আওয়ামী লীগ উপহার দিবে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনে দিয়েছি, দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছে। এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শোষণহীন বৈষম্যমুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তনের সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচন করে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে পারে। নির্বাচনে কোনো প্রকার কারচুপি না হলে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হওয়ায় গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামো খুবই দুর্বল। ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিদ্যমান। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন একান্ত প্রয়োজন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন, শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল তাই সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায়। কেননা, নির্বাচন পরিচালনার সব দায়িত্বই নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা, নির্বাচনী আচরণবিধি প্রণয়ন এবং নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। সুতরাং, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ব্যতিত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
নানা ধরনের অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক হতাশার মধ্যেও জাতির সামনে এক উজ্জ্বল আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাতাসে নানা গুঞ্জনও ভেসে বেড়াচ্ছে। জনগণ সেসব গুঞ্জনে কান দিতে চান না। হতাশার কোনো কারণ দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ দেখতে চান না, বুঝতে চান না। চলতি
বছরের শেষ দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সার্থক নির্বাচনের জন্য দরকার সব দলের ও সব মতের লোকের অংশগ্রহণ। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই মুখ্য, তবে সরকারকে অবশ্যই সহায়ক হতে হবে। মেয়াদপূর্ণ হওয়ার পর নতুন মেয়াদে নতুন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নির্বাচন অপরিহার্য। কিন্তু সেই নির্বাচন কীভাবে হবে? কারা করবে? নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে কি? না আগামী নির্বাচনও একতরফা হবে? সব দলকে নির্বাচনে আনতে প্রথমে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
সব নাগরিক যেন তাদের ভোট তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে দিতে পারে, নির্বাচন কমিশনকে যথাযথভাবে সে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে আগে থেকেই বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা করে সুষ্ঠু ও সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশের বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার আস্থার সংকট দূর করতে হবে। অন্যান্য দলকেও সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তবে জনগণ পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দেবে, সেই ক্ষেত্রটি তৈরি করার প্রধান দায়িত্ব্ কিন্তু নির্বাচন কমিশনেরই।
গণতন্ত্রের পূবর্শত সুষ্ঠু নির্বাচন। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে একটি সুন্দর সংসদ উপহার দিতে পারে। সব দল অংশ নিলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না। এ ক্ষেত্রের সরকারি দলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে সব দলরে সঙ্গে আলোচনা করে সর্বজনগ্রাহ্য মতগুলো নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি বির্তকিত হয়, তাহলে দেশ ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেশবাসীর। মনে রাখতে হবে, রাজনীতিকদের কোনো অবিবেচক সিদ্ধান্ত বা ভুলের কারণে যদি দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে পড়ে, নির্বাচন ভণ্ডুল হয়ে যায়, তাহলে ইতিহাস কিন্তু ক্ষমা করবে না। গণতন্ত্র একটি রাষ্ট্রের প্রাণশক্তি ও উন্নয়নের পূর্বশর্ত।
বর্তমান সরকার সে গণতন্ত্রের প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেই দেশের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। আর গণতন্ত্র মানে আত্মমর্যাদা ন্যায়বিচার, সুশাসন, মানবিক উন্নয়ন অর্থাৎ একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেকেই শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে আছেন। নির্বাচনপূর্ব কোনো সহিংসতা, অস্থিরতা বা রাজনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টি হয় কিনা? তবে এহেন কোনো অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে বা কেউ সৃষ্টি করতে চাইলে তাদের পরিণাম হয়তো ভালো হবে না। জনগণই তাদের উচিত জবাব দিয়ে দেবেন। নির্বাচন সংঘাতমুখী হবে বা না হবে অথবা আদৌ হবে কিনা বা হলে তা অংশগ্রহণমূলক হবে বা হবে না ইত্যাদি নানা গুঞ্জন ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। অধিকন্তু নির্বাচন হলেও তা সহিংসতায় রূপ নেবে কিনা ইত্যাদি নানা ভাবনা জনগণের মধ্যে। জনগণ শঙ্কামুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। এ চাওয়া জনগণের মৌলিক অধিকার। এ অধিকারের প্রাপ্তি থেকে জনগণ হোঁচট