ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও সংগঠক হিসেবে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে শেখ কামাল সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। আন্দোলনে শেখ কামালের প্রতিদিনের উপস্থিতি ছিল সবার জন্য তুমুল উৎসাহব্যঞ্জক। এই আন্দোলনে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংগঠিত করে মিছিলসহ বটতলায় সমবেত হতেন। ১৯৬৯-এ পাকিস্তান সামরিক জান্তা সরকার ধর্মীয় উগ্রতার পরিচয় দিয়ে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করে। শেখ কামাল তখন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের সংগঠিত করেন এবং রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি খ্যাতিমান শিল্পী জাহিদুর রহিমকে দিয়ে বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানে গাওয়ানোর উদ্যোগ নেন। বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতার সন্তান তিনি, জন্ম থেকেই তাঁর ধমনীতে নেতৃত্বগুণ আর বাঙালি জাতীয়তাবোধের চেতনা। সংস্কৃতিবান শেখ কামালের প্রতিবাদের ভাষা ছিল রবীন্দ্রসংগীত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই বিশ্ব কবির গান গেয়ে অহিংস প্রতিবাদের অসাধারণ উদাহরণ রেখেছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করে হাতিয়ার তুলে নিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি ছিলেন শেখ কামাল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে সংগঠিত করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর আশাবাদ ছিল, দেশ স্বাধীন হলে বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রের ছবিটাই পাল্টে দেবেন এবং দেশকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করবেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হওয়া দেশ পুনর্গঠনে নিজের অসামান্য মেধা ও অক্লান্ত কর্মক্ষমতা নিয়ে জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন শেখ কামাল। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। সেখান থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে শেখ কামালের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ছায়ানট থেকে সেতার শিক্ষার তালিম নেন। পড়াশোনা, সংগীতচর্চা, অভিনয়, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা থেকে শুরু করে বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার চেষ্টায় সদা-সর্বদা নিয়োজিত ছিলেন শেখ কামাল। অধ্যয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল তার পদচারণায় ছিল মুখর। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল তার বন্ধুদের সহযোগে প্রতিষ্ঠা করেন নাট্যদল ‘ঢাকা থিয়েটার’ এবং আধুনিক সংগীত সংগঠন ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে তিনি ছিলেন সুপরিচিত সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠক এবং অভিনেতা। আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দেশের ক্রীড়াজগতে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’র প্রতিষ্ঠাও তাকে অমরত্ব দান করেছে। প্রকৃতপক্ষে শেখ কামাল ছিলেন একজন ক্রীড়া ও সংস্কৃতিমনা সুকুমার মনেবৃত্তির মানুষ। তিনি কখনো ব্যবসায়িক কার্যকলাপে জড়িত হননি, অনর্থক ছোটেননি অর্থের পেছনে।
শাহীন স্কুলের ছাত্র থাকাকালে স্কুলের প্রতিটি খেলায় তিনি ছিলেন অপরিহার্য। এর মধ্যে ক্রিকেট ছিল তার প্রিয়। তৎকালের অন্যতম উদীয়মান পেসার ছিলেন তিনি। ‘আজাদ বয়েজ ক্লাব’ তখন শেখ কামালের মতো উঠতি প্রতিভাদের আশ্রয়স্থল। এখানেই শেখ কামাল প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন দীর্ঘদিন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২-এ ‘আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থার নামে সংগঠিত করেন ফুটবল দল ‘ইকবাল স্পোর্টিং’ আর ক্রিকেট, হকির দল ‘ইস্পাহানী স্পোর্টিং’। পরে এসব দলের সমবায়ে নবোদ্যমে যাত্রা শুরু করে ‘আবাহনী ক্রীড়া চক্র’। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি- এই খেলাগুলোতে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল শেখ কামালের। তাঁর স্বপ্ন ছিল একদিন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ হবে অপরাজেয় অপ্রতিদ্ব›দ্বী ক্রীড়াশক্তি। সত্যিই সে বেঁচে থাকলে সেটা সম্ভব ছিল। স্বপ্ন তাঁর দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়ে বিস্তৃত হয়েছিল বহুদূর অবধি। ফুটবলের উন্নতির জন্য ১৯৭৩-এ আবাহনীতে বিদেশি কোচ বিল হার্টকে নিযুক্ত করেন। যোগ্যতা, দক্ষতা আর দেশপ্রেমের অসামান্য স্ফুরণে শেখ কামাল অল্প দিনেই বদলে দিয়েছিলেন সদ্য স্বাধীন একটা দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্র। শুধু ক্রীড়াই নয়, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সব শাখাতেই ছিল তার মুন্সিয়ানা ও অসামান্য সংগঠকের ভূমিকা।
