নাটকের কাহিনী বিন্যাস এবং চরিত্র বিশ্লেষণের খাতিরে সাবপ্লট বা পেছনের ঘটনা প্রবাহ অনুসন্ধান করা হয়। এতে নাটকের গল্পকে ভাল করে বিশ্লেষণ, চরিত্রসমূহকে রূপায়ণ ও বোঝার পথ সুগম হয়। আবার চিকিৎসাশাস্ত্র মতে উত্তরাধিকার সূত্রে রক্ত এবং চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গে কিছু রোগেরও ধারাবাহিকতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। সেই ধারাবাহিকতা বিবেচনায় সাম্প্রতিক চরিত্র তাসনিম খলিল।
পিতা খলিলুর রহমানের জীবন পর্যবেক্ষণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লড়াইয়ের তথ্য না মিললেও জীবনাবসানে জামায়াত পৃষ্ঠপোষকতার পত্রিকা নয়া দিগন্ত ও বিএনপির দৈনিক মানবজমিনে শোকনামা প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। উত্তরাধিকারের সূত্রে প্রাপ্ত সেই বিরোধিতার বীজ আজও ধারাবাহিক আছে। ২০১৯ এ পিতার মতো পুত্রও স্বঘোষিত সম্পাদক হিসেবে নেত্র নিউজ নামের একটি পত্রিকা খুলে বসেন। যেখানে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশের বালাই না থাকলেও এজেন্ডানির্ভর সংবাদ প্রকাশের হিড়িক দৃশ্যমান। আর এর আগে কাজ করেছেন ডেইলি স্টার পত্রিকায়।
পিতা খলিলুর রহমানের জীবনাচরণের পরিক্রমণে আরও দেখা যায় জীবনের শুরু ‘সমীকরণ’ নামের একটি সাহিত্য পত্রিকার মাধ্যমে। যা ১৯৯০ পর্যন্ত চালু ছিল। পরে ‘জনধারা’ নামের একটি দৈনিক পত্রিকা বের করার প্রচেষ্টা রইলেও তা কখনই আলোর মুখ দেখতে পারেনি। যদিও কিংশুক নামের মুদ্রণখানাই ছিল তার জীবিকার প্রধান বাহন।
তাসনিম খলিল নিজেকে নাস্তিক ঘোষণা করে অসাম্প্রদায়িকতার বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমানদের সেন্টিমেন্ট নষ্ট করতে সেনাবাহিনী ইসরাইলী যন্ত্রাদি ব্যবহার করছে এমন ধ্বনিও তুলেছেন। তাছাড়া ডেভিড বার্গম্যান, আলী রিয়াজ, শহীদুল আলম, জুলকারনাইন সায়ের খান, সারা হোসেন, আনু মোহাম্মদ, রেহনুমা আহমেদ, ড. ইউনূস প্রমুখের সঙ্গেও রয়েছে তার সখ্যতা। অর্থাৎ অযাচিত বিরোধিতার সারিতে মিতালি গড়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে যখন বাংলাদেশ উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার মিছিলে অগ্রসরমান তখন রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের সম্মিলিত কাঠামোর মাঝে অবিশ্বাসের বীজ রোপণে ঠিকা নিয়েছেন। যার কারণে দেশের সেনাবাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টার্গেট করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পারস্পরিক সম্পর্কের বুনন নষ্টে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ একটি দেশের সেনাবাহিনী সেই দেশের সার্বভৌমত্বের শামিল। সেখানেই প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে চলেছেন।
শুধু তাই নয়, পার্বত্যাঞ্চলকে যে সেনাবাহিনী সুরক্ষার কাজে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে, সেখানেও সাতরং মাখিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। আর এটা তার পক্ষে ছড়ানো বেশ সহজ। কারণ, বিভিন্ন স্থানের সোর্স হিসেবে কাজ করবার অভিজ্ঞতা তার বেশ পুরনো।
কিন্তু তিনি হয়ত জানতেনই না যে এই অঞ্চল অরক্ষিত হলে গোটা দেশের শান্তি বিনষ্ট হবে। কারণ নগর পুড়িলে দেবালয় রক্ষা করা যায় না। আর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই অংশগুলোকেও ব্যবহার করবার উদম প্লেয়িং গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করবার জন্য পূর্বাপরই উদগ্রীব। যার প্রমাণ ভারতীয় সীমান্তবর্তী সিলেটের এক পাহাড়ের কুয়ায় কিছু বছর পূর্বেও মর্টার শেলসহ কিছু অস্ত্র পাওয়া গেছে।
তাছাড়া এই অঞ্চলগুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টি মানেই যে বিশ্ব মোড়লদের জঙ্গীবাদের চশমায় ঘাঁটি গড়বার অনুমতি প্রার্থনা সেটাও তিনি উহ্য রেখেছেন। বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার পাওয়ার ফ্যাক্টর। কাজেই এখানকার অগ্রযাত্রার উন্নয়নকে মরীচিকা বানিয়ে বাতাসে লাশ-বারুদের গন্ধে ভেসে বেড়ানোর কৌশল অনেকেরই আছে।
এর বাইরেও সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক আনোয়ার কবিরের সূত্রে জানা যায়, ২০০৬-০৭ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য কাজ করছে এমন কিছু সাংবাদিকের সঙ্গেও কাজ করেছেন তাসনিম খলিল। বিভিন্ন সময় তাসনিম খলিলের প্রতিবেদন এখনও সেই লক্ষ্যেই অবিচল রয়েছে বলে প্রতীয়মান।
শুধু তাই নয়, বাবার মতোই তীব্রভাবে আওয়ামী বিদ্বেষী মানসিকতা থেকে বিভিন্ন অন-লাইন টক-শোতে নাস্তিকতা, সমকামিতার পক্ষে প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নকে হেয় করে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। যার চুম্বক অংশ দাঁড়ায়, শেখ মুজিব পাকিস্তানের জেলে বন্দী ছিলেন, তাই তিনি নন তাজউদ্দীনই মূলত মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রক্ষী বাহিনী ও আল-বদর একই আদলে গড়া।
র্যাবের কালো পোশাক এসেছে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পোশাকের রং থেকে। বাংলাদেশের সকল সন্ত্রাসী ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি ও র-এর আশ্রয়ে থাকে। ডিজিএফআই পাকিস্তানী আইএসআইএর আদলে গঠিত ও পরিচালিত। অর্থাৎ চিকিৎসাশাস্ত্র মতে উত্তরাধিকার সূত্রে বিরোধী আচরণের ধারাবাহিকতা দৃশ্যমান।
বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতেও তিনি বিশ্বব্যাপী বলেছেন, বাংলাদেশের অবস্থা ভীষণ নাজুক। সরকার ব্যর্থ হয়ে যাবে এবং ২০-৩০ লাখ লোক মরে যাবে। অথচ ব্লুমবার্গের করা প্রতিবেদনেও করোনা মোকাবেলায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২০তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ১ম। পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্যাকসিন কূটনিটিতেও বিশ্বে জায়গা করে নিয়েছেন। যার ফলাফল দেশব্যাপী জনগণকে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিনের টিকা প্রদান চলছে। যেখানে এখনও বহু শক্তিশালী দেশ তাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি।
ইংরেজিতে ‘স্টকহোম সিনড্রোম’ নামের একটি শব্দ আছে। যার অর্থ নির্যাতনকারীর প্রেমে নির্যাতন ভোগকারীর মজে যাওয়া। তাসনিম খলিলের অবস্থাও হয়েছে তাই। যে তারেক রহমানের দুর্নীতি, ব্যভিচার এবং সন্ত্রাসের সিরিজ স্বাক্ষর ‘প্রিন্স অব বগুড়া’ প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে তারেকের দ্বারা তিরস্কৃত হয়েছিলেন আজ তিনি তার প্রেমে বুঁদ। একই ঘাটে জলকেলি করতে করতে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বাদ সাধতে তৎপর।
নিজের দেশান্তরিত হবার গল্পকেও তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে এই সরকারের ওপর বর্তান। অথচ তিনি দেশ ছেড়েছেন ২০০৭-এর মাঝামাঝি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। কাজেই এটা স্পষ্টতর যে, তিনি মিথ্যাচারের মধুচন্দ্রিমায় বুঁদ। অর্থাৎ তার বর্তমান চরিত্র, আচরণ এবং কৃতকর্ম সম্পর্কিত বাতুলতা বিশ্লেষণে পূর্বের কর্মস্থল, পরিবার পর্যন্ত অনুসন্ধান যথেষ্ট। ভিন্নভাবে বললে বর্তমান প্লট বুঝতে সাবপ্লট যথেষ্ট।
তবে স্বস্তির বিষয় হলো, বর্তমানে দেশবিরোধী যে কোন প্রোপাগাণ্ডা বা গুজব বুঝতে ও প্রতিরোধে দেশের মানুষ চৌকস অবস্থানে। আর এর কারণ সজীব ওয়াজেদ জয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন প্রত্যেকের হাতের মুঠোয় তথ্যভাণ্ডার। তাই এখন বিশ্ব বাঙালী গুজব সম্পর্কে সচেতন এবং অকুণ্ঠ সমর্থনে আওয়াজ ওঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ বিশ্ব নেতৃত্বের দুয়ারে এবং আগামীর জয়ের সারথি হবে। কাজেই ইনভেস্টিগেশনের বদলে মেলোড্রামাটিক তথ্যচিত্র এর গোঁজামিল সম্পন্ন ষড়যন্ত্র এখানে নস্যাৎ হবেই।
লেখক : ছাত্রনেতা
haiderjitu.du@gmail.com