বন্ধ হোক বিশ্বের ঘৃণ্যতম অপরাধ মানবপাচার – হীরেন পণ্ডিত

৩০ জুলাই বিশ্ব মানবপাচার প্রতিরোধ দিবস

৩০ জুলাই বিশ্ব মানবপাচার প্রতিরোধ দিবস পালিত হচ্ছে। এবার প্রতিপাদ্য হলো প্রযুক্তির ব্যবহার ও অপব্যবহার। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রযুক্তির ব্যবহার এক অন্যমাত্রা পেয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবন এখন অনেকটাই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হয়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন আমাদের জীবনে অনেক সুফল বয়ে আনছে তেমনি এর অপব্যবহারও আমাদের ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে। নানা ধরনের সহিংসতা ও অপরাধের পাশাপাশি মানব পাচারকে আরো ত্বরান্বিত করছে বর্তমান নানান ডিজিটাল প্রযুক্তি তথা অ্যাপস বা প্ল্যাটফরম।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় জীবিকা আর উন্নত জীবনের আশায় প্রতিবছর দেশ ছাড়েন লাখো লাখো মানুষ। এঁদের স্বপ্ন একটুখানি সুখ আর সমৃদ্ধির। দুঃখজনক হলেও এসব স্বপ্নচারী মানুষের বেশির ভাগই পড়েন মানব পাচারকারীর খপ্পরে। পাচারকারী সিন্ডিকেটের ভয়াবহ নেটওয়ার্ক দেশজুড়ে বিস্তৃত। তারা কিছু ক্ষেত্রে নিজস্ব এজেন্ট বা দালালের মাধ্যমে মানুষকে নানান প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করে থাকে। এটা অনেকটা পুরোন তথ্য। বর্তমানে মানব পাচার চক্রের কর্মকাণ্ডে নতুন সংযোজন হিসেবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। আর এই ক্ষেত্রে পাচারকারীদের মূল টার্গেট থাকে নারী, শিশু ও কিশোরীরা। সম্প্রতি ‘টিকটক হৃদয় ও তার বাহিনী কর্তৃক ভারতে পাচার হওয়া এক বাংলাদেশি তরুণীর ভয়াবহ নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার সূত্র ধরে আমরা জেনেছি পাচার চক্রের সদস্যরা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টিকটক, লাইকিসহ বিভিন্ন অ্যাপসে আলাদা আলাদা গ্রুপ গঠন করে। এর পর সেখানে তারা টিকটক শো, লাইকি শো, পুল পার্টি করার মাধ্যমে নারীদের সাথে যোগাযোগ তৈরি করে এবং এক সময় তাদের উন্নত জীবনের প্রলোভন দেওয়াসহ নানাভাবে প্রলুব্ধ করে বিদেশে নিয়ে যায়। বিদেশে নিয়ে নারীদের নির্যাতন করে অনৈতিক কাজে বাধ্য করে। পরে বিভিন্ন যৌন পল্লীতে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

তবে আশার কথা, যে ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার করে মানব পাচার হচ্ছে সেই ডিজিটাল প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করেই এসব দালাল ও দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব। আজকাল ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই পাচারকারী ও তার অবস্থান শনাক্ত করা যায়। সামান্য মুঠোফোনের কল আর বিকাশের ট্রান্সফার ট্র্যাক করেই এসব করা সম্ভব এবং সে প্রযুক্তি স্থানীয় পুলিশের কাছে রয়েছে। আর সরকার যদি মোবাইল অপারেটর ও মোবাইল মানি ট্রান্সফার কোম্পানিগুলোকে তাদের বিগ ডেটা থেকে তথ্য দিতে বাধ্য করে, তাহলে সমস্যা আরো সহজেই সমাধান করা যাবে। দেশে এখন একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও আছে। তাই পাচারকারীর ফোন রেকর্ড ও টাকা পাঠানোর বিকাশ, নগদ, কেট রেকর্ড থেকে তাকে অভিযুক্ত করে ডিজিটাল প্রতারণার মামলা করা যায়।

একাধিক গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র পাচারের পর মানবপাচার হচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরাধমূলক কার্যক্রম। মানবপাচারের সঙ্গে প্রথম দু’টি অপরাধও প্রায়ই জড়িয়ে থাকে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রগুলোর সবচেয়ে দ্রæত বর্ধনশীল কার্যক্রম হচ্ছে মানবপাচার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও এই অপকর্মের জন্য ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। সম্প্রতি ইন্টারপোল ‘অপারেশন লিবারটেররা’ নামক অভিযানের বিস্তারিত জানিয়েছে, যেখানে বেশ কয়েকটি দেশের কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে কাজ করে মানবপাচারের শিকার ৪৩০ জনকে উদ্ধার ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অপরাধে ২৮৬ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে অভিবাসী ও কিশোরী ছিল যাদের আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও সিরিয়া থেকে পাচার করে গ্রিসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিবেদন ও গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার বেড়েই চলেছে। প্রকৃতই পাচারের সংখ্যা বেড়েছে, না কর্তৃপক্ষ পাচারের সঙ্গে জড়িতদেও গ্রেপ্তার করায় আগের চেয়ে বেশি দক্ষ হয়েছে, তা বিচার করা কঠিন। তবে এটুকু নিশ্চিত যে প্রতি বছর হাজারো মানুষ পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ছেন। এর পেছনে মূলত দায়ী ভালো চাকুরীর আশায় মানুষের বিদেশে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। কিন্তু, তারা পাচার হচ্ছেন কি না বা জোরপূর্বক তাদের ক্রীতদাসের মতো কোনো কাজে আটকে রাখা হচ্ছে কি না, এসবের ঝুঁকি সম্পর্কে ভাল করে না জেনেই তারা বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ সরকার মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ভাল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে এবং পাচারের শিকার অনেককে উদ্ধারও করতে পেরেছে। একটি মার্কিন প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সাফল্যের কারণে মানবপাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে দুই ধাপ উন্নীত করা হয়েছে। মানবপাচারের কিছু মূল হোতাকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং জানা গেছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক মদদপুষ্ট অথবা তারা নিজেরাই ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ। এ থেকে আরও বোঝা যায় কীভাবে সমাজের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান মানুষরা তাদের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দাসত্বের এই আধুনিক রূপটিকে চালু রেখেছেন। নিঃসন্দেহে, এতে মানব পাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আরও জটিল হয়ে গেছে। তারপরেও, কর্তৃপক্ষের উচিৎ এই অপরাধ দমনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া।
নিরাপদ অভিবাসনের প্রচারণা বাড়ানোর মাধ্যমে মানবপাচারের ঝুঁকি কমানোর উপযোগিতা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সরকারের উচিৎ সম্ভাবনাময় অভিবাসীদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ করা এবং তাদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দেশ ত্যাগের আগে অভিবাসীদের আরও উন্নত ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করা এবং বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যেও বিনিয়োগ করা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে দিনশেষে, এই অপরাধের প্রকৃতি বিচারে এবং পাচারকারীদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক বিবেচনায়, সরকারকে অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সুসংগঠিত মানব পাচার ও চোরাচালানের নেটওয়ার্কগুলোকে অকার্যকর করে এই অপরাধকে দমন করতে হবে।

বৈশ্বিক মহামারি এবং ক্রমবর্ধমান অসমতা ও ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে মানবপাচারের কবল থেকে বেঁচে যাওয়া ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষগুলোর কথা হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এদের কথা শোনা এখন আরও বেশি জরুরি কারণ, কোভিড ১৯ সংকট তাদের জন্য ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে এবং আরও সংকট তৈরী করেছে। কোভিড মহামারি আরও প্রায় ১৩০ মিলিয়ন মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এতে কোটি কোটি মানুষ মানবপাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। শিশুরা অনেক বড় ঝুঁকিতে রয়েছে এবং তা বেড়েই চলেছে। বিশ্ব জুড়ে মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিদের এক তৃতীয়াংশ শিশু। এই হার গত ১৫ বছরে তিনগুণ বেড়েছে। নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় মানবপাচারের শিকার ভুক্তভোগীর অর্ধেকই শিশু, যাদের সিংহভাগকে জোরপূর্বক শ্রমের জন্য পাচার করা হয়। সব জায়গায়ই ঝুঁকিতে থাকা মানুষগুলোকে চিহ্নিত, নিয়ন্ত্রণ ও তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিতে অপরাধীচক্র প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক বিয়ে ও অন্যান্য নিপীড়নের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে শিশুদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর হার দিনে দিনে বাড়ছে। যৌন নিপীড়নের জন্য নারী ও মেয়েশিশু পাচার এখনো সবচেয়ে ব্যাপক ও ঘৃণিত মানবপাচারের অন্যতম রূপ হিসেবে অব্যাহত রয়েছে। পাচারের শিকার ব্যক্তির সংখ্যা বেশির ভাগ অঞ্চলেই অভিবাসীদের অর্ধেকের বেশি।

মানবপাচার প্রতিরোধ, ভুক্তভোগীকে সহায়তা এবং পাচারচক্রের সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোকে অবশ্যই জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ অপরাধের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কনভেনশান এবং মানবপাচার রোধকরণ, হ্রাসকরণ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রটোকলের বাস্তবায়ন। মানবপাচারের শিকারের ভুক্তভোগীদের বক্তব্য অনুযায়ীই আমাদের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। ঝুঁকির অবস্থা ও ধরণ চিহ্নিত করা, মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও সুরক্ষা এবং তাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি তাদের দুর্বলতার সুযোগ নেওয়াদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের অবদানই সবচেয়ে জরুরি।