শেখ কামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল খুকু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। দেশজোড়া খ্যাতি ছিল তার। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার পরিচিতি ছিল এক প্রতিভাবান অ্যাথলেট হিসেবে। নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন। ১৯৭৫-এর ১৪ জুলাই গণভবনে শেখ কামাল ও শেখ জামাল দুই ভাইয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের অল্প কিছুদিন পর ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এ সেনাবাহিনীর কতিপয় বিশ্বাসঘাতক উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যের হাতে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাতা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও নববিবাহিতা দুই বধূ, দুই ভাই শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নির্মম মৃত্যুকে বরণ করতে হয়।
জাতির পিতা জীবনের যৌবনের বারোটি বছর কারান্তরালে কাটিয়েছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে শত-দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যগণ কখনোই কোনো ক্ষেদোক্তি প্রকাশ করেননি। বরং পরিবারের সদস্যরা সে সব সগৌরবে মেনে নিয়ে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের অংশে পরিণত হয়েছেন। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, দেশ স্বাধীনের পর কুচক্রী মহল শেখ কামালের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট অপপ্রচার চালাবার চেষ্টা করেছিল, যা ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বাস্তবে টেকেনি।
ঘাতকের বুলেট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ঘাতকরা চেয়েছিল বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে। তারা জানতো জাতির পিতার সন্তানরা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ধারক-বাহক। সেজন্য তারা শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেল কাউকেই রেহাই দেয়নি। সেদিন জাতির পিতার দুই কন্যা বিদেশে থাকায় ঘাতকের বুলেট তাঁদের স্পর্শ করতে পারেনি। ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮১তে দলীয় ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার হাতে শহীদের রক্তে ভেজা দলীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয়। সেই পতাকা যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে হাতে তুলে নিয়ে জাতির পিতার আদর্শ সমুন্নত রেখে তিনি আজ দেশকে সমানে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে আসীন করার যে স্বপ্ন শেখ কামাল দেখতেন সেই অসমাপ্ত কাজটিও তারই পৃষ্ঠপোষকতায় সাফল্যের সঙ্গে করে চলেছেন।
শেখ কামাল এই প্রাণবন্ত তরুণ প্রতিভাকে আমরা যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারিনি। মূল্যায়ন দূরের কথা, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাঁর চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ তাঁর শিল্পীমনের পরিচয় কজনের জানা আছে? আজকের দিনে যখন নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে সাম্প্রদায়িক শক্তি, যখন স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করেই চলেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তখন শেখ কামালের মতো একজন দক্ষ সংগঠকের অভাব বোধ করে বাংলাদেশ তাঁকে আজো খুঁজে ফেরে। পথ চেয়ে থাকে আজ তাঁর মতো নেতৃত্ব বড় প্রয়োজন এই দেশে। তাঁর আদর্শ অনুসরণের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। রাজনীতি যখন কারো কারো কাছে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি, তখন শেখ কামালের দেখানো পথ ধরে রাজনীতিকে সত্যিকারের মানবকল্যাণে ব্যবহার করা সম্ভব। সব সম্ভবের দেশেও কেমন করে নির্মোহ থাকা যায়, শেখ কামাল তাঁরই অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। সরকার ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তির সন্তান হওয়া সত্বে, ও কেমন করে সাধারণে মিশে যাওয়া যায়, শেখ কামাল তাঁর অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন।
আজ ৫ আগস্ট, জন্মদিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেই প্রাণময় ব্যক্তিকে, যাঁর প্রেরণা একদিন আমাদের দেশের তরুণদের উজ্জীবিত করেছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনীতিতে। তিনিই তো আমাদের দীক্ষা দিয়েছিলেন দেশপ্রেমের মন্ত্রে।
রাজনীতিক পিতার সন্তান হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই ছাত্র অবস্থাতেই শেখ কামাল রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। পাকিস্তানের অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী অপশাসন এবং শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে পিতা শেখ মুজিবের জীবন কেমন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ছিল সেটা শেখ কামাল একেবারে জন্মের পর থেকেই দেখেছেন। স্ত্রী-কন্যা-পুত্র-সংসার-পরিবার নয়, শেখ মুজিবের জীবন নিবেদিত ছিল দেশের সব মানুষের কল্যাণের জন্য। পিতার আদর্শকে বুকে ধারণ করে মানুষের কল্যাণ চিন্তায় শেখ কামালও উজ্জীবিত হয়েছিলেন। তিনি পিতার মতোই সাহসী ও নির্ভীক হয়ে উঠেছিলেন। ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে শুরু করেছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায্যতার পক্ষে সংগ্রাম।
স্বাধীনতার পর দেশে একটি বিশেষ পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। একদিকে অস্ত্র হাতে যারা যুদ্ধ করেছেন, অন্যদিকে যারা দেশ ছাড়তে পারেননি। আবার মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারীর দল। সব মিলিয়ে একটি মনস্তাত্তি¡ক সংকট। বিভিন্ন কারণে সামাজিক স্থিতি কি কিছুটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল? দেশ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত। সম্পদের সীমাবদ্ধতা ছিল। আবার ছিল পুনর্গঠনের জরুরি ও কঠিন কাজ। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের সব নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার কাজে নেমেছিলেন- তাও নয়। কেউ কেউ আপন ভাগ্য গড়ার প্রতিযোগিতায় নেমে বাড়াবাড়ি করে মানুষের মন বিষিয়ে দেয়ার কাজেও লিপ্ত হয়েছিল। চাটার দল, চোরের দল সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু সব দিক সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। আক্ষেপ করে বলেছেন, পাকিস্তানিরা সব নিয়ে রেখে গেছে একদল চোর।
মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তি তৎপর হয়ে উঠতে থাকে। তাদের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে বঙ্গবন্ধুর এক সময়ের অনুসারী বলে পরিচিত আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদ যারা গড়লেন সেই নেতাকর্মীরা। জননেতা হিসেবে পরিচিত মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ চীনপন্থি গ্রুপগুলোও মুজিববিরোধী ভূমিকা গ্রহণ করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র নাশকতা চলতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর সরকারকে অজনপ্রিয় করে তোলার জন্য চলতে থাকে নানা ধরনের অপপ্রচার। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নিয়েও নানা কল্প-গল্প প্রচার করে মুজিববিরোধী তথা বাংলাদেশবিরোধী একটি আবহাওয়া তৈরি করা হয়। শেখ কামালকেও তখন উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচারের টার্গেট করা হয়েছিল।
নানা ধরনের অপকর্মের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে চালানো হয়েছিল মিথ্যাচার। শেখ কামাল অবিনয়ী, উদ্ধত, তিনি সন্ত্রাসীদের মদদদাতা, নারীদের প্রতি শিষ্টাচার দেখান না, এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগও প্রচার করা হয়। এসব প্রচারণার বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয় মওলানা ভাসানীর ‘হককথা’ নামের সাপ্তাহিক পত্রিকা, এনায়েতুল্লাহ খানের ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘হলিডে’, জাসদের দৈনিক মুখপত্র ‘গণকণ্ঠ’ এবং শত শত রাজাকার কণ্ঠসহ স্বাধীনতাবিরোধী সব অপশক্তির সমবেত কণ্ঠধ্বনি। এর সঙ্গে গোপনে যুক্ত ছিল আওয়ামী লীগের ঘরশত্রæ বিভীষণেরা-খন্দকার মোশতাক-শাহ মোয়াজ্জেম-ওবায়দুর রহমান-তাহের ঠাকুর গং। এগুলো যে একটি বিরাট পরিকল্পনা এবং লক্ষ্যকে সামনে রেখেই করা হচ্ছিল তা এখন অনেকের কাছেই স্পষ্ট। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ক্ষেত্র তৈরির সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই দেশের ভেতরের এবং দেশের বাইরের একাত্তরে বিজয় ঠেকাতে ব্যর্থ গোষ্ঠীগুলো একাট্টা হয়ে অপপ্রচার, মিথ্যাচার, গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে নীলনকশা তৈরি করে কাজ করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘটনা ঘটানো যে কিছু মাথামোটা সামরিক কর্মকর্তার তাৎক্ষণিক হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না, এত বছর পর অনেকের কাছেই সেটা পরিষ্কার হয়েছে। ১৫ আগস্টেও নেপথ্য কুশীলবদের সবার মুখোশ এখনো উন্মোচিত না হলেও, একদিন নিশ্চয়ই তা হবে।
শেখ কামাল কখনো বিনয় এবং সৌজন্যবোধের সীমা লঙ্ঘন করেননি কখনো। বেঁচে থাকলে তিনি কী হতে পারতেন, সে আলোচনা এখন মূল্যহীন এবং অর্থহীন। তার বিরুদ্ধে যারা অপবাদ ছড়িয়েছিল তারা হারিয়ে গেলেও বাঙালির হৃদয়ে শেখ কামালের নাম উজ্জ্বল হয়েই আছে এবং থাকবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক