বিজ্ঞ নিম্ন আদালতের সরকারি আইন কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক ও সুযোগ সুবিধা৷ অতি সামান্য। বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদ

বিজ্ঞ নিম্ন আদালতের সরকারি আইন কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক ও সুযোগ সুবিধা৷ অতি সামান্য।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্ট এবং সকল জেলা ও দায়রা জজ সহ সকল নিম্ন আদালত ফৌজদারী ও দেওয়ানী আদালতে রাষ্ট্র পক্ষে ও সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করার জন্য সরকার কতৃক কিছু বিজ্ঞ আইন জীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।তাঁদেরকে বলা হয় সরকারি আইন কর্মকর্তা।

মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে বিজ্ঞ এটর্নী জেনারেল, অতিরিক্ত এটর্নী জেনারেল, ডিপুটি এটর্নী জেনারেল ও সহকারী এটর্নী জেনারেল উভয় প্রকারের মামলা পরিচালনা করে থাকেন। আইনে তাঁদের জন্য মর্যাদা, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিজ্ঞ নিম্ন আদালতে সরকারি মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়োগকৃত সরকারী আইন কর্মকর্তাগন অত্যন্ত অবহেলিত এবং মামলা গুলোও পরিচালিত হয় দুর্বলভাবে অযত্নে ও অবহেলায়। ফলে সরকারি মামলার ফলাফল সন্তোষজনক হচ্ছে না।

বিজ্ঞ নিম্ন আদালতে দুই শ্রেণির সরকারি আইন কর্মকর্তা মামলা পরিচালনা করেন। ফৌজদারী মামলা পরিচালনা করেন পিপি, অতিরিক্ত পিপি, স্পেশাল পিপি, সহকারী পিপি। সরকারি দেওয়ানী মামলা পরিচালনা করেন জিপি, অতিরিক্ত জিপি ও সহকারী জিপি। বর্তমানে বিজ্ঞ নিম্ন আদালতে কর্মরত সরকারি আইন কর্মকর্তা দের আইনে কোন মর্যাদা উল্লেখ করা নেই, ভাতা ও অন্যান্য কোন সুযোগ সুবিধার বিষয় ও উল্লেখ করা হয়নি। বর্তমানে নিম্ন আদালতের আইন কর্মকর্তাদের যে ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে তা অতি নগন্য। অথচ প্রতিটি সরকারি আইন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ঠ মামলা বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সিনিয়র আইন জীবী।

সরকার পক্ষে ফৌজদারী মামলা পরিচালনা কারী পিপি ও অতিরিক্ত পিপি প্রতি কর্ম দিবসে পান যথাক্রমে ২৫০ টাকা,২৫০ টাকা এবং প্রতি মাসে রিটেনার ফি হিসাবে পান ১৫০০ টাকা আর সহকারী পিপি পায় প্রতি কার্য দিবসে ২০০ টাকা। এতদব্যাতিত তাদের আর অন্য কোন সুযোগ সুবিধা নেই।
সরকার পক্ষে দেওয়ানী মামলা পরিচালনা করেন জিপি, অতিরিক্ত জিপি ও সহকারী জিপি।জিপি পান প্রতি মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর নিষ্পত্তিকৃত মামলার মূল্যমানের উপর শতকরা ৫ টাকা হিসাবে সর্বোচ্চ ৩০০০ টাকা এবং জিপি ও অতিরিক্ত জিপি রিটেনার ফি হিসাবে প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা পেয়ে থাকেন। এছাড়া মামলার আরজি, জবাব, নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত, আপত্তি সহ অন্যান্য দরখাস্ত প্রস্তুত করা এবং শুনানি করা বাবদ কোন ফি পান না। অথচ দেওয়ানী মামলা পরিচালনায় অভিজ্ঞ ও নির্ভরশীল সিনিয়র আইনজীবী গনকেই ঐ সকল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

পৃথিবীর কোন দেশেই সরকারী আইন কর্মকর্তাদের এত নগন্য ভাতা প্রদানের কোন নজীর নেই।যেখানে একজন দীনমজুর দিনে ৮ ঘন্টা খেটে ৫০০/৬০০ টাকা পায় আর সেখানে একজন বিজ্ঞ আইনজীবী যিনি সকাল থেকে রাত্রি অবধি মামলার জন্য পরিশ্রম করেন তাঁকে সরকার প্রদান করে ২০০/২৫০ টাকা। বিচিত্র এই ভাতা প্রদানর ব্যবস্থা। বিজ্ঞ নিম্ন আদালতের মামলা পরিচালনাকারী সরকারী আইন কর্মকর্তাদের জন্য প্রকৃত পক্ষে আইনগত ভাবে কোন মর্যাদা,ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয় নাই।

বর্তমানে একজন পিপি ও অতিরক্ত পিপি প্রতি মাসে (যদি অতিরিক্ত কোন ছুটি না থাকে) ভাতা পান গড়ে ৭০০০ টাকা আর সহকারী পিপি গন পান ৪৪০০ টাকা। অপরদিকে একজন জিপি ও অতিরিক্ত জিপি পান গড়ে ৮০০০/৯০০০টাকা টাকা আর সহকারী জিপি গন গড়ে প্রতি মাসে পান ৪০০০/৫০০০ টাকা।যা কিনা চিন্তা করতেও কষ্ট হয়।

সে কারণে সরকারি আইন কর্মকর্তা গনকে পেট চালানোর তাগিদে ব্যক্তিগত অন্য মামলার দিকে মনযোগ দিতে হয় বেশি। অনেক সময় তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে জানা যায়।যে কারণে সরকারি মামলা পরিচালনায় আগ্রহ, গুরুত্ব ও আন্তরিকতা কমে যায়। সরকারি মামলা পরিচালনায় অবহেলা ও অযত্নের কারণে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলায় রায় সরকারের বিপক্ষে চলে যায়।

সঠিক ভাবে পারিশ্রমিক না দিয়ে তাদের কাজ থেকে ভালো কাজ আশা করা যাবে না এইটাই বাস্তবতা। সুতরাং ভালো ভাবে সরকারি মামলা পরিচালনা করতে হলে সরকারি আইন কর্মকর্তা দেরকে উপযুক্ত পদ মর্যাদা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পারিশ্রমিক ও পরিবেশ দিতে হবে এর কোন বিকল্প নাই।

এক সময় ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় সরকারী আইন কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক ও সুযোগ সুবিধা কি প্রদান করা হয় তা দেখার জন্য বাংলাদেশ থেকে একটি টীম উক্ত তিনটি দেশ ঘুরে এসেছিলেন এবং তাঁরা একটি প্রতিবেদন ও দাখিল করেছেন। কিন্তু তা ঐ ভাবেই রয়ে গেছে। প্রতিবেদনটির বিষয়ে পরবর্তীতে আর কোন গুরুত্বও দেওয়া হয়নি বা কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।
তাই সরকারি আইন কর্মকর্তা দের নিকট থেকে ভাল সার্ভিস পেতে হলে নিম্ন লিখিত বিষয়গুলি অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে :

১। আইনের ভিত্তিতে প্রত্যেক সরকারি আইন কর্মকর্তার পদমর্যাদা নির্ধারণ করতে হবে এবং পদমর্যাদা অনুযায়ী বেতন/ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
২। ভালো ভাবে সকল মামলা পরিচালনার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি,প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট ও আনুসংগিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
৩। বিজ্ঞ নিম্ন আদালতের আইন কর্মকর্তা দের জন্য পৃথক আইন করে তাঁদের পদমর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৪। অন্য কোন বিবেচনায় নয় শুধুমাত্র যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি আইন কর্মকর্তা
নিয়োগ দিতে হবে।

উপরোক্ত বিষয় গুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে সরকারি মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি কমে যাবে,গতি বৃদ্ধি পাবে, অবশ্যই ভাল ফল পাওয়া যাবে, সরকারি মামলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে ও মামলার প্রকৃত ফলাফল নিশ্চিত হবে।
কাজেই বিজ্ঞ নিম্ন আদালতে সরকারি মামলা পরিচালনা দুর্নীতিমুক্ত করা এবং সঠিক ও সুষ্ঠু ভাবে সকল সরকারি মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে গতি আনতে সরকারি আইন কর্মকর্তা শুধুৃমাত্র যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া এবং তাদের উপযুক্ত আইনগত পদ মর্যাদা, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

লেখক : আইনজীবী ও কলাম লেখক।

Comments (0)
Add Comment