স্বপ্ন পূরণের আরেক ধাপ আমার গ্রাম, আমার শহর । হীরেন পণ্ডিত

কাউকে পেছনে ফেলে না রেখে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নে অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি অদম্য বাংলাদেশ। একাধিক মেগা প্রকল্প উদ্বোধন হবে এ বছর। দ্রুত গতিতে চলছে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক পদ্মা বহুমুখী সেতুসহ ১০ মেগা প্রকল্প ও ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজ। ভবিষ্যতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার ভিত্তি রচনার ক্ষেত্রে এই ১০ মেগা প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকারের ১০ মেগা প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকায় মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, চট্টগ্রামের দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, পায়রা বন্দর নির্মাণ এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ। এ সব প্রকল্পের কাজ এবছর শেষ হবে এবং উদ্বোধন করা হবে। আরো এক ধাপ এগুচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লব, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়ন, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তন সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে শুধু অঙ্গীকারই করেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে তা অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তিনি স্থায়ী ও দৃঢ় প্রত্যয়নে অঙ্গীকার করেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, অর্থাৎ আমাদের এই দেশ অপার সম্ভাবনাময় একটি দেশ। তিনি তাঁর মেধা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। তিনি দেখলেন সব সুযোগ-সুবিধা শহরকেন্দ্রিক। তিনি বাংলাদেশের গ্রামগুলোকে আধুনিক ও পরিকল্পিত গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখলেন। কাউকে পেছনে ফেলে না রেখে এগিয়ে যাওয়া এই নীতি ও আদর্শকে সামনে রেখে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের নির্বাচনের ইশতেহারে ৩.১০ অনুচ্ছেদে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। প্রতিটি গ্রামে উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ সুবিধা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও উন্নত চিকিৎসা সুবিধা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, উন্নত পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্যব্যবস্থাপনা, কম্পিউটার ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্মত ভোগ্যপণ্যের বাজার, ব্যাংকিং সুবিধা, গ্রামীণ কর্মসংস্থান, কমিউনিটি স্পেস ও বিনোদনের ব্যবস্থা সম্প্রসারণের মাধ্যমে শহরের সুবিধা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বিবিএসের ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের শতকরা ৬৪ দশমিক ৯৬ ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। এর মধ্যে থেকে প্রতিবছর শতকরা সাত দশমিক ছয় ভাগ মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে আসে। এতে করে প্রতিবছরই শহরের ওপর বাড়তি জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাগরিক সুবিধা দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। নগরবাসীরা তাদের প্রাপ্য ন্যূনতম নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ২০৪১ সালে দেশের জনসংখ্যা হবে কম-বেশি ২২ কোটি। দেশে বর্তমানে ০.৫-১ শতাংশ হারে কৃষিজমি কমছে। এর বড় একটি অংশ বসতভিটায় রূপান্তরিত হচ্ছে। কৃষিজমি কমার কারণে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। এছাড়া গ্রামের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে। তাই জনবহুল গ্রামগুলোয় শহরের সেবা নিশ্চিত করা গেলে মানুষের শহরে আসা কমে যাবে। গ্রামীণ কৃষির উদ্বৃত্ত শ্রমিকরা পরবর্তী বছরগুলোয় আরও আধুনিক সেবা খাতে নিয়োজিত হওয়ার মাধ্যমে তাদের পেশা পরিবর্তন করছে। এ সকল উদ্বৃত্ত শ্রমিকরা প্রাথমিকভাবে গ্রামীণ ও নগরের বাণিজ্য, পরিবহন ও ব্যক্তিগত সেবামূলক কার্যক্রমে জড়িত হয়। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় গ্রামীণ কৃষি খাতের অনেক শ্রমিক চাকরি নিয়ে চলে যাচ্ছে। ফলে গ্রামীণ কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে গ্রামীণ মানুষের জীবনমান আগের থেকে অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাসে মজুরি বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদের মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বর্তমান সরকার গ্রামে শহরের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন কমানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। ২০১৮ সালের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যমতে, দেশের মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৪০ দশমিক ছয় ভাগ জোগান দেয় কৃষি। জিডিপি’তে কৃষির অবদান শতকরা ১৩ দশমিক ছয় ভাগ। বিশ্বের ১৭৪টি দেশে এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি অভিবাসন কর্মী কর্মরত আছে, যাদের অধিকাংশই গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর। এছাড়া প্রায় ৫০ লাখ গার্মেন্ট কর্মী শহরে কাজ করছে। তাদের অধিকাংশই নারী। তাদের প্রায় সবাই গ্রাম থেকে এসেছে। তারা প্রতিমাসেই মোবাইলের ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামে পরিবারের কাছে টাকা পাঠাচ্ছে। অভিবাসী ও তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত কর্মীদের প্রেরিত অর্থ গ্রামীণ অর্থনীতিকে দিন দিন শক্তিশালী করছে। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলে শহরের আধুনিক নাগরিক সেবাসমূহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক পদক্ষেপ কাজ চলছে।

আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচির মাধ্যমে শহরের সকল সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরলসভাবে কাজ করছে। ‘আমার গ্রাাম আমার শহর’ শীর্ষক এ মেগা কর্মসূচির অধীনে সড়ক যোগাযোগ, ইন্টারনেট সংযোগসহ টেলি যোগাযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মতো অনেকগুলি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এছাড়া হাওর, উপকূলীয় এলাকা, পাহাড়ী এলকা, চর এলাকা, বরেন্দ্র অঞ্চল, বিল এলাকা এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশে একটি করে বাকি সাতটি গ্রামকে মডেল গ্রাম করা হচ্ছে। যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো, আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা, মানসম্মত শিক্ষা, সুপেয় পানি, তথ্য প্রযুক্তি সুবিধা ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, উন্নত পয়:নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি স্পেস ও বিনোদনের ব্যবস্থা, ব্যাংকিং সুবিধা, গ্রামীণ কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কৃষি আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সব সুবিধা রাখার কথা বলা হয়েছে।

ইতিমধ্যে বহুা আকাঙ্ষিি ত স্বপ্নের মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট। পরবর্তীতে মেট্রোরেল পরীক্ষামূলক যাত্রার পর ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলল। তবে যাত্রী নিয়ে চলবে চলতি বছরের বিজয় দিবস থেকে। ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরো মূল কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। চলতি বছরের ৩০ জুন (২০২২) স্বপ্নের পদ্মা সেতু জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে। অপর দিকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি ৭০ শতাংশের বেশি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের (২০২২ সাল) মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বনানী হয়ে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত অংশটি চালু করা হবে।

বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে বরাদ্দ বাতিল করলে আওয়ামী লীগ সরকার সেটাকে চ্যালেঞ্জরূপে গ্রহণ করে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুতগতিতে শেষ হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার অবকাঠামো নির্মাণে ব্রতী হয়েছে। ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিশাল কর্মযজ্ঞ সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সেটা বাস্তবে রূপ পেয়েছে। শিক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নারী শিক্ষা, চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, স্বামী পরিত্যক্তা, অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ ও বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নের সুফল জনগণ পাচ্ছে। একমাত্র বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সেই সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে। কোভিড-১৯ মহামারি সত্তে¡ও এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে এগিয়ে আামাদের প্রিয় বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই হয়ে উঠেছিলেন বাঙালি জাতিসত্তার এক মহান নির্মাতা হিসেবে। এ জন্যই বিদেশীরা বঙ্গবন্ধুকে অভিহিত করে থাকেন ‘ফাউন্ডিং ফাদার অব দ্যা নেশন হিসেবে’। এই দেশের মানুষের স্বপ্নের স্বাধীনতা তিনি উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশের আজ নানা ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অর্জন! বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হিসাবে বিশ্বব্যাপী আমাদের যে অবাধ বিচরণ। পারিপার্শ্বিক নানা প্রতিকূলতা দূর করে উন্নয়নের মহাসড়কে আমাদের আজ যে দৃপ্ত পদচারণা তার সবই বঙ্গবন্ধুর অবদান। আমরা যদি একটি স্বাধীন দেশ না পেতাম তাহলে আজো পকিস্তানের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতো, নিষ্পেষিত হতে হতো। স্বাধীন দেশ পেয়েছি বলেই আমরা স্বাধীনভাবে সব কিছু চিন্তা করতে পারি। সমাজ ও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে আমাদের সাফল্য বিশ্ববাসীর বিস্ময়মুগ্ধ মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে তা বঙ্গবন্ধুর কল্যাাণেই সম্ভব হয়েছে। বলা বাহুল্য, যে এ সবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার কল্যাণে। স্বাধীনতার মহান স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু যে সম্ভাবনার অসীম সেই দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তাই নয়, একই সাথে হতাশাক্লিষ্ট জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন ভয়কে জয় করার জন্য, মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্রেও দিক্ষিত করেছেন পুরো জাতিকে।

জাতির পিতা জানতেন বাঙালির উন্নতির জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তাই তিনি নাগরিকদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক, সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করার বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে সরকারের ওপর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করেছিলেন। বিক্ষুব্ধ উত্তাল সময় পাড়ি দিতে দিতে, আন্দোলন-সংগ্রাম ও জেল-জুলুম সহ্য করতে করতে সঞ্চারিত যে অভিজ্ঞতা, তার উত্তাপে দাঁড়িয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্মাণ করেছেন আমাদের সুন্দর এই মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশকে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশের সর্বত্র ছিল নানাবিধ সংকট। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের কাজে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করেন আপন মহিমায়। অভাব আর হাহাকারের ভারি বাতাসে মানুষ যখন হাঁসফাঁস করছিল, তখন জাতির পিতা দেশে ফিরে হাল ধরলেন দক্ষ নাবিকের মতো। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের কাজে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করেন আপন মহিমায়। চারিদিকে বইয়ে দিলেন শান্তির সুবাতাস। নিদারুণ সংকট থেকে মুক্তির জন্য ব্যাপকভিত্তিক প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের নেতা ছিলেন না, তিনি সমগ্র বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের নেতা ছিলেন। বিশ্বের বঞ্চিত জনগোষ্ঠী তাদের আজীবন প্রাণশক্তির জন্য যে কোন সংকটে বঙ্গবন্ধুকে খুঁজবে।

বঙ্গবন্ধু সবসময় এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই সংগ্রাম করেছেন। কাজেই আমাদের একটি কথাই বারবার মনে হয় যা বাঙালি জাতির যখন যা কিছু অর্জন, অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে, অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমাদের অর্জন করতে হয়েছে। সেই অর্জনগুলো আমাদের ধরে রাখতে হবে। কোনো মতেই যেন এই অর্জন কেউ ভবিষ্যতে নস্যাৎ করতে না পারে, সেদিকে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে পারি। কারও কাছে মাথা আমরা মাথা নত করবো না, কারও কাছে মাথা নত করে আমরা চলব না’। আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বারবার বলেছেন, সেই সম্পদটুকু কাজে লাগিয়েই আমরা বিশ্বসভায় আমাদের নিজেদের আপন মহিমায় আমরা গৌরবান্বিত হবো, নিজেদের গড়ে তুলব এবং সারাবিশ্বের কাছে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। এটাই হবে এ দেশের মানুষের জন্য সবদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এভাবেই এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর ভাষায় সেই মন্ত্রটি ছিলো ‘আমরা যখন মরতে শিখেছি কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ বঙ্গবন্ধুর এই মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ সামনে রেখেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সেটা বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা চলছে। শিক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নারী শিক্ষা, চাকুরিজীবীদের বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, স্বামী পরিত্যক্তা, অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ ও বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নের সুফল জনগণের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন এবং জনগণকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন তিনিই জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সেই সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার দৃপ্ত অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চলছে আমাদের প্রিয় মাতৃভ‚মি বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করে ২০৪১ সালের মধ্যেই উন্নত দেশে পরিণত হবে।

ইতিমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন এবং সহজেই নাগরিক সেবা প্রাপ্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কর্মপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনা করার লক্ষ্যে কাজ করছে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তি যেমন করে সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব নাগরিক সেবা ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে এক বিশ্বস্ত মাধ্যম।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে। এক দেশ এক রেইট কর্মসূচির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে জনগণকে ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে ৫ হাজার ইউনিয়ন ৫ জি চালু হয়েছে তবে মার্চ ২০২২ থেকে বাণিজ্যিকভাবে কাজ করবে।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তরুণরা গড়ে তুলছে ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক সেবাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এখন স্বপ্ন নয় এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা আমার গ্রাম আমার শহরের মাধ্যমে এগুবে আরো বহুদূর।

লেখক :  প্রাবন্ধিক ও গবেষক

 

 

 

স্বপ্ন পূরণের আরেক ধাপ আমার গ্রামহীরেন পণ্ডিত
Comments (0)
Add Comment