ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ইউএনএ : ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন, ফ্রি প্যালেস্টাই’ গগণ বিদারী হাজারো মানুষের শ্লোগান আর এই একটি দাবীতে কেঁপে উঠলো হোয়াইট হাউজের অদূরেই ঐতিহাসিক লিঙ্কন মেমোরিয়াল প্রাঙ্গণ। দাবী উঠলো বছরের পর বছর ধরে ইসরাইলীদের দ্বারা নিপীড়িত-নির্যাতিত ফিলিস্তিনীদের মুক্তি আর স্বাধীনতা। বন্ধের দাবী উঠলো নির্বিচারে ফিলিস্তিনী শিশু-কিশোর-কিশোরী আর নর-নারী হত্যার। আরো দাবী উঠলো আর নয় ইসরাইলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি। সমালোচিত হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘প্যালেস্টাইন-ইসরাইল’ নীতির। খবর ইউএনএ’র।
ইউএস কাউন্সিল অব মুসলিম অর্গানাইজেশন্স (ইউএসসিএমও)-এর ব্যানারে ‘ন্যাশনাল মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ সমাবেশে উপরোক্ত দাবী উঠে। গত ২৯ মে শনিবার অপরাহ্নে লিঙ্কন মেমোরিয়াল প্রাঙ্গণে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রতিকূল পরিবেশেও এতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে হাজার হাজার মুসলিম নরনারী শত শত বাস আর প্রাইভেট কার যোগে যোগ দেন। সমাবেশকারীরা ফিলিস্তিনী পতাকা আর স্বাীনতাকামী দেশটির জনগনের পক্ষে লেখা নানান ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড বহন করেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সমাবেশে একটি দাবীই বার বার উচ্চারিত হয় ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন, ফ্রি প্যালেস্টাই’।
সমাবেশকারীরা নানা শ্লোগান তুলে বিক্ষোভও প্রদর্শণ করেন। বিকেল ৪টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত মূল সমাবেশ চলে। যেসকল এই সমাবেশে যোগ দেয় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংগঠনগুলো হচ্ছে- এএমপি, কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (কেয়ার), ইকনা, মুসলিম আমেরিকান সোসাইটি (এমএএস), মুসলিম লীগ্যাল ফান্ড অব আমেরিকা (এমএলএফএ), মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা (মুনা), দ্যা মস্ক কেয়ার্স, ইসলমিক শুরা কাউন্সিল অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া, ইসলামিক লীডারশীপ কাউন্সিল অব নিউইয়র্ক, ইসলামিক কাউন্সিল অব ওকলাহোমা, দ্যা কাউন্সিল অব ইসলামিক অর্গানাইজেসন্স অব গ্রেটার শিকাগো, মুসলিম ফোরাম অব দ্যা প্যাসিফিক নর্থওয়েষ্ট (এমএফপিএনডব্লিউ), নর্থ আমেরিকান ইসলামিক ফাউন্ডেশন (এনএআইএফ), ইউএমআর, ইকনা রিলিফ ইউএসএ, আহেদ ইন্টারন্যাশনাল, হেলপিং হ্যান্ড, মার্সি উইথআউট লিমিটস, ইউনাইটেড হ্যান্ডস রিলিফ (ইউএইচআর), দ্যা মস্ক ফাউন্ডেশন, ইসলামিক সেন্টার অব হোয়েটন (আইসিডব্লিউ), ডাউনটাউন ইসলামি সেন্টার (ডিআইসি) শিকাগো, দার আল হাজরা, আইসিসিআই, আইসিডি, টুগেদার উই সার্ভ ইন্ক, ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক থট (আইআইআইটি), দ্যা বার্মিস রোহিঙ্গা এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা (বিআরএএনএ), আমেরিকান মুসলিম এলায়েন্স (এএমএ), ইসলামিক এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা (আইএএনএ), ইসলমিক সেন্টার অব নাপেরভিলি আইসিএন), ইয়ং মুসলিমস ইনক।
আয়োজকদের দাবী যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক ইসলমিক সংগঠন এই সমাবেশে যোগ দেয়। সমাবেশের মূল মঞ্চের বাইরে লিঙ্কন মেমোরিয়াল প্রাঙ্গণের বিশাল এলাকা জুড়ে খন্ড খন্ড সমাবেশও করেন বিভিন্ন সংগঠন। সমাবেশগুলোতে একই দাবী উচ্চারিত হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুসলিম বাংলাদেশীদের অন্যতম বৃহৎ ইসলামিক সংগঠন ‘মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা (মুনা)’ ছাড়াও বাংলাদেশীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত নিউইয়র্ক সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যেও মসজিদ, ইসলামিক সেন্টার ও ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের ব্যনারের হাজার হাজার বাংলাদেশী মুসলমান অংশ নেন। তাদের মধ্যে অনেকেই শিশু-কিশোর-কিশোরী সহ সপরিবারে অংশ নেন।
বাংলাদেশীদের সমাবেশে মুনা’র সাবেক ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমাম দেলোয়ার হোসাইন সহ জাহিদ বুখারী, মোমিন মজুমদার, ফখরুল ইসলাম মাসুম, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সমাবেশ শেষে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে র্যালি বের হয়। র্যালিটি হোয়াইট হাউজের সামনে এসে শেষ হওয়ার সময় ইউএস কাউন্সিল অব মুসলিম অর্গানাইজেশন্স-এর কয়েকজন নেতৃবৃন্দ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। তাদের মধ্যে মুনা’র ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হারুন-অর রশীদ ছিলেন অন্যতম।
সমাবেশে যোগদানকারী মুনার উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আরমান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা ড. রুহুল আমীন, জিয়াউল হক শামীম, আব্দুল্লাহ আল আরিফ, নাসির উদ্দিন, মওলানা তোহা আমীন, সাফায়োত হোসেন সাফা, রাশেদুজ্জামান রাশেদ প্রমুখ। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম কমিউনিটির আমব্রেলা সংগঠন হিসেবে ২০১৪ সালে ইউএস কাউন্সিল অব মুসলিম অর্গানাইজেশন্স (ইউএসসিএমও) প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত: মুসলিম সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি, লক্ষ্য ও কর্মসূচী একত্রিকরণের জন্যই এই সংগঠন গড়ে উঠে। সংগঠনটির শ্লোগান হচ্ছে- ‘ওয়ান গড, ওয়ান ভিশন, ওয়ান ভয়েস’।