কামাল সিদ্দিকী : বিপুল উৎসব মূখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে শারদীয় দূর্গা উৎসব, পুজা, অর্চণা। কিন্তু মা দৃুর্গার ১০টি হাত কেনো অনেকেই ভুলভাল বলে থাকেন। মিডিয়া কর্মিদেরও অনেকেই জানেন না মা দূর্গার প্রতিটি হাত একেকটি শক্তি।
বাঙালী সমাজে নারী’কে দশভূজা হিসেবে উল্লেখ্য করে প্রসংশাসহ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। দশ ভুজা কি? কেন এই দশভুজা এ নিয়েই আজকের লেখার সুত্রপাত করছি। অনেকেই দশভূজা সম্পর্কে না জেনেও ভুলভাল কথা বলে থাকেন বলে, বিভ্রান্ত হন অনেকেই।
শারদীয়া দূর্গা উৎসব_পুজা শুরু হয়েছে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায়। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার-অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতিটি বাঙালীর প্রাণে আজ উচ্ছ্বাস-আনন্দে মৌ মৌ করছে।
১৪ অক্টোবর-২০২৩ শনিবার শুভ মহালয়া এবং ২০ অক্টোবর-২০২৩ শুক্রবার শুভ ষষ্ঠি’র মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে সার্বজনীনন দূর্গা উৎসব শুরু হয়েছে সনাতন/ হিন্দু ধর্মালম্বী জনগোষ্ঠির মাঝে।
দেবী দুর্গার আরেক নাম দশভূজা। তাঁর দশ হাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র তিনি বহন করে আছেন। নানা অস্ত্রে সজ্জিতা দেবী অশুভকে সংহার করতে মর্ত্যে আসেন। মা দুর্গার হাতের এই অস্ত্রগুলি কী তাৎর্পয বহন করে? বা এই বিভিন্ন অস্ত্র দেবীর হাতে কে তুলে দিয়েছেন? মঙ্গলময়ী দেবী অশুভ বিনাশকারী হয়ে উঠলেন কী ভাবে? সংক্ষিপ্ত ভাবে সেটা জেনে নিন এবং দুর্গার দশ হাতের নানা অস্ত্রের ব্যাখ্যা কি?..।
চক্র : দেবীর হাতে বিভিন্ন অস্ত্রের সঙ্গে শোভা পায় চক্র। শ্রীবিষ্ণু মহিষাসুরকে বধ করার জন্য নিজের চক্র থেকে এই চক্রটি সৃষ্টি করে দুর্গাকে দান করেন। মায়ের হাতের এই অস্ত্র দৃঢ়তা এবং সংহতির প্রতীক। দেবী দুর্গার হাতে চক্র থাকার অর্থ, সমস্ত সৃষ্টির কেন্দ্রে অবস্থান করছেন দেবী।
ত্রিশূল :পার্বতীকে ত্রিশূল দান করেছিলেন স্বয়ং মহাদেব। কথিত আছে, ত্রিশূলের তিনটি ফলার আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা আছে। মানুষ তিনটি গুণ-সত্য, তমঃ, রজঃ -র প্রতীক ত্রিশূলের তিন ফলা। এই ত্রিশূল দিয়েই মহিষাসুরকে বধ করেন তিনি।
শঙ্খ : বরুণ দেব মহামায়াকে দিয়েছিলেন শঙ্খ। যার ধ্বনি মঙ্গলময়। শঙ্খের আওয়াজে স্বর্গ, মর্ত্য ও নরক জুড়ে থাকা সব অশুভ শক্তি ভীত ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
বজ্র : দেবীর হাতে বজ্র তুলে দিয়েছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র। নিজের বজ্রের থেকে আরও একটি বজ্র সৃষ্টি করে তা মহামায়াকে দেন তিনি। মা দুর্গার হাতের অশনি দৃঢ়তা এবং সংহতির প্রতীক। এই দুই গুণের মাধ্যমেই জীবনে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হন মানুষ।
গদা : যমরাজ দেবী দুর্গাকে দিয়েছিলেন গদা ৷ যা কালদণ্ড নামেও পরিচিত। এই অস্ত্র আনুগত্য, ভালবাসা এবং ভক্তির প্রতীক। সেই সঙ্গে শক্তিরও প্রতীক। দশভূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হল গদা।
তীর ধনুক : পবন দেব দুর্গাকে দেন তীর ধনুক। উভয়ই ইতিবাচক শক্তির প্রতীক। অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় এই তীর ধনুক ব্যবহার করেন ভবানী।
তলোয়ার : তলোয়ার হল মানুষের বুদ্ধির প্রতীক৷ যার জোরে সমস্ত বৈষম্য এবং অন্ধকারকে ভেদ করা যায়৷ বুদ্ধির ধারের প্রতীক এই তলোয়ার। এই ধার দিয়েই যাতে সমাজের সমস্ত বৈষম্য ও অশুভকে বিনাশ করা যায়, সেই বার্তাই বহন করেন মা দুর্গার হাতের খড়গ বা তলোয়ার।
ঘণ্টা : বিভিন্ন অস্ত্রের সঙ্গে দেবীর হাতে থাকে ঘণ্টা। পুরাণে কথিত আছে, দেবরাজ ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত দুর্গাকে এই ঘণ্টা দিয়েছিলেন। ঘণ্টা ধ্বনি অসুরদের তেজকে দুর্বল করে।
পদ্ম: দশভূজা দেবীর হাতে ব্রহ্মা তুলে দেন পদ্ম৷ পদ্ম জলপাঁকে জন্মালেও কলঙ্কহীন। দেবীর আশীর্বাদে অন্ধকার কেটে আলোর সঞ্চার করে পদ্ম। শুভশক্তির বার্তা নিয়ে আসে পদ্মফুল।
সাপ: শেষনাগ দেবী দুর্গাকে দিয়েছিলেন নাগপাশ৷ শুদ্ধ চেতনার প্রতীক হল এই সাপ। এই দশভুজা থেকে ????মা দূর্গা দূর্গতি নাশিনী ????হয়েছেন। ????জয় মা দূর্গা।????
লেখকের কথা: দশভুজা এক নারীর সন্ধান আমাকে মুগ্ধ করতো। তাঁকে উৎস্বর্গ করেই লেখাটি শেষ লেখা-এই পাতায়। ????মা ????সব সময় তাঁর মঙ্গল করো, ????ঈশ্বর???? জীবদ্দশা তাঁকে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধিতে রেখো, তুমিই পরম করুণাময়।????
বাঙালি হিন্দুদের প্রধান উৎসব হওয়ার কারণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্য ও বাংলাদেশের আনাচে কানাচে বিপুল উৎসাহ-উদীপনায় দুর্গাপূজা জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা হয়। সাধারণত ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় জমকালো ভাবে। এই পাঁচটি দিন হচ্ছে, দুর্গাষষ্ঠী, ‘মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও ‘বিজয়াদশমী। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া; এই দিন সনাতন/ হিন্দু ধর্মালম্বীরা তর্পণ করে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হলো কোজাগরী পূর্ণিমা। কোজাগরী পূর্ণিমার দিন দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। কোথাও কোথাও পনেরো দিন ধরে দুর্গাপূজা পালিত হয়।
(বি:দ্র; অনুগ্রহ পূর্বক কেউ লেখাটি কপি করবেন না, কপি রাইট আইন মেনে চলবেন বলে আশা রাখি-কামাল সিদ্দিকী।)