নিজস্ব প্রতিনিধি : ১৮ শতকের কোনো এক সময়ে নির্মিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা তাড়াশ রাজবাড়ী। আবার কারও কাছে তাড়াশ ভবন নামেও পরিচিত। পাবনা শহরের বুকে দাঁড়িয়ে আছে এ রাজবাড়ীটি । জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে এ ভবনটি নির্মাণ করেন তাড়াশের তৎকালীন জমিদার রায়বাহাদুর বনমালী রায়। স্থাপত্যের দিক দিয়ে এটির সঙ্গে ইউরোপীয় রেনেসাঁ রীতির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়।
১৯৯৮ সালের ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এটিকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। এর আগে ভবনটি বিভিন্ন সরকারি দফতর ও পাবনা মেডিকেল কলেজের ভবন হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, তৎকালীন আমলে পাবনার জমিদারদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও নামকরা বলে পরিচিত ছিলেন তাড়াশের এ জমিদার। বগুড়া জেলার চান্দাইকোণার কাছে ‘কোদলা’ গ্রামে এক কায়স্থ জমিদার ছিলেন। এ জমিদারই তাড়াশের রায়বংশের পূর্বপুরুষ বাসুদেব। তাড়াশেরিএ পরিবারটি ছিল পাবনা জেলার সবচেয়ে বড় জমিদার। বাসুদেব নবাব মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব বিভাগে চাকরি করে নির্মাণ করেন রাজবাড়ী। এ সময় তকে ‘রায়চৌধুরী’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তার এস্টেট ছিল প্রায় ২০০ মৌজা নিয়ে।
সূত্রে জানা যায়, ১৯৪২ সনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আতঙ্কে জমিদার বনমালী রায় বাহাদুরের বংশধররা তাদের পাবনা শহরে নির্মিত ঐতিহাসিক তাড়াশ ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পাবনা অঞ্চলের সর্ববৃহৎ জমিদার কর্তৃক নির্মিত তাদের অমর কীর্তি পাবনা শহরের তাড়াশ ভবন আজও তাদের স্মৃতি বহন করে দাঁড়িয়ে আছে।
আদিতে বনওয়ারী লাল ফরিদপুর থানার ডেমরাতে বসতি স্থাপন করেন এবং কালক্রমে এই স্থানের নাম হয় বনওয়ারীনগর। তাদের নির্মিত পাবনা শহরের ভবনটি তাড়াশ রাজবাড়ী নামেও পরিচিত। পাবনায় নির্মিত প্রাসাদোপম ভবনটির সম্মুখ প্রাসাদ দ্বিতলবিশিষ্ট এবং চারটি বৃত্তাকার স্তম্ভ সহযোগে প্রাসাদের দ্বিতলের কক্ষ। প্রাসাদের সামনে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের শেষ প্রান্তে প্রবেশ ফটকটির দু’পাশে দুটি করে চারটি স্তম্ভ এবং মাঝখানে বিশাল আকৃতির অর্ধবৃত্তাকার খিলানে প্রবেশপথটি।
ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন আমলে ইউরোপীয় রেনেসাঁ রীতির প্রভাবে নির্মিত তাড়াশ জমিদার বাড়ি তাড়াশের জমিদার রায় বাহাদুর বনমালী রায়ের অর্থানুকূল্যের স্মৃতি নিয়ে জেগে আছে। তাড়াশ জমিদারদের পাবনা শহরে নির্মিত প্রাসাদ ভবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট এর প্রবেশ তোরণ। ভবনটি আয়তাকৃতির এবং এর আয়তন দৈর্ঘ্যে ৩০ দশমিক ৪০ মিটার (১০০ ফুট) এবং প্রস্থ ১৮ দশমিক ২৮ মিটার (৬০ ফুট)। চারটি কোরিনথিয়ান স্তম্ভের উপরে আকর্ষণীয় দ্বিতল বারান্দা সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাড়াশ জমিদার ভবনের দুই পাশে দু’টি বর্ধিত অঙ্গ সংযুক্ত রয়েছে এবং সর্বত্র অর্ধবৃত্তাকৃতির খিলান সুষমভাবে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।