নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ধর্মীয় ভাবগম্বীর পরিবেশে মঙ্গলবার (২০ জুলাই) নিউইয়র্ক সহ উত্তর আমেরিকার পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন হয়েছে। ঈদুল আযহা মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল আযহা উদযাপনের অন্যতম প্রধান কর্মকান্ড হচ্ছে ঈদের নামাজ আদায় করার পর সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানী। এদিকে মহামারী করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে স্বাস্থবিধি মেনেই নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়েছে। কোথাও কোথাও খোলা মাঠে ঈদের জামাত হয়েছে। খবর ইউএনএ’র।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)-এর উদ্যোগে ঈদুল আযহার একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় টমাস এডিসন হাইস্কুল মাঠে সকাল ৯টার দিকে। এই জামাতে শিশু-কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু কওে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত সর্বস্তরের শত শত পুরুষ-মহিলা নামাজে অংশ নেন। এটিই ছিলো নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত। ঈদের জামাত শেষে অনুষ্ঠিত বিশেষ মুনাজাতে প্রবাসী ও দেশবাসীর সহ জাতির কল্যাণ এবং করোনামুক্ত বিশ্ব কামনা করা হয়।
জেএমসির আয়োজিত ঈদের জামাতে ইমামতি করেন এবং বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন জেএমসি’র খতিব ও ইমাম মওলানা আবু জাফর বেগ। এই জামাতে খুৎবা পাঠ করেন ইমাম শামসী আলী। নামাজের আগে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক সিটির আসন্ন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী, বর্তমানে ব্রুকলীন বরো প্রেসিডেন্ট এরিক আডমস, ষ্টেট সিনেটর জন ল্যু, ষ্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিড আই ওয়েপ্রীন, কুইন্স বরোর সাবেক প্রেসিডেন্ট, বর্তমানে ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নী মেলিন্ডা কাটস, স্থানীয় সিটি কাউন্সিলম্যান জিম জিনারো প্রমুখ। এছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জেএমসি পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমান ডিডিএস, মূলধারার রাজনীতিক এলিজাবেথ ক্রাউলী, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাটিক দলীয় প্রাইমারী নির্বাচনে কুইন্সের ডিষ্ট্রিক্ট জজ পদে বিজয়ী এটর্নী সোমা সাঈদ। এই পর্ব পরিচালনা করেন জেএমসি’র সেক্রেটারী মনজুর আহমেদ চৌধুরীও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
আমেরিকান মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে ঈদুল আযহার তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।। প্রথম জামাত হয় মসজিদ ভবনে সকাল সোয়া ৬টায়। এরপর জ্যামাইকার রুফস কিং পার্কে আরো দুটি ঈদের জামাত হয় যথাক্রমে সকাল ৮টায় এবং সকাল ১০টায়।
জ্যামাইকার মসজিদ আল আলাফা (আরাফা ইসলামিক সেন্টার)-এর উদ্যোগে পবিত্র ঈদুল আযহার একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৮টায় স্থানীয় সুসান বি এন্থনী স্কুলের খোলা মাঠে। এখানে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও নামাজে অংশ নেন।
জ্যামাইকার ‘হাজী ক্যাম্প মসজিদ’ নামে পরিচিদ মসজিদ মিশনে ঈদুল আযহার ৩টি নামাজ অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল ৬টায়, সকাল ৭টা ও সকাল সাড়ে ৮টায়।
জ্যামাইকার দারুস সালাম মসজিদে ঈদুল আযহার ৪টি জামাত অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল ৭টায়, সকাল ৮টায়, সাড়ে ৮টায়, সকাল ৯টায় এবং সকাল ১০টায়। এস্টোরিয়ার আল আমীন জামে মসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টার-এ ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয় ৩৬ ও ৩৭ এভিনিউর মাঝে সকাল ৮টায়। ম্যানহাটানের মদিনা মসজিদের উদ্যোগে স্থানীয় পার্কে ঈদের জামাত হয় একটি সকাল সাড়ে ৮টায়।
এছাড়াও নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টার, সানিসাইড মসজিদ, এসেস্টারিয়ার শাহজালাল মসজিদ ও গাউসিয়া মসজিদ, ব্রুকলীনের বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার, বায়তুল জান্নাহ ইসলামিক সেন্টার, ব্রঙ্কসের পার্কচেষ্টার জামে মসজিদ সহ অন্যান্য মসজিদের উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে কানাডা ও ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সী, কানেকটিকাট, ম্যারিল্যান্ড, পেনসেলভেনিয়া, ভার্জেনিয়া, ওয়াহিও, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোরিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রতিটি ঈদের জামাত শেষে নবীন-প্রবীন, ছোট-বড়, সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় আবার অনেকে কোলাকুলি করেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। আবার অনেকে স্বপরিবারে বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের বাসা-বাড়ীতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এছাড়া প্রবাসীরা ফোনে বাংলাদেশে ফোন করে স্বজনদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শুভেচ্ছা বিনিময় হয় ফেসবুক আর টেক্স ম্যাসেজের মাধ্যমে।
সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে সর্বত্রই নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদের নামাজ আদায়ের স্থানগুলোর আশপাশের রাস্তায় ফ্রি গাড়ী পার্কিং এর ব্যবস্থা থাকায় দূর দূরান্ত থেকে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা সপরিবারে ঈদের নামাজে শরীক হন। রং বেরং এর বাহারী পোশাক গায়ে নামাজিদের একত্রে ঈদের নামাজ আদায় ভীন দেশীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। সেই সাথে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। ঈদের দিনটি উইক ডে হলেও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীকে ঈদের নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। অপরদিকে গ্রোসারীর মাধ্যমে অনেকেই মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য খাসী ও গরু কোরবানী দেন। কোরবানীর মাংস হাতে পাওয়ার পর সেই মাংস আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় বাসায় গিয়ে বিতরণ করা হয়।