নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহর উপজেলার একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা শাহী মসজিদ। চাটমোহর উপজেলা সদরে অবস্থিত মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন ও ইতিহাসের স্বাক্ষী। চারশত বৎসরেরও অধিক পুরনো মসজিদটি একসময় ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছিল, ১৯৮০’র দশকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পুনঃনির্মান করে। মসজিদটিতে তুঘরা লিপিতে উৎকীর্ণ একটি পার্সী শিলালিপি ছিল যা রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা যাদুঘরে এখনও সংরক্ষিত আছে।
ইতিহাস বলে পাবনার অন্যতম প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র চাটমোহর একদা ছিলো মোঘল-পাঠানদের অবাধ বিচরণভূমি। আর সে সময়ে ১৫৮১ খৃষ্টাব্দে আবুল ফতেহ মুহম্মদ মাসুম খান (মাসুম খাঁ কাবলি) নামের সম্রাট আকবর এর পাঁচহাজারী এক সেনাপতি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এটিই আজকের চাটমোহর শাহী মসজিদ। বইপত্রে যা এখনো মাসুম খাঁ কাবলির মসজিদ বলেই উল্লেখ আছে। মসজিদটির ভেতরে দৈর্ঘ্য ৩৪ হাত, প্রস্থ ১৫ হাত, উচ্চতা প্রায় ৩০ হাত বা প্রায় ৪৫ ফুট। ক্ষুদ্র পাতলা নকশা খচিত লাল জাফরী ইটে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে।
মসজিদের দেয়ালটি সাড়ে চার হাত প্রশস্থ। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির সামনে ইদারার গায়ে কালেমা তাইয়েবা লিখিত একখন্ড কালো পাথর এখনো গ্রোথিত। সম্রাট আকবরের একজন সেনাধ্যক্ষ মাসুম খাঁ কাবুলী এই মসজিদটি তৈরী করেন বলে স্বাক্ষী দিচ্ছে ইতিহাস। এর সম্মুখ ভাগে তিনটি খিলান আকৃতির গেট রয়েছে ও পশ্চিমপাশে একই রকম খিলান আকৃতির আরো দুইটি গেট আছে। মসজিদের অভ্যন্তরে মেহরাবের চারদিকে ইটের কারুকার্য লক্ষণীয়। এ মসজিদের অভ্যন্তরে ছোট ছোট চারটি কুলুঙ্গী রয়েছে। মসজিদের বাইরে এবং ভেতরে দেয়ালগাত্রে জাফরী ইটের সুন্দর কারুকার্য রয়েছে।
অনেকের মতে, এই খিলান পরিকল্পনার মূলে আছে প্রাচীন পারস্যের সাসনীয় স্থাপত্যের প্রভাব। সাসনীয় আমলে (২১২-৬৫১ খ্রী:) ইরানে এ রকম খিলান তৈরীর কৌশল উদ্ভব হয়েছিল। মাসুম খাঁ কাবুলী নির্মিত মসজিদটি’র ভেতরে একটি কালো বর্ণের ফলক ছিল ফলকে খোদাইকৃত পার্সী অক্ষরে মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে। সেই পাথরটি এখন রাজশাহী বরেন্দ্র মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।