বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কঙ্গোর ইতুরি প্রদেশের রাজধানী বুনিয়ার নিকটবর্তী একটি গ্রাম এম্বায়ো। পাহাড়ি এই জনপদের সাধারণ শ্রেণির মানুষের জীবনমান খুবই শোচনীয়। এমন একটি এলাকায় সাধারণ শিশু-কিশোরদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ‘বঙ্গবন্ধু স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা।
গৌরবের বিষয় হচ্ছে- কঙ্গো সরকারের অনুমোদনেই এ স্কুলের নামকরণ করা হয়েছে- ‘বঙ্গবন্ধু এম্বায়ো প্রাইমারি স্কুল’। গোলযোগপূর্ণ এই এলাকার শিশুদের সংঘাত-বিবাদ থেকে মুক্ত রাখতেই স্কুলের উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বুনিয়ায় নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যানআরডিবি-৪ কন্টিনজেন্টের কর্মকর্তারা।
গত ৬ জুলাই সরেজমিন ওই স্কুল পরিদর্শনকালে দেখা যায় প্রায় ১০ হাজার মাইল দূরে কঙ্গোর এই এম্বায়ো গ্রামে বঙ্গবন্ধু স্কুলের সামনে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ছিল। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ছবি ও নাম বড় করে দেয়ালে লেখা। এমন চিত্র দেখে স্বাভাবিকভাবেই বুকটা গর্বে ভরে যায়। অর্থাৎ সাঁজোয়াযান, এপিসি কিংবা ভারী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কেবল সন্ত্রাসীদের দমনই নয়, কঙ্গোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ শিশু-কিশোরদের মাঝে শিক্ষার আলোও ছড়িয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা।
এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের (মনুস্কো) কঙ্গোর নর্দান সেক্টরের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, কঙ্গো মনুস্কো একটি অপারেশনাল এলাকা। অপারেশন চালানোর সুবিধার্থেও এখানকার স্থানীয় মানুষদের সহযোগিতা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে নিতে হয়। সিমিক (সিভিল মিলিটারি কো-অপারেশন) কার্যক্রমের আওতায় এ কাজগুলো করা হয়। বঙ্গবন্ধু এম্বায়ো প্রাইমারি স্কুলটিও সিমিকের আওতায় করা হয়েছে। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্থায়নে ব্যান হেডকোয়ার্টার ও সিগন্যাল কোম্পানির তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আরেকটি এলাকাতেও একটি স্কুলের কাজ চলছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, সিমিকের আওতায় কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয়দের দক্ষ করে স্বাবলম্বী করা হচ্ছে। গত ৫ জুলাই সরেজমিন কঙ্গোর ইতুরি প্রদেশের বুনিয়ার এম্বায়ো এলাকায় গিয়ে দেখা যায়- ছয় কক্ষবিশিষ্ট স্কুলটির দেয়াল নীল রঙের এবং ছাদ টিনের। বাইরে দেয়ালে বড় করে ইংরেজিতে লেখা ‘বঙ্গবন্ধু এম্বায়ো প্রাইমারি স্কুল’। মাঠে এ সময় স্থানীয় কঙ্গোলিজ শিশু শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের দেওয়া ফুটবল খেলায় মেতেছিল। তখন শিশুদের সঙ্গে আপনজনের মতো মিশে খেলায় সঙ্গ দিচ্ছিলেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। প্রায় ১০ হাজার মাইল দূরের এই কঙ্গোর এম্বায়ো এলাকাটি যেন একখণ্ড বাংলাদেশে রূপ নিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু স্কুল প্রতিষ্ঠায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকা ব্যানআরডিবি-৪-এর সিমিক অফিসার মেজর মোহাম্মদ আবু হাসান সময়ের আলোকে বলেন, কাজ শুরুর মাত্র দুই-আড়াই মাসের মাথায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্কুলটি নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে। এর আশপাশে আর কোনো স্কুল ছিল না। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর ব্যাপক সারাও পাওয়া গেছে। নার্সারি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে বর্তমানে ৪৯৮ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তাদের পাঠদানের জন্য রয়েছেন স্থানীয় পর্যায়ের ১৬ জন শিক্ষক।
মেজর হাসান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী হিসেবে এখানে প্রথম সফলতা হলো কঙ্গো সরকার স্কুলটির নাম বঙ্গবন্ধু স্কুল হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে এখানকার শিক্ষকদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক সব খরচই সরকার বহন করছে। মেজর হাসান আরও বলেন, একসময় এখানে আমরা থাকব না। মনুস্কো শান্তিরক্ষা মিশন থাকবে না, কিন্তু এই স্কুলের নামকরণের মাধ্যমে কঙ্গোতে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন হাজার বছর ধরে।
বুনিয়ায় অবস্থিত ব্যানআরডিবি-৪-এর কন্টিনজেন্ট কমান্ডার কর্নেল মো. ফারুক হাওলাদার বলেন, অপারেশন কার্যক্রমের পাশাপাশি এখানকার শিশু-কিশোরদের মাঝে শিক্ষা ও নানা প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২ জুলাই থেকে বুনিয়া ক্যাম্পে স্থানীয় কিশোরদের মাঝে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে তায়কান্দো প্রশিক্ষণ করানো হচ্ছে। তিনি জানান, এখানকার সরকারি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ১০ জনের নাম চাওয়া হলেও প্রশিক্ষণ নিতে চলে আসে ২৬ জন কিশোরী। তারপর সবাইকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন প্রশিক্ষিত নারী শান্তিরক্ষীরা। এর মাধ্যমেও বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর প্রতি স্থানীয় সাধারণ মানুষের আস্থা ও আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।