বছর খানেকের মধ্যে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানামুখী কার্যকলাপ, জোট গঠন ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এসবের সঙ্গে সঙ্গে গুজব ছড়ানোও শুরু হয়ে গেছে। সম্প্রতি দেশে গুজব ও অপপ্রচার বেড়েছে, আরও বাড়বে। কারণ, সামনে জাতীয় নির্বাচন।
রাজনীতি আর গুজবকে অনেকে একাকার করে ফেলেছেন। দলের জনসমর্থন থাকলে গুজব বা মিথ্যাচারের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু জনগণকে আকৃষ্ট না করে গুজবের অস্ত্র ব্যবহার প্রতিদানে ভালো কিছু দিবে না। গুজবকে নতুন ধরনের সন্ত্রাসবাদ বললে ভুল হবে না। গুজবের বিরুদ্ধে আইনকে আরও কার্যকর করতে হবে। তবে আইনের অপব্যবহার যাতে না হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে। তবে এগিয়ে যাওয়া, না গুজব, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জনগণকেও নিতে হবে এবং সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে হবে কোনও কিছু বিশ্বাস করা বা প্রচারের আগে। গুজব মিথ্যাচারের রাজনীতি দলকে পিছনে ঠেলে, এসব সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করলে রাষ্ট্র মেরামতের চটকদার ফর্মুলা বেশি দূর গড়াতে পারবে না।
ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে সবার হাতে হাতে মোবাইল। ঘরে ঘরে ইন্টারনেট। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে সহজেই দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ রাখছে মানুষ। চারপাশে, কী ঘটছে, কী শুনছে সেগুলো ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাচ্ছে সবাই। বাংলাদেশে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষের রয়েছে ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট।
দেশে বর্তমানে ফেইসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। আর ইউটিউবের দর্শকের সংখ্যা ৩ কোটিরও বেশি। এই সুযোগ কেউ ভালো কাজে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করছেন। আবার কেউ কেউ এর ফায়দাও লুটছে। বিভিন্ন গ্রামে গড়ে ওঠেছে ‘হ্যাকার চক্র’।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে কীভাবে রাজনৈতিক ময়দান গরম করা হচ্ছে- এ লেখার মূল আলোচনার বিষয় মূলত সেসব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন গুজব আর মিথ্যাচারে ভরপুর। বিশেষ করে সরকার বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ানো হয় প্রতিদিন। এসব গুজবে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সেলিব্রেটিদের নাম জড়ানো হচ্ছে। কোনো গুজবে সশস্ত্র বাহিনীর মতো সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানের নামও জড়ানো হয়েছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার বিষয়বস্তু বা কনটেন্ট ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আর তা দেখছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। অনেকে তা বিশ্বাসও করছে। কারণ মূল ধারার গণমাধ্যম ছাড়া এসব খবরের কোনো বিশ্বাস যোগ্যতা নেই, তা অনেকের অজানা। তাছাড়া প্রত্যন্ত অ লের কোটি কোটি মানুষের পক্ষে সেসব তথ্য সত্য-মিথ্যা যাচাই করাও সম্ভব নয়। আর এই সুযোগটি নিচ্ছে একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র।
গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ বলছে, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারাই মূলত এমন কাজগুলো করে থাকে। তাই এসব খবর বিশ্বাস না করতে পরামর্শ দিয়েছে সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। তারা পরামর্শ দিয়ে বলেছে- যেকোনো খবর শুনেই প্রতিক্রিয়া না দেখাতে, আগে যাচাই করতে বলেছেন ঘটনা সত্য কিনা।
সম্রাট নিরো সম্পর্কে বলা হয়, রোম যখন পুড়ছিল তিনি তখন বাঁঁশি বাজাচ্ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে সমাজতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক বহু বিশ্লেষণ আছে, ব্যাখ্যা ছিলো, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় রাবণের মতো তিনিও বিভীষণ অর্থাৎ মিত্র কর্তৃক আক্রান্ত ছিলেন। এ ক্ষেত্রে রাবণের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য ছিল। রাবণ পরিবার কর্তৃক আর নিরো তাঁর ক্ষমতাকেন্দ্রিক সভাসদদের বিকৃত আচরণের শিকার হয়েছেন। নিরো তাঁর সিনেটরদের বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে গুপ্তহত্যা বন্ধে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এ কারণে সিনেটররা তাঁর বিরুদ্ধে চলে যান। তাঁরা বাকিদের খেপিয়ে তোলেন এভাবে যে রোমের সেই আগুনের দায়ভার সম্রাট নিরো নিয়েছেন।
সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে গুজব ছড়ানোকেই একদল পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এর জন্য অবশ্য তারা উভয়মুখী অর্থ পেয়ে থাকে বলে জানানো হয়েছে। এক ক্ষমতাকেন্দ্রিক বিরোধী পক্ষ, দুই অনলাইন প্ল্যাটফরম। বৈশ্বিকভাবেই এটা হচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের এক বছরেরও কম সময় সামনে আছে। বৈশ্বিক এবং দেশীয় গুজব ব্যবসায়ীদের জন্য এটা এখন ব্যবসার মৌসুম বলা যায়। তাদের ভাড়া করতে যাওয়া ক্রেতারাও আগ্রহী ও উৎসাহী। কি দেশের জন্য মঙ্গলজনক নাকি প্রতিপক্ষের প্রচ্ছন্ন ব্র্যান্ডিং?
একটি গ্রুপ এটিকে সাময়িক পেশার মতো করে দেশে-দেশে নির্বাচনী কাজ করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩০টি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের একটি কনসোর্টিয়াম অনুসন্ধান চালিয়ে এই কাজ সম্পর্কে অবহিত হয়। তিনজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক গ্রাহক সেজে এসবের বিস্তারিত তথ্য উঠে আসে। তাদের মূল কাজ হলো হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিষোদগার, গুজব, অপবাদ ছড়ানো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে জনমত গড়তে কাজ করে। এখন পর্যন্ত এই গ্রুপ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০টির বেশি নির্বাচনে প্রভাব রেখেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছদ্মনাম ব্যবহারকারী এক ব্যক্তি। ছদ্মবেশী এই ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, রাজনৈতিক প্রচারণা এবং বেসরকারি কোম্পানি, যারা জনমত নিজেদের পক্ষে নিতে চায়, তাদের হয়ে কাজ করেছেন তাঁরা। আফ্রিকা, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিভিন্ন গ্রাহককে তাঁরা সেবা দিয়েছেন।
এই টিম অত্যাধুনিক সফটওয়্যার প্যাকেজ অ্যাডভান্সড ইমপ্যাক্ট মিডিয়া সলিউশনস ব্যবহার করে ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, টেলিগ্রাম, জি-মেইল, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে হাজার হাজার ভুয়া অ্যাকাউন্ট রাখে। এমনকি অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার বৈশ্বিক প্ল্যাটফরম অ্যামাজনেও তাদের অ্যাকাউন্ট আছে। এভাবেই জি-মেইল, টেলিগ্রামসহ অনলাইন যোগাযোগের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তথ্য হাতিয়ে নেয়। পরিকল্পিতভাবে বিশ্বাসযোগ্য সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের ব্যবস্থা করে। পওে সেগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। কৌশলের মধ্যে প্রতিপক্ষের প্রচারণা ব্যাহত করা বা অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকা- সংঘটিত করার বিষয়ও যুক্ত।
অনেক রাজনীতিবিদের ব্ল্যাকমেইল করে পারিবারিকভাবে তাঁদেরকে বিপর্যস্ত করার উদাহরণ আছে। অর্থাৎ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করাই লক্ষ্য হয়ে উঠে।
এই বছরের শেষে আমাদের দেশে অনুষ্ঠিত হবে আরেকটি নির্বাচন। যেখানে আওয়ামী লীগ ধারাবহিকতা রক্ষার জন্য লড়বে। কারণ ধারাবাহিক সরকারব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ভীষণভাবে প্রয়োজন। প্রত্যাশা করা যায়, সুষ্ঠু নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। কিন্তু শেখ হাসিনার সেই বিজয়রথ ত্বরান্বিত করতে এবং গুজবের কোমর ভেঙে দিতে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অনলাইনকেন্দ্রিক কিছু কার্যক্রম দেখা যায়, আরো নতুন নতুন বিষয় ও সৃজনশীল বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। এর বাইরে গ্রামকেন্দ্রিক যে বিপুলসংখ্যক ভোটার, তাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার উন্নয়ন এবং অর্জন এগুলো নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন-অর্জন নিয়ে কোনো গল্প আলাদা প্রয়োজন নেই। শুধু তিনি যা করেছেন সেটাই তুলে ধরা হলেই মানুষ বিস্মিত হবে। বিশ্ব বিস্মিত হয়। বিশ^ সংবাদমাধ্যম সকাল-সন্ধ্যা বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক নীতি ঠিক ছিল, শেখ হাসিনার উন্নয়নচিন্তা অসাধারণ এসব নিয়ে মত প্রকাশ করে। আর বাংলাদেশের লোকজন এখনো নিষ্ক্রিয়।
শেখ হাসিনার সুনাম বিশ^ব্যাপী। তিনি দুর্নীতি, লোভ, মৌলবাদসহ অসংখ্য সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছেন। কাজেই তাঁর এসব অর্জনের বিপরীতে গুজব প্রতিরোধে সৃজনশীল উদ্যোগ প্রয়োজন। বিকেন্দ্রীকরণ এই উদ্যোগের সঙ্গে উন্মুক্তভাবে তরুণদের যুক্ত করতে হবে। গুজবের সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণ কী, তা সমাজবিজ্ঞানীরা ভেবে দেখবেন। কিন্তু এর পেছনে একটি পরিষ্কার রাজনীতি আছে। আর এই রাজনীতিটি করছে একদল চিহ্নিত মানুষ, যারা চায় না দেশ এগিয়ে যাক, সমাজে একটি সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা ফিরে আসুক। বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষ এগিয়ে চলেছে আর আমাদের দেশের মানুষের পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। গুজবের ধরণ ভিন্ন হলেও এর বিস্তৃৃতি ছিল আগেই। সমাজের আনাচা-কানাচে গুজবের চর্চা দেখা যেত। তবে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আসার পর মনে হচ্ছে, এর ভয়াবহতার মাত্রা ছাড়িয়েছে। গুজবের কারণে আগুন দিয়ে ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে হয়েছে বিভিন্ন সময়, ভাঙচুর করা হয়েছে। তা-ব চলে বিভিন্ন জায়গায়। ছেলেধরা বলে প্রচার করে কেমন করে একজন মাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে একদল উন্মাদ লোক। ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার নামে বানানো স্ট্যাটাস দিয়ে বিভিন্ন সময় অনেকেই নাজেহাল হয়েছেন। কোটা আন্দোলন বা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনেও চালানো হয়েছিল এই গুজবের ট্রাম্প কার্ড। সেসব গুজবে অংশ নিয়েছে সমাজের উচ্চশিক্ষিত মানুষজনও। আমরা দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, ফেসবুক সেলেব্রিটি যারা আমাদের কাছে সচেতন ও জাগ্রত মানুষ হিসেবে পরিচিত, তারাও অংশ নেয় এসব গুজবের নাটকে।
সমালোচনা আর মিথ্যাচার কখনো এক নয়। যেকোনো ব্যক্তি বা সরকারের যেকোনো কাজের সমালোচনা করা যায়, কিন্তু সেটা করতে হবে নিজের মত প্রকাশের মাধ্যমে শালীনতার মাধ্যমে। অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে নিজের ইচ্ছা মত চলাই স্বাধীনতা ও অন্যেরমত প্রকাশের রাস্তাকে বন্ধ বা আক্রমণ করে নয়। অথচ আমরা এমন মানুষকেও এসব গুজবের প্রচারণায় অংশ নিতে দেখি, যারা নিজেরা হরহামেশা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেন লেখালেখি করেন। বক্তব্য দেন বা প্রচার করে থাকেন। কিন্তু আরেক জনের কোনো কাজ যখন তাদের মতের সাথে না মেলে, তখনই দেখা যায় সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে মিথ্যা একটি অবস্থানকে সমর্থন করতে।
আধুনিক প্রযুক্তি যেমন নতুনতর গুজব ছড়াতে সহযোগিতা করছে। মুহূর্তেও দ্রুত ছড়িয়ে যায় গুজব। অনেকেই মিথ্যা বানাচ্ছেন ও ইচ্ছাকৃত মিথ্যা ছড়াচ্ছেন। ইচ্ছাকৃত এসব অসত্য, ভ্রান্ত বিষয়, গল্প এখন লোকমুখে না ছড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়া, এমনকি গণমাধ্যমকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। তার চেয়েও দুঃখজনক ব্যাপার হলো, একশ্রেণির তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ এসব ব্যবহার করছে, অপরকে বিশ্বাস করাতে ছড়াচ্ছে নানাভাবে। একটা শ্রেণি আবার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকেও এসব ভ্রান্ত অসত্য তথ্য, গল্প বা ফেক ভিডিও ছড়াতে ব্যবহার করছে।
এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় নানা এমন কল্পকথা, মিথ্যাচার ছড়ানো হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। নিয়মিত বিরতির পর পর সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে এসব মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে। এতে মূলত বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করা হয়। মানুষ যাতে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে আস্থা হারায় তার জন্যই এসব মিথ্যাচার। এসব সংঘবদ্ধ হীন উদ্দেশ্যে মিথ্যাচার ছড়ানোই হলো গুজব। গুজবের নানান ব্যাখ্যা আছে। সমাজবিজ্ঞানীরা উপযুক্ত সংজ্ঞায়নও করেছেন। গুজব উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং অসৎ উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়, কোনও পক্ষকে ঘায়েল করা বা কাউকে বা কোনও গোষ্ঠীকে হেয় করা বা ক্ষতি করার লক্ষ্যে গুজব ছড়ানো হয়। অসত্য ও ভুল তথ্য বা বিষয় একটা শ্রেণিকে দিয়ে নানাভাবে ছড়ানো হয় এবং বিশ্বাস করানো হয় যে যা ছড়ানো হয়েছে তা ঘটেছে বা ঘটবে; যদিও এর পুরোটাই ভ্রান্ত ও মিথ্যা।
গুজব ছড়ানো হয় মানুষকে ভুল বোঝাতে বা জনমতে ভীতি তৈরি করতে। কিছু অনিশ্চয়তাকে পুঁজি করে গুজবের ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, গুজব হলো প্রচারণা, একটি উপসেট। আমাদের দেশে কয়েকটি বিরোধীদল এই উপসেটকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। রাজনৈতিক গুজবগুলোর উৎস কোথায় বা কী করে এসব তৈরি করে ছড়ানো হচ্ছে তা কমবেশি আমরা সবাই জানি-বুঝি ও অনুমান করতে পারি। নিয়মিত এসব মিথ্যাগল্প ও গুজব নিয়ে পড়ে থাকে বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্মী, যেন এসবই তাদের কাজকর্ম।
২০১৪ সালেও গুজব ছড়িয়ে দেশে সহিংসতা করা হয়। যদিও পরে সহিংসতাকারী ও অবরোধকারীরা পিছু হটে। কয়েক হাজার নিরীহ মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়। সম্প্রতি ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়ানো হলো, সেগুলো আবার একটি দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করলো। পরে ঠিকই গুজব সৃষ্টিকারীরা আটক হলো।
লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বাংলাদেশে রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে গত কয়েক বছর ধরে গুজবের মাধ্যমে সরকার বা আওয়ামী লীগকে বিব্রত করার অপচেষ্টা চলছে। রাজনীতিতে পক্ষ-বিপক্ষ থাকবে, জনগণের কল্যাণে রাজনীতি। নীতিগত মতপার্থক্য রাজনীতির বৈশিষ্ট্য, কিন্তু ভালোকে ভালো বলার মানসিকতা বাদ দিয়ে, রাজনীতির চলমান রীতি বা রেওয়াজ বাদ দিয়ে অশুভ গুজব নির্ভরতা একাধারে হাস্যকর ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। কিছু হলে যৌক্তিক সমালোচনা বাদ দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এমনকি এক্ষেত্রে ধর্মকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না, ধর্মের অপব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার এই অপকর্ম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক