নিউইয়র্ক (ইউএনএ): চট্টগ্রাম সমিতি ইউএসএ’র নির্বাচন ঘিরে সংগঠনে সঙ্কট চলছে। এই সঙ্কট উত্তরণে গঠন করা হয়েছে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নবগঠিত ইসি সংবাদ সম্মেলন ছাড়াও মতবিনিময় করেছে চট্টগ্রামবাসীদের সাথে, ঘোষণা করেছে নতুন নির্বাচন তফসিল। শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন পরবর্তী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইসি ঘোষিত তফসিল মোতাবেক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে ২ মে রোববার বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। মনোনয়নপত্র দাখিল ও গ্রহণ ৫ মে বুধবার, বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। মনোনয়নপত্র বাছাই ৭ মে শুক্রবার, বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। আপিলের সময় সীমা ৮ এপ্রিল শনিবার, বেলা ১টা থেকে বিকেল ৩টা। আপিলের শুনানী ও রায় ৯ মে রোববার, বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১১ মে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত এবং চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা ১৫ মে শনিবার। নির্বাচন আগামী ৩০ মে রোববার। উল্লেখ্য, ব্রুকলীনস্থ সমিতি ভবন (নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়) ছাড়াও ব্রঙ্কসের নিরব রেষ্টুরেন্ট, জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টার এবং জ্যামাইকাস্থ আমেরিকান শিপিং এন্ড লজিষ্টিক ইনক থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ ও দাখিল/গ্রহণ করা হবে। খবর ইউএনএ’র।
এদিকে সমিতির নির্বাচন কমিশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের উদ্ভুত পরিস্থিতি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা ইন্ক এর নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল এবং ২ ভাগে কমিশনকে ১৮ জন সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ও বিশিষ্ট সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের সমঝোতায় সমিতির গণতন্ত্র ১৫ ধারা স্থগিত করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। সেই নির্বাচন কমিশনের প্রধান ছিলেন শাহজাহান মাহমুদ এবং কমিটির সকল সদস্যবৃন্দকে প্রয়াত সভাপতি আব্দুল হাই জিয়া নিজে শপথ বাক্য পাঠ করান। নির্বাচন কমিশনের প্রথম সভায় উপস্থিত সকল কমিশনারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কমিশনের সুবিধার্থে তিনটি উপ কমিটি গঠন করা হয়। যথাμমে অর্থ উপ-কমিটি, প্রচার উপ-কমিটি, নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন উপ-কমিটি। বিলুপ্ত নির্বাচন কমিশনার প্রধান শাহজাহান মাহমুদ কিছু ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য তা আর বাস্তবায়ন করেননি। দ্বিতীয় সভায় সকল নির্বাচন কমিশনারের সিদ্ধান্ত ছিল সদস্য ফরমের বাম পার্শ্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং ডান পাশে নির্বাচন কমিশনারের নাম থাকবে।
কিন্তু আমরা দেখিতে পাই সদস্য ফরমে এক পার্শ্বে সভাপতির নাম এবং অন্য পার্শ্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম। তাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সিদ্ধান্ত না মেনে কিছু ব্যক্তির পরামর্শে নতুন ফরম তৈরী করেন যা অন্যান্য নির্বাচন কমিশনের সদস্যবৃন্দ অবগত ছিলেন না।
জনাব শাহজাহান মাহমুদের কাছে জানতে চাইলে তিনি সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনার আবু তালেব চৌধুরী চান্দু ও সাঈদ মুর্শেদ রেজভীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করেন। যা সংগঠনের গঠণতন্ত্রের কোন ধারা ও উপধারাতে নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার শাহজাহান মাহমুদ কোন আলোচনা ছাড়া নিজ ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সমিতির মান সম্মান ক্ষুন্ন করে ব্যক্তিতে মূল্যায়ন করে কাজ করতেন এবং তিনি নিজেই নিজ ইচ্ছায় বার বার সদস্য পদ নবায়নের তারিখ পরিবর্তন করে ৭ মাস অতিবাহিত করেন।
মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, আমরা সমিতির অফিসে উনাকে (শাহজাহান মাহমুদ) বসতে বললে তিনি বলেন, প্রয়াত সভাপতি আব্দুল হাই জিয়ার জানাজার সময় করোনা নিয়ে উনার পরিবার অফিসে প্রবেশ করেন, সেই অজুহাতে সমিতির অফিসে যেতেন না। সমিতির নতুন সদস্য ফি ব্যাংকে জমার জন্য একাউন্ট খুলতে বললে নানানভাবে ব্যক্তির উদাহারণ দিয়ে ব্যাংকের একাউন্ট খুলতে চান না। নির্বাচন কমিশনারের সাথে সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের ভারচ্যুয়াল মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয় যে, একজন সাবেক সভাপতিসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার নতুন ব্যাংকের একাউন্ট করবেন। সেই সিদ্ধান্তও তিনি কিছু ব্যক্তির প্ররোচনায় করেননি। আমাদের অজান্তে সমিতির ব্যাংক একাউন্ট হতে দশ হাজার ডলারের চেক ব্যক্তিগত নামে নিজ একাউন্টে জমা প্রদান করেন। সবশেষে তিনি গঠণতন্ত্র মোতাবেক নিরপেক্ষ, সুন্দর, স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে বন্ধপরিকর বলে উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আবু তালেব চৌধুরী চান্দু ও এডভোকেট নিজাম উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। ইসির কর্মকর্তা সহ সমিতির অন্যতম সহ সভাপতি মাসুদ সিরাজী উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। অপরদিকে সমিতির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল পরিচালনা করেন কমিশনার অন্যতম সদস্য আবু তালেব চৌধুরী চান্দু। দোয়া ও মিলাদ পরিচালনা করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইউএসএ’র সভাপতি মাওলানা রহিম মাহমুদ।
মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম ও সরোয়ার জামান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির আহমেদ ও আবু তাহের, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাকসুদুল হক চৌধুরী, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম, সহ সভাপতি মাসুদ হোসেন সিরাজী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খোকন, কোষাধ্যক্ষ মীর কাদের রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইকবাল, আবুল কাসেম (চট্টল কাসেম), তৌহিদুল আলম, এরশাদ চৌধুরী, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত সভাপতি হেলাল মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মোঃ ওয়াসিম সিদ্দিকী, জসিম চৌধুরী, মোঃ আজম, সেলিম হারুন, আইয়ুব আনসারী, আলী আকবর বাপ্পী, নাজিম উদ্দীন, স্বপন চৌধুরী, মোঃ মনসুর বাবু, এরশাদ চৌধুরী, হাজী আবদুর রহমান, শফিউল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে সমিতি সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সমিতি ইউএস’র বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে গত ৪ এপ্রিল শপথ গ্রহণের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এর আগে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ও ১২ সেপ্টেম্বর দু’দিন শপথের মাধ্যমে মোট ৯ জনের নির্বাচন কমিশন গঠন করেন প্রয়াত সভাপতি আবদুল হাই জিয়া। ঐ কমিশনের প্রধান কমিশনার নির্বাচিত হন শাহজাহান মাহমুদ। কিন্তু কমিশন বিগত ৬ মাসে নির্বাচন সংক্রান্ত কোন কর্মসূচী গ্রহণ করেননি। শুধু কয়েকদিন পর পর পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কোন অগ্রগতি চট্টগ্রামবাসী দেখেনি।
সংশ্লিস্টরা অভিযোগ করেন যে, সমিতির গুটিকয়েক ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্দনে কমিশনার শাহজাহান মাহমুদ নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার এই ব্যর্থতার দায় সমিতি নেবে না। তাই কার্যকরি কমিটি ও সমিতির সাধারণ জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গত ২৭ মার্চ বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করেন এবং সভায় সমিতির উদ্ভুত পরিস্থিতির বিষয়ে বিষদ আলোচনা করা হয় এবং সভায় উপস্থিত সকলে একযোগে ঐ ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাতিল করা জোর দাবী জানান। পরে সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকলের শতভাগ সমর্থনে শাহজাহান মাহমুদ নেতৃত্বাধীন ৯ সদস্যের নির্বাচন কমিশন বাতিল করে পুনরায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করেন। ইসি’র নতুন কমিশনের প্রধান মনোনীত হয়েছেন হাসান চৌধুরী। কমিশনের অপর সদস্যরা হলেন আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, মোর্শেদ রিজভী, নাছির উদ্দিন ও নেজাম আহমেদ। গত ৪ এপ্রিল শপথ গ্রহণের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশনের কাজ শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ এপ্রিল সাধারণ চট্টগ্রামবাসীর সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে তারা নতুন নির্বাচনের তফসীল ঘোষনা করা হয়। উল্লেখ্য, সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১৫ ধারায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন করার বিধান রয়েছে।