এই ভয়ঙ্কর অপরাধ প্রতিরোধ ও বন্ধে মানবপাচারের শিকারভুক্তভোগীদের বক্তব্য শোনা ও সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া, তাদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা, তাদের কথা তুলে ধরা ও তাদের কাছ থেকে শিখতে জাতিসংঘ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ (বিধি ২০১৭) ও এরই ধারাবাহিকতায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২২ এর আওতায় দেশব্যাপী মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধ বিশেষ ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে; যা পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। এর স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচারসংক্রান্ত বিশ্ব প্রতিবেদনে এখন বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় স্তরে উঠে এসেছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের বিভিন্ন এলাকার সহজ সরল মানুষকে বিভিন্ন চক্র মোটা অঙ্কেও বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করে থাকে। পাচারের শিকার নারী ও শিশুদের দেহব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার অভিযোগও রয়েছে।

২০১২ সালের ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে’ সংঘবদ্ধভাবে মানব পাচারের জন্য মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং অন্যূন পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভিক্টিমস অফ ট্র্যাফিকিং অ্যান্ড ভায়েলেন্স প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মানবপাচার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর পাঁচটি ধাপে ‘ট্র্যাফিকিং ইন পারসন’ (টিআইপি) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। প্রতিবেদনে মানবপাচার মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের উদ্যোগ ও সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর ১৮৮টি দেশের র্যাঙ্কিং করে থাকে। তাদের র্যাঙ্কিংয়ের মানদষ্ড অনুযায়ী, যারা পাচারের শিকার হন, তাদের প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ গ্রহণকারী দেশগুলো স্থান পায় প্রথম ধাপে (টায়ার ওয়ান) পাচার রোধে সব উদ্যোগ না নিতে পারলেও উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণকারীদের স্থান হয় দ্বিতীয় ধাপে।

বাংলাদেশের জন্য মানবপাচারের বিষয়টি অনেক উদ্বেগজনক। মানবপাচার সংক্রান্ত্র সংবাদ যেন মিডিয়ার নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। ৬ হাজার বেশি মানবপাচার মামলা রয়েছে। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে দেশে গত আট বছরে ছয় হাজার ১৩৪টি মামলা হয়েছে। তবে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২৩৩টি। বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৫ হাজার ৯০১টি মামলা। এর মধ্যে ৩৩টি মামলায় মাত্র ৫৪ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। আদালতে সময়মতো আসামি ও সাক্ষী হাজির করতে না পারায় অনেক মামলার শুনানি করা যাচ্ছে না। ফলে বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম ঝুলে আছে।”

বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রেও প্রেক্ষাপটে মানুষ কেন মানবপাচারের শিকার হয় সেই প্রশ্নের উত্তরে দুটি বিষয়কে সর্বাধিক আলোচনা করা যেতে পারে, প্রথমত; অসচ্ছলতা এবং দ্বিতীয়ত; বেকারত্ব। দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি লাভের জন্য মানুষের চেষ্টা একটা চিরাচরিত ব্যাপার। যদি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্মসংস্থানের পথ দেখায়, নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে অনেকে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হয়। তারা এই সুযোগকে ব্যাবহার করে অবৈধ পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমায় বিদেশে। পাচারকারীরা তাদের স্বার্থ হাসিল করে অর্থের বিনিময়ে। তাদেরকে তুলে দেয় বিদেশে থাকা তাদের লিয়াজো গ্যাঙের হাতে। অনেক মানুষ কোন উপায় না পেয়ে নির্মমভাবে মৃত্যুর শিকার হয়, দাসত্বের বেড়াজালে আটকে পড়ে সমগ্র জীবন, শিশুদেরকে বাধ্য করা অমানুষিক শ্রমের সাথে যুক্ত হতে।
আমরা মানব পাচারবিরোধী দিবস পালন করি। বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে কথা বলি। মানব পাচার ও শ্রমিক পাচার রোধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এখনও ততটা তীব্র নয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা তীব্র হলে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনের মতো মানব পাচার রোধেও কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যেত। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সত্যিকার অর্থেই মানব পাচার রোধ করা যেত।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

 

৩০ জুলাই বিশ্ব মানবপাচার প্রতিরোধ দিবসবিশ্ব মানবপাচার প্রতিরোধ দিবসহীরেন পণ্ডিত
Comments (0)
Add Comment