হীরেন পণ্ডিত : বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও সর্বজনস্বীকৃত। গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার সমুন্নত রেখেই কাজ করছে বাংলাদেশ। কিন্তু অনেকের দেশি-বিদেশি অনেকের নাক গলানো ও মামা বাড়ির আবদার দেখে, একটি প্রশ্ন সামনে আসছে যে তারা সবাই কি তাদের জন্যনির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করছেন কিনা?
সম্প্রতি ইইউ পার্লামেন্টে রেজুলেশন গ্রহণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ‘অধিকার’ সংস্থাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টে আলোচনা ও রেজুলেশন গ্রহণের বিষয়টি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বলে মনে করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, এটি আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো। আশা করি সবাই কমনসেন্সের ওপর ভিত্তি করে কাজ করবে। আমরা মনে করি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের পরিপক্ক সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কের জায়গা থেকে আমাদের অভ্যন্তরীণ কোনও বিষয়ে সেটাও আবার আদালতের বিষয়, যেখানে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, এ ধরনের কার্যক্রমে আশা করি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নাক গলাবে না, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল এটি আমলে নেবে না।
বুধবারের আলোচনায় ৮ জন বক্তব্য দিয়েছেন জানিয়ে তিনি জানান যে তাদের মধ্যে দুইজন পরিষ্কার করে বলেছেন তারা এটির পক্ষে নয়। এরমধ্যে একজন এরকমও বলেছেন, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের এ ধরনের আচরণ নতুন কলোনিয়ালিজমকে উসকে দিতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি এ ধরনের আচরণ করা ঠিক নয়। আরেকজন বক্তা এরকমও বলেছেন, এ ধরনের উদ্যোগ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট থেকে নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ‘একদিক থেকে এটি আমলে নেবো, কারণ এটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। এরকম কোনও কার্যক্রম হলে আমরা চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে থাকতে পারি না।’
আমাদের একটা সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছেকোনো রায় পক্ষে গেলে ঐতিহাসিক; বিপক্ষে গেলেই ফরমায়েশি বলা হয়। আমাদের সবারই দায়িত্ব আদালতের মর্যাদা রক্ষা করা। ‘দুর্নীতির তথ্য পেলে গণমাধ্যম রিপোর্ট করবে, এটিই স্বাভাবিক। এখানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুযোগ কোথায়? তবে প্রকাশিত রিপোর্ট সত্য, না মিথ্যা, নাকি উদ্দেশ্য প্রণোদিত তা বিচারের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধান রয়েছে। সবারই নীতিমালা মেনে চলা উচিত।’
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘গণমাধ্যমের রিপোর্ট দুদকের অন্যতম সোর্স। প্রায় ৫০ ভাগ অনুসন্ধান আমরা গণমাধ্যমের সূত্র ধরে করে থাকি। এ জন্য গণমাধ্যমের সংবাদ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে দুদকে এর প্রভাব পড়বে। জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া সাইবার নিরাপত্তা বিল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পক্ষ। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশিদের অনুকম্পা পেতে কেউ কেউ সাইবার নিরাপত্তা আইনের (সিএসএ) বিরোধিতা করছেন।
সাইবার নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বাধা দেওয়ার জন্য বাধা দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি যখন ঝামেলায় পড়বেন, তখন আবার সরকারের সাহায্য চাইবেন। আগে পড়ে দেখেন এটি কী ধরনের আইন, এরপর অভিযোগ করেন। কেউ যখন আপনার মা-বোনের সম্পর্কে বাজে কথা লিখবে, তখন কী করবেন? তখন গালি দিয়ে বলবেন, সরকার এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’
আগামী জাতীয়সংসদ নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়, সেজন্য বিভিন্ন তৎপরতা চালাচ্ছে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ এখন রাজনীতিবিদ, নির্বাচন কমিশন, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা, বৈঠক করছেন।আর এই সমস্ত কথাবার্তায়অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে বাধাগুলো আছে, সেই বাধাগুলোর দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও সংগঠনটির পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদ- দিয়েছেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল। হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার অভিযানে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এ মামলা হয়। সেই মামলার রায়ের পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে রায় প্রকাশের পর বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গতবৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার রায় পড়ার সময় আদালতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মতামত জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা রায় পর্যবেক্ষণ করতে এসেছি। সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও কোনো উত্তর না দিয়ে তারা বলেন, আমরা শুধু পর্যবেক্ষক হিসেবে আদালতে এসেছি।
এর আগে মামলার গত ২৪ আগস্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ৭ সেপ্টেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেন। কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় রায় পিছিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে রাত্রিযাপনের ঘোষণা দেয় সংগঠনের নেতারা। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে ৬১ জন নিহত হয় বলে দাবি করেছিল অধিকার। তবে সরকারের ভাষ্য সেই রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি। শাপলা চত্বরে অভিযানের পর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ডিবির তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম। তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করে। পাশাপাশি তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করে, যা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ। একইভাবে ওই আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালায় এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালায়, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫০৫ সি ও ডি এবং ৫০৫ এ ধারায় অপরাধ।
আদিলুর রহমান খান পেশায় সর্বোচ্চ আদালতের আপিলেট ডিভিশনের আইনজীবী হিসেবে কর্মরত আছেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি বামপন্থি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আর পরিচালক নাসির উদ্দীন এলান অধিকারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ অসঙ্গতি পাওয়া যায়। যেমন:-৫ জন ব্যক্তির নাম একাধিকবার থাকা, ১১টি কল্পিত নাম সংযুক্তকরণ, শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারীর নাম তালিকায় সংযুক্তকরণ, ঢাকার বাইরে মৃত্যুবরণ করা ৬ জনের নাম উক্ত তালিকায় যুক্ত করা ইত্যাদি।
উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর উদ্ভূত বিভ্রান্তি দূর করতে তথ্য মন্ত্রণালয়হতে ২০১৩ সালের ১০ জুলাই তারিখে তথ্য অধিকার আইনের অধীনে ‘অধিকার’ এর নিকট তালিকার বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার নির্দেশনা দেয়া হলেও অধিকার তা দিতে অনীহা প্রকাশ করে। এছাড়া এনজিও বিষয়ক ব্যুরোকেও তারা গোপনীয়তার অজুহাতে উক্ত প্রতিবেদনের মূল তথ্যাদি প্রেরণ করেনি। ফলশ্রুতিতে ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়(মামলা নং-০১/২০১৩)। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এসব বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্ট তথাকিথত বন্ধুদের নগ্ন হস্তক্ষেপ এ দেশের শাসন ব্যবস্থার ওপর, গণতন্ত্রের ওপর, বিচার ব্যবস্থার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ কিনা তা নিজেরা একটু ভেবে দেখলে ভালো করবেন। এই সমস্ত তথাকথিত বন্ধুদেরআসল উদ্দেশ্য হলো এদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে ব্যাহত করা। বাংলাদেশের মানুষ ভালো আছে, সুখে আছে এ সমস্ত তথাকথিত বন্ধুদের এগুলো দেখে সহ্য হয়না তাই এটা তাদের গাত্রদাহের কারণ। বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক আশাব্যঞ্জক মাইলফলক ছুঁয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়ছে। সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশের শতভাগ মানুষকে কোভিডের টিকা প্রদান করেছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সকল নাগরিককে বিস্তৃত টেলিযোগাযোগ সেবা (সরাসরি ঘরে ঘরে টিভি, রেডিও, টেলিমেডিসিন, শিক্ষা, এবং ইন্টারনেট ব্যবহার), রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প, মাতারবাড়ি প্রকল্প দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে অবদান রাখছে। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্প, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, তিন ডজনেরও বেশি হাই-টেক পার্ক এবং আইটি গ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামগুলোকে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা দিয়ে সজ্জিত করা হচ্ছে। আজ আমরা এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছি যে মাথা উঁচু করে রাখার সময় এসেছে। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে।
সরকার ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৫,৫৫,৬১৭টি পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য প্রায় ১৪,৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক জনগণের দোরগোড়ায় রয়েছে। সরকার তিন কোটির বেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তি, ছয় লাখ মানুষকে বিভিন্ন ভাতা, ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ লাখ টাকার চাল, কৃষিখাতে কৃষকদের ভর্তুকি প্রদান করছে।
এখন বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ এবং মাছ, মাংস, ডিম ও শাকসবজিতেও স্বয়ংসম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ জলসীমায় মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আমার গ্রাম আমার শহরের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর সুফল শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। জাতিসংঘ বাংলাদেশকে একটি উন্নয়শীল দেশে পরিণত করার জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতি। দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩১ সালে, বাংলাদেশে এমন কেউ থাকবে না যাকে অত্যন্ত দরিদ্র বলা যাবে।
মাথাপিছু আয় মানব সম্পদ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এই তিনটি সূচক উন্নয়নশীল দেশগুলির যোগ্যতা নির্ধারণ করে। এই তিনটি সূচকে বাংলাদেশ প্রায় কাক্সিক্ষত যোগ্যতা অর্জন করেছে। কোভিড-১৯ এর মধ্যেও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ২৭৬৫ অর্থনৈতিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সারা বিশ্বকে স্তম্ভিত করেছে। যা গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, মা ও শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। নারীরা এখন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সকল স্তরে অবদান রাখছে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গ্রামাঞ্চলের নারীরাও পিছিয়ে নেই। তারাও এগিয়ে চলেছেন পুরুষ মানুষের সাথে সমানতালে। এতে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
আজকের তরুণরাই আগামীর কর্ণধার। তরুণ প্রজন্মকে মানবসম্পদে পরিণত করতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, কলা ও গণিত (স্টিম) শিক্ষা ব্যাপকভাবে চালু করা হচ্ছে। সমসাময়িক বিশ্বে ক্যারিয়ার ভিত্তিক শিক্ষা অপরিহার্য। রাষ্ট্রকে অবশ্যই তরুণদের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, আকাক্সক্ষা এবং মতামতের যথাযথ মূল্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এগুলোই কি বাংলাদেশ নিয়ে মানবাধিকারের তথাকথিতদের রক্ষকদের গাত্রদাহ ও মায়াকান্নার কারণ হয়েছে ?
