হীরেন পণ্ডিত: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে দাবি করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনে ৪১.৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। তিনি জানান, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে কিছুটা চ্যালেঞ্জ থাকে। সরকারের তরফ থেকে আন্তরিকতা ও সহযোগিতা পেয়েছি বলেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। শঙ্কা ছিল ভোটার উপস্থিতি আরও কম হবে। নির্বাচন বর্জন করে পরোক্ষভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু আমরা দেখেছি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে গিয়ে স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে মানুষ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কৌশলী নীতি সফল হয়েছে, এমন কথা বলা ভুল হবে না। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মধ্যে সারাদেশে গড়ে ৪১.৮ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে এ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রাখেনি। তা ছাড়া নির্বাচন নিয়ে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অভিমতও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরে। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী এবং বর্তমান সরকারের মন্ত্রীও নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে।
এটিও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রমাণ দেয়। ভোট দেওয়া নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে এর বিধান আছে। এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকারও। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মতপ্রকাশের অধিকাররূপে এটি গ্যারান্টিপ্রাপ্ত। মানবাধিকারও বটে। ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণায়ও এটি মানবাধিকার হিসেবে ঘোষিত।
অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি। দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ নির্বাচন চেয়েছে, ঠিক সে রকমই হয়েছে আমাদের জাতীয় নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিলো সরকারের পক্ষ থেকেও। সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করেছে সরকার। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পেরেছে।
একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই সবার প্রত্যাশায় ছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে একটি অভূতপূর্ব ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিসহ সব শক্তি একটি সুন্দর নির্বাচন বিজয়ের আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করেছে।
দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলেও যদি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়, তাহলে ভালো নির্বাচন হতে পারে। এবারের নির্বাচনে এটাই সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। ভোটারদের বাধা এবং ভোট বর্জনকারীদের নানা অপপ্রচারের পরেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গেছেন। মানুষ ভোট দিয়েছেন এবং শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। দুই একটি জায়গায় কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে এবং এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সতর্ক ছিল। আমাদের নির্বাচনের সংস্কৃতির মধ্যে একটি তুলনামূলকভাবে ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। দলীয় সরকারের অধীনেও নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন সরকারদলীয় এমপি প্রার্থী এবং সিটিং এমপির প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। এটার মধ্য দিয়ে একটি নজির স্থাপন করা হলো। অনেককে জেল ও জরিমানা করা হয়েছে।
নির্বাচনের দিন সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন থাকায় এমনিতেই মারামারি হওয়ার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। যারা সংঘর্ষ বাধাতে পারত তারা সশস্ত্র বাহিনীর সামনে এসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার সুযোগ পায়নি। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরাও কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করেনি বলে সারা দেশে নির্বাচন নিয়ে তেমন অপ্রীতিকর ঘটনা দেখা যায়নি।
সবকিছু মিলে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ হয়েছে। মানুষ খুব হাসি-খুশির সাথে ভোট দিতে পেরেছেন। এবার নির্বাচন কমিশন খুব সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করেছে। মানুষ কোনো হয়রানি বা ঝামেলা ছাড়া ভোট দিয়ে এসেছেন। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে এবং এই নির্বাচন সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য। নির্বাচনে ৪১.৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। নাশকতা এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম না থাকলে আরও বেশি ভোট পড়ত। নির্বাচন বর্জনকারীদের অপপ্রচারের ফলে মানুষের মধ্যে ভোটের দিন ঘিরে এক ধরনের ভীতি সৃষ্টি হয়েছিল। শুরুর দিকে ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের উপস্থিতি বেড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা নির্বাচন প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও প্রগতিশীল দলগুলোর বেশিরভাগ দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ছোটখাটো কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচনটি সুষ্ঠু হয়েছে, এ মতামত দেশবিদেশের পর্যবেক্ষকসহ আমাদের অনেক বন্ধু রাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। অনেক পর্যবেক্ষকই বলেছেন, তারা কেন্দ্রগুলো ঘুওে দেখেছেন এবং নির্বাচনী পরিবেশ ছিল ভালো। আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা দেখেছি বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনরত অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অনেক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অনিয়ম কিংবা অস্বচ্ছতার তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো কেন্দ্রে কিছু অনিয়মের বার্তা পাওয়ামাত্র নির্বাচন কমিশন তৎক্ষণাৎ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া ভোট শেষের ৩০ মিনিট পূর্বে একজন আওয়ামী লীগ মনোনীত একজন প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করে কমিশন। যা প্রথম যে কোনো নির্বচান কমিশনের জন্য। নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সকল স্বচ্ছতার মানদ-ে অনেকের ভাষায় অগ্নিপরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে।
দেশবিদেশের পর্যবেক্ষক এবং বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সরকারের পক্ষ থেকেও নির্বাচনে স্বচ্ছতার জন্য অভিনন্দন জানানো হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়ে নগ্নভাবে আগে থেকেই হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা চালায়। রাশিয়া, চীন, ভারতসহ অনেক দেশ তাদের এ অবস্থানের বিপরীতে গিয়ে বিষয়গুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানিয়ে দেয় এবং জানায় এ দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে এই স্পষ্ট বক্তব্য বারবার তারা উপস্থাপন করে।
দেশের জনগণই সহিংসতার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে এবং শান্তি ও প্রশ্নমুক্ত নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তৈরির ক্ষেত্রেও তাদেরই বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র জয়ী হয়েছে এ অভিমতও বিদেশি অনেক মহল থেকেই এসেছে। এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশের এখনও যে বৈরী অবস্থান পরিলক্ষিত হচ্ছে এর পেছনে নানা সমীকরণ থাকতে পারে, বিশ্লেষকদের এ অভিমত অমূলক নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন তিনি বাংলাদেশের জনগণের নিকট দায়বদ্ধ।
এই নির্বাচনকে যতই ‘এক তরফা নির্বাচন’, ‘তামাশার নির্বাচন’ ও ‘প্রহসনের নির্বাচন’ ইত্যাদি বলা হোক না কেন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এই নির্বাচন ছিল অপরিহার্য । সদিচ্ছা থাকলে দলীয় সরকারের অধীনেও একটা ভালো নির্বাচন করা যায়, তাই প্রমাণিত হলো দিন শেষে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ তিনবার অর্থাৎ টানা ১৫ বছর সরকার পরিচালনা করে চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে।
এবারের নির্বাচনে জাতীয় পর্যায়ের ২০০ জন এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদল ছিল প্রায় ৭০ জন। এসব দলে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা পরিচিত মুখ, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দক্ষ। ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রেও প্রেসিডেন্টের সাবেক উপসহকারী ও হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সাবেক চিফ অব স্টাফ আলেকজান্ডার বার্টন গ্রে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কংগ্রেসম্যান জিম বেটস, নিউ সাউথ ওয়েলস লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সাবেক সংসদ সদস্য শাওকেট মুসেলমানে, ওএসসিইর সার্টিফায়েড নির্বাচন পর্যবেক্ষক টেরি এল ইজলি, শ্রীলঙ্কার মুসলিম কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সৈয়দ আলী জহির, এশিয়া টাইমসের বিশেষ সংবাদদাতা জাভিয়ের পিয়েড্রা, মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশনের সাবেক সহসভাপতি আমজাদ মোস্তফাসহ আরো কয়েকটি দেশের পর্যবেক্ষক।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরদিন তাঁরা জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠান করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকারের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক, যা বিশ্বের অন্য দেশে খুব কম পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভোট দেওয়ার আগ্রহ ও উৎসাহের বিষয়টিকে তাঁরা খুব উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে করছেন।
অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক মানদ-ের বিচারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সমালোচনা করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে এই বাস্তবতাকে আমলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ হলো, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে ঢাকার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নীতি অপরিহার্যভাবে অব্যাহত থাকবে। তবে এর পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারি আরো জোরালো করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ এবং গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য তাদের আকাক্সক্ষাকে সমর্থন করে। ‘সামনের দিনগুলোতে, একটি উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নিতে, বাংলাদেশে মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজের সমর্থনে, জনগণের সঙ্গে জনগণের এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো গভীর করতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিতে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ।’ লন্ডনে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে যুক্তরাজ্য অবগত আছে।’
নতুন সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে আইন অনুযায়ী বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে চীন। আবারও প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ও প্রিমিয়ার লি ছিয়াং। কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় অগ্রাধিকারগুলো পূরণের লক্ষ্যে কমনওয়েলথ বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারির জন্য প্রস্তুত।’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাপান। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতীয় নির্বাচনে তাঁর দলের নিরঙ্কুশ জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে এবং তাঁর সরকারের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
শক্তি প্রয়োগ কি কখনো গণতন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ? আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, আমরা সব সময় মুখে গণতন্ত্র চর্চা করি কিন্তু কার্যত আমরা শক্তি নির্ভরশীল। এটা যতদিন চলতে থাকবে, যতদিন আমরা গণতন্ত্রকে একটি জীবনবোধ এবং মূল্যবোধ হিসেবে গণনা করতে না পারব ততদিন এই সংকট চলতে থাকবে।
এবারের নির্বাচনে জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, আমাদের অনেক স্বতন্ত্রও নির্বাচিত হয়েছে এবং অন্য দলগুলো থেকেও নির্বাচিত হয়েছে, দেশের মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি উল্লেখ করেন, এ বিজয় আমার বিজয় নয়, আমি মনে করি এটি জনগণের বিজয়। কারণ এখানে জনগণের যে অধিকারটা আছে, সরকার গঠন করার ক্ষমতা তাদের হাতে, যেটি আমার দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, জনগণের ভোটের অধিকার, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে, বিদেশী পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
আওয়ামী লীগের এবারের লক্ষ্য দেশকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণ ঘটানো। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তি সক্ষমতা একান্ত প্রয়োজন। এজন্য ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’-এই চারটি স্তরের সমন্বয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজের কথা উল্লেখ করা হয়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়েছে।
কোনকিছুতেই ছাড় দেয়া হয়নি এটি বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য একটি উল্লেযোগ্য ঘটনা হতে পারে। দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে নিজেদের প্রতিনিধি বাছাই করার জন্য অপেক্ষা করেছে। বিদেশীরা অতি উৎসাহী হয়ে বসে আছে আমাদের নির্বাচন দেখার জন্য। সবার জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। আশা করা যায় এই অগ্নিপরীক্ষায় সবাই পাশ করেছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে। নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন, শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয়েছে। কেননা নির্বাচন পরিচালনার সব দায়িত্বই নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যাস্ত।
গণতন্ত্র মানে আত্মমর্যাদা, ন্যায়বিচার, সুশাসন, মানবিক উন্নয়ন অর্থাৎ একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেকেই শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে ছিলো। নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা, অস্থিরতা বা রাজনৈতিক টানাপড়েন সব সময় থাকে।
জনগণ সবসময় শঙ্কামুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। এ চাওয়া জনগণের মৌলিক অধিকার। এ অধিকারের প্রাপ্তি থেকে জনগণ হোঁচট খেতে চায় না। জনগণের একটি বড় অংশ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আর সাধারণ মানুষকে সুখী করাটাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব। ভোটাররা যেন নিরাপদে কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেন, তারা যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন সেজন্য প্রথমেই প্রয়োজন নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিলো এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী ছিলো। এবারের নির্বাচন জাতির সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রশংসনীয় নির্বাচন করা সম্ভব তা প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে।
হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক