আমার বোকামি : গত ২৯ মে যখন আমি র্যাব-৯ এর করোনা রেসপন্স টিমের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি, অনেক বন্ধু- সহকর্মীই বলেছিলেন আমি নাকি বোকা। মাথায় বিন্দুমাত্র বুদ্ধিশুদ্ধি থাকলে নাকি আমি এই সাক্ষাৎ মৃত্যুপুরিতে দিনরাত কাজ করতে রাজি হতাম না। করোনা রোগীর বাবামা, ভাইবোন, স্ত্রী পর্যন্ত যেখানে পারতপক্ষে তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে চান, সেখানে আমি কোন সাহসে এই বিপুল সংখ্যক করোনা রোগীর দেখাশোনা, চিকিৎসা, থাকা-খাওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি!!! আরো তো হাজার হাজার র্যাব,পুলিশ, আর্মিসহ বিভিন্ন বাহিনীর অফিসার, কনস্টবল, সৈনিকেরা আছেন, তারা থাকতে কেন আমি!! করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে একটু নিরাপদ রাখতে মানুষের কতো জানপ্রাণ চেষ্টা, কতো সাবধানতা, সতর্কতা, সেখানে কেন জেনেশুনে নিজের জীবনকে এভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছি আমি!!
আমি তাদের প্রত্যেককে শুধু একটা উত্তরই দিয়েছি- ভাই, সত্যিই আমি বোকা। সত্যিই আমার মাথাভর্তি গোবর ছাড়া অন্য কিছুর অস্তিত্ব নেই। আর যদি তা না-ই বা হবে, তাহলে স্বেচ্ছায় কি এ ধরণের আত্মঘাতী কাজে নামতাম! কিন্তু ভাই, কি করব বলুন, চোখের সামনে একের পর এক মানুষকে প্রাণ হারাতে দেখে, নিজ চোখে করোনা রোগীদের সীমাহীন কষ্ট দেখে, নগণ্য একটি ভাইরাসের কাছে মানবজাতিকে অসহায় পরাজয় মানতে দেখে সত্যিই আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা।
সবাই যদি মৃত্যুকে ভয় পেয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যান, তাহলে লক্ষ লক্ষ এই দুর্ভাগা মানুষগুলোর কী হবে। কাউকে না কাউকে ঝুঁকি নিতেই হবে। কারো না কারো এগিয়ে তো আসতেই হবে। ছোটবেলা থেকেই নিজের বোকামির জন্য পরিবার, বন্ধুমহলে (সু)পরিচিত এই আমার জীবনের চাইতে করোনামুক্ত নিরাপদ একটি পৃথিবী নিশ্চিত করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
হ্যাঁ, অবশ্যই আমি বোকা। কারণ যে কাজ করছি আজ হোক কাল হোক, জানি, নিশ্চিত করোনা ভাইরাসের কবলে পড়তে হবেই। তবে এই বোকামির জন্য আমি নিজেকে নিয়ে সত্যি গর্ববোধ করি। কারণ এই প্রথম আমি প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করছি যে, আমার মানবজন্ম সার্থক হয়েছে। বিলকিস – মান্নান দম্পতির তৃতীয় পুত্রটি যদি এখন মারাও যায়, তারা অন্তত এই ভেবে সান্ত্বনা পেতে পারবেন, তাদের সন্তান পৃথিবীর জন্য, দেশের জন্য, মানবজাতির জন্য সামান্য অবদান রেখে যেতে পেরেছে। মানবজন্মকে সার্থক করতে এর চেয়ে সেরা উপায় আর কী-ই বা হতে পারে!!
শামীম আনোয়ার -এএসপি: র্যাব-০৯, সিলেট । ৩৪ তম বিসিএস (পুলিশ )