প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য অর্জনের জন্য চারটি মাইলফলক নির্ধারণ করেছেন। প্রথমটি ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প যা আশানুরূপ বাস্তবায়ন করা হয়েছে, দ্বিতীয়টি ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, তৃতীয়টি ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং চতুর্থটি ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান। সকল নাগরিককে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত (এসডিজি-১ দারিদ্র্য অবসান এবং এসডিজি-২, জিরো হাঙ্গার অর্জন) একটি উন্নত বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হবে। বাংলাদেশের সম্পদ সীমিত, ভূমির তুলনায় জনসংখ্যা বেশি। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উনয়নের রোল মডেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্র, বাক্ স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত আছেন এবং অত্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, জাতীয় ও উন্নয়ন সহযোগী, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই নিরলসভাবে কাজ করছেন। মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশের সাফল্য সর্বমহলে প্রশংসিত। মিয়ানমারে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের শরনার্থীদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। সরকারের উন্নয়নের সুফল দেশের তৃণমূল পর্যায়ের জনগণও উপভোগ করছে। মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে। স্বাধীনতার ৫২ বছরের মাথায় এসে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ৫২ বছরে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশ আবার ঘুরে দাঁড়ানোর জায়গায় এসেছে। ঘুরে দাঁড়ানোর এই অর্জন ১৭ কোটি মানুষের অদম্য পরিশ্রমের ফল।
শিক্ষায় উন্নতি, যোগাযোগের অবকাঠামো, নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ, সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুরক্ষার সোশ্যাল সেফটি নেট সাপোর্ট প্রদান, সর্বজনীন পেনশন স্কীম, স্বামী নিগৃহীত নারীদের সহযোগিতা, অটিজম, প্রধানমন্ত্রীর সরকারের প্রধান উদ্যোগসমূহ বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় বীর হিসাবে মর্যাদা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়ন বর্তমান সরকারেরই অবদান। একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে এটিই আশার কথা।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, যে কোনো চক্রান্তের কাছে বাংলাদেশের জনগণ মাথানত করবে না।যদি নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয় তিনি আবার ক্ষমতায় আসবেন। সব জনগণের ওপর আমরা সব ছেড়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে। গণতান্ত্রিক ধারাটা যেন ব্যাহত করতে না পারে। কোনো চক্রান্তের কাছে বাংলাদেশের জনগণ আর মাথানত করবে না।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা জানান, আওয়ামী লীগের আমলে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে- উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন। প্রতিটি নির্বাচন স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। এর থেকে শান্তিপূর্ণ কবে হয়েছে বাংলদেশে নির্বাচন? বা পৃথিবীর কোনো দেশে হয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক দেশে নির্বাচন তো এখনো তাদের বিরোধী দল নির্বাচন মানেইনি। এরকম তো ঘটনা আছে। তারপরও আমাদের নির্বাচন নিয়ে অনেক ছবক শুনতে হচ্ছে। আজকে যখন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আমরা করছি তখনই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা। এর অর্থটা কী? আজ দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন ?
আজকে দেখি নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিয়ে সবাই স্বোচ্চার। যে সব দেশ আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে আর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে তাদের কাছে প্রশ্ন করেন ১৯৭৫-এর পর থেকে বারবার যে নির্বাচনগুলো হয়েছিল সেই সময় তাদের এই চেতনাটা কোথায় ছিল? জানি না তাদের এই বিবেক কী নাড়া দেয়নি ?
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জনগণ আমাদের ভোট দেয়। তখনও নির্বাচন ঠেকাতে এই বিএনপি-জামায়াত মিলে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে, জ্বালাও-পোড়াও এবং ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়। অগ্নিসন্ত্রাসের যেন একটি মহোৎসব শুরু করে দিয়েছিল। জনগণ তা মেনে নেয়নি। তা অতিক্রম করে নির্বাচন হয় আমরা আবার সরকার গঠন করি। এরপর ২০১৮ সালে নির্বাচন হয়। তারা নির্বাচনে আসে। মনে হয়ছিল তারা নির্বাচনে এসেছে ওই নমিনেশন বাণিজ্য করার জন্য। বিএনপি বাণিজ্য করে ৩০০ সিটে ৭০০ নমিনেশন দেয় এবং তাদের মধ্যে গোলমাল হয়। এক সময় তারা নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবধিকার ও আগামী নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত যাতে ভোটাররা স্বাধীনভাবে তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজকে এক সঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে নির্বাচনের প্রতি মানুষে আস্থা তৈরি হয়। এগুলো নিয়ে সরকার অত্যন্ত নিবিড়ভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও সর্বজনস্বীকৃত। নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত স্বাধীনভাবে কাজ করছে।
গণতন্ত্র, বাক্স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সমুন্নত রেখেই কাজ করছে বাংলাদেশ। কিন্তু অনেকের দেশি-বিদেশি অনেকেরবিষয়ের গভীওে গিয়ে অহেতুক বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ না করে, পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ না কওে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সবার সহযোগিতা করা উচিত। কারো নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করা উচিত নয়।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক