মা হল পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনাসূদে অকৃত্রিম ভালোবাসা । -হুমায়ূন আহমেদের এ বানী যেন আমাকে আকড়ে ধরেছে কারণ আমি সেই ব্যাংক থেকে বঞ্চিত হয়ে গেছি । মাকে হারিয়েছি এক বছর পূর্ণ হতে চললো । মায়ের ইহজগৎ থেকে বিদায়ের এর পর থেকে প্রতিনিয়ত তার অনুপস্থিতি আমাকে ছারখার করে দিচ্ছে। মানুষ মরণশীল, চিরন্তন এ সত্যে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে মা’র স্মৃতিগুচ্ছ হৃদমাজারে অনুভব করে চোখের পাতায় খুঁজে পাই। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে গোটা বিশ্বে বিশাল অস্থিরতা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমার কর্মস্থল বৃটেনেও দিনকেদিন এর প্রখরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। এ রোগটি থেকে নিরাপদ থাকতে নিজেকে আলাদা করে রাখার বিকল্প নাই। তাই-তো গোটা বিশ্বের মানুষ গৃহবন্দী। বৃটেন সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন যাতে করে সবাই নিজ নিজ ঘরে থাকতে হচ্ছে। কর্মজীবী মানুষ আচমকা গৃহবন্দী হয়ে পড়ে এর চেয়ে অস্বস্তিকর কিছু হয় না। ঘরে থাকায় পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছি। নামাজ কায়েম করছি, কুরআন তেলাওয়াত করছি পাশাপাশি দূরুদ ইস্তেগফার পড়ছি। গৃহবন্দী মনে এক বিশাল শূন্যতা অনুভব করি, হৃদয়ে কষ্টের সীমাহীন অপূরনীয়তায় অজান্তে চোখের জল বেয়ে বেয়ে পুরো মুখ ভাসিয়ে দেয়। মন মস্তিস্ক ও মগজে মায়ের যে অনুপস্থিতি বিরাজ করছে সেটা কাটিয়ে উঠা যেন আরেকটি লড়াই করতে হচ্ছে। মনে পড়ে কাজে যখন থাকি, পুরো ঘর মা সামাল দিচ্ছেন, আমারও যে দায়িত্ব আছে সেটা মা কখনো বুঝতে দেননি। আমার সন্তানদের চাহিদা প্রয়োজন যে আমি সেটা সন্তানরাও কখনো কখনো ভুলে যেত তাঁদের নানীর পরম আদর স্নেহের মায়া ও মমতা এবং দায়িত্বে। আমার মত আমার বড় ছেলেও সেই
শূন্যতা অনুভব করছে, ভাষায় বলে না কিন্তু তাঁর মুখের অবয়ব দৃশ্য অনুভূত হয় সেও কতটা শূণ্য নানীর শূন্যতায়। নিজ হাতে নানীকে দাফন করতে পেরেছে এক মুঠো মাটির পরস নানীর শরীরে স্পর্শ করিয়ে দিতে পেরেছে এতেই সে যেন পূর্ণতা অনুভব করছে। মা হল পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনাসূদে অকৃত্রিম ভালোবাসা। ”-হুমায়ূন আহমেদের এ বানী যেন আমাকে আকড়ে ধরেছে কারণ আমি সেই ব্যাংক থেকে বঞ্চিত হয়ে গেছি। কলমের খালি খাতার পৃষ্টা ফুরাবে কিন্তু, আমার প্রতি মায়ের অকৃত্রিম স্নেহ মায়া মমতা ও দায়িত্ব লিখে ফুরাবে না। যখন দু হাত তুলে প্রার্থনায় থাকি আল্লাহর কাছে মায়ের জন্য দু’য়া মগ্ন থাকি মায়ের শূন্যতায় এটাই যেন আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা।