ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা বাংলাদেশের সংবিধানের চারটি মৌলিক কাঠামোর অংশ। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মের স্বাধীনতা এবং স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করার স্বাধীনতা উভয়ই। ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানের একটি মৌলিক কাঠামো হওয়ায় সরকার ধর্ম বিবেচনা না করে সাধারণভাবে দেশের সকল মানুষের নিরাপত্তা ও কল্যাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে যে ধর্ম প্রত্যেকের নিজস্ব বিষয়। একজন ব্যক্তি নিজস্ব পরিচয়ে পরিচিত হবে ধর্মের ভিত্তিতে নয়।
একটি রাষ্ট্র একজন ব্যক্তি বা একটি গোষ্ঠীর মানবাধিকারকে সম্মান করবে এবং তাদের মানবাধিকার ভোগে হস্তক্ষেপ করবে না। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে রক্ষা করবে; সবশেষে, রাষ্ট্রকে সর্বদা একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মানবাধিকার ভোগ করার ইতিবাচক উপায়গুলো পূরণের চেষ্টা করতে হবে। ১৯৬৬ সালের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুচ্ছেদ ২৭, অনুশীলনটিকে পালন করার কথা জোরালোভাবে বলা হয়েছে।
সাধারণভাবে, একটি রাষ্ট্র ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা সংখ্যালঘুদের বিবেচনায় না নিয়ে রাষ্ট্রের প্রতিটি ব্যক্তির নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য দায়বদ্ধ। কিন্তু সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অধিকার এবং অসহিষ্ণুতাপূর্ণ অবস্থা থেকে রাষ্ট্রই বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করবে। বিশেষ সুরক্ষার আলোচনাটি বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮ (৪) এবং ২৯ (৩) উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্র বা সরকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রকে উৎসাহিত করবে।
বাংলাদেশের বর্তমান দৃশ্যপট সত্যিই কি ভিন্ন? গত বছর কুমিল্লার একটি ঘটনার পর গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলে। কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসবের সময় বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নির্যাতন, ভাঙচুর, সংঘষের্র ঘটনা ঘটেছে এবং সহিংসতায় মানুষ নিহত হয়েছেন। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা কোনটাই বাংলাদেশের সংবিধান অনুমোদন করে না। এটি বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। গুজব ছড়িয়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃণা উস্কে দেওয়া কারণে পরিস্থিতির অবনতি হয়। এ দেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
যাঁরা দেশপ্রেমিক এবং অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন, যারা ধর্মের পাশাপাশি অন্যদের ধর্মকে সম্মান করেন, তারা আর এই ধরনের হিংস্র গোঁড়ামির উন্মাদনাকে সমর্থন করতে পারেন না। কুমিল্লার পূজা মণ্ডপে হামলার পর গত কয়েক দিনে চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী এবং রংপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় কিভাবে উগ্রপন্থীরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা করেছে তা সবাই জানেন। ধর্মের নামে এই ধরনের সন্ত্রাসকে কোনভাবেই বাড়তে দেয়া যাবে না। এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী, সমাজকর্মী, মানবহিতৈষী ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী এবং প্রগতিশীল শক্তিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথভাবে প্রস্তুত ও প্রতিরোধ করতে হবে।
অতি তুচ্ছ ঘটনায় বারবার হামলার লক্ষ্যবস্তু হয় দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। গত ১৭ মার্চ যখন দেশব্যাপী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে, সেদিন সকালে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে ঘটে গেল ন্যাক্কারজনক ঘটনা। একটি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া নিয়ে একযোগে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয় ওই গ্রামের ৮৮টি হিন্দু বাড়ি ও পাঁচটি মন্দিরে। তাদের হামলা থেকে রেহাই পাননি স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাও।
আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের যুদ্ধ করার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। সেই আওয়ামী লীগের এক যুগের বেশি শাসনামলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর বারবার নৃশংস হামলা হচ্ছে বারবার, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস হামলা চলে। মামলা হলেও দুর্বৃত্তেরা শাস্তি পায়নি সবাই এখন জামিনে মুক্ত।
কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হয়েছে আরো ভয়াবহ হামলা। এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধরা এখনো সুবিচার পায়নি। এই হামলার আসামিরাও এখন কারাগারে নেই। একইভাবে দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নাটোর, রাজশাহীর চারঘাট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও পিরোজপুরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে যেকোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও রাজনীতি হয়, কিন্তু কোন শাস্তি হয় না। ফলে থামছে না নির্যাতনের ঘটনা। অভিযোগ, নেপথ্যে ক্ষমতাশালীরা জড়িত থাকায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যায় না। প্রত্যেকটি হামলার পেছনেই অপশক্তি কাজ করেছে। ধর্মীয় ইস্যুকে ব্যবহার করা হয়েছে।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া দণ্ডবিধি এবং ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের বিভিন্ন ধারায় শাস্তিযোগ্য একটি অপরাধ। কিন্তু বিভিন্ন সময় ধর্ম অবমাননাকর বিভিন্ন ঘটনার যেসব অভিযোগ শোনা যায়, সেসবের বিচারের কথাও তেমন শোনা যায় না। তবে এসব ঘটনায় দ্রুত ন্যায় বিচারের উদাহরণ সৃষ্টি করা না গেলে মানুষ ক্রমেই বিচার ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা হারাতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকারকে এ বিষয়ে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।
১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলো। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সবাই একযোগে যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে। বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও কোনো বৈষম্যমূলক সমাজের জন্য হয়নি। বাঙালী জাতি দ্বিজাতি তত্ত্বের বিস্তারের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেনি। একদিকে ধর্মীয় বৈষম্য, অন্যদিকে জাতিগত বৈষম্য। বৈষম্য থেকে মুক্তি এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতেই তো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো।
এমন একটি রাষ্ট্রের জন্য এদেশের মানুষ লড়াই করেছে, যুদ্ধ করেছে, যে রাষ্ট্রটির জন্ম হলে সব নাগরিকের জন্য সাম্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থাৎ সমতা এবং সামাজিক মর্যাদাটি সুনিশ্চিত হবে এবং এটি হবে বাঙালির বাংলাদেশ-সে যে ধর্মের বা বর্ণেরই হোক না কেন। সব ধর্ম বর্ণের মানুষ মিলেইতো এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে। সব বাঙালির ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশ অর্জন করেছি। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের যে সংবিধানটি গৃহীত হলো সেই সংবিধানটি গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়েই কিন্তু চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ঘোষণা করা হলো। তার আবর্তেই কিন্তু আসলে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ এবং তার আগের লড়াইয়ের আকাক্সক্ষা যা ছিল, সেটারই প্রতিফলন ঘটল।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। প্রশাসন ও সরকারকে সকল নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় আরো কাজ করতে হবে এবং নাগরিক সমাজকেও আরো এগিয়ে আসতে হবে। অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান সরকারের পক্ষে বলা হয় বাংলাদেশ ধর্মীয় বহুত্ববাদ বিকাশ ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় সবাই সচেষ্ট। যেকোনো ধরনের সহিংসতা, বিভেদ মোকাবিলায় সরকার সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে শ্লোগান এনেছেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এ শ্লোগানের মাধ্যমে বর্তমান সরকার দেশের সাধারণ মানুষকে সব ধর্মের প্রতি সমানভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শনে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উদ্যোগের প্রতি আস্থাশীল। তাঁর দৃপ্ত পদক্ষেপেই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে আরো এগিয়ে যাবে।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। সংখ্যালঘুদের নির্যাতনে ও সম্পত্তি দখলের ক্ষেত্রে সব দলের দৃষ্কৃতিকারীরা আছে, কেউ পিছিয়ে নেই। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে একনাগাড়ে প্রায় এক যুগ ক্ষমতায়। এই সময়েও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-হয়রানি বন্ধ হয়নি, তার প্রমাণ সুনামগঞ্জের নোয়াগাঁও, কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, পাবনার সাঁথিয়া, দিনাজপুর এর ঘটনাবলি। এসব ঘটনায় সঙ্গে চিহ্নিত সন্ত্রাসীর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সুবিধাবাদী নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে বলেই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে আমরা জানতে পারি। সুবিধাবাদী ব্যক্তি, দুষ্কৃতিকারীরা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায়, রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে বা প্রভাব খাটিয়ে নির্যাতন চালায়, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর রাষ্ট্র ক্ষমতার নাটকীয় পরিবর্তন হলো এই নাটকীয় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের অপমৃত্যু হলো এর পরে রাষ্ট্রধর্ম অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
এখনো সংখ্যালঘুদের দেশ ত্যাগে হুমকি, দেশ ত্যাগে বাধ্য করা, বাড়ি ঘর ভাঙচুর, হত্যা করা, পিটিয়ে আহত করা, প্রতিমা ও মন্দির ভাঙচুর, গীর্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা, জোর করে সম্পত্তি দখল, বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ধর্ম অবমাননার গুজব রটানো, মেয়েদের অপহরণ ও জোরপূর্বক বিয়ে করা, নারীর শ্লীতাহানি, ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, জোর করে ধর্মান্তরিত করা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে অপবিত্র করা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাধা প্রদান, ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করা, মিথ্যা অপবাদ দেয়া, পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখা, মামলা গ্রহণ না করা বা অহেতুক বিলম্ব বা হয়রানি করাসহ নানা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-হয়রানির ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীরা সেই পুরোনো অপকৌশলেরই আশ্রয় নিয়ে থাকে।আক্রমণকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় অনেক সময় থানা-পুলিশে যেতেও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা ভয় পায়। একসময় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার পর গণমাধ্যমের খবরকে অতিরঞ্জিত বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হতো। আওয়ামী লীগ আমলে সে রকমটি হয়নি। সরকার রামু ও নাসিরনগরে পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি ও মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছে। সুনামগঞ্জে ত্রাণ সামগ্রীসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে। দোষী কঠিন শাস্তির আশ্বাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, প্রায় আগের সব ঘটনায়ই অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা এখনো সম্ভব হয়নি।
অনেক ঘটনা আছে যেগুলো সরকার, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরো একটু তৎপর থাকলে সঠিক সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই এসব ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো। আর এসমস্ত ঘটনায় যদি অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা যেতো তাহলে এ পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হতো। দৃষ্কৃতিকারীরা এসব অপকর্ম করতে ভয় পেতো। সমাজের সকল মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং একটি সম্প্রীতর সমাজ গড়ে তুলতে হবে।
আমাদের দায়িত্ব হলো আমাদের গণতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিকভাবে সাম্য, সমতা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের ও মানবাধিকারের লড়াইটিকে এগিয়ে নেয়া। তাই প্রশাসন ও সরকারকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সম্প্রীতি রক্ষায় আরো কাজ করতে হবে এবং দল-মত নির্বিশেষে সকল নাগরিক সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে, যার স্বপ্ন তিনি সারা জীবন দেখেছেন যার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন এবং নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক