অভিযানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান জোরদার হয়ে ওঠে। আমরা জানি প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতি দমন করার জন্য। তবে আগে থেকেই যাতে এ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ করা যায়, সে বিষয়ে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয় হওয়া উচিত। তাদের নজরদারি আরও কঠোর হওয়া দরকার। দুর্নীতি ও অনিয়মে যুক্ত ব্যক্তি যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, প্রধানমন্ত্রী কাউকেই ছাড় দেবেন না, এটাই সবার প্রত্যাশা।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও সুশাসন খুবই জরুরি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি কর্মকর্তাদের। বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো হয়েছে, ফলে এখন দুর্নীতি না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। দেশ যেখানে অবস্থান করছে, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন করা গেলে অতি দ্রুত সেই অবস্থান আরও অনেক উপরে উঠে যাবে, সন্দেহ নেই।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা হলে একসময় সব লজ্জা কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ উন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে, এটি সবাই বিশ্বাস করে। সরকার গত ১২ বছরে দেশের অনেক উন্নতি করেছে, এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু এটাও সত্য, গত ১০ বছরে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রশ্নে সরকারের ভাবমূর্তি ভালো, তবে আরও ভালো হওয়া প্রয়োজন ছিল।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জনগণের দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান দেখাবেন এবং সেভাবেই দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবেন। সেটাই সবার প্রত্যাশা।

জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণীত হয়েছে এবং চারিত্রিক সাধুতা বা শুদ্ধতা অর্জন ও দুর্নীতি দমনের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় একটি কৌশল-দলিল হিসেবে গৃহীত হয়েছে। যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক আইন-কানুন ও বিধি-বিধানের সুষ্ঠু প্রয়োগ, পদ্ধতিগত সংস্কার ও উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সবার চরিত্র নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গৃহীতব্য কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয়েছে।

সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে রূপকল্প ২০২১-এর সফল বাস্তবায়নে রাষ্ট্র ও তার প্রতিষ্ঠানগুলো এবং সমাজে কার্যকরভাবে ন্যায়, সততা প্রতিষ্ঠা ও প্রতিপালন, সফলতার সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সমন্বিত সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন জরুরি প্রয়োজন। নিশ্চয়ই সমাজ, রাষ্ট্র, ন্যায়নীতি ও স্বচ্ছতার নিরিখে এ ধরনের আর্থিক লেনদেন শুধু দুর্নীতি নয়, বরং দুর্নীতির সূতিকাগার হিসেবে দানা বাঁধতে পারে।

দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দুর্নীতি দমনের অভিযানকে সফল করতে হলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ-উদ্যমকে একযোগে কাজে লাগাতে হবে। তবে এই কঠিন লক্ষ্যে সফলতা অর্জনের একটি পূর্বশর্ত হচ্ছে দুর্নীতি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। যদি সংঘবদ্ধ ও সমন্বিতভাবে দুর্নীতির কদর্য চেহারাকে পরিচিত করে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এবং জনস্বার্থে এর কুফল সম্পর্কে তথা জনসচেতনতা সৃষ্টি করা যায়, তাহলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো, বিএনএনআরসি

Comments (0)
Add Comment