গণতান্ত্রিক চেতনায় ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মতো জাতির দিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো যে অধ্যায় সৃষ্টি করেছিল সেইসব ঘটনার কেন্দ্রে নিহিত গণতান্ত্রিক চেতনায় আজও আমরা রাষ্ট্র ও সমাজে এর যথাযথ বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়া ও ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৯৩টি রাষ্ট্রে প্রতি বছরে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে এটি তারই ফলস্বরূপ বলা যায়। বাংলার বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় এটি একটি বড় ধাপ আমাদের এই চেতনা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, কিন্তু বাংলা প্রচলনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি নেই তা বলা যাবে না? কিন্তু যতোটা হবার কথা ছিলো তা হয়তো হয়নি। একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র গড়তে, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে বৈষম্য দূরীকরণে একমুখী শিক্ষাব্যস্থার বিষয়টি নিশ্চিত করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার মাসে আমরা যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা ও আলোচনা-পর্যালোচনার মধ্যেই এই বিষয়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ না রাখি। একই সঙ্গে এও মনে রাখতে হবে, আমরা যেন বায়ান্ন ও একাত্তরের অঙ্গীকার ভুলে না যাই। আমরা যদি আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়তে চাই তাহলে ওই অধ্যায়গুলোর চেতনা ধারণ করে এগোতে হবে সামনের দিকে।
স্বাধীনতার জন্য বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় অধ্যায় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। রক্তস্নাত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মাতৃভাষার জাতীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠার এমন উদাহরণ বিশ্বে বিরল। শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, ২১ ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান এবং ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত ১৯৩টি দেশে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন ভাষা আন্দোলনকে বিশ্ব ইতিহাসেরও গৌরবময় অধ্যায়ে পরিণত করে।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্বেবির ভিত্তিতে ধর্মকে পুঁজি করে দেশ বিভাজিত হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের হাজারও বৈষম্যের শিকার হয়। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ আর আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হয় মহান ভাষা-আন্দোলনের মাধ্যমে। মাতৃভাষার এই অধিকার আদায়ের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন পরবর্তীকালে রূপ নেয় স্বাধীনতা আন্দোলনে।
এই ভাষা দিবসে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত, সবাইকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে দেশ জাতি সবসময় এবং তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে বাংলাভাষীদের মধ্যে ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস। আগে ছিল একটা আন্দোলন। ভাষার জন্য লড়াকু মানুষের আন্দোলন। এই আন্দোলন সাফল্য লাভ করার পর অর্থাৎ বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর এই আন্দোলন শেষ হয়েছে। সারা বিশ্বে এই অনুষ্ঠান হয়। বাংলা ভাষা যখন একটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রভাষা, তখন তাকে ইংরেজি, ফরাসি ইত্যাদি ভাষার মতো বিজ্ঞানের ও কারিগরি শিক্ষাচর্চার ভাষা করে তুলতে হবে। বাংলায় যাতে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বিজ্ঞান শিক্ষাদান করা যায় সে জন্য শুধু গবেষণা করা দরকার।
সংস্কৃতি মানুষের আত্মার কাজ করে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি-কেন্দ্রিক আমাদের নিজস্ব একটি সংস্কৃতিবলয় তৈরি হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের গর্বের বিষয় স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন। ভাষা আন্দোলনে মুখ্য-চাওয়া ছিল মাতৃভাষা বাংলা টিকিয়ে রাখা। কিন্তু একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। না-হলে মাতৃভাষার আন্দোলনে বিজয় পাওয়ার পরেও আন্দোলন টিকে থাকত না। বলা যেতে পারে, স্বাধীনতা অর্জন করাটাও ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। এ দেশের জনগণের ভাষা ছিল সব সময়ই বাংলা। কিন্তু একাত্তরের আগের শাসকদের ভাষা সব সময়ই ছিল অন্য। সাতচল্লিশের আগে প্রায় দুইশো বছর ছিল ইংরেজি। তার আগে কখনো সংস্কৃত, কখনো ফারসি বা ইউরোপীয় কোনো এক ভাষার লোকরা এ দেশের জনগণকে শাসন করেছে। আমরা যদি সাতচল্লিশ থেকে ভাষা-আন্দোলন করে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে ব্যর্থ হতাম তাহলে এখনো হয়তো বিদেশি বা ভিন্ন ভাষার লোকরা শাসন করত।
বাংলা ভাষার আবেগ নিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি ঘটা করেই পালন করি। কিন্তু আমাদের সারা বছরের কাজকর্মে সেই আবেগের প্রকাশ থাকে না। রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের মাধ্যমে এ দিনটিকে বিশেষ করে তুলতে পারতাম। সংবিধানের প্রথম ভাগের ৩ নম্বর ধারা মোতাবেক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা। সে মোতাবেক ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭’ চালু করা হয়েছে। এ আইনের ধারা ৩(১) মোতাবেক, ‘এই আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস, আদালত, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগ কার্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে।’ এই আইন প্রণয়নের পর থেকে জাতীয় সংসদের সব আইন বাংলা ভাষায় প্রণীত হচ্ছে। এই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সর্বত্র বাংলায় লেখার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটছে না। অফিস-আদালত, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রায় ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষা অবহেলার শিকার, উপেক্ষিত। ভাষা শহীদরাও প্রাপ্য মর্যাদা পান না, বলা চলে আমরা দিতে পারি না। ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা নড়েচড়ে বসি। বাংলা ভাষার প্রচলনের জন্য আদালত ও সরকারের আদেশও আছে। কিন্তু পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এজন্য সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও একই প্ল্যাটফর্মে আসার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। এসব করতে পারলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন সার্থক ও অর্থবহ হবে। বহু তাগের মাধ্যমে, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। বাঙালির ঐক্যবদ্ধতার কাছে পশ্চিমাদের চোখ-রাঙানো প্রতিহত করতে পেরেছি। এত ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে পাওয়া এ অর্জন রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। বাংলা বানান ও বাংলা উচ্চারণ শুদ্ধ করে উপস্থাপন করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি র্কর্তৃক সর্বশেষ প্রণীত অভিধান সব সময় পাশে রাখব। উচ্চারণে আরও সতর্ক হব।
বাংলা একটি সমৃদ্ধ, শ্রুতিমধুর ও সহজসরল ভাষা। মনের আবেগ ও ভাব প্রকাশে বাংলা ভাষায় শব্দের প্রাচুর্য নিয়ে গর্ব করা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের এমন ঘটনা বিরল। এত আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে ভাষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে কথা বলার অধিকার আদায় করা হয়েছে, সেই ভাষাকে আমরা বড়ই অবজ্ঞা করি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ট্রলে অথবা ইউটিউবের কিছু বিনোদনধর্মী ভিডিওতে বিকৃত শব্দের পাশাপাশি অশ্লীল, নোংরা ও কুরুচিপূর্ণ শব্দ ও গালাগালির সমাহার ঘটছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব কুরুচিপূর্ণ ট্রল বা ভিডিওর প্রতি রয়েছে অনেকের আগ্রহ। কিছু ক্ষেত্রে এর জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস লেখাতে অশুদ্ধ বিকৃত বাংলা বানানের পাশাপাশি অশ্লীল শব্দের ব্যবহার চলছে ভয়াবহ আকারে। বন্ধুদের বিনোদন দেওয়ার জন্য সচেতনভাবে অশ্লীল ও করুচিপূর্ণ বিকৃত শব্দ ব্যবহার করছেন অনেকেই। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, অশ্লীল শব্দ ছাড়া এদের অনুভূতির প্রকাশ সম্পূর্ণ হয় না!
সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলা ইত্যাদি সৃষ্টির পেছনেও কাজ করে চিন্তা বা ভাষা। মানুষের সব কর্মকান্ডেরই মর্মে কাজ করে চিন্তা বা ভাষা। শ্রমশক্তি পরিচালিত হয় চিন্তাশক্তি দ্বারা। চিন্তা ও ভাষা অভিন্ন। আমাদের উপলব্ধি করা দরকার যে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও উন্নতির জন্য রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব ও উন্নতি অপরিহার্য। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা না টিকলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও বেশিদিন টিকবে না। দেশ থাকবে, মাটি, মানুষ, গাছপালা, পশু-পাখি, নদীনালা, আকাশ-বাতাস সবই থাকবে; কিন্তু রাষ্ট্র থাকবে না।
বাংলাদেশে পঁয়তাল্লিশটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর পঁয়তাল্লিশটি বিলীয়মান মাতৃভাষার উন্নতি সাধনের জন্য সরকার ও এনজিও যে চেষ্টা চালাচ্ছে তা সফল হবে না। বাংলাদেশের রাষ্ট্রসত্তার মধ্যে এসব জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নতির আরো ভালো পরিকল্পনা ও কার্যক্রম দরকার। তাদের সন্তানদের জন্য বাংলা ও ইংরেজি শেখার এবং রাষ্ট্রীয় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বাড়াতে হবে। তারা যদি চায়, কেবল তাহলেই তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে তাদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তারা অন্য নাগরিকদের মতো রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করবে। বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় তারা স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে।
রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের এবং রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার উন্নয়নের বিবেচনা বাদ দিয়ে যে উন্নয়ন কার্যক্রম চালানো হয় তা খণ্ডিত। যে উন্নতিশীল অবস্থায় আমরা উত্তীর্ণ হতে চাই তার জন্য দরকার নতুন রেনেসাঁস ও নতুন গণজাগরণ। নৈতিক সচেতনতা অপরিহার্য।
এশিয়ার দু’টি দেশ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জনসংখ্যার দেশ। তাদের একটির উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ভাষা মাতৃভাষা, অন্যটির উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ভাষা ইংরেজি। মাতৃভাষাকে অবলম্বন করে যে দেশটি এগিয়ে যাচ্ছে, তারাই গবেষণায় আমেরিকাকে পেছনে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, ইংরেজি মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে অগ্রসরমাণ দেশটির তুলনায় চীনের মাথাপিছু আয় পাঁচ গুণ বেশি। অথচ পড়ুয়া জাতি হিসেবে ইংরেজি মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা করা দেশটি এগিয়ে আছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ইংরেজি ভাষায় করা হয়। গবেষণায় গতি সঞ্চারের নেপথ্যের শক্তি গণিত এবং গণিতে পারদর্শিতার মাধ্যম মাতৃভাষা।
বঙ্গবন্ধুর সময় দেশে জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। বর্তমানে প্রায় ১৭ কোটি। সেই সময় সাক্ষরতার হার ছিল ২০ শতাংশ। বর্তমানে তা ৭৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় অর্জন নারীশিক্ষা। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে তা এখন ৫০ শতাংশের বেশি। দেশ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিপর্যায়ে পণ্য, সেবা, ভবন, প্রতিষ্ঠান বা অন্য যে কোনো কিছুর নামকরণে বাংলা শব্দের প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। অনেকে দেখা যায়, শুদ্ধ বাংলা বলেন না কিংবা এক মিনিটের কথায় অনেক বিদেশি শব্দ ব্যবহার করেন, যা মানুষকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। বিদ্যালয়গুলোয় ইংরেজি বিষয়ের সঙ্গে বাংলা বিষয়কেও সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়ানোর বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবেচনায় থাকার দরকার রয়েছে। একই সঙ্গে শিশুশ্রেণি থেকে তাদের অপ্রচলিত বাংলা শব্দের সঙ্গে পরিচয় করাতে হবে। তাদের জন্য যেসব গল্প পাঠ্যবইয়ে থাকে, সেখানে এজাতীয় শব্দগুলোর উপস্থিতির মাধ্যমে সেটি করা যেতে পারে। কেবল তা নয়; বাংলা ভাষা, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের প্রতি তাদের শেখার পথ আরও সুগম করা দরকার, যাতে তারা ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে বাংলা ভাষার প্রতি উদাসীন না হয়। বিদ্যালয়ে বাংলা ভাষায় তত্ত্বীয় পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি শ্রেণিতে ব্যবহারিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। এর সঙ্গে একুশে ফেব্রুয়ারিসহ জাতীয় দিবসে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এবং দিবসগুলোয় ভাষা ও আমাদের ইতিহাস নিয়ে প্রতিযোগিতা ও আলোচনায় অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শুধু সাধারণের জন্য বাংলা মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করার ব্যবস্থা আছে। ভাষা আন্দোলনের প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবায়ন করার জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে অনেক নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদী ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের কার্যক্রমের ওপর জাতীয় চেতনা বিকাশের প্রশ্ন জড়িত। একইভাবে বাংলা ভাষাকে শিক্ষা কার্যক্রম এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাজনৈতিক ইচ্ছা ও দৃঢ়তা দুটিরই প্রয়োজন আছে। তবে বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যেতে হবে নইলে আমরা পিছিয়ে পড়বো এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার ভয় থেকে যাবে তবে অবশ্যই মাতৃভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে। এ নিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে।
হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক ও গবেষক