কেউ ই আইনের উর্ধে নয় ও হতে পারে না। মানসম্মত বিচার ব্যবস্থা একটি দেশের নাগরিকদের মানবাধিকার ও অন্যান্য অধিকারের রক্ষাকবচ এবং সে দেশটি সম্পর্কে বিশ্বের অপরাপর দেশ উচ্চ ধারণা পোষণ করে। মিডিয়ার খবরে প্রকাশ ঢাকার মেট্টোঃ ম্যাজিঃ আদালত ২ এর ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোঃ আসাদুজ্জামান নুর ইং ২২/১২/২০২০ তারিখে উক্ত আদালতে মামলা পরিচালনা কারী বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব রুবেল আহমেদ ভুঁইয়া কে পুলিশকে আটকের আদেশ দিয়া ২ঘন্টা আটকে রাখেন। বিষয়টি দুঃখজনক, আইন বিরোধী এবং ভয়াবহ। যিনি আইনের বিচার করেন তিনি যদি বেআইনিভাবে আদালতে কোন কোর্ট অফিসারকে আটক করে রাখেন তাহলে বিচারপ্রার্থী মানুষের কি অবস্থা চিন্তাই করা যায় না।
কোন বিজ্ঞ আইনজীবী যদি আদালতে অবমাননাকর কোন কাজ করেন বা বক্তব্য দেন তাহলে তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ বিচারক আইন অবমাননার মামলা করে বিচারান্তে শাস্তি দিতে পারেন। কিন্তু কোন মামলা না করে পুলিশকে আদেশ দিয়ে আটক করা আইনের চরম ব্যতয় এবং তা একটি অপরাধ। বিজ্ঞ আদালতে আইনজীবী বা বিচারক সকলেই আইন দ্বারা পরিচালিত। কারোরেই আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিনা মামলায় কোন ব্যক্তিকে পুলিশ দ্বারা আটক করে রাখা আইনের বিধান নয় সেটা হলো ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রীতি মতো শাস্তি যোগ্য অপরাধ ।
আইনের দৃষ্টিতে আইনজীবীগন ও বিচারকগন উভয়ই কোর্টের অফিসার আর বিচারক হলো প্রিজাইডিং অফিসার। কাজেই বিচারক এর চাইতে আইন জীবীর সম্মান ও মর্যাদা কোন অংশে কম তা চিন্তা করা নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। সুতরাং আইনজীবীকে এটুকু সম্মান প্রদান করার যোগ্যতা ও বোধ শক্তি না থাকলে তার বিচারকের আসনে বসা উচিৎ নয় ও তা কাম্য নয়। রাগ,বিদ্বেষ,আবেগ, প্রতিহিংসা, নেতিবাচক দৃষ্টিভংগী নিয়ে বিচার কার্য করা যাবে না এবং উচিত ও নয়।
আসলে মুল সমস্যা হলো বিচারক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে। বর্তমানে বিচারক নিয়োগের সময় বিচারকের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সঠিকভাবে বিবেচনা না করে বিচারক নিয়োগ দেওয়ার কারণে বিচারকের আচার আচরণ ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেক বিচারকের মন মানসিকতা মানসম্মত না হওয়ায় ও বিচার কার্যে যোগ্যতার অভাবের কারণে গোটা বিচার বিভাগ নিয়ে দেশের বিচার প্রার্থী নাগরিকগন প্রতি নিয়ত হতাশা ব্যক্ত করছেন। বিচার করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র কাজ এবং আদালত মানুষের সকল আশা ও ভরসার জায়গা। যিনি আইনের বিচার করেন তিনি যদি বেআইনিভাবে আদালতের কোন কোর্ট অফিসারকে আটক করে রাখেন তাহলে বিচারপ্রার্থী মানুষের কি অবস্থা চিন্তাই করা যায় না।
বিজ্ঞ আদালতে আইন জীবী বা বিচারক সকলেই আইন দ্বারা পরিচালিত। কারোরেই আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিনা মামলায় কোন ব্যক্তিকে পুলিশ দ্বারা আটক করে রাখা বিচারকের কাজ নয় ও তা আইনের বিধানও নয়। আইনের দৃষ্টিতে আইন জীবীগন কোর্টের অফিসার ও বিচারক হলো প্রিজাইডিং অফিসার। এটুকু সম্মান প্রদান করার যোগ্যতা না থাকলে তার বিচারকের আসনে বসা উচিৎ নয় ও তা কোন ভাবেই কাম্যও নয়।যে বিচারক আইন জীবী কে সম্মান দিতে পারে না তিনি সাধারণ নাগরিকদের কি সম্মান দিবেন প্রশ্ন রয়ে যায়।
বর্তমানে নিয়োগের সময় বিচারকের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সঠিকভাবে বিবেচনা না করে তড়িঘড়ি করে বিচারক নিয়োগ দেওয়ায় কিছু কিছু বিচারকের আচার আচরণ মান সম্মত না হওয়ায় বিচার কার্যে তাদের যোগ্যতার অভাব দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে বিচারক নিয়োগ ও বিচারিক কাজকর্ম যে অবস্থায় চলছে এমনি ভাবে চলতে থাকলে দেশ দ্রুতই নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হবে এবং মানুষ সুবিচার থেকে বঞ্চিত হবে। কাজেই নিয়োগ কালে আচার আচরণ, পারিবারিক শিক্ষা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সব কিছু পুংখানুপুংখ ভাবে দেখে বিবেচনা করে মান সম্মত বিচারক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।বিচারকের পদ অন্য যে কোন পদের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
তাই বিচারক নিয়োগে সচেতন নাহলে এইরূপ দুঃখজনক ঘটনা ঘটতেই থাকবে। যেটা কারোরই কাম্য নয়। এই বিষয়ে দেশের সকল সচেতন নাগরিক, বিচার প্রার্থী জনগন ও বিজ্ঞ আইন জীবীগন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা,বিচারঙ্গন পবিত্র রাখা, জনগণের আইনসম্মত সকল অধিকার প্রতিষ্ঠা ,আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রদানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলে দেশের সকল সচেতন নাগরিক আশা করে ।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধ, আইনজীবী- বগুড়া জজ কোর্ট ও অধক্ষ্য-বগুড়া আইন কলেজ ।