খেতে চায় না। জনগণের একটি বড় অংশ হচ্ছে গরিব, অসহায়, দুঃখী ও সাধারণ মানুষ। আর সাধারণ মানুষকে সুখী করাটাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ ও সরকারের ভাবনা এখন শুধুই জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এ লক্ষ্যে চলছে দলের ইশতেহার তৈরির কাজ। নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আশঙ্কা করে আওয়ামী লীগ তৃণমূলের সব শাখার সম্মেলন সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যাতে দ্রুত শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা করছে সরকার। তৈরি হয়েছে ভোটার আকৃষ্ট করার জাতীয় বাজেট। ভোটারদের কাছে পৌঁছতে নজর দিচ্ছে দলটি। এই লক্ষ্যে সারা দেশে আওয়ামী লীগের কার্যালয়গুলোয় স্থাপন করা হচ্ছে স্মার্ট কর্নার। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের সাফল্য ও অর্জন তুলে ধরতে সেপ্টেম্বর থেকে গণসংযোগও করবে ক্ষমতাসীনরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে বিএনপি একদফার আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও সরকার তাদের ছাড় দিতে নারাজ। এ কারণে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগ এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, যেখানে জনগণের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে। চারটি মূল স্তম্ভের ভিত্তিতে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে-স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি। আওয়ামী লীগের ঘোষণায়ও একই কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করে। সেই স্বাধীন নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন করার লক্ষ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ইইউ প্রতিনিধি দল এসেছে, নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো ও প্রস্তুতিমূলক নানা বিষয় তারা পর্যবেক্ষণ করবে। একইসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বৈঠক করবে তারা। নির্বাচনের আগেই যার যার অবস্থান থেকে নির্বাচনকে প্রভাব ও হস্তক্ষেপমুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি বাস্তবে কার্যকর করার ক্ষেত্রে সবাইকেই নির্বাচনী আইন, বিধিমালা মেনে চলতে হবে। নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, প্রভাব বিস্তার, কালোটাকা, ধর্মের অপব্যবহার, সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়ানো ইত্যাদিকে কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখতেই হবে।
জনমনে নির্বাচন নিয়ে যে কৌতূহল, তা ধীরে ধীরে দানা বাঁধতে থাকবে, নির্বাচন প্রক্রিয়াও একটি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করবে। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম, গতিবিধি এবং আচার-আচরণ নিয়ে জনগণের নানা কথা ক্রমেই যেন একটা নতুন আবহ সৃষ্টি করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার তাগিদ দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) উন্নয়ন-সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলো তৎপরতা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে এসব সংস্থার পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানো এবং নানাবিধ সহায়তার কথাও বলা হচ্ছে। সময়ের ধারায় এসবের অনেক কিছুই আমরা ক্রমান্বয়ে দেখতে থাকব। সবকিছুর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে হারজিতের মানসিক প্রস্তুতি ও সদিচ্ছা বড় বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশের স্বার্থকে সমুন্নত রেখে একটি স্বাধীন অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি অনুসরণের যে আকাক্সক্ষা ঢাকার রয়েছে, এটি সর্বজনবিদিত যে, সভ্য বিশ্বের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিচর্যায় নির্বাচন একটি অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। উন্নত-উন্নয়নশীল-অনুন্নত সকল দেশে চলমান সরকারের অধীনে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সাংবিধানিক-নৈতিক প্রণিধানযোগ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য।
গণতন্ত্রের রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দল ও শক্তিশালী বিরোধী দলের পারস্পরিক সমঝোতা-সহযোগিতা-সম্প্রীতি ও শিষ্টাচার পরিপূর্ণ আচার- আচরণ গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থবহ করে তোলে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ- সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজনে সরকারের ভুলত্রুটিগুলো নৈর্ব্যত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরে ইতিবাচক-গঠনমূলক সমালোচনায় ঋদ্ধ হতে পারে সরকারের দেশ পরিচালনায় অনন্য সাফল্য। চর দখলের মতো ক্ষমতা দখলের কোনো ব্যবস্থাই আধুনিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য নয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ওই সব সংস্থা বা ব্যক্তির কথা বলার কোনো এখতিয়ারই নেই। এরপরও তারা যেসব কথাবার্তা বলছে, সেগুলো বাস্তবতাবিবর্জিত ও একেবারেই ভিত্তিহীন। বাংলাদেশ সম্পর্কে যাদের কোনো ধারণা নেই, তারাই হুট করে একেক সময় একেক ধরনের কথা বলছে। এগুলোতে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সরকার এগুলো নিয়ে মাথাও ঘামাবে না।
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুরের সাম্প্রতিক সিটি নির্বাচন নিয়ে কেউ একটি প্রশ্নও তুলতে পারেনি। অতীতে বাংলাদেশে এত শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে কিনা প্রশ্ন করেন তিনি। সংসদের বিভিন্ন উপ-নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি উপনির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী দিনেও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই পারে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। দেশে সাম্প্রতিক সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং তার শাসনামলে অনুষ্ঠিত সংসদ উপ-নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই এদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারে।’ তিনি আরো বলেন,‘আমাদের লক্ষ্য জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন।
আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং এটি চালিয়ে যাব।’ শেখ হাসিনা বলেন, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুরের সাম্প্রতিক সিটি নির্বাচন নিয়ে কেউ একটি প্রশ্নও তুলতে পারেনি। অতীতে বাংলাদেশে এত শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে কিনা প্রশ্ন করেন তিনি। সংসদের বিভিন্ন উপ-নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি উপনির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষিত করেছেন, তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছেন এবং দেশে গণতান্ত্রিক ধারা নিরবচ্ছিন্ন রেখেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে, জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। দেশের মানুষ তাদের (আ’লীগ) নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’কে ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে, আবার নৌকায় ভোট দেয়ায় মঙ্গা (দুর্ভিক্ষ) দূর হয়েছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। দেশের জনগণ বারবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে, এর সুফল তারা পাচ্ছে। ‘আজ, আমরা দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারী এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ না থাকলে এটি আরো কমানো যেত।
তিনি আরো বলেন, মহামারী ও যুদ্ধের পরও সরকার জনগণকে খাদ্য, চিকিৎসাসহ অন্য সেবা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি স্মার্ট দেশ- যেখানে থাকবে স্মার্ট মানুষ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজের পাশাপাশি স্মার্ট-দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ হবে। সংসদের বিভিন্ন উপ-নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি উপনির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশে মানবাধিকারের খোঁজে আসে অনেকে। আমার প্রশ্ন ২০০১ এর নির্বাচনে যেভাবে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ হয়েছিল তখন সেই মানবাধিকার ফেরিওয়ালারা কোথায় ছিলো? তারা কেন চুপ ছিলো? তাদের মুখে কেন কথা ছিলো না কেন? অনেকে আছেন আমাদের ছবক দেন। মানবাধিকার শেখান। মানবাধিকার বঞ্চিত তো আমরা। যারা খুনিদেরকে ইনডেমনিটি দিয়ে রক্ষা করে, আজ তাদের কথা শুনে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা, অনেক দেশ দেখি মানবাধিকারের কথা উঠায়।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা আরও বলেন, যে আওয়ামী লীগ সরকার অন্য দেশের নির্যাতিত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে কেন? কীভাবে করবে। এ কথা বলে কীভাবে? বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বে তো বহু জায়গায়, বহু মানুষ খুন হচ্ছে। এমনকি আমেরিকায় তো প্রতিদিন গুলি করে করে শিশুদের হত্যা করছে। স্কুলে, শপিং মলে, রাস্তায় হত্যা হচ্ছে। বাঙালি মেয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাই করতে গিয়ে হত্যা করছে। প্রতিদিনই তো তাদের প্রতিটি স্টেটে গুলি করে করে হত্যা করছে। ঘরের মধ্যে গিয়ে পরিবারসহ হত্যা করছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, এমন বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা তাদের আগে করা উচিত। তারা নিজের দেশের মানুষকে বাঁচাবে কী করে সেই চিন্তা আগে করুক। সেটাই তাদের করা উচিত। আজ তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনি। মানবাধিকারের কথা শুনি। বিদেশিদের কাছে.. আমাদের দেশে আছে কিছু আতেল শ্রেণি। কথা বিক্রি করে খাওয়া অভ্যাস। যত মিথ্যা অপবাদ দেয়া। এই দেশে নানা রকম অপরাধ করে করে যারা বিদেশে আশ্রয় নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে যত অপপ্রচার চালাচ্ছে’। সদ্য অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচন হবে না যারা বলে, মাত্র সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হল (বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও গাজীপুর)। গাজীপুরে আমরা হেরেছি, বাকি চারটাতেও আমরা জিতেছি। এই নির্বাচন নিয়ে কেউ একটি প্রশ্ন তুলতে পেরেছে? আমরা গেছি সেখানে ভোট চুরি করতে? করি নাই তো। এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশে আগে কখনো হয়েছে? ঢাকায় সিটি নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। মোহাম্মদ হানিফ জিতেছিল। এরপর লালবাগে বিএনপি গুলি করে আওয়ামী লীগের ছয়জন নেতাকর্মীকে হত্যা করে। সে কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। প্রত্যেকটা নির্বাচনে তো এরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে।
আওয়ামী লীগের আমলে হওয়া সব উপনির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। সেটা আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি। মানুষের ভোটের অধিকার সংরক্ষণ করা, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই কাজটাই আমরা করে যাচ্ছি। সেটাই করে যাব। জনগণ বারবার অনেক বাধা অতিক্রম করেও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তার সুফল দেশের জনগণই পাচ্ছে। বারবার বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নির্বাচনের পর প্রহসন শুরু হয়। জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়। শুরু হয় ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোটের প্রহসন। ‘হ্যাঁ’ বক্স পাওয়া যেত। ‘না’ বক্স নেই। ভোট দেয়া লাগতো না।
১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর নির্যাতন। একদিকে আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতন। অপরদিকে জাতীয় পার্টির ওপর নির্যাতন। সব চেয়ে বেশি নির্যাতন হয় জাতীয় পার্টির ওপর। জাতীয় পার্টি সেটা ভুলে গেছে। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে নির্বাচনই ছিলো একেকটা গ্রুপ ঢুকবে, সিল মারবে, বাক্স ভরবে। তারপর রজাল্ট পাল্টাবে। দশটা হুন্ডা, ২০টা গুন্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ড। আওয়ামী লীগ সবসময় সংগ্রাম করে গেছে জনগণের ভোটাধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওই নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ আর বিএনপি এক সমান হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করেছি। ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছি এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছি। ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা নানা ধরনের অপকর্ম করেও তারা কিন্তু এই গণতন্ত্র ধ্বংস করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ আছে বলেই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগ আছে বলেই মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে।
নৌকায় ভোট দিয়ে আজ মঙ্গা দূর হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি স্মার্ট দেশ- যেখানে থাকবে স্মার্ট মানুষ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজের পাশাপাশি স্মার্ট-দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ হবে। দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকারের অঙ্গীকার প্রশংসা করার মতো। প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ে তাঁর এই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ বিদেশি কূটনীতিকদের প্রতি অদ্ভুত এক মানসিকতা পোষণ করেন। বিদেশি কূটনীতিকদের দেখলে তাদের উৎসাহ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কিছু হলে এসব বিদেশিকে ডেকে অভিযোগ করা হয়। অথচ তাদের অভিযোগ করার কথা জনগণের কাছে, দেশের ভোটারদের কাছে। তারা বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে অভিযোগ জানাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, যা হওয়া উচিত নয়।
অন্যদিকে, কিছু সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ভূমিকাও প্রশংসা করার মতো নয়। বিদেশি কূটনীতিকদের দেখলে সাংবাদিকরা কেন হুমড়ি খেয়ে পড়েন? তাদের মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য সাংবাদিকের এত ব্যাকুলতা কেন? ‘বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আছে কি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী’- এজাতীয় প্রশ্ন অন্য কোনো দেশের সাংবাদিকরা কি কূটনীতিকদের করেন? এটি আমাদের দেশের সাংবাদিকতা পেশার একটি দুর্বলতা। কাকে সম্মান করতে হবে, কী জিজ্ঞাসা করতে হবে, কীভাবে সঠিক প্রশ্ন করতে হবে এবং উত্তর পেতে হবে তা অনেকেই জানেন না।
বিশ্বের আর কোনো দেশে বিদেশি কূটনীতিকদের সাংবাদিকরা এতটা গুরুত্ব দেন না। অবশ্য আগেই বলেছি, এর জন্য আমাদের রাজনীতিবিদরাই প্রধানত দায়ী। তারাই বিদেশি কূটনীতিকদের রাজনীতি ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। আমাদের দেশের রাজনীতিতে যতদিন পর্যন্ত সুস্থ ধারা ফিরে না আসবে, ততদিন বিদেশিদের অযথা নাক গলানোর প্রবণতাও দূর হবে না। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বড় দুর্বলতা যে, আমরা নিজেদের নাক কেটেও পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে চাই। রাজনীতিবিদরা নিজেরা নিজেদের শুধরে না নিলে বাইরের লোকেরা কান কথা বলতে পারবে, তাতে ভালো কিছু হবে না। দেশের কল্যাণ হবেনা। তাই দেশ, মা, মাতৃভূমি ও স্বাধীনতা সবার উপরে, এটা যত মনে রাখবেন ততই দেশের জন্য মঙ্গল।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক