বঙ্গবন্ধুর দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা এর সংজ্ঞা পরিবর্তন করে নুতন সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে । বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদ

বঙ্গবন্ধুর দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা এর সংজ্ঞা পরিবর্তন করে নুতন সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

।।। পর্ব–২।।।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু অনেক গঠনমূলক কাজ করেছেন তন্মধ্যে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা কারা তাদের সংজ্ঞাও দিয়ে গেছেন। অতি পরিতাপের বিষয় আমরা বঙ্গবন্ধুর দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা এর ঐতিহাসিক সেই সংজ্ঞা না মেনে ও তা উপেক্ষা করে নুতন সংজ্ঞা দিচ্ছি। আর তা দিচ্ছি আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দাবিদার।

BANGLADESH(FREEDOM FIGHTERS) WELFARE FOUNDATION ORDER,1972
এর উপধারা ( h) এ “শহীদ “এর নিম্নরূপ একটি সংজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে।

” Shaheed” means a person who suffered death while engaged in the war of Liberation. অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত থাকাবস্থায় যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করেছেন তিনি শহীদ।
অপ্রিয় হলেও সত্য বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত সংজ্ঞা আর মানা হচ্ছে না। বাতিলও করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে নাই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্য কোন কারণে যারা মৃত্যু বরণ করেছে তাদেরকেও শহীদ বলা হচ্ছে। কি অদ্ভুত ব্যাপার ! জাতির পিতার প্রদত্ত সুচিন্তিত মুক্তিযোদ্ধার ও শহীদ এর ঐতিহাসিক সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হলো। সকলের জিজ্ঞাসা কেন এবং কার স্বার্থে এই পরিবর্তন করা হলো?

।। তাতে ফলাফল যা হলো।।

১। বঙ্গবন্ধু কতৃক প্রদত্ত ” মুক্তিযোদ্ধা ” ও “শহীদ”এর ঐতিহাসিক সংজ্ঞা উপেক্ষা করা হলো।

২। বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত সংজ্ঞা এর বাইরে অনেককে মুক্তিযোদ্ধা বলে গন্য করা হলো। প্রকৃত পক্ষে তারা কেহই বঙ্গবন্ধুর দেওয়া মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পড়ে না।

৩। সশস্ত্র বাহিনী,পুলিশ, ইপিআর ও আনসার বাহিনী এর সদস্যগন বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সংজ্ঞা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধা এর আওতায় পড়েন না। তারা সকলেই বেতন ভোগী ছিলেন। নুতন প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী তারাও মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ভুক্ত হবেন।

৪। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে অসম্ভব জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা নয় এমন ব্যক্তিদের নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে ও তালিকা ভারী করা হয়েছে।

৫। মুক্তিযোদ্ধা দের ইতিহাস সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। জাতি রীতিমতো হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়েছে।

৬। মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে ভবিষ্যত প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হবে।

৭। নতুনভাবে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা প্রদানের ফলে কিছু সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী,কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সুযোগ সন্ধানী কিছু ব্যক্তি সুযোগ নিয়ে ভূঁয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং সরকার কতৃক প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দেওয়া সকল সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিয়েছে ও নিচ্ছে। বয়স এর বিষয়টি তাদেরকে আরও অনুপ্রাণিত

” বাংলাদেশী বিশিষ্ট নাগরিক যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং যারা বিশ্ব জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন,মুজিব নগর সরকারের কর্মকর্তা কর্ম চারী, মুজিবনগর সরকারের সাথে সম্পৃক্ত ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী এম,এন,এ গন,হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী কতৃক নির্যাতিত নারী বীরাঙ্গনা,স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়, সাংবাদিক,আহত মুক্তিযোদ্ধার সেবাপ্রদান কারী টীমের ডাক্তার দেরকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হলো।”
কিন্তু তারা কেহই অস্ত্র হাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করেননি এবং তাদের জীবন নাশের কোন ঝুঁকি ছিল না। আর যাই হোক তারা রণাঙ্গনে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করা যোদ্ধা নন। বঙ্গবন্ধু সঠিকভাবেই তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করেন নাই।
তবে এনারা সবাই অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তি কোন সন্দেহ নাই এবং তাদের অবদান ও অস্বীকার করার কোন সুযোগ নাই । কিন্তু যেহেতু তারা কেহই অস্ত্র হাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করেননি এবং তাদের জীবন নাশের কোন ঝুঁকি ছিল না সুতরাং বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী তারা মুল মুক্তিযোদ্ধা নন। তারা মুক্তিযুদ্ধের সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করেছেন। অনেকেই বেতনভুক্ত ছিলেন। তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সহায়কের ভূমিকা পালন করার করণে অবশ্যই সম্মানিত করতে হবে তবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নয়। অন্য কোন নামে করা যেতে পারে।
সশস্ত্র বাহিনী,পুলিশ, ইপিআর ও আনসার বাহিনী এর সদস্য বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সংজ্ঞা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধা এর আওতাভূক্ত নন। তারা সকলেই বেতন ভুক্তভোগী ছিলেন।কিন্তু তাদের ভূমিকাও নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রসংশা দাবী রাখে। তাদেরকে অন্য কোন ভাবে সম্মানিত করা যেতে পারে। তবে তা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নয়।

।। সময় এসেছে।।
বঙ্গবন্ধুর কতৃক প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধা দের ঐতিহাসিক সংজ্ঞা এর প্রতি শ্রোদ্ধা রেখে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সকল বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে সেই সংজ্ঞা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধা নির্দ্ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধা দাবীদার ভূয়া ব্যক্তিদের যাচাই বাছাই এর মাধ্যমে বাদ দিয়ে আসল মুক্তিযোদ্ধা তালিকা জাতিকে উপহার দেওয়ার জন্য সকল মুক্তিযোদ্ধার অভিভাবক বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তি যুদ্ধ বিসয়ক মন্ত্রী জনাব আ ক ম মোজাম্মেল হক সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সকল কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু
৷।। বাংলাদেশ চিরজীবী হউক।।।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী ও কলাম লেখক

বঙ্গবন্ধুর দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা এর সংজ্ঞাবীর মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদ
Comments (0)
Add Comment