জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ‘বাংলাদেশের ১২ দশমিক ৭ ভাগ মানুষ বিষণ্ণতায় ভোগেন। অর্থাৎ ১৬.৭ কোটি মানুষের এই দেশে বিষণ্ণতায় ভোগা রোগীর সংখ্যা দুই কোটির বেশি।’ চিকিৎসকদের মতে, বিষণ্ণতা একই সাথে মানসিক ও শারীরিক রোগ। এখন এ পরিসংখ্যানের সূত্র ধরেই প্রশ্ন জাগে, এ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত রোগী তথা মানসিক রোগীর জন্য দেশের পরিবেশ কতটুকু অনুকূল কিংবা আদৌ অনুকূল কিনা? পরিবেশ বলতে এখানে পারিবারিক, সামাজিক তথা গোটা জাতীয় পরিবেশকে বোঝানো হয়েছে।
সুস্বাস্থ্য হল শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য। শারীরিক ও মানসিক সুস্থ্যতা দু’টোই একে অপরের পরিপূরক। শারীরিক সুস্থ্যতা ব্যতিরেকে মানসিক সুস্থ্যতা অর্জন সম্ভব নয়। অপর পক্ষে মানসিক অসুস্থ্যতা শারীরিক সুস্থ্যতার উপর প্রভাব ফেলে। শারীরিক অসুস্থ্যতা দৃশ্যমান হলেও মানসিক অসুস্থ্যতা প্রাথমিক পর্যায়ে দৃশ্যমান নয়। এটি দৃশ্যমান হয় যখন এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক এ সমস্যা তার পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার কারণ হিসাবেও প্রতীয়মান হয়। মানসিক সসমস্যার মধ্যে আর একটি হচ্ছে ‘অ্যাংজাইটি অর্থাৎ দুশ্চিন্তা’। এই সমস্ত সমস্যার উন্নয়নে কাজ করে মেডিটেশন বা ধ্যান।
যেসব প্রতিষ্ঠান মেডিটেশনের শিক্ষা দেয় তাদের আনা হচ্ছে ভ্যাটের আওতায়। সরকার মনে করছে, এর মধ্য দিয়ে রাজস্ব বাড়বে। অবশ্য অর্থের বিনিময়ে যেসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান মেডিটেশন সেবা দিয়ে থাকে তাদের ওপর আরোপ করা কর প্রকারান্তওে সেবাগ্রহীতাদের ঘাড়েই পড়বে।
মেডিটেশন (ধ্যান) এমন এক অনুশীলন যার মধ্য দিয়ে মানুষ আত্মনিমগ্ন হয়ে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়, চিন্তা বা কাজের প্রতি মনোনিবেশ করে। বাড়িয়ে তোলে আত্মবিশ্বাস। দূর করে মানসিক অস্থিরতা। ধ্যান করাটা কোনো ব্যক্তির একান্তই ব্যক্তিগত চর্চা। শারীরিক ব্যায়ামেরই একটি মাধ্যম বলা যেতে পারে। এবার সেই ধ্যান করতে গেলেও দিতে হবে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে সংকট উত্তরণের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাতে করারোপ করা হয়েছে মেডিটেশনেও। মেডিটেশন সেবার ওপর বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এই খাতে আগে ৫ শতাংশ ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ এ প্রস্তাব কার্যকর হলে আবারও এই সেবা পেতে আগ্রহীদের ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে।
এর আগের বছরগুলোতে জাতীয় বাজেটে মেডিটেশন সেবাকে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি উল্লেখ করে মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছিল। দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মেডিটেশন কোর্সের আয়োজন করা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম হলো কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন।
করোনা মহামারিকালে ২০২০-২১ অর্থবছরেও মেডিটেশন সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতির ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। সে বছর বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বৈশ্বিক এ দুর্যোগকালে জনগণের মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোবল অটুট রাখার স্বার্থে মেডিটেশন সেবার ওপর মূসক অব্যাহতি বলবৎ রাখার প্রস্তাব করছি।’
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে মাদকাসক্ত, বিষণ্ণতা ও হাইপার টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার মাধ্যম মেডিটেশন সেবায় ভ্যাট ধার্য করায় জাতীয় সংসদে একাধিক আইন প্রণেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এ ধরনের একটি সেবামূলক ও সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে ভ্যাট ধার্য করায় এমপিরা বলেন, ব্যায়াম ও মেডিটেশনকে মানুষের শারীরিক ও আত্মিক সুস্থতার প্রধান নিয়ামক হিসেবে গণ্য করা হয়। সব কিছুকে বিবেচনা করে মেডিটেশনকে স্বাস্থ্য সেবা অথবা সমাজকল্যাণ সেবার অন্তর্ভুক্ত করে স্থায়ীভাবে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাবের দাবি জানান তারা।
মেডিটেশন বা যোগ ব্যয়ামকে ভারত সরকার এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ব্রিটিশ সরকার যোগ বা মেডিটেশনের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। মাদকাসক্ত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে, বিষণ্ণতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ধ্যান বা মেডিটেশনের ভূমিকা রয়েছে। আমি আশা করবো, এটিকে ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখা হোক।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা আরো বলেন, ব্যায়াম ও মেডিটেশনকে মানুষের শারীরিক ও আত্মিক সুস্থতার প্রধান নিয়ামক হিসেবে এখন সব জায়গায় বলা হচ্ছে। সমাজকল্যাণ সেবার অন্তর্ভুক্ত করে স্থায়ীভাবে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। মেডিটেশনের উপর ভ্যাট প্রদান করার জন্যে কর আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মেডিটেশন করলে স্বাস্থ্য ভালো হয়। মেডিটেশন করলে বিশেষ করে মন ভালো হয়। মেডিটেশন করলে মন ঠিক করে সবকিছু করা যায়। তাই মেডিটেশন থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা জরুরি।
মেডিটেশন হচ্ছে ধ্যান। অর্থাৎ স্রষ্টাকে উপলব্ধি করার পথ। যার যার ধর্মমতে সে তা করবে। যার মাধ্যমে আত্মমৌনতার মধ্যদিয়ে চেতনার গভীর থেকে মানুষ তার অশান্তি, অসুস্থতা ও ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। দেহ-মনের অফুরন্ত শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে এনে কীভাবে একজন মানুষ আত্মমর্যাদাশীল হতে পারে সেটিই শেখায় মেডিটেশন। মেডিটেশনের উপর থেকে চিরস্থায়ীভাবে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হোক।
যোগ ব্যায়ামের উপর আবারও ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছে। যোগ-ইয়োগার জন্যে মানুষকে উৎসাহিত করা দরকার। অতএব এর উপর থেকে কর প্রত্যাহার করা হোক। বাংলাদেশে যোগ ব্যায়ামের উপর প্রশিক্ষণ হয়। সারা পৃথিবীতে হয়। এই যোগ ব্যায়ামের মধ্য দিয়ে মানুষ সুস্থ্য দেহে সুস্থ্য মন কামনা করে এবং উপকারও হয় ওষুধ ব্যতিরেকে। সেই যোগ ব্যায়ামের উপর অর্থমন্ত্রী এবার কর ধার্য করেছেন। সারা পৃথিবীর কোথাও এই সেবামূলক খাতটির উপর বা প্রতিষ্ঠানের উপর কোনো ধরনের কর আরোপ করা হয় না। আমরা আশা করি, অর্থমন্ত্রী এই যোগ ব্যায়ামের প্রশিক্ষণের উপর যে কর তিনি ধার্য করেছেন তা প্রত্যাহার করে নেবেন।
হতাশা মাঝেমধ্যেই সেলিব্রেটিদের আত্মহত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কখনও কখনও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির বিপুল ব্যবধানও আত্মঘাতী হওয়ার কারণ। অনেক সময় আত্মঘাতী না হলেও বিষন্নতা অনেকের জীবন বিষিয়ে তোলে। এ মানসিক সংকট থেকে উত্তরণে ধ্যান বা মেডিটেশন খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে। কিন্তু এই সেবাও আর আগের খরচে পাওয়ার সুযোগ থাকছে না। আরও অনেক সেবার সঙ্গে মেডিটেশনের ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী ৯ জুন সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ প্রস্তাব করেন।
মেডিটেশন সেবাকে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী উল্লেখ করে যদিও এর আগের বছরগুলোর বাজেটে মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছিল। জনগণের মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোবল অটুট রাখার স্বার্থে মেডিটেশন সেবার ওপর মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব বেশ সমাদৃত হয়। কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শ্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। মহামারির এই অভূতপূর্ব ক্রান্তিকালে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো ক’টি দেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো অতি ব্যতিক্রমহীনভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা ঢাকতে পারেনি। অতি মনোযোগের মৌলিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যখন এই হাল, তখন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায়! মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যায় মেডিটেশনই ভরসা।
লাখো মানুষের আস্থা এখন ধ্যানে। এর সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন আগ্রহীরা। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৫০ কোটি মানুষ এখন নিয়মিত মেডিটেশন করে। আধুনিক ব্যস্ততাতাড়িত জীবনের ওয়ার্ক স্ট্রেস, হতাশা ও বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠে সফল ও তৃপ্ত জীবনের জন্য নিয়মিত মেডিটেশনের সমকক্ষ আর কিছু নেই- এই বাস্তবভিত্তিক ধারণা থেকে উন্নত বিশ্বে মেডিটেশন কার্যক্রম এখন মূলধারার চর্চার বিষয়। হার্ভার্ড, ইয়েল, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ডের মতো নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ও হ্যাপিনেস কারিকুলাম সামনে রেখে বিভিন্ন কোর্স চালু আছে।
বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্ত হয় এক বিশাল জনগোষ্ঠী। আর করোনায় আক্রান্ত হয়নি সেই জনগোষ্ঠীর মানসিক সংকটের কারণ হচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভীতি, চলমান নাগরিক জীবনে হঠাৎ স্থবিরতা ও সামাজিকতাবিহীন আপাত বন্দি জীবন, লকডাউনজনিত অর্থনৈতিক মন্দাভাব, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এসব সমস্যা কাটাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভার্চুয়াল মিডিয়ার প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা স্থবির জীবনে পারিবারিক অশান্তি ও অস্থিরতা তৈরি করেছে। আরবান, নন-আরবান বিশাল জনগোষ্ঠীর মনোজগতের ওপর তৈরি হওয়া এ বিরূপ প্রভাবের প্রতিকার ও মোকাবিলা এখন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাবনার বিষয়।
করোনায় সুস্থ ও পুনর্বাসনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং রোগীর প্রতি সামাজিক বিরূপ আচরণ বেশ পীড়াদায়ক। আইসোলেশনে থাকা রোগাক্রান্ত ব্যক্তি দীর্ঘ সময় পরিবার থেকে দূরে থেকে একাকী জীবনযাপন সুস্থ ও অসুস্থ সবাইকে মানসিক কষ্টে রেখেছে। সহমর্মিতার এমন নিদারুণ সংকট আর দেখা না দিক। তবে বিপরীত ব্যতিক্রমকে মনে রাখতে চাই মৃতের সৎকারে কিছু সংগঠনের আন্তরিক সেবা আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাহায্যের কত যে সত্য গল্প আছে। এসব সত্য গল্পে আছে জীবনের প্রকাশ।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তরুণদের মধ্যে অধিকাংশই মানসিক বিষণ্ণতায় ভোগেন। অধিকাংশ সময় মন খারাপ থাকা, পছন্দের কাজ থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। অস্বাভাবিক কম বা বেশি ঘুম হওয়া, কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলা, নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা, সবকিছুতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা। এ সমস্যাগুলো তীব্র আকার ধারণ করলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। তাদের মানসিক অস্থিরতার বিষয়ে কারও সঙ্গে খোলামেলা কথা বলতে না পারাই মূল কারণ।
মন খারাপ হলে বা বিষন্ন হলে বন্ধুদের সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গে এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা শেয়ার করেন। অধিকাংশই দৈনিক স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করেন যা মানসিকভাবে তাদের বিপর্যস্ত করে তুলছে। অনেকেই দৈনিক ৬ ঘণ্টার বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় ব্যয় করেন। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য তাদের দৈনন্দিন কাজগুলোকে বাধাগ্রস্ত করেও বলে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে ৯১ দশমিক ৪ শতাংশই কখনো মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেননি।
করোনাকালীন সময়ে তরুণ ও যুবকরা যে মানসিক চাপজনিত সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছেন সেগুলো হচ্ছে- পড়াশোনা ও কাজে মনোযোগ হারানো, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, একাকী অনুভব করা, অনাগ্রহ সত্বেোগও পরিবার থেকে বিয়ের চাপ, আর্থিক সমস্যা, অতিরিক্ত চিন্তা করা, মোবাইল আসক্তি, আচরণগত সমস্যা, চাকরির অভাব, কাজের সুযোগ না পাওয়া, সেশনজট, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু ইত্যাদি তরুণ ও যুবকদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
একাধিক গবেষণা বলছে করোনায় সংক্রমিত মানুষের প্রতি পাঁচ জনের একজনের মধ্যে করোনার সাথে মানসিক সমস্যা যেমন বিষন্নতা, উদ্বিগ্নতা, সাইকোসিস ইত্যাদি দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার করোনায় আক্রান্ত নন এমন ব্যক্তি এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে মানসিক চাপ উদ্বিগ্নতা, বিষন্নতা, আতঙ্ক সৃষ্টির হার সাধারণ সময়ের চেয়ে বহুগুণ বেড়ে যায় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি করোনা থেকে সেরে উঠলেও মানসিক সমস্যার ঝুঁকি থেকে যায়।
এই করোনাকালে অনেক পরামর্শ বা প্রটোকলই নানাভাবে বদলেছে ভাইরাসটির মতোই। তবে একটি বিষয় অপরিবর্তিত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও ইমিউন সিস্টেম ভালো থাকলে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা যায় এবং এতে ধ্যান অর্জিত মনোবল সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। মেডিকেল সায়েন্স বলে, মানুষের রোগের ৭৫ শতাংশই হচ্ছে মনোদৈহিক। নিয়মি মেডিটেশন এই ৭৫ শতাংশ রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। এভাবে মেডিটেশন আমাদের স্বাস্থ্যব্যয় কমাতে পারে। মেডিটেশন সঠিক জীবনদৃষ্টির অনুশীলন করলে ৪০ শতাংশের বেশি চিকিৎসা ব্যয় কমাতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন চিকিৎসার যে গাইডলাইন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে মেডিটেশনের পরামর্শ আছে। জীবন স্বাস্থ্যের জন্য এমন উপকারী ধ্যান সেবাকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রেখে রাষ্ট্র কল্যাণমুখী পরিচয় নির্মাণের সুযোগ নিক সেটাই সবার প্রত্যাশা।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক