মুক্তিযোদ্ধারা কোন বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য না গোটা জাতিকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে থাকেন। মন্তব্যকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কয়েকটি কথা বলতে চাই।
১। যে সকল যুবক ছেলেরা, সেনা বাহিনী সদস্য, পুলিশ বাহিনীর সদস্য, ই পি আর আনছার বাহিনী মুক্তি যুদ্ধে গিয়েছিল তাদের বয়স তখন ১৫ থেকে আরো বেশ ছিল। তারা সবাই ছিল যুবক। একই বয়সের আরো অনেক যুবক ছিল কিন্তু তারা তো মুক্তিযুদ্ধে যায়নি। কেন যায়নি সেটা তারাই ভাল বলতে পারবে।
২। যারা যুদ্ধ করেছে জীবনকে বাজি রেখে মুক্তি যুদ্ধ করেছে।কোন কিছুর বিনিময়ে নয় শুধু দেশপ্রেমে উদবুদ্ধ হয়েই গিয়েছিল। এদের সাথে কারো তুলনা হয় না।
৩। মুক্তিযোদ্ধারা কি কখনো ভেবেছিল যে তারা যুদ্ধ শেষে জীবিত অবস্থায় ফিরে আসবে। তাদের সাথেকার অনেকে তো মারা গেছে তারা কি পেয়েছে। ওদের সাথে কারো তুলনা হয়না। তারা বাংলাদেশের সকল মানুষের গৌরব। তারা যে মহত ও বীরত্বের কাজটি করেছে তা অতুলনীয়। সুতরাং মুক্তিযোদ্ধারা নিঃসন্দেহে জাতীয় বীর ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান।
৪। তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে যুদ্ধে যায়নি। দেশের দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষের জন্যই তারা যুদ্ধ করেছে। কাজেই মুক্তিযোদ্ধারা নিসন্দেহে দেশের সকল মানুষের পরম শ্রোদ্ধার পাত্র। তারা কোন ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর নয় বা হতে পারে না। তাই গোটা জাতি তাদের কাছে চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে এটাই বাস্তব।
৫। যুদ্ধে৷ গিয়েছিল বাংগালী জাতির প্রাণপ্রিয় নেতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করে দেশ স্বাধীন করার জন্য। এর পিছনে কোন লোভ লালসা কিছুই ছিল না। সম্পুর্ন নিঃস্বার্থে বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়ে অকুতোভয়,দুঃসাহসিক মুক্তিপাগল ছেলেরা অনেক কষ্ট স্বীকার করে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেছে। কেউ বেঁচে আছে কেউবা মারা গেছে। একটা বিষয় বিশেষ ভাবে লক্ষনীয় গরীব,সাহসী ছন্নছাড়া দুরন্ত ছেলেরাই মুক্তি যুদ্ধ করেছে ধনীর আদরের দুলালেরা যায় নাই বললেই চলে।
৬। দেশ স্বাধীন এর পর বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরবর্তীতে তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাবে সম্মানিত করেছেন এবং করছেন। বংগবন্ধু গরীব, পংগু ও দুস্থ মুক্তি যুদ্ধআদের কল্যানের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাস্ট গঠন করেন এবং বিশেষ অবদানের ভিওিতে বীর উত্তম, বীর বিক্রম,বীর শ্রেষঠ, বীর প্রতিক ইত্যাদি নানা পদবী প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান, চিকিৎসার ব্যবস্থা, চাকুরির ক্ষেত্রে কোঠা চালু,গরীব মুক্তিযুদ্ধাদের আবাসনের ব্যবস্থা সহ আরও সুযোগ সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছেন। মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার দিয়ে কবরোস্থ করার ব্যবস্থা করেছেন এবং আরও বিভিন্ন ভাবে জাতীয় উদ্যোগে সম্মান প্রদানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
৭। গভীর দুখের সংগে লক্ষ্য করা যাচ্ছে আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক অকৃতজ্ঞ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ সুবিধা প্রদানের বিষয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করেন ও সমালোচনা করেন। তারা কিন্তু একবারও ভাবেন না মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের কথা। কি দিয়েছেন তাদেরকে যারা অকাতরে নিরদ্বিধায় জীবন দিয়েছে আজ যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে মাথা উচু করে গর্বিত জাতি হিসেবে বসবাস করছি ? সুতরাং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমাদের দলমত নিরবিশেষে কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন ও সম্মান প্রদান এর মানসিকতা থাকতেই হবে।
।।। মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের সেলুট জানাই।।।