হীরেন পণ্ডিত : স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩ বছরে এমনটা কখনোই দেখেনি বাঙালি জাতি। এ যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত এক বংলাদেশ। কোটার যৌক্তিক সংস্কার সবাই চেয়েছিলো। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ভিন্ন কৌশলের অবলম্বন হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বঞ্চনার ক্ষোভ সঞ্চারিত করে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের চাকরি সব নিয়ে নিচ্ছে, এই সরল হিসাবে তাদের সংক্ষুব্ধ করে তোলে।
১৯৭৫-এর পর ২১ বছর বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত ছিল। কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের জন্য কোটাব্যবস্থা প্রচলন করে। তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে কোটার বিরুদ্ধে মাঠে নামায় স্বাধীনতার অপশক্তি।
মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবনের সবকিছু উজাড় করে দিয়ে করে দেশের জন্য লড়েছেন, শহীদ হয়েছেন। যখন যুদ্ধ করেছেন, তখন নিশ্চয়ই তারা ভাবেননি, তাদের সন্তানরা কোটায় চাকরি পাবে। তবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, তাদের রক্তে আজকে স্বাধীন দেশে বসে কোটা নিয়ে আন্দোলন করছেন। দেশ স্বাধীন না হলে এই শিক্ষার্থীদের পূর্ব পাকিস্তানের কোটার জন্য আন্দোলন করতে হতো। তাই এ দেশটার ওপর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি একটু বেশিই থাকবে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের অনেকেই ছিলেন কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, গ্রামের সাধারণ মানুষ। তাদের কোন চাওয়া-পাওয়া ছিলোনা।
পাক হানাদার বাহিনীর অগ্নিসংযোগে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। অনেক বাঙালি গণহত্যার শিকার হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সংকল্প দৃঢ় করতে, দেশ-বিদেশে জনমত তৈরিতে এদের অবদান কম নয়। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষও নিঃসন্দেহে মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের পথ দেখিয়েছেন, পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারদের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর ১০ জুলাই এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা দিয়েছিলো আপিল বিভাগ। তবে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। আন্দোলনকারীরা বলেছে, এ দাবি নির্বাহী বিভাগ থেকে যতক্ষণ না পূরণ করা হবে ততক্ষণ তারা রাজপথে থাকবে। ১৪ ও ১৫ জুলাই থেকে আন্দোলন সহিংস রূপ ধারণ করে। তবে ধ্বংসাত্মক আকার ধারণ করে ১৭ জুলাই থেকে। পুলিশ, আনসার, ছাত্র, পথচারীসহ বিভিন্ন পেশার শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়। যে কোন মৃত্যুই কষ্টের, এমনও দেখা গেছে, মৃত ব্যক্তি পরিবারের একমাত্র উপার্জক্ষম।
দুর্বৃত্তদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মূল লক্ষ্য ছিলো সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সেইসব প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা যেগুলো বিশ্বের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে এবং দেশের মানুষ এগলো নিয়ে গর্ব করছে। ধ্বংস করা হয়েছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, মহাখালী এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা যে গুলো পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে সময় লাগবে। মেট্রোরেল এর কাজীপাড়া, মিরপুর ১০ স্টেশন ও দিয়া বাড়ি স্টেশন যেগুলো সচল করতে কমপক্ষে একবছর লাগবে এসমস্ত এলাকার জনগণ যে যানজটের কবল থেকে মুক্ত পেয়েছিলেন তাদের আবারো অনিশ্চয়তা দেখা দিলো। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে হামলা ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ।
সহিংসতায় বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় চালানো হয় নারকীয় হামলা। সেতু ভবন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অগ্নিসংযোগে পুড়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। এ ছাড়া ডেটা সেন্টারে অগ্নিসংযোগের ফলে ইন্টারনেট সেবা ও রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে হামলায় সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। দুর্বৃত্তদের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় মেট্রোরেলের তিনটি স্টেশন। টিকিট ভেন্ডিং মেশিন (টিভিএম), মনিটরসহ বিভিন্ন নির্দেশক বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে অকেজো হয়ে পড়েছে টিভিএম মেশিন। এ ছাড়া যাত্রীসেবা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত কম্পিউটার চুরি করে নিয়ে যায় হামলাকরীরা।
হামলার ফলে এই স্টেশন দু’টি যাত্রীসেবার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব এখনো জানা যায়নি। তবে এই দুটি স্টেশন পুনরায় চালু করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে ভস্মিভূত হয়েছে পুরো সেতু ভবন। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে অন্তত ৫৫টি গাড়ি। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। তবে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো জানা যায়নি। এই ঘটনার তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সেতু মন্ত্রণালয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে ৫৩ টি গাড়ি, ৩২ টি মোটর সাইকেল, সার্ভারসহ পুরো ভবন জ¦ালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অধিদপ্তরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ফলে অধিদপ্তরটির গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে। রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই হয়েছে মোটরসাইকেল, গাড়িসহ প্রডাকশন সেট। বিটিভির সমস্ত আর্কাইভ ২৭টি গাড়ি ৩০ টি মোটর সাইকেলসহ পুরো ভবন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কমিটি গঠন করা হয়েছে এখনো তা নিরূপণ সম্ভব হয়নি। মহাখালী ডাটা সেন্টার, চট্টগ্রাম থেকে আসা অপটিক্যাল ফাইবার, ইন্টারনেটের অন্যতম প্রধান উৎস, মহাখালী ডেটা সেন্টারে আগ্নিসংযোগের ফলে ৫দিন ইন্টারনেট সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো সারা দেশ।
মিরপুরের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ঢাকা বিভাগীয় পরিচালকের গাড়ি, কার্যালয় ও একটি বাস পুড়ে যায়। এ ছাড়াও চলমান আন্দোলনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মহাখালী টোল প্লাজা, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর বনশ্রী কার্যালয়, ধানমন্ডির ওষুধ প্রশাসন ভবনে অগ্নিসংযোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
হামলাকারীদের টার্গেটে ছিল পুলিশ ও সাংবাদিক। হামলাকারীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢুকে যায়। এরপর সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে টার্গেট করে হামলা চালাতে থাকে। আর এসব হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটানোর জন্যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। আর এই অর্থগুলো আসে বিভিন্ন দেশ ও ব্যক্তির কাছ থেকে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এগুলো বের করার জন্য কাজ করছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মিরপুর অফিসের ময়লার গাড়িসহ ২৩ টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে যার ক্ষক্ষতির পরিমাণ ২০৫ কোটি টাকার বেশি। বিজিএমইএ ভবনও রেহাই পায়নি। ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো কার্যালয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা এক হাজার কোটি টাকার বেশি। ঢাকার আরো বিভিন্ন এলাকায় ও সারাদেশে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে তার পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা না গেলেও এর পরিমাণ আনুমানিক ৫০ হাজার কোটি টাকার চেয়ে বেশি হবে।
পরিকল্পিতভাবে ঢাকার ২০টি পয়েন্ট যেমন যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়া, ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ে, পল্টন, বিজয়নগর, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, ডেমরা ঢাকা হাইওয়ে সিলেট যাবার পথ, যমুনা সেতু পার হয়ে উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন জনপদে যাবার রাস্তা, ধানমন্ডি ১৯, ধানমন্ডি ২৭, জিগাতলা, ধানমন্ডি ১৫, শংকর, রায়ের বাজারের রাস্তা, ফার্মগেট, রায়েরবাগ, কাজীপাড়া, মিরপুর ১০, মোহাম্মদপুর, বসিলা, গুলিস্তান, রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী, উত্তরা, আজমপুরসহ আরো বেশ কিছু জায়গায় সরকারী অফিস অবকাঠামোসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
ঢাকার বাইরেও সরকারী স্থাপনাগুলোই ছিলো মূল লক্ষ্য। ঢাকার বাইরে কয়েকটি জেলাকেও টার্গেট হিসেবে নেয় দুর্বৃত্তরা এর মধ্যে রয়েছে গাজীপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকা জেলার সাভার, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, মাদারীপুর, বগুড়া, রংপুর ও কিশোরগঞ্জ। নরসিংদী জেলা কারাগার ভেঙ্গে ৯ জন জঙ্গীসহ ৮২৬ জন কয়েদিকে অস্ত্র, গুলি, টাকা পয়সা লুট করে পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দিয়েছে। দুর্বৃত্তরা ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা, শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন অবকাঠামোতে এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে এগুলো ঠিক করে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা কঠিন হবে এবং অনেক সময় লাগতে পারে। পুরো বাংলাদেশে আক্রমণ চালানো হয়, এমন কোন জেলা নেই যেখানে কোন ক্ষয়ক্ষতি নেই।
চলমান সহিংসতা থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ১৯ জুলাই কারফিউ ঘোষণা করে সেনাবাহিনী নামাতে বাধ্য হয় সরকার। সেনাবাহিনী বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে। ‘চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে যে ছকে নাশকতা হয়েছে, কারা করেছে, সবার কাছে তা পরিস্কার যারা দেশের উন্নয়ন চায়না, দেশের অগ্রযাত্রা চায়না তারাই কোটাবিরোধী আন্দোলনের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে, জানমালের ক্ষতি করেছে, মায়ের বুক খালি করেছে, তারা দেশের শত্রু। এদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এটি বলেছেন পুলিশের আইজিপি’।
সেনাবাহিনী প্রধান ধ্বংসযজ্ঞের কিছু স্থান পরিদর্শন করে উল্লেখ করেন, ‘দেশের সম্পদ, জনগণের সম্পদ ও রাষ্ট্রের সম্পদের এই নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ কোন দেশপ্রেমিকের পক্ষে সম্ভব নয়’ । প্রধানমন্ত্রীও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার করেছেন তিনি বলেন, ‘সরকারের অবস্থানও কঠোর এ বিষয়ে, ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যারা এই নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তবে নৈরাজ্যকারীরা দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টের জন্য দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে, তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে’ ।
বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশবিরোধী তৎপরতা ও ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টা থামছে না কিছুতেই। ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেট এমনকি বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেলেও বাংলাদেশকে ঘিরে নানা মিথ্যা, বানোয়াট, ভুয়া, অসত্য খবর তথা গুজব ছড়ানো হচ্ছে নানা সময়ে নানা উপায়ে। ।
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে টানা কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে অনেক। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সারাদেশে জারি করেছে কারফিউ জারি করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। এরপরই দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অবদান ও আত্মত্যাগ অপরিসীম।
দেশের যে কোনো জরুরি সেবায় সর্বপ্রথম এগিয়ে আসে সেনাবাহিনী। জনগণের উচিত তাদের কর্তব্যকাজ সুষ্ঠভাবে সম্পাদনে সহায়তা করা। রাষ্ট্রের যে কোনো প্রয়োজনে জনগণের স্বার্থেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দেশের দুর্যোগ, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস বা মহামারিতে সেনা সদস্যদের ভূমিকা বরাবরই অগ্রগামী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের নিষ্ঠা ও কাজের মাধ্যমে সমুজ্জ্বল হয়েছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি।
মনে পড়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন এবং সফলভাবে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য খাতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেন ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তনের পর। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে দেখলেন সড়ক ও রেলপথ বিচ্ছিন্ন, নৌ ও সমুদ্রবন্দরগুলো বিধ্বস্ত, স্কুল-কলেজগুলো ছিল পরিত্যক্ত। হানাদার বাহিনী পরাজয় নিশ্চিত জেনে সম্ভাব্য সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে পরিবহন ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণভাবেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর অর্থনীতি খাদ্যশস্য, শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল, কৃষিজাত দ্রব্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানি ও বিতরণ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে পুনর্গঠন কাজকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা, নৌপরিবহন এবং অন্যান্য ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নেন এবং বেসামরিক বিমান চলাচলের ওপর গুরুত্ব দেন। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছিলো। দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রান্সমিশন ও বিতরণ লাইন নির্মাণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করা হয়।
সেই দিনগুলোকেই মনে করিয়ে দিয়েছে এই নারকীয় হামলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে রোধ করার জন্যই এই হামলা। তবে হামলাকারীরা জানে না বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত কন্যা শেখ হাসিনা চরম দুঃসময়ে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে হাল ধরেছিলেন। গণতন্ত্রের সংগ্রামে দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন। বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন।
আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় দল হিসেবে ২১ বছর পর ক্ষমতায় ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এনেছেন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য নিরলস কাজ করছেন। তিনি আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের যে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির পাশাপাশি সকল রকম শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়, অবিচার, জুলুমের বিরুদ্ধে সবসময় রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার, প্রতিবাদী ভূমিকা রেখে এসেছে এবং এখনো রাখছেন।
এই নারকীয় হামলার ক্ষতি কাটিয়ে তিনিই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তিনি নিশ্চয়ই এই দেশকে এই দুঃসময়ে দুঃসাহসিক নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তা প্রধানমন্ত্রী কঠোর পরিশ্রম ও মেধা-মনন দিয়ে বাস্তবায়িত করে যাচ্ছেন এক নাগাড়ে তাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবেনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পারবেন এই দুর্যোগ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।
হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো