হীরেন পণ্ডিত : ২০০৮ সালের সরকারের দিনবদলের সনদের মূল বিষয় ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বাংলাদেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার অনুযায়ী সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হলো।
দেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে চালু করা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন বলতে এমন ধরনের উন্নয়নকে বুঝায় যা সমাজের সব শ্রেণির মানুষের জন্য তৈরি সুবিধাসমূহে সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। বর্তমানে বাংলাদেশ
বিশ্বে দ্রুতবর্ধমান অর্থনীতির একটি দেশ।
অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের নীতিকৌশল প্রয়োগের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধারা অব্যাহত রয়েছে।
মার্কিন অনলাইন সংবাদমাধ্যম পলিসি ওয়াচার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রশংসা করে বলেছে, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ
এখন বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেস স্টাডিতে পরিণত হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৫০ বছরে ২৭১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিপ্রধান। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের শতকরা ২৯ ভাগ আসে কৃষি ও তদসংশ্লিষ্ট খাত থেকে। সমতল ভূমির মোট জমির শতকরা ৯২ ভাগ ব্যবহার হয় কৃষিকাজে আর কৃষিকে অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ করে শতকরা ৬৪ ভাগ মানুষ। কৃষি খাতে দেশের সিংহভাগ ভূমি ব্যবহৃত এবং এ খাতই কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস। এ প্রেক্ষিতে কৃষিব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ, উচ্চ ফলনশীল শস্যের উৎপাদনে সহায়তাকারী বীজ, উপকরণ, সার ইত্যাদি সরবরাহ, কৃষককে সহজ শর্তে মূলধন জোগান এবং তার উৎপাদিত পণ্য ন্যায্যমূল্যে
বিপণনব্যবস্থা তদারকি করে কৃষিব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং কৃষি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদারকরণের মাধ্যমে কৃষিকেই দেশের জিডিপির অন্যতম জোগানদাতা হিসেবে পাওয়া গিয়েছে। একই সঙ্গে কৃষিনির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠা এবং কৃষির উন্নয়নকামী পদক্ষেপ; নদীমাতৃক দেশে পানি সম্পদের সদ্ব্যবহার এবং নদীশাসন ও নৌযোগাযোগ; জনবহুল জনপদের জনশক্তিকে সম্পদে রূপান্তর এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশীয় কাঁচামালের উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশজ সম্পদের সমাহার ঘটিয়ে উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণে স্থানীয় সঞ্চয়ের বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ, ব্যক্তি তথা বেসরকারি খাতের বিকাশ, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সম্ভাবনার বিকাশ বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের অন্যতম,
বাঞ্ছিত ও কাক্সিক্ষত উপায়। বৈশ্বিক শান্তি সূচকে বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে।
কিভাবে এই দেশকে থামানো যায় তা নিয়ে বিশ্বনেতাদের কারসাজি শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তাঁর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে শুরু করেন ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। বিশ্বের বুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য মানবিক দৃষ্টান্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভাসমান ভূমিহীন পরিবার জায়গাসহ দৃষ্টিনন্দন বাড়ি পাচ্ছেন। এ পরিবারগুলোর অধিকাংশ ছিল ‘অতি দরিদ্রসীমার নিচে’। বাসস্থানের মৌলিক অধিকার ছিল না তাদের। এখন তারাই জায়গার মালিক হচ্ছেন, বাড়ির মালিক হচ্ছেন। নারীরাও এই মালিকানা পাচ্ছেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭টি পরিবারকে ঠিকানা গড়ে দেওয়া হয়েছে। আগস্ট মাস পর্যন্ত যেখানে মাথা গোঁজার
ঠাঁই হয়েছে ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫ জনের এবং পুনর্বাসিত পরিবারগুলিকে তিন মাসের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।
আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে পারি। কারও কাছে মাথা আমরা মাথা নত করবো না, কারও কাছে মাথা নত করে আমরা চলব না’। আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বারবার বলেছেন, সেই সম্পদটুকু কাজে লাগিয়েই আমরা বিশ্বসভায় আমাদের নিজেদের আপন মহিমায় আমরা গৌরবান্বিত হবো, নিজেদের গড়ে তুলব এবং সারাবিশ্বের কাছে আমরা মাথা উঁচু করে চলব।
এটাই হবে এ দেশের মানুষের জন্য সবদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এভাবেই এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি
বাংলাদেশ। একইসঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান করা হচ্ছে। যেমন ভিজিএফ সুবিধা প্রদান, কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সমবায় সমিতি গঠন ও ঋণ প্রদান, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, পুকুর খনন ও মৎস্য চাষ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ প্রদান, বৃক্ষরোপণ, গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা এবং বিনামূল্যে শিক্ষা কার্যক্রমসহ আরও নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ কর হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গরিব এবং অসহায় জনসাধারণের উন্নয়নে লক্ষ্যে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ও বিধবাভাতাসহ আরও বিভিন্ন ধরনের ভাতা ধারাবাহিকভাবে প্রদান করে আসছে। প্রতি বছর এই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে সরকার বাজেটের একটা বড় অংশ বরাদ্দ করে আসছে এখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২ কোটি মানুষ এই সামাজিক সুরক্ষার আওতায় রয়েছেন। পূর্বের ন্যায় বর্তমান বাজেটেও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা আওয়ামী লীগ সরকার ধরে রেখেছে।
আর্থ-সামাজিক খাতে দেশে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জনের ধারা অতীতের ন্যায় অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ১০টি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন তা হলো- আমার বাড়ি আমার খামার, আশ্রয়ণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে
বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিনিয়োগ বিকাশ এবং পরিবেশ সুরক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান ও আয় বৃদ্ধির কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর মাধ্যমে
২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) সাফল্যের পর ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে দেশ।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর দেশের সব মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে অগ্রাধিকার প্রদান করেন। একই সঙ্গে জনগণের দোরগোড়ায় ডিজিটাল সেবা পৌঁছানো, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো, পরিবেশ সুরক্ষা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০টি বিশেষ উদ্যোগ হাতে নেন। উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বের মডেল।
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ ও বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে সরকার। প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আনয়ন, দারিদ্র্যের হার হ্রাস ৪০ থেকে ১৮ তে নেমেছে। সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতিদান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও চিকিৎসাব্যবস্থার আধুনিকায়ন। এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এগুলো হলো-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি,
স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। এর পাশাপাশি হাতে নেওয়া হয়েছে ২১০০ সালের বদ্বীপ কেমন হবে- সেই পরিকল্পনা। স্মার্ট বাংলাদেশে সব
কাজ, সম্পাদন করা হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেখানে প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে হবে দক্ষ। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত ১৫ বছরে দেশকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ও বাংলাদেশ বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটেও অন্য
দেশগুলোর মতো বড় ধরনের কোনো অর্থনৈতিক সংকটে না পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে তিনি এই সময়ে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্ত অবস্থানে নিতে পেরেছেন। তা না হলে ১৭ কোটি মানুষের দেশটাকে এই সংকটকালেও বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা বেশ কঠিন হতো।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যেমন এদেশের মানুষের উন্নয়নে নিজের জীবন দিতেও কোনো ধরনের কুণ্ঠাবোধ করেননি ঠিক তেমনি যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা হিসেবে নিজের জীবনকে বাজি রেখে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য বদলে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান অসামান্য।
আওয়ামী লীগ যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। এটাই আওয়ামী লীগ এবং এটাই আওয়ামী লীগের শিক্ষা। আওয়ামী লীগের ইতিহাস যেমন সংগ্রামের ইতিহাস, আবার সেই সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগই পারে একটি দেশকে উন্নত করতে বা এগিয়ে নিয়ে যেতে, যেভাবে এখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যত অশুভ শক্তি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করুক, না কেন বাঙালি এগিয়ে যাবে অগ্রযাত্রার পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। মানসম্মত শিক্ষা, নীতি-নৈতিকতার বিকাশধর্মী বিদ্যাচর্চা, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি না হলে বেকারের ভারে দেশ থেকে বিদেশিরা এসে রেমিট্যান্স নিয়ে যাচ্ছে এ বিষয়টি জাতীয় দায়িত্ববোধের আওতায় আসার বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে ব্যক্তি নিরাপত্তার, ব্যক্তি নিরাপত্তার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার, সামাজিক নিরাপত্তার সঙ্গে আয় উপার্জনের সব কার্যক্রমের কার্যকারণগত সম্পর্ক
রয়েছে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে চাই আয়-উপার্জনের সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ। শিক্ষা কর্মদক্ষতাকে, স্বাস্থ্যসেবা কর্মক্ষমতাকে, কর্মদক্ষতা
ও কর্মক্ষমতা উৎপাদন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে এটাই প্রত্যাশা।
উচ্চমাত্রায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় বৃদ্ধি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি এগুলো ঘটলেই তাকে
প্রকৃত ও সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলা যাবে না। সাধারণ মানুষের সামাজিক অবস্থা কতটা পরিবর্তন হলো, শিক্ষাব্যবস্থার কতটা উন্নতি হলো,
সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা, কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা গেল কি না এসব বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের দেশে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে বিত্তবান মানুষগুলো বিত্তবান হচ্ছে, আর দরিদ্র মানুষগুলো আরো দরিদ্র হচ্ছে।
অর্থনীতির প্রতিটি সেক্টরে এমনভাবে সংস্কার করতে হবে, যাতে অর্জিত আয় সাধারণ মানুষ ন্যায্যতার ভিত্তিতে পেতে পারে। মানুষের মৌলিক
চাহিদা পাঁচটি। এগুলো হচ্ছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। এক জন মানুষ তার বসবাসকারী রাষ্ট্রের কাছে এই পাঁচটি অধিকার দাবি করতে পারে। আর রাষ্ট্র তার প্রতিটি নাগরিকের জন্য এই সুবিধাগুলো নিশ্চিত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই পাঁচটি মৌলিক অধিকার
নিশ্চিত করা গেলেই শুধু একটি রাষ্ট্রের প্রকৃত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হতে পারে।
একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় এনে বয়সকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে সর্বজনীন
পেনশনব্যবস্থা প্রবর্তনের অঙ্গীকার ছিলো সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া দেশের সব নাগরিক পেনশন
সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হলেন। আপাতত চালু হয়েছে চারটি স্কিম। এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা। প্রবাসÑ এটি শুধু
বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য। প্রগতিÑ এই স্কিম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য। সুরক্ষা এ স্কিমটি
স্বনির্ভর ব্যক্তির জন্য। সমতাÑ এই স্কিমে চাঁদার হার একটিই, এক হাজার টাকা। তবে এ ক্ষেত্রে প্রতিমাসে ব্যক্তি দেবে পাঁচশ টাকা আর বাকি পাঁচশ দেবে সরকার। পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসতে গেলে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি যাদের এনআইডি নেই, তারা পাসপোর্টের ভিত্তিতে পারবেন।
অর্থ বিভাগের অধীন একটি ‘সর্বজনীন পেনশন অথরিটি’ গঠন করা হয়েছে। পুরোপুরি আইটিভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান সারাদেশের মানুষের পেনশন ব্যবস্থাপনা করবে। এটি একটি অসাধারণ অর্জন বাঙালি জাতির জন্য। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তন হলো জাতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উপহার। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মতো সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম চালু করে ভবিষ্যতে জনগণের মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তা বোধের জন্ম দিয়েছেন।
আজ বয়স্ক ব্যক্তিরা যেভাবে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন, সেই ভাবনা তাদের মধ্যে আর থাকবে না। আর এ কারণেই বাঙালি জাতির কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনবান্ধব রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে পরিচিত